রাজন হত্যার আসামি কামরুল জেদ্দায় আটক, দোষ স্বীকার
দেশের খবর: সিলেটের শিশু শেখ সামিউল আলম রাজন হত্যা মামলার অন্যতম আসামি কামরুল ইসলামকে সৌদি আরবের জেদ্দায় স্থানীয় বাংলাদেশিদের মাধ্যমে আটক করা হয়েছে। আটকের পর স্থানীয় বাংলাদেশিদের কয়েকজন তাকে মারধরও করেন। এসময় কান্নাকাটি করে ক্ষমা চান কামরুল।
নিজের দোষ স্বীকার করে কামরুল বলেন, ‘আমার এটা মনেও হয়নি যে সে মারা যাবে। মনে থাকলে কি এমন করতাম? আমাকে শয়তানে পেয়ে গিয়েছিল। নইলে কি এমন করতাম?’
সৌদি আরবে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত গোলাম মসিহ কামরুলকে আটকের বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, ‘বর্তমানে সৌদি আরবে অবস্থান করছেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম। সামিউল হত্যা মামলার আসামি কামরুল সৌদি আরবে আসার খবরে প্রতিমন্ত্রী সৌদি পুলিশকে কামরুলকে গ্রেফতারের জন্য আহ্বান জানান। তাকে আটকের পর সৌদি পুলিশের হেফাজতে রাখা হয়েছে।’
বেসরকারি টেলিভিশন এনটিভি’র অনলাইন সংস্করণে বলা হয়েছে, ‘আজ (সোমবার) স্থানীয় সময় সকালে জেদ্দায় হাইআররোওবি এলাকার এক বাংলাদেশির কাছে খবর পেয়ে এনটিভির জেদ্দা প্রতিনিধি মাসুদ সেলিম, কামরুলকে শনাক্ত করার জন্য ঘটনাস্থলে যান। একপর্যায়ে তাঁরা নিশ্চিত হন, গত কয়েকদিনে গণমাধ্যমে কামরুলের যে ছবি প্রচারিত হয়েছে, এ ব্যক্তি সে-ই। কনসুলেট বিষয়টি নিশ্চিত করার জন্য প্রথম সচিব আজিজুর রহমানের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধিদল ঘটনাস্থলে পাঠান। কামরুল যে বাড়িতে থাকতেন, সেই বাড়ির সৌদি মালিকের সাথে কথা বলেন তাঁরা। পুরো ঘটনা শুনে তিনি সহযোগিতা করতে রাজি হন। পরে বাংলাদেশিদের সহযোগিতায় কামরুলকে অনুসরণ করে আটক করেন কনসুলেট কর্মকর্তারা। কামরুলের হাত বেঁধে নিয়ে আসা হয় কনসুলেট কার্যালয়ে। সেখান থেকে কামরুলকে সোপর্দ করা হয় হাই আল জামা থানায়।’
সিলেট শহরতলির কুমারগাঁওয়ে চোর সন্দেহে শিশু শেখ সামিউল আলম রাজনকে (১৩) পিটিয়ে হত্যার ঘটনায় করা মামলার অন্যতম আসামি কামরুল ঘটনার একদিন পরই ১০ জুলাই দুপুর ২টায় সিলেট ওসমানী বিমানবন্দর থেকে বাংলাদেশ বিমানের একটি ফ্লাইটে সৌদি আরবে যান। সিলেট সদর উপজেলার শেখপাড়া গ্রামের বাসিন্দা কামরুল হাসান দীর্ঘদিন ধরে সৌদি প্রবাসী। কিছুদিনের জন্য দেশে এসেছিলেন তিনি।
এদিকে, রাজনকে পিটিয়ে হত্যা মামলার প্রধান আসামি মুহিত আলমের স্ত্রী লিপি বেগমকে আটক করেছে পুলিশ। আজ সন্ধ্যায় তার খালাতো বোন সোহানা বেগমের বাড়ি সুনামগঞ্জের ছাতক উপজেলার গোবিন্দগঞ্জ থেকে লিপিকে আটক করা হয়।
সিলেট সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আখতার হোসেন বলেন, লিপিকে থানায় জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। তাঁর সংশ্লিষ্টতা আছে কি না তা যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে। এ ছাড়া অন্য আসামিদের ধরতে প্রয়োজনীয় তথ্য বের করার চেষ্টা করছে পুলিশ।
এর আগে আজ সকালে মামলার প্রধান আসামি মুহিত আলমকে পাঁচ দিনের হেফাজতে (রিমান্ড) নিয়েছে পুলিশ। মুহিতের আত্মীয় আটক ইসমাইলকেও জিজ্ঞাসাবাদের জন্য সাত দিনের রিমান্ডের আবেদন করা হবে বলে জানিয়েছেন ওসি আখতার হোসেন।
অন্যদিকে, স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল আজ দুপুরে সচিবালয়ে বলেছেন, সিলেটে শিশু রাজন হত্যার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের কঠোর শাস্তির আওতায় আনা হবে। সেই সঙ্গে নির্যাতনের সময় যারা থানায় যোগাযোগ না করে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে বর্বরোচিত দৃশ্যটি দেখেছে তারাও এ হত্যার দায় এড়াতে পারে না। এ বিষয়টিও তদন্তে আনা হবে।
স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘নিছক চুরির অপরাধে শিশু রাজনকে হত্যা করা হয়েছে, নাকি হত্যার পেছনে অন্য কোনো উদ্দেশ্য ছিল তা খতিয়ে দেখা হবে। আর যে কারণেই হোক এই হত্যার সাথে জড়িতদের কাউকে ছাড় দেয়া হবে না। যার নামই আসুক তাকেই আমরা ধরব। যুবলীগ হোক, ছাত্রলীগ হোক, আওয়ামী লীগ হোক যেই হোক তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা আমরা নেব।‘
গত ৮ জুলাই সকালে কুমারগাঁওয়ে চোর সন্দেহে নির্মমভাবে পিটিয়ে হত্যা করা হয় শিশু রাজনকে। পরে লাশ গুম করার সময় স্থানীয় লোকজন সিলেট সদর উপজেলার শেখপাড়া গ্রামের বাসিন্দা মুহিত আলমকে হাতেনাতে আটক করে পুলিশে সোপর্দ করা হয়। এ ঘটনায় মুহিত, তার ভাই কামরুল ইসলাম, আলী হায়দার ও স্থানীয় চৌকিদার ময়না মিয়া লালকে আসামি করে হত্যা মামলা করা হয়। গ্রেফতার হওয়া মুহিত শিশুটিকে নির্যাতনের ভিডিওচিত্র মুঠোফোনে ধারণ করে তা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে দেন। ২৮ মিনিটের সেই ভিডিওচিত্র ছড়িয়ে পড়লে সারাদেশে তোলপাড় শুরু হয়।
Category: 1stpage, Scroll_Head_Line, দেশের খবর