• ১০ অগ্রহায়ণ ,১৪৩১,24 Nov ,2024
  • ব্রেকিং নিউজ : বাংলাদেশের রিকশাচিত্র পেল ইউনেস্কোর অপরিমেয় সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের স্বীকৃতি

ওয়ান ব্যাংকের জাহাঙ্গীর আলম , দুর্নীতির সিন্ডিকেটের এক গডফাদার

| মে 19, 2014 | 0 Comments

ওয়ান ব্যাংকের দাগনভুইয়া শাখা ইনচার্জ জাহাঙ্গীর আলম

দুর্নীতির এবং প্রতারণার এক শক্তিশালী সিন্ডিকেটের গডফাদার দাগনভুইয়ার ওয়ান ব্যাংকের জাহাঙ্গীর আলম । বেসরকারি ওয়ান ব্যাংকের দাগনভুইয়া শাখা ইনচার্জ জাহাঙ্গীর আলম ভদ্রতার মুখোশ পরা এক ব্যাংকার সিন্ডিকেটের অপর নাম। সাধারণগ্রাহক, লোন গ্রহীতা এমনকি তার অধীনস্থ কর্মকর্তা কর্মচারীরাও তার সিন্ডিকেট আর দুর্নীতির হাত থেকে রেহাই পায়নি।

সাধারণ গ্রাহকদের সাথে আন-অফিশিয়াল ব্যবহার, প্রকৃত ঋণ গ্রহীতারা ঋণ না পেলেও লক্ষ লক্ষ টাকার বিনিময়ে অযোগ্যদের ঋণ পাইয়ে                           দেয়া,         অধীনস্থ কর্মকর্তা -কর্মচারীদের টাকার বিনিময়ে প্রমোশন দেয়া , দাবী কৃত অর্থ না দিলে পদোন্নতি ঝুলিয়ে রাখা এবং নিযোগ বানিজ্য সহ তার বিরুদ্ধে অসংখ্য অভিযোগ রয়েছে।

দাগনভুইয়া শাখায় ম্যানেজারের দায়িত্ব নিয়ে আসার অল্প সময়ের মধ্যে চতুর জাহাঙ্গীর আলম স্থানীয় কিছু প্রভাবশালী ব্যাক্তির ছত্রছায়ায় এবং ব্যাংকে তার অধীনস্থ কিছু অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারীর প্রত্যক্ষ সহায়তায় তিনি এই শক্তিশালী সিন্ডিকেট গড়ে তোলেন।

জাহাঙ্গীরের অসৎ কর্ম এবং দুর্নীতিতে সহায়তাকারী কর্মকর্তা- কর্মচারীরা বিনিময়ে ব্যাংকে কাজে ফাঁকির ক্ষেত্রে নানা সুযোগ- সুবিধার পাশাপাশি নিয়মিত দুর্নীতির অর্থের ভাগ পেয়ে থাকলেও অন্যান্য কর্মকর্তারা প্রতিনিয়ত থাকেন চাপের মুখে। তাদের প্রতিনিয়ত “চাকরি খেয়ে ফেলব”, “বান্দরবন, বরিশাল বদলি করে দেব”, “প্রমোশন দিবনা”, “হেড অফিসে আমার লোক আছে” এসব হুমকি শুনতে হয়।

নোয়াখালীর মাইজদীর বাসিন্দা জাহাঙ্গীর নিজেকে স্থানীয় পরিচয় দিয়ে প্রতিনিয়ত গ্রাহক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের চাপের মুখে রাখেন। এমনকি তিনি প্রভাবশালী রাজনৈতিক ব্যাক্তির ভাতিজিকে বিয়ে করেছেন এবং তার শ্বশুর বঙ্গ বভনের কর্মকর্তা বলেও প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা চালান। প্রথমআলো ‘বন্ধুসভার’ সাধারণ সম্পাদক ছিলেন পরিচয় দিয়ে নিজেকে সাংবাদিকদের বাপ বলেও দাবী করেন তিনি।

বেসরকারি অফিসে নিয়োগ বাণিজ্য খুব একটা না থাকলেও,  জাহাঙ্গীর তার শক্ত সিন্ডিকেটের মাধ্যমে রমরমা নিয়োগ বাণিজ্য চালিয়ে যাচ্ছে। নিয়োগে তার সরাসরি হাত না থাকলেও নিয়োগ প্রাপ্ত নতুন কর্মকর্তা কর্মচারীদের অফিসে নানা ধরণের চাপের মুখে ফেলে হাতিয়ে নিচ্ছে লক্ষ লক্ষ টাকা। চাপের মুখে অসহায় হয়ে চাকরি বাঁচানোর জন্য অনেকে টাকা দিলেও শেষ রক্ষা হয়নি। প্রতিনিয়ত আরও অবৈধ অর্থ আদায়ে তাদের ওপর চাপ অব্যাহত রাখায় তাদের অনেকেই বিপাকে আছেন।

তার এই নিয়োগ বাণিজ্য শুধু দাগনভুইয়া শাখায় সীমাবদ্ধ নয়, একাধিক ব্যাংকের একাধিক শাখার অসাধু ব্যাংক কর্মকর্তাদের সাথে তার রয়েছে শক্তিশালী নিয়োগ বাণিজ্য সিন্ডিকেট। যেখানে একজন নতুন নিয়োগ প্রাপ্ত কর্মচারীকে প্রশিক্ষণ দিয়ে ব্যাংকের দক্ষ কর্মকর্তা হিসেবে গড়ে তোলার মহান দায়িত্ব নিয়ে তিনি ম্যানেজার হয়েছেন,  সেখানে উৎকোচ আদায়ের জন্য তিনি নতুনদের প্রতিনিয়ত মানিলন্ডারিং মামলায় জড়ানোর ভয় দেখানোসহ নানা ভাবে ভয়ভীতি ও হয়রানির শিকার করছেন।

এমনকি হেড অফিস নিয়োগ দিলেও তার হাতে চাকরি স্থায়ী করার’ “সর্বোচ্চ ক্ষমতা আছে”  বলে হুমকি প্রদান করেন। আরও অভিযোগ রয়েছে তিনি অফিস সময়ের বেশির ভাগ সময় ব্যাংকের কাজের নাম করে বাইরে সিন্ডিকেটের কাজে সময় দিচ্ছেন। তিনি রমরমা অবৈধ হুন্ডি ব্যবসার এক জন প্রভাবশালী এজেন্ট বলেও দাগনভুইয়ার জনমনে কথিত আছে।

দাগনভুইয়া প্রবাসী প্রবণ এলাকা হওয়ার কারণে দ্রুত ব্যবসা বাণিজ্যের প্রসার ঘটে। কাঁচা টাকার ছড়াছড়ি দেখে জাহাঙ্গীর হয়ে ওঠে অবৈধ সিন্ডিকেটের পাকা ব্যবসায়ী। তার সিন্ডিকেটের প্রধান হাতিয়ার কাশ ইনচার্জ দিদারুল করিম আওয়াল এবং জিবির হেড মশিউর রহমান সহ ব্যাংকের কিছু অসাদু কর্মকর্তা । তদন্তে দেখা গেছে দাগনভুইয়া শাখার বেশির ভাগ কর্মকর্তা কর্মচারী নোয়াখালীর ও ফেনী জেলার স্থানীয় বাসিন্ধা হবার কারণে ব্যাংককে ঘিরে  স্থানীয় প্রভাবের একটি বলয়  তৈরী করা হযেছে, যা বেবহার করে সিন্ডিকেটের  কাজ খুব সাচ্ছন্দেই সম্পন্ন করছেন চতুর জাহাঙ্গীর ।

একটি বেসরকারি ব্যাংককে পুঁজি করে একজন সম্মানিত ব্যাংকার কি করে এই ধরণের একটি সিন্ডিকেটের গডফাদার হয়ে উঠতে পারে, স্থানীয় জনগণ ও সাধারণ গ্রাহকদের মনে  এখন এটিই প্রশ্ন। এমন একজন দুর্নীতি পরায়ন কর্মকর্তার অধীনে ব্যাংক হিসাব খুলতে অনেকেই অনিরাপদ বোধ করছেন ।

দাগনভুইয়া শাখার জাহাঙ্গীর আলমের পূর্ববর্তী ম্যানেজার দুর্নীতির দায়ে চাকরি হারালেও সেই ভয় যেন এতটুকুও কাজ করছেনা জাহাঙ্গীরের মনে। বরং দিনকে দিন তিনি বেপরোয়া হয়ে উঠছেন। ভুক্তভোগী কর্মকর্তা কর্মচারীদের নিকট বিষয়টি পরিষ্কার হলেও চাকরি হারানো ও পদোন্নতি বঞ্চিত হবার ভয়ে কেউ মুখ খুলছেনা।

উল্লেখ্য,   ওয়ান ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান দাগনভুইয়া থানার চৌধুরি পরিবারের সাঈদ হোসেন চৌধুরি। খোদ ব্যাংকের চেয়ারম্যানের পৈতৃক স্থান দাগনভুইয়া শাখায় এমন দুর্নীতি ও অনিয়মে,  স্থানীয় বাসিন্দা ও সাধারণ গ্রাহকদের মনে নানা প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। তারা আশা করছেন,  বিষয়টি চেয়ারম্যানের নজরে আসলে তিনি ব্যাংকটির সুনাম রক্ষায় যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।

 

Category: Uncategorized

About the Author ()

Leave a Reply