সাংবাদিক প্রবীর সিকদারের মুক্তি দাবিতে ২৪ ঘণ্টার আলটিমেটাম
দেশের খবর: তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) আইনে দায়ের করা মামলায় গ্রেফতারকৃত সাংবাদিক প্রবীর সিকদারকে আগামীকাল মঙ্গলবারের মধ্যে নিঃশর্ত মুক্তি দেয়া না হলে ওইদিন বেলা ১২টায় জাতীয় প্রেস ক্লাবে সমাবেশ করে কঠোর কর্মসূচি দেয়া হবে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন সাংবাদিক নেতারা।
(সোমবার) দুপুরে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে এক প্রতিবাদ সমাবেশ থেকে এ হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করা হয়। ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের (ডিইউজে) একাংশ আয়োজিত এ সমাবেশে যোগ দেন অপর অংশও। পরে ‘বিক্ষুব্ধ সাংবাদিক সমাজ’ ব্যানারে সমাবেশটি অনুষ্ঠিত হয়।
প্রতিবাদ সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন সাংবাদিক প্রবীর সিকদারের স্ত্রী অনিতা সিকদার এবং দুই ছেলে সুপ্রিয় সিকদার ও পুলক সিকদার। এছাড়া, সংহতি জানিয়ে বক্তব্য রাখেন গণজাগরণ মঞ্চের সংগঠক কামাল পাশা চৌধুরী, বাপ্পাদিত্য বসু, মাহমুদুল হক মুন্সি বাধন প্রমুখ।
ডিইউজের একাংশের সাধারণ সম্পাদক কুদ্দুস আফ্রাদের নেতৃত্বে সমাবেশ শুরুর পর পরই অপর অংশের সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম প্রধানের নেতৃত্বে নেতাকর্মীরা যোগ দেন।
সমাবেশে ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের আরেক অংশের সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম প্রধান বলেন, প্রবীর সিকদারের মতো একজন মুক্তমনের মানুষকে গ্রেফতার করা হয়েছে, এটা ভাবতে কষ্ট হচ্ছে। আজ মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের শক্তি ক্ষমতায়। আজকে মুক্তভাবে কথা বলা যাবে। অথচ তার সঙ্গে একি আচরণ করা হচ্ছে! অনতিবিলম্বে মুক্তি না দিলে যে ক্ষোভের সঞ্চয় হচ্ছে তা সারা দেশে ছড়িয়ে পড়বে।
অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট কামাল পাশা চৌধুরী বলেন, রাজাকারকে রাজাকার বললে যদি অপরাধ হয়, তাহলে আমরা কোন মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়ন করছি?
প্রবীর সিকদারের স্ত্রী অনিতা সিকদার তার স্বামীকে ফিরিয়ে দেয়ার দাবি জানিয়ে বলেন, জানি না তাকে কি অবস্থায় রাখা হয়েছে। তাকে দ্রুত ফিরিয়ে দিতে হবে।
প্রবীর সিকদারের বড় ছেলে সুপ্রিয় সিকদার বলেন, পুলিশ এখনো আমাদের জানায়নি, বাবাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। আমি দেখেছি, ডিবি পুলিশ তুলে নিয়ে গেছে। তাকে অন্যায়ভাবে পুলিশ তুলে নিয়ে গেছে। বাবাকে দ্রুত মুক্তি দিতে হবে।
এদিকে, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের ঘোষিত কর্মসূচিকে সমর্থন করে সরকার সমর্থক বাংলাদেশ ফেডারেল ইউনিয়ন অব জার্নালিস্ট (বিএফইউজে)-এর মহাসচিব আবদুল জলিল ভূঁইয়া বলেন, অবশ্যই প্রবীর সিকদারকে অবিলম্বে মুক্তি দিতে হবে।
তবে একই আইনে এর আগে সরকার বিরোধী যেসব সাংবাদিককে গ্রেফতার করে জেলে রাখা হয়েছে বা সাজা দেয়া হয়েছে তাদের ব্যাপারে জলিল ভুঁইয়া মন্তব্য করতে রাজি হন নি।
উল্লেখ্য, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে স্থানীয় সরকারমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার খন্দকার মোশাররফ হোসেন ও ড. মুসা বিন শমসেরের সুনাম ক্ষুণ্নের অভিযোগে ফরিদপুর কোতোয়ালি থানায় সাংবাদিক প্রবীর সিকদারের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে।
পুলিশের একটি সূত্র জানায়, ফরিদপুর জেলা পূজা উদ্যাপন কমিটির উপদেষ্টা অ্যাডভোকেট স্বপন পাল রোববার রাত ১১টার দিকে তথ্যপ্রযুক্তি আইনে ফরিদপুর সদর থানায় প্রবীর সিকদারকে আসামি করে একটি মামলা করেন।
ওই মামলা দায়েরের আগেই সন্দ্যায় রাজধানীর ইন্দিরা রোডে অবস্থিত ‘উত্তরাধিকার ৭১ নিউজ’ কার্যালয় থেকে প্রবীর সিকদারকে তুলে নিয়ে যায় শেরে বাংলা নগর ও মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ। এরপর গভীর রাতে তাকে ফরিদপুরে নিয়ে যাওয়া হয়।
প্রবীর সিকদারের ছেলে সুপ্রিয় জানান, ২০০১ সালে তার বাবা জনকণ্ঠ পত্রিকার ফরিদপুর প্রতিনিধি থাকাকালে মুসা বিন শমসেরকে নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছিলেন। এরপর বাবার ওপর হামলা করা হয়। সন্ত্রাসীদের হামলায় মারাত্মক আহত হন প্রবীর সিকদার।এ ঘটনায় তার একটি পা কেটে ফেলা হয়।
বর্তমানে তিনি উত্তরাধিকার ৭১ নিউজ এবং দৈনিক বাংলা ৭১ নামের পত্রিকার সম্পাদক ও প্রকাশক।
Category: 1stpage, Scroll_Head_Line, দেশের খবর