‘সবক্ষেত্রে বাংলা ব্যবহারে হীনমন্যতাই বড় বাধা’
‘‘সবক্ষেত্রে বাংলার ব্যবহারে সবচেয়ে বড় বাধা হীনমন্যতা৷ এমন কিছু নেই যা বাংলায় প্রকাশ করা যায় না৷ তারপরও দীর্ঘ চেষ্টার পর সব জায়গায় বাংলার প্রচলন করা যায়নি৷’’এ মন্তব্য বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক শামসুজ্জামান খানের৷
শামসুজ্জামান খান বলেন, ‘‘বিশিষ্ট বিজ্ঞানী জামাল নজরুল ইসলাম, সত্যেন বসুর মতো মানুষ বাংলায় বই লিখেছেন৷ এই বই লেখার পর তাঁরা বলেছেন, বাংলায় বই লিখতে গিয়ে তাঁদের কোনো সমস্যাই হয়নি৷ সব কিছুই সাবলীলভাবে প্রকাশ করতে সক্ষম হয়েছেন৷ তবুও আমরা বাংলা নিয়ে হীনমন্যতায় ভুগছি৷”
উল্লেখ্য, সবক্ষেত্রে অবিলম্বে বাংলা ভাষা ব্যবহারে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের কেন নির্দেশ দেয়া হবে না, তা জানতে চেয়ে গত বছর রুল দিয়েছিল হাইকোর্ট৷ বিচারপতি কাজী রেজা-উল হক এবং বিচারপতি এ বি এম আলতাফ হোসেনের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এক রিটের প্রাথমিক শুনানির পর, ঐ রুল দিয়েছিল৷ একই সঙ্গে দূতাবাস ও বিদেশি প্রতিষ্ঠান ছাড়া দেশের সব সাইনবোর্ড, ইলেকট্রনিক মিডিয়ার বিজ্ঞাপন, গাড়ির নম্বর প্লেট, ব্যক্তিগত নামফলক এক মাসের মধ্যে বাংলায় লিখার জন্যও সংশ্লিষ্টদের প্রতি নির্দেশ দিয়েছিল আদালত৷
এরপর ১লা এপ্রিল নির্দেশনা বাস্তবায়নের অগ্রগতি প্রতিবেদনটি আদালতে দাখিল করতে বলা হয়েছিল বিবাদীদের৷ সে সময় আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী ইউনূস আলী আকন্দ৷ আর রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বিশ্বজিত রায়৷ আদালতের আদেশের পর ডয়চে ভেলেকে তিনি বলেন, ‘‘১৯৮৭ সালের মার্চে পাস হওয়া আইন অনুযায়ী বাংলাদেশের সর্বত্র, অর্থাৎ সরকারি অফিস, আদালত, আধা-সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান বিদেশের সঙ্গে যোগাযোগের প্রয়োজন ছাড়া অন্যান্য সবক্ষেত্রে বাংলা ব্যবহার করবে৷ নথি ও চিঠিপত্র, আইন আদালতের সওয়াল-জবাব এবং অন্যান্য আইনানুগত কার্যাবলী অবশ্যই বাংলায় লিখতে হবে৷ উল্লেখিত কোনো কর্মস্থলে যদি কোনো ব্যক্তি বাংলা ভাষা ব্যতীত অন্য কোনো ভাষায় আবেদন বা আপিল করেন, তাহলে তা বেআইনি ও অকার্যকর বলে গণ্য হবে৷ যদি কোনো কর্মকর্তা বা কর্মচারী এই আইন অমান্য করেন তাহলে উক্ত কাজের জন্য তিনি সরকারি কর্মচারী শৃঙ্খলা ও আপিল বিধির অধীনে অসদাচরণ করেছেন বলে গণ্য হবে৷”
এর পরের ঘটনা৷ সবক্ষেত্রে বাংলা ভাষা ব্যবহারে কার্যকর ব্যবস্থা প্রবর্তনের নির্দেশনা চেয়ে বাংলায় লেখা একটি রিট আবেদন করা হয়৷ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ইউনূস আলী আকন্দ রিটটি করেছিলেন৷ রিটে বলা হয়, আইন প্রণয়নের পর এতদিন অতিবাহিত হলেও সরকারি কর্মকর্তা বা কর্মচারীরা এই আইন ঢালাওভাবে অমান্য করে যাচ্ছেন৷ এখনও সেভাবে কারুর বিরুদ্ধে বিধি অনুসারে কোনো ব্যবস্থাও নেয়া হয়নি৷
সত্যিই তো৷ প্রায় বছরখানেক হতে চললো কিন্তু বাংলাদেশে ইংরেজির ব্যবহার কোনোভাবেই কমেনি৷ বাংলা একাডেমির মহাপরিচালকের কথায়, ‘‘বাংলা ভাষা মোটেও দুর্বল ভাষা নয়৷ সবক্ষেত্রে বাংলার ব্যবহার এখন সময়ের দাবি৷ তিনি বলেন, উচ্চ আদালতের ঐ আদেশ ছিল সময়োচিত৷ এখনও সময় আছে৷ সরকারকে এ ব্যাপারে উদ্যোগী হয়ে এগিয়ে আসতে হবে৷’’
শামসুজ্জামান খান বলেন, ‘‘বাংলাদেশে যে তিন ধরনের শিক্ষা ব্যবস্থা রয়েছে তাতে অর্ধশিক্ষিত মানুষ তৈরি হচ্ছে৷ বাংলা ভাষায় যে শিক্ষকরা শিক্ষার্থীদের শেখাচ্ছেন, তাঁরাই ভালোভাবে বাংলা জানেন না৷ শিক্ষার্থীদের ভুল বাংলা শেখানো হচ্ছে৷ আর ইংরেজি মাধ্যমে যারা পড়ছে, তারা বাংলা না জানার কারণে ইংরেজিও ভালোভাবে শিখতে পারছে না৷ মাতৃভাষা না জানলে অন্য ভাষাও ঠিকমতো আত্মস্থ করা যায় না৷ এছাড়া মাদ্রাসা শিক্ষায় যারা পড়ছে, তারা স্বাধীনতা সংগ্রাম, ভাষা আন্দোলন – এ সব সম্পর্কে কিছুই জানে না৷ তারা যে আরবি পড়ছে, তাও আবার বাংলায়৷ ফলে তাদের কোনো শিক্ষাই ঠিকমতো হচ্ছে না৷ তাই এ সব ব্যাপারে শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে ব্যবস্থা নিতে হবে৷ ঢেলে সাজাতে হবে শিক্ষা ব্যবস্থাকে৷ একমাত্র তবেই বাংলার প্রয়োগ ঠিকমতো হবে৷”
Category: Scroll_Head_Line, শীর্ষ সংবাদ