সন্ত্রাসী হামলায় আমেরিকায় নিহত ১৪, গুরুতর আহত ১৭
আন্তর্জাতিক: এবার ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলায় রক্তাক্ত হলো আমেরিকা। বুধবার স্থানীয় সময় বেলা ১১টায় আমেরিকার ক্যালিফোর্নিয়া অঙ্গরাজ্যের স্যান বারনারদিনো শহরে একটি সমাজসেবা কেন্দ্রে দুই বন্দুকধারী এই হামলা চালায়। তাদের হামলায় ১৪ জন নিহত ও ১৭ জন গুরুতর আহত হয়েছেন। হামলাকারী দু’জনই মুসলিম হলেও শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত এটি ইসলামিক স্টেট (আইএস) অথবা অন্য কোনো কট্টর ইসলামপন্থী জঙ্গি সংগঠন-সংশ্লিষ্ট হামলা কি না, তা জানা যায়নি।
বার্তা সংস্থাগুলো জানিয়েছে, ক্যালিফোর্নিয়ার ইনল্যান্ড রিজিওনাল সেন্টার নামে যে প্রতিষ্ঠানটিতে হামলা চালানো হয়, সেখানে মূলত বয়স্ক প্রতিবন্ধীদের সেবা দেয়া হতো। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, সেনাবাহিনীর মতো পোশাক পরে দুই বা তিনজন বন্দুকধারী প্রতিষ্ঠানটিতে ঢুকে বেপরোয়া গুলি চালাতে শুরু করে। পাঁচ মিনিট নির্বিচারে গুলি চালিয়েই দুর্বৃত্তরা কালো রঙের একটি গাড়িতে উঠে পড়ে।
বিবিসি জানায়, হামলাকারীদের ধরতে পুলিশের চালানো অভিযানের এক পর্যায়ে পাশের রেডল্যান্ডস শহরের একটি অ্যাপার্টমেন্ট পুলিশ ঘিরে ফেলে। সে সময় কালো একটি এসইউভি গাড়ি দ্রুতগতিতে পালানোর চেষ্টা করলে পুলিশ সেটিকে ধাওয়া করে। প্রায় দুই মাইল দূরে যাওয়ার পর পুলিশ গুলি চালিয়ে গাড়িটিকে থামতে বাধ্য করলে সেখানে বন্দুকধারীদের সঙ্গে গোলাগুলির ঘটনা ঘটে। গোলাগুলিতে দুইজন গাড়ির ভেতরেই নিহত হন। তৃতীয় আরেক ব্যক্তি সে সময় পালানোর চেষ্টা করলে পুলিশ সদস্যরা তাকে ধরে ফেলে। অবশ্য ওই ব্যক্তি হামলাকারীদের সঙ্গে ছিলেন কি না, তা নিশ্চিত করতে পারেনি পুলিশ।
কারা হামলাকারী?
স্থানীয় পুলিশের দেয়া তথ্যানুযায়ী, হামলাকারী দুইজনের মধ্যে একজন পুরুষ এবং একজন নারী। তাদের নাম যথাক্রমে সৈয়দ রিজওয়ান ফারুক (২৮) ও তাসফিন মালিক (২৭)। তারা স্বামী-স্ত্রী। ফারুক প্রায় পাঁচ বছর ধরে ওই প্রতিষ্ঠানে চাকরি করতেন। তার জন্মও আমেরিকাতেই। তার বাবা-মা পাকিস্তান বংশোদ্ভূত। ফারুকের বেঁচে যাওয়া সহকর্মী প্যাট্রিক বাকারি জানান, ‘ফারুক চলতি বছর সৌদি আরব সফর করেছেন। সফর শেষে তিনি স্ত্রীসহ দেশে ফেরেন। ফারুকের স্ত্রী একজন ফার্মাসিস্ট ছিলেন এবং বিয়ের পর বছর না ঘুরতেই তাদের একটি সন্তানও হয়, যার বয়স এখন ছয় মাস।’
বন্দুকযুদ্ধে নিহত হওয়ার পর দুইজনের কাছ থেকে পয়েন্ট ২২৩ ক্যালিবারের অ্যাসল্ট রাইফেল ও হ্যান্ডগান পাওয়া গেছে বলে জানিয়েছে পুলিশ। স্থানীয় পুলিশপ্রধান বারজুয়ান বলেন, ‘হামলাকারীরা যা করেছে, তার জন্য তাদের পূর্ণ প্রস্তুতি ছিল। তাদের কোনো গোপন মিশনও থাকতে পারে’।
কেন এই হামলা?
বন্দুক হামলার কারণ সম্পর্কে শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত তদন্তকারীরা তেমন কোনো তথ্য দিতে পারেননি। আর এই ঘটনার সঙ্গে সন্ত্রাসবাদের কোনো সম্পর্ক রয়েছে কি না, তাও খতিয়ে দেখছে এফবিআই। আবার কর্মস্থল সংক্রান্ত বা অন্য কোনো দ্বন্দ্বের কারণেও তারা হামলা চালাতে পারেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। কারণ বুধবারের ওই পার্টি থেকে বেরিয়ে যাওয়ার সময় ফারুক বেশ রাগান্বিত ছিলেন বলে জানিয়েছেন প্রতিষ্ঠানটির কয়েকজন কর্মচারী, যারা দীর্ঘদিন ধরে ফারুকের সঙ্গে কাজ করেছেন। বেঁচে যাওয়া প্যাট্রিক বাকারি জানিয়েছেন, ঘটনার কিছু আগে একই টেবিলে বসেছিলেন তিনি ও ফারুক। হলিডে পার্টিতে যোগ দিতে তারা সেখানে গিয়েছিলেন। গ্রুপ ছবি তোলার আগে খানিকটা আড্ডায় মেতে উঠেছিলেন সবাই। এরপর ফারুক গায়েব হয়ে যান। তবে তিনি যে চেয়ারে বসেছিলেন, সেখানে তার জ্যাকেট রয়ে যায়। এরপর প্যাট্রিক বাথরুমে যান এবং আচমকা বিস্ফোরণের আওয়াজ পান।
যা জানাল হামলাকারীর পরিবার
ফারুকের ভগি্নপতি ফারহান খান জানান, ফারুক বুধবার স্থানীয় সময় সকালে তার কন্যাশিশুকে মায়ের কাছে রেখে যান। এ সময় তিনি তার মাকে জানান, চিকিৎসকের কাছে যাচ্ছেন তারা। পরবর্তী সময়ে তাদের দেরি দেখে দুশ্চিন্তগ্রস্ত হয়ে পড়েন স্বজনরা। ফারুকের সহকর্মী প্যাট্রিক বাকারি জানিয়েছেন, ফারুক ছিলেন গম্ভীর প্রকৃতির ও সবসময়ই দায়িত্ব পালনে সচেতন। তাকে কখনো কোনো অসংলগ্ন আচরণ করতে দেখেননি সহকর্মীরা। এমনকি তিনি কোনো রাজনৈতিক আলোচনায়ও অংশ নিতেন না।
Category: 1stpage, Scroll_Head_Line, আন্তর্জাতিক, শীর্ষ সংবাদ