মালিতে হোটেল রেডিসনে জঙ্গি হামলা , অন্তত ২২ জন নিহত
আন্তর্জাতিক: প্যারিস হামলার এক সপ্তাহ পর আফ্রিকার মালির রাজধানী বামাকোতে শুক্রবার সকাল ৭ টায় বিলাস বহুল হোটেল রেডিসনে জঙ্গি হামলা চালিয়েছে সন্ত্রাসীরা। এতে অন্তত ২২ জন নিহত ও বেশ কিছু মানুষ আহত হয়েছে বলে জানিয়েছে মালির নিরাপত্বা কর্তৃপক্ষ। অন্য দিকে জাতি সংঘের শান্তি রক্ষী মিশন থেকে জানানো হয়েছে , তারা এই পর্যন্ত অন্তত ২৭ জনের মৃতদেহ দেখেছে। শান্তি রক্ষী জানান হোটেল বেইজমেন্টে ১২ জন ও ২য় তলায় ১৫ জনের মৃতদেহ দেখেন।
ঘটনার পর পরই মালির নিরাপত্ব বাহিনী এবং সেনা বাহিনী জঙ্গিদের নিষ্ক্রিয় করতে যৌথ অভিযান চালায় হোটেলটিতে। এই অভিযানে দু জন জঙ্গিই নিহত হন।
হোটেলটিতে মোট ১৪০ জন কাস্টমার ও ৩০ জন হোটেল কর্মকর্তা কর্মচারী সহ মোট ১৭০ জন মানুষ ছিলেন। মাত্র দু জন জঙ্গি সন্ত্রাসী গুলি করতে করতে হোটেলটির নিরাপত্বা বেস্টনীতে ঢুকে পড়ে। সাত তলা বিশিষ্ট রেডিসন হোটেলটি বিদেশী কর্মজীবী এবং পর্যটকদের নিকট খুবই জনপ্রিয় ছিল।
মালির রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে হোটেলটির লভিতে একটি একে ৪৭ পড়ে থাকতে দেখা যায়। এছাড়া সিড়ির গোড়ায় বাদামী কম্বলে মোড়ানো একটি মৃতদেহও পড়ে থাকতে দেখা যায়।
মালির জাতীয় নিরাপত্বা মন্ত্রী কর্নেল সালিফ ট্রাওরে জানান, জঙ্গিরা স্থানীয় সময় সকাল ৭টায় আল্লাহু আকবার বলে গুলি করতে করতে হোটেলের ভেতরে ঢুকে পড়ে।
নিরাপত্বা বাহিনীদের দ্বারা এখন পর্যন্ত ৭৬ জনকে মুক্ত করা হয়েছে। এর আগে জঙ্গিরা কিছু বন্ধী মানুষকে কোরান পাঠ করে শোনানোর শর্তে মুক্তিদেয় ।
একজন বন্ধী মুক্তির পর জানান, তিনি হোটেল রিসেপশান থেকে গুলির শব্দ শুনতে পান। কিন্তু ভয়ে রুম থেকে বের হতে সাহস পাননি, কারণ শব্দ গুলো সাধারণ গুলির শব্দ ছিলনা। এটা ছিল ভারী মিলিটারী অস্ত্রের শব্দ।
জঙ্গি হামলার সময় হোটেলটিতে ফ্রান্স এয়ার লাইন্সের ১২ জন কর্মী উপস্থিত ছিলেন। এয়ার লাইন কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন তাদের ১২ জন ক্রিউ মেম্বারই নিরাপদে বেরিয়ে আসতে সক্ষম হয়েছেন। তবে একজন বেলজিয়ান নাগরিক নিহত হয়েছেন বলে জানা গেছে।
এছাড়া তুর্কি এয়ার লাইন্সের ৭ জনের মধ্যে ৫ জন নিরাপদে সরে আসতে পেরেছেন। অন্য দিকে চীনের ১০ জন পর্যটকের মধ্যে তিন জনের নিরাপদে সরে আসার খবর পাওয়া গেছে।
ঘটনার পরপরই মালির প্রেসিডেন্ট ইব্রাহীম বুবাকার কেইতা তার একটি আঞ্চলিক সফর সক্ষিপ্ত করে ফিরে এসেছেন।
মূলত ২০১২ সাল থেকে উত্তর মালি ইসলামিক যোদ্ধা কিছু গ্রুপ দ্বারা দখলে নেয়ার চেষ্টা চলছিল। যার কিছু কিছু গ্রুপের সাথে আল কয়েদার যোগসূত্র ছিল। এবং তাদের বিরুদ্ধে ফ্রান্স মিলিটারী অপারেশান চলে আসছিল।
গত সপ্তাহে প্যারিস হামলার পর সিরিয়াতে এক জঙ্গি রয়টারসকে বলে ছিল ,“মালিতে ফ্রান্সের মিলিটারী হস্তক্ষেপ প্যারিস হামরার একটি কারণ।” রয়টারের সাথে অনলাইন যোগাযোগে সিরিয়ায় এক বিদেশী জঙ্গি যোদ্ধা বলেছেন, “এটা শুধু মাত্র শুরু। আমরা ভুলিনি মালিতে কি হয়েছিল। মালিতে ফ্রান্সের মিলিটারী হামলা এবং ফ্রান্সের অহংকার ভোলা হবে না।”
ঘটনার পর পরই মালিস্থ ফ্রান্স দূতাবাসের পক্ষ থেকে মালিতে অবস্থানরত সকল ফরাসী নাগরিকদের নিজ নিজ বাস ভবনে অবস্থান করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এবং মালিতে অবস্থিত সকল ফরাসী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।
ফ্রান্সের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় দুটি জরুরী নাম্বার খুলেছে, এই নাম্বার দুটির মাধ্যমে মালিতে সংঘঠিত জঙ্গি হামলা সংক্রান্ত যে কোন তথ্য পাওয়া যাবে। নাম্বার দুটি হল: In France: +33 (0)1 45 50 34 60. In Mali: + 223 44 97 58 20.
Category: 1stpage, Scroll_Head_Line, আন্তর্জাতিক, শীর্ষ সংবাদ