বাংলাদেশ ও শ্রীলংকা কর্তৃক যৌথভাবে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উজ্জাপন
বিশ্বজুড়ে বাংলা: কলম্বোস্থ বাংলাদেশ হাই কমিশন এবং শ্রীলংকা সরকারের দাপ্তরিক ভাষা অধিদপ্তর যৌথভাবে যথাযোগ্য মর্যাদায় আজ (২১ ফেব্রুয়ারী ২০১৬) কলম্বোতে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উজ্জাপন করে। এ উপলক্ষ্যে দাপ্তরিক ভাষা অধিদপ্তরের মিলনায়তনে একটি আলোচনা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এতে শ্রীলংকার জাতীয় সহ-অবস্থান, সংলাপ ও দাপ্তরিক ভাষা বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে নিয়োজিত মন্ত্রী মানো গানেষাণ প্রধান অতিথি এবং বাংলাদেশের হাই কমিশনার তারিক আহসান বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন।
অনুষ্ঠানের উল্লেখযোগ্য আকর্ষণের মধ্যে ছিল বাংলাদেশ ও শ্রীলংকার জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশন, প্রদীপ প্রজ্জ্বলনের মাধ্যমে অনুষ্ঠানের সূচনা, দিবসের তাৎপর্যের ওপর আলোচনা, “আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারী” গানটিসহ সাংস্কৃতিক পরিবেশনা এবং এ দিবস উপলক্ষ্যে প্রকাশিত একটি স্মরণিকার বিতরণ। এ স্মরণিকায় মন্ত্রী মানো গানেষাণ ও হাই কমিশনার তারিক আহসানের বাণী স্থান পায়। অনুষ্ঠানের এক পর্যায়ে মন্ত্রী মানো গানেষাণ হাই কমিশনার তারিক আহসানের হাতে সুভেচ্ছার নিদর্শন স্বরূপ একটি প্লাক তুলে দেন। তাছাড়া, অনুষ্ঠানের শুরতে দাপ্তরিক ভাষা সহকারী কমিশনার সানোজি পেরেরা স্বাগত বক্তব্য এবং শেষে বাংলাদেশ হাই কমিশনের কাউন্সেলর মালেকা পারভীন ধন্যবাদসূচক বক্তব্য প্রদান করেন।
বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব, সুশীল সমাজের সদস্য, ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর প্রতিনিধি, কতিপয় দেশের কূটনৈতিক মিশনের প্রতিনিধি ও সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের প্রধান, উর্ধতন সরকারী কর্মকর্তা, প্রবাসী বাংলাদেশ নাগরিক এবং বাংলাদেশ হাই কমিশনের কর্মকর্তা/কর্মচারী ও পরিবারের সদস্যসহ প্রায় ২৫০ জন অতিথি এ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।
প্রধান আলোচকদ্বয়, অধ্যাপক এমেরিটাস জে, বি, দিসানায়াকা ও অধ্যাপক এস, যে, যোগারাজাহ, ইউনেস্কো কর্তৃক আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস ঘোষনায় বাংলাদেশের ভূমিকার প্রশংসা করেন এবং তাদের ভাষাকে আরো সুসংগঠিত ও ব্যবহার-বান্ধব করার উদ্দেশ্যে কিছু সংস্কারের প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্বারোপ করেন। মন্ত্রী মানো গানেষাণ, তাঁর বক্তব্যে, বাংলাদেশের ভাষা শহীদদের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করেন। তিনি উল্লেখ করেন যে, আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের আদর্শের সাথে সংগতি রেখে জাতীয় সম্পৃতি ও শান্তি সুসংহত করার লক্ষ্যে শ্রীলংকায় একটি ত্রি-ভাষী সমাজ প্রতিষ্ঠার সাংবিধানিক নির্দেশনাকে বাস্তবায়নের উদ্দ্যেশ্যে তাঁর মন্ত্রণালয় বিশেষ প্রচেষ্ঠাকে গ্রহণ করেছে। ভাষা শহীদদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন ক’রে হাই কমিশনার তারিক আহসান ব্যাখ্যা করেন, মাতৃভাষার প্রতি বাঙ্গালীর অসাধারণ ভালবাসার সার্বজনীন আবেদন কিভাবে ১৯৯৯ সনে ইউনেস্কো কর্তৃক ২১ ফেব্রুয়ারী-কে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে ঘোষণার পিছনে চালিকা শক্তি হিসেবে কাজ করেছে। বিশ্বায়ন ও তথ্যপ্রযুক্তির বিস্তারের মাধ্যমে বিদেষী ভাষার ক্রমবর্ধমান প্রভাবের ফলে দেশীয় ভাষা ও সংকৃতির স্বকীয়তা সংরক্ষণের সমকালীন চ্যালেঞ্জ মোকাবেলয়ায় সকল মাতৃভাষার গৌরবকে সমুন্নত করা এবং তাদের বিকাশ এগিয়ে নিয়ে যাবার ওপর তিনি জোর দেন।
যৌথ অনুষ্ঠানের পূর্বে, হাই কমিশনের চানসারি প্রাঙ্গনে প্রবাসী বাংলাদেশ নাগরিক এবং হাই কমিশনের কর্মকর্তা/কর্মচারীগণের উপস্থিতিতে হাই কমিশনার তারিক আহসান আনুষ্ঠানিকভাবে জাতীয় পতাকা উত্তোলন ও অর্ধনমিতকরণের মাধ্যমে দিবসের কর্মসূচীর সূচনা করেন। এরপর ভাষা শহীদদের স্মরণে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। দিবসটি উপলক্ষ্যে প্রেরিত রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, পররাষ্ট্রমন্ত্রী এবং পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর বাণীসমূহ পাঠ করে শোনান হয়।
Category: Scroll_Head_Line, বিশ্বজুড়ে বাংলা