• ৭ অগ্রহায়ণ ,১৪৩১,21 Nov ,2024
  • ব্রেকিং নিউজ : বাংলাদেশের রিকশাচিত্র পেল ইউনেস্কোর অপরিমেয় সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের স্বীকৃতি

ফরাসি নাগরিকত্ব অর্জনে একজন বাংলাদেশী হিসাবে গর্বিত

| অক্টোবর 24, 2015 | 0 Comments

editorসম্পাদকীয়:: ফরাসি নাগরিকত্ব অর্জনে একজন বাংলাদেশী হিসাবে গর্বিত।

সম্পাদকীয়: : ফ্রান্সের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় প্রদত্ত নিয়ম কানুন মেনে এবং প্রয়োজনীয় শর্ত সমূহ পূরণ সাপেক্ষে দ্রূততম সময়ে ফরাসি নাগরিকত্ব অর্জন করায় সর্বপ্রথম মহান সৃষ্টি কর্তার নিকট শুকরিয়া জ্ঞাপন করছি। পরিবার-পরিজন ও প্রিয়জন,নিকট আত্মীয় স্বজন, বন্ধু মহল এবং সহকর্মীবৃন্দ সহ সকল শুভাকাঙ্খীদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি যারা প্রাণ ভরে দোয়া করেছেন।  ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা  জানাচ্ছি ফ্রান্সের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে যারা আমাকে স্বল্প সময়ের মধ্যে একজন ফরাসি নাগরিক হিসেবে যোগ্য বিবেচনা করেছেন।

একটি নিয়মতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার ভেতর দিয়ে ফরাসি নাগরিকত্ব অর্জন যে খুব একটা সহজ কাজ নয় তা এদেশে বৈধ ভাবে বসবাসরত সকলে অবগত আছেন।

৭ সেপ্টেম্বর ২০১৫ সোমবার, জীবনের স্মরণীয় একটি দিন। লেটার বক্সটি খুলেই একটি চিঠি পেলাম। হাতে নিয়ে দেখি খামের উপর ফ্রান্সের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সীল দেয়া। বুঝতে বাকি নেই নাগরিকত্বের আবেদন সংক্রান্ত চিঠি। এমনই একটি চিঠির প্রতিক্ষায় ছিলাম। মূহুর্তেই হৃৎপিন্ডের রক্ত সঞ্চালন বেড়ে গিয়ে হৃদস্পন্দন দ্রুত হতে লাগলো। চিঠির ভেতর হয়তো একটি বড় সুখবর অথবা একটি অপ্রত্যাশিত দুঃসংবাদ। ওখানে দাড়িয়ে চিঠিটি খোলার সাহস হল না।

চিঠি নিয়ে অনিশ্চিত হৃদয়ে ঘরে ঢুকলাম।কেন জানি চিঠিটি খোলার সাহস পাচ্ছিলাম না। তারপর সোফায় বসে অনেক কষ্টে সাহস যুগিয়ে আল্লাহর নাম নিতে নিতে চিঠিটি খুললাম। অনেক কষ্টে খুললেও তা পড়ার সাহস পাচ্ছিলাম না। না জানি কি লেখা আছে। অনেকটা মনের বিরুদ্ধেই চোখ ফেললাম চিঠির প্রথম লাইনে। লাইনটা শেষ হতে না হতেই আমার দুচোখ দিয়ে বৃষ্টির মত পানি ঝরতে লাগলো।

পুরো চিঠিটা শেষ না করে  ঐ লাইনটাই বৃষ্টি ঝরা ঝাপসা চোখ দিয়ে বার বার পড়ছিলাম। মনে হচ্ছিল পুরো চিঠিটা পড়ার আর দরকার নেই।

লাইনটি ছিল: জনাব, আমি অত্যন্ত আনন্দের সাথে আপনাকে জানাচ্ছি যে, আপনি ১৯ আগস্ট ২০১৫ সাল থেকে ফ্রান্সের নাগরিকত্ব অর্জন করেছেন। আপনাকে অভিনন্দন।

কিছুক্ষণের জন্য স্থবির হয়ে গেলাম।আর মনে মনে আল্লাহর নিকট শুকরিয়া জানালাম। তারপর জল ছলছল চোখে দেশে মা-বাবা কে ফোন দিয়ে প্রথম খবরটি জানালাম। আমার আবেগ জড়িত কন্ঠে ওনারাও কিছুটা আবেগ তাড়িত হয়ে উঠলেন। দোয়া করলেন। চলার পথে ওনাদের দোয়াইতো সম্বল।

এই অর্জনে বারবার মনে পড়ছিল আমার জন্মভূমি বাংলাদেশকে। দেশমাতাকে বলতে ইচ্ছে হচ্ছিলো-মা দেখো তোমার কোলে খেলতে খেলতে, তোমার আলো বাতাস  খেয়ে যে সন্তান বেড়ে উঠেছিল, তাকে আজ অন্য দেশ নাগরিকত্ব দিয়ে তোমাকে সম্মানিত করেছে মা। দেখো মা দেখো এই অর্জন তোমার মা, এই অর্জন আমার প্রিয় মাতৃভূমি বাংলাদেশের।

তাই একজন বাংলাদেশী হিসাবে ফরাসি নাগরিকত্ব অর্জনে গর্বিত হলাম। আর আমার প্রিয় লেখক সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় তার একটি বইতে লিখেছিলেন- সৃজনশীল মানুষদের দুটি দেশ, একটি তার জন্মভূমি অন্যটি ফ্রান্স। তাই ফরাসি নাগরিকত্ব লাভের মধ্য দিয়ে প্রিয় লেখকের সেই কথাটি অন্তর দিয়ে অনুভব করলাম।

আর যারা নাগরিকত্বের আবেদন করবো করছি বলে দেরী করছেন অথবা সাহস করছেন না, তাদের বলবো কোন রকম গুজবে কান না দিয়ে আজই আপনার নাগরিকত্বের ফাইল প্রস্তুতির জন্য প্রয়োজনীয় কাগজ পত্র গোছানো শুরু করুন।   কোন আইনজীবী অথবা প্রতিষ্ঠানের সহযোগিতা ছাড়া ফরাসি নাগরিকত্ব অর্জনের বাস্তব উদাহরণ আমি নিজে।

শুধুমাত্র প্রিফেক্সারের  নিয়ম অনুযায়ী প্রয়োজনীয় কাগজপত্র জোগাড় করে ইন্টারভিউর পর অপেক্ষা করুন একটি দারুণ সুখবরের জন্য।

নাগরিকত্বের আবেদন বিষয়ক যে কোন ধরনের পরামর্শের জন্য আমাকে মেইল করতে পারেন অথবা ফোন করতে পারেন। যদি আপনাদের কোন উপকারে আসতে পারি নিজেকে সার্থক মনে করবো।

অবশেষে মহান রাব্বুল আল আমিনের নিকট প্রার্থণা, আমি যেন বাকি জীবন আমার জন্মভূমি বাংলাদেশ এবং ফ্রান্সের নিয়ম কানুন ও সুনাম অক্ষুন্ন রেখে চলতে পারি। আমিন।

সম্পাদক

ইউরোবিডি24নিউজ

Email: emahmudmathlab@yahoo.com

Tel: 0698488404

Category: সম্পাদকীয়

About the Author ()

Leave a Reply