• ১৯ অগ্রহায়ণ ,১৪৩১,03 Dec ,2024
  • ব্রেকিং নিউজ : বাংলাদেশের রিকশাচিত্র পেল ইউনেস্কোর অপরিমেয় সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের স্বীকৃতি

স্বাস্থ্যসম্পর্কিত যে ৯টি বিষয়ে মধ্যবয়সীদের সচেতন থাকা দরকার

| মার্চ 19, 2014 | 0 Comments

হেল্থ ইস্যুজ: সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের ‘এম এস এন’ শীর্ষক একটি স্বাস্থ্যবিষয়ক ওয়েবসাইটে ৯টি বিষয়ে মধ্যবয়সীদের সচেতন থাকার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।

বিষয় এক: শক্তিশালী হৃত্পিণ্ড।

জন্মের পর থেকে শরীরের যে অঙ্গটি বিরামহীনভাবে কাজ করে যাচ্ছে, সেটির নাম হৃত্পিণ্ড। মানুষ যখন ঘুমিয়ে থাকে, তখনও এই অঙ্গটির সংকোচন আর প্রসারণের প্রক্রিয়া বন্ধ হয় না। মধ্যবয়সে এসে এটি খানিকটা পুরনো আর দুর্বল হয় বৈকি। এসময় আমাদের উচিত এর প্রতি অতিরিক্ত যত্নবান হওয়া। তা না-হলে নানা ধরনের হৃদরোগে আক্রান্ত আশঙ্কা থাকবে। তাই, বিশেষ করে মধ্যবয়সীদের উচিত নিজের হৃত্পিণ্ডের যত্ন নেওয়া। ধূমপানতো জীবনের যে কোনো সময়ের জন্যই খারাপ। তারপরও, অল্পবয়সে বুঝে বা না-বুঝে ধূমপান করতেন? মধ্যবয়সে এসে এখন তা ছেড়ে দিন। আপনার হৃত্পিণ্ডের প্রতি সদয় হোন। অতিরিক্ত মদ্যপান, মনের ওপর অতিরিক্ত চাপ, রাত জাগা—এ সবই হৃত্পিণ্ডের ওপর না-হক চাপ ফেলে। হৃত্পিণ্ডের স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী খাবার খান। চীনের স্বাস্থ্য রক্ষা সমিতির প্রধান ও অধ্যাপক উ তা চেন বলেন, লাল ফল ও সবজি সব ধরনের হৃতপিণ্ডের জন্য উপকারী খাদ্য, যেমন: টমেটো ও লাল আপেল। আখরোট ও খুবানিসহ নানা ধরনের বাদামজাতীয় খাবারও হৃত্পিণ্ডকে সুস্থ থাকতে সাহায্য করে।

বুকের মধ্যে লুকিয়ে থাকা এই হৃত্পিণ্ডটার ধুকপুকানি বন্ধ হলেই কিন্তু সব শেষ। ওটা যতক্ষণ ধুকপুক ধুকপুক করছে, ততক্ষণই আমরা বেঁচে আছি। তাই, বিশেষভাবে এ অঙ্গটি যত্ন নেওয়া উচিত বৈকি।

বিষয় দুই: সুষ্ঠু দৃষ্টিশক্তি

বিধাতার এক আশ্চর্য সৃষ্টি এই চোখ। কখনো ভেবে দেখেছেন কি, যদি আপনার দুটো চোখ না-থাকতো তাহলে কী হতো? আপনি এই পৃথিবীর অপরূপ সৌন্দর্য্য দেখা থেকে বঞ্চিত হতেন। চোখ ছাড়া জীবন কেমন, তা যার দৃষ্টিশক্তি নেই তিনিই ভালো বুঝতে পারেন। অতএব চোখের যত্ন নিন। ‘চল্লিশ পেরুলেই চালসে’ বলে একটা কথা আছে। চল্লিশের পর সাধারণত দৃষ্টিশক্তি কমতে থাকে। অবশ্য আজকাল তো ছোট ছোট ছেলেমেয়েদেরও দেখা যাচ্ছে চোখের নানান সমস্যায় ভুগতে। এসবই হচ্ছে চোখের যথাযথ যত্ন না-নেওয়ার কারণে। সুতরাং চোখের যত্ন নিতে হবে, বিশেষ করে মধ্যবয়সে। আপনার দৃষ্টিশক্তি স্বাভাবিক আছে কি না, তা পরীক্ষা করে নিতে পারেন সহজেই।

হ্যাঁ, ব্যাপারটা সহজ। এক চোখ বন্ধ করে অন্য চোখ দিয়ে কোনো একটা বস্তুর দিকে লক্ষ্য করুন; তারপর বন্ধ চোখ খুলে, খোলা চোখ বন্ধ করে দেখুন। কেমন মনে হচ্ছে? দু’চোখের দৃষ্টিশক্তি কি এক মনে হচ্ছে? যদি এক মনে হয়, তবে আপনার চোখ ভালো আছে। দু’চোখে সমান না-দেখলে বুঝতে হবে, সমস্যা আছে। অবশ্য চোখ এত স্পর্শকাতর একটা অঙ্গ যে, এটি বিশেষজ্ঞ চিকিত্সক দিয়ে পরীক্ষা করিয়ে নেওয়াই ভালো। বছরে অন্তত একবার চোখ পরীক্ষা করানোর কথা বলেন চিকিত্সকরা।

চোখের যত্নে প্রতিদিন আমরা তিনটি কাজ করতে পারি: এক. সকাল ও সন্ধ্যায় পাঁচ থেকে দশ মিনিট করে চোখের ওপর হালকা গরম পানিতে ভেজানো তোয়ালে দিয়ে শেক দেওয়া; দুই. প্রতিদিন ৩০০ বার চোখ পিটপিট করা; তিন. প্রতি ৪৫ মিনিট পর পর দূরের কোনো জিনিষের দিকে তাকানো (যেমন, আকাশ বা দূরের কোনো পাহাড়)। বলা হয়ে থাকে, সবুজের দিকে তাকালে চোখ ভালো থাকে। আমরা গাছপালার দিকে নিয়ম করে তাকিয়ে থাকার অভ্যাস করতে পারি। এ ছাড়া, ভিটামিন সি ও ই বেশি বেশি থাকে, এমন খাবার খাওয়া উচিত; যেমন, কমলা ও গাজর।

বিষয় তিন: শব্দ করে হাসা

হাসি হচ্ছে মনের ওপর চাপ কমানোর সহজ উপায়। মধ্যবয়সে নানা কারণে মনের ওপর চাপ পড়তে পারে। এসময় শব্দ করে হাসতে বলেন চিকিত্সকরা। হাসির গুরুত্ব সম্পর্কে আমরা আগের অনুষ্ঠানে বিস্তারিত আলোচনা করেছি। হাসি হৃদরোগ ও ডায়াবেটিস প্রতিরোধে সহায়ক ভূমিকা পালন করে। সবসময় হাসিখুশী থাকার চেষ্টা করুন।

বিষয় চার: স্থিতিশীল ব্লাড-সুগার

ব্লাড-সুগার সমস্যা হলে হৃদরোগ ও রক্তসংবহনতন্ত্রের রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেশি। ব্লাড-সুগার নিয়ন্ত্রণে রাখতে হলে শরীরের ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখা দরকার। মধ্যবয়সে এ বিষয়টি বেশি করে প্রযোজ্য। বয়স ও উচ্চতা অনুপাতে ওজন ঠিক থাকলে একজন মানুষের ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হবার সম্ভাবনা অনেক কমে যায়। পাশাপাশি চর্বিজাতীয়, উচ্চ ক্যালিরযুক্ত ও মিষ্টিজাতীয় খাবার যথাসম্ভব কম খাওয়া উচিত। সাক-সবজি ও ফল বেশি বেশি খাওয়া সব বয়সীদের জন্যই ভালো। তবে, মধ্যবয়সীদের জন্য এটা নিয়মে পরিণত হওয়া জরুরি।

বিষয় পাঁচ: সুষ্ঠু শ্রবণশক্তি

দৃষ্টিশক্তির মতো শ্রবণশক্তিও বিধাতার এক অপার দান। মধ্যবয়সে এসে শ্রবণশক্তিও কমে যেতে পারে। তাই, আমাদের সাবধান হওয়া উচিত। শব্দদূষণের ফলে আমাদের শ্রবণশক্তি ধীরে ধীরে নষ্ট হয়ে যেতে পারে বা কমে যেতে পারে। পেইচিং হাসপাতালের কান, নাক ও গলা বিভাগের মহাপরিচালক ডক্টর সুং হাই থাও বলেন, প্রতি এক ঘন্টায় অন্তত ১০ মিনিট কানকে বিশ্রাম দিতে হবে। গান শুনছেন? মাঝে মাঝে কানকে বিশ্রাম দিন। তা ছাড়া, উচ্চ ভলিউমে গান না-শোনাই ভালো।

বিষয় ছয়: ঘনিষ্ঠ বন্ধু

 ভাল বন্ধু সবসময়ই আমাদের শরীর ও মনেরও ভালো বন্ধু। ভাল বন্ধু আমাদের মনের ওপর চাপ কমিয়ে দিতে সবসময় সহায়ক ভূমিকা পালন করে থাকেন। ভালো বন্ধুর সংস্পর্শে আমরা আনন্দে থাকি, তার সঙ্গে সুখ-দুঃখ ভাগাভাগি করে নিতে পারি। এর ফলে আমাদের শরীর ও মনের ওপর ইতিবাচক প্রভাব পড়ে; এতে আমাদের শরীরের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে, হৃদরোগে আক্রান্ত হবার সম্ভাবনা কমে। তাই বন্ধু বানান, বন্ধুর সঙ্গে সময় কাটান। মধ্যবয়সীদের জন্য ভালো বন্ধুর প্রয়োজন আরো বেশি। এসময় সংসারের নানান চাপে তারা দিশেহারা হতে পারেন। তখন একজন ভালো বন্ধু খুবই প্রয়োজন। শুধু বন্ধুর কাছ থেকে উপকার পাওয়া নয়, বন্ধুর সমস্যায় এগিয়ে যাওয়ার মধ্যেও মনের প্রশান্তি মেলে।

বিষয় সাত: সুদৃঢ় হাড়

শরীরের হাড় মানবদেহ নামের ভবনটিকে সচল রাখে, সুদৃঢ় রাখে। হাড় দুর্বল হওয়া মানে, এই ভবনটি সংকটের সম্মুখীন হওয়া। মধ্যবয়সে এসে মানবদেহের হাড় দুর্বল হয় পড়া স্বাভাবিক। চিকিত্সকরা বলেন, ৪০ বছর বয়সীদের শরীরে প্রতিদিন পর্যাপ্ত ভিটামিন ডি গ্রহণ করা দরকার। এসময় প্রচুর দুধ, দই ও প্রোটিনযুক্ত খাবার খাওয়া জরুরি। প্রতিদিন যিনি ৩০০ মিলিমিটার দুধ পান করেন, তার হাড়ের ঘনত্ব ৬ শতাংশ বেশি হয়। আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে, ধূমপানের ফলে হাড়ের ঘনত্ব বা বোন ডেনসিটি কমে যায়। ১০ বছর টানা ধূমপান করলে একজন মানুষের হাড়ের ঘনত্ব কমে ২.৩ থেকে ৩.৩ শতাংশ। অতএব, ধূমপান ত্যাগ করুন, সুদৃঢ় হারের অধিকারী থাকুন।

বিষয় আট: প্রতিদিন শরীরচর্চা করুন, খেলাধুলা করুন

বয়স বাড়ার সাথে সাথে অনেকে শরীরচর্চা কমিয়ে দেন, খেলাধুলা কমিয়ে দেন বা একেবারে ছেড়ে দেন। মধ্যবয়সে এর নেতিবাচক প্রভাব পড়তে বাধ্য। নিয়ম করে খেলাধুলা করুন; গানের তালে তালে নাচা ও ব্যাডমিন্টনসহ বিভিন্ন হালকা খেলাধুলায় নিজেকে নিয়মিত করুন। মধ্যবয়সে কয়েকটি উপকারী ব্যায়ামের মধ্যে আছে: এক পায়ে দাঁড়িয়ে থাকা, পেছন দিকে হাঁটা, থাইজি মুষ্টিযুদ্ধ চর্চা ইত্যাদি।

বিষয় নয়: মাঝে মাঝে টিকা নেয়া

 নিয়মিতভাবে রোগ প্রতিরোধক টিকা নেওয়া আমাদের শরীরের জন্য ভাল। অনেকে মনে করেন, টিকা শুধু ছোটবেলায় নিতে হয়। এটা ভুল ধারণা। মধ্যবয়সেও চিকিত্সকের পরামর্শ অনুযায়ী রোগ প্রতিরোধক টিকা নেওয়া উচিত। চীনের রোগ প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণ বিভাগের মহাপরিচালক লিয়াং সিয়াও ফেং বলেন, মধ্যবয়সী এবং বুড়ো-বুড়ি বিশেষ করে দীর্ঘস্থায়ী রোগে আক্রান্তদের নিয়মিতভাবে ফ্লু-এর টিকা নেয়া দরকার।

Category: 1stpage, হেল্থ ইস্যুজ

About the Author ()

Leave a Reply