• ১৩ বৈশাখ ,১৪৩১,26 Apr ,2024
  • ব্রেকিং নিউজ : বাংলাদেশের রিকশাচিত্র পেল ইউনেস্কোর অপরিমেয় সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের স্বীকৃতি

স্বপ্নভঙ্গের বেদনা, চ্যাম্পিয়ন ভারত

| মার্চ 6, 2016 | 0 Comments

téléchargementস্পোর্টস: প্রত্যাশার পারদ ছিল আকাশচুম্বি। প্রথমবারের মতো আন্তর্জাতিক পরিম-লে বড় কোনো ক্রিকেট আসরে শিরোপা জিতবে বাংলাদেশ; মাশরাফিদের ঘিরে স্বপ্নে বিভোর গোটা জাতি। কিন্তু মিরপুরে সেই স্বপ্নের সলিল সমাধি হলো। উইকেটের হারে আরো একবার ফাইনালে এসে এশিয়া কাপ হারানোর যন্ত্রণায় বিদ্ধ হল টাইগাররা।

ফরম্যাটের সঙ্গে প্রতিপক্ষই বদল হয়েছে কেবল, ভাগ বদলায়নি টাইগারদের। ২০১২ সালে ৫০ ওভারের এশিয়া কাপে হতাশা উপহার দিয়েছিল পাকিস্তান, এবার ২০ ওভারের এশিয়া কাপে সেটা দিল ভারত। বৃষ্টি বাগড়া দেয়া ম্যাচে মিরপুর রোববার আগে ব্যাট করে ৫ উইকেট হারিয়ে ১২০ রান তুলেছিল বাংলাদেশ। জবাবে ৭ বল আর ৮ উইকেট হাতে রেখেই জয়ের বন্দরে নোঙর ফেলেছে মহেন্দ্র সিং ধোনির দল।

১২০ রানের পুঁজিটা ছোট না হলেও খুব বেশি বড় ছিল না। ওই পুঁজি নিয়ে ভারতের তারকাসমৃদ্ধ ব্যাটিং লাইনআপকে বেঁধে রাখতে ভালো বোলিংয়ের বিকল্প ছিল না। শুরুতেই রোহিত শর্মাকে (১) সৌম্য সরকারের ক্যাচ বানিয়ে সময়ের সেই দাবি মিটিয়েছেন আল আমিন হোসেন। দুরন্ত ছন্দে থাকা ডানহাতি এই পেসার কিছুটা খাটো লেন্থের বলে প্রলুব্ধ করলে ভারতীয় ওপেনারও পা দিলেন সেই ফাঁদে। লিগ পর্বে দুই দলের দেখায় যে ভুল করেছিলেন সৌম্য, এদিন সস্নিপে দাঁড়িয়ে দারুণ দক্ষতায় বল তালুবন্দি করেছেন তিনি।

অপর প্রান্ত থেকে তাসকিন আহমেদও বোলিং করে গেছেন লাইনলেন্থ ঠিক রেখে। কিন্তু পঞ্চম ওভারে আবু হায়দার বোলিংয়ে আসতেই হাত খুললেন বিরাট কোহলি, সঙ্গে শিখর ধাওয়ানও। অবশ্য আসরে প্রথম ম্যাচ খেলতে নামা বাঁহাতি ওই পেসারের

শিকার হতে পারতেন দুই ব্যাটসম্যানই। কোহলির শটে লংঅনে অল্পের জন্য বলের নাগাল পাননি তামিম। শেষ বলটি ধাওয়ানের ব্যাট ছুয়ে বেরিয়ে গেছে উইকেটকিপার আর সস্নিপের ফাঁক গলে। এরপর ভারতীয় দুই ব্যাটসম্যান চড়াও হয়েছেন সাকিবের ওপরও। প্রথম ৪ ওভারে ১৯ রান করা ভারতীয় ব্যাটসম্যানরা পরের দুই ওভারে তুলল ২৯ রান।

সেই যে লাগামটা আলগা হলো সেটা আর হাতের মুঠোয় পাওয়া গেল না। সাকিব-মাশরাফিদের উদার বোলিংয়ে শুরুতে ভারতের ওপর থাকা চাপটা জগদ্বল পাথরের মতো চেপে বসল বাংলাদেশের বুকে। মাঝে নাসিরের কিছুটা নিয়ন্ত্রিত বোলিংও রক্ষাকবচ হতে পারেনি। যে শিখর ধাওয়ান পুরো আসরজুড়েই রানের জন্য হাপিত্যোস করে মরেছেন, ফাইনালে এসে খোলা তরবারি হয়ে ওঠল তারই ব্যাট। আর টি২০ ক্রিকেটে কোহলি তো ধারাবাহিক পারফরমার। এদিনও সেই ধারাবাহিকতায় ছেদ পড়তে দেননি তিনি। ছেদ টানতে পারেননি বাংলাদেশের বোলাররাও।

৫ রানে রোহিত ফিরে যাওয়ার পর ম্যাচে দ্বিতীয় উইকেটের দেখা পেতে বাংলাদেশকে অপেক্ষায় থাকতে হয়েছে ১৩তম ওভার পর্যন্ত। ততক্ষণে ৯৯ রান জমা হয়ে গেছে ভারতের ঝুলিতে। তাসকিনের বলে সৌম্যর দুরন্ত ক্যাচে পরিণত হওয়ার আগেই ধাওয়ান অবশ্য ৪৪ বলে ৯টি চার আর ১টি ছক্কায় ৬০ রানের ইনিংসে বাংলাদেশের পরাজয়ের গল্পটা লিখে দিয়ে গেছেন। ৯৪ রানের জুটির ইতি টেনে ধাওয়ান ফিরলেও বাকি কাজটা দলপতি ধোনিকে নিয়ে অনায়াসেই সেরেছেন কোহলি।

এর আগে দুই ওপেনার তামিম ইকবাল আর সৌম্য সরকারের ব্যাটে বাংলাদেশের শুরুটা ছিল আশা জাগানীয়া। ৪ ওভারেই ২৯ রানের জুটি, কার্টেল ওভারের ম্যাচে বড় পুঁজিরই স্বপ্ন দেখাচ্ছিল বাংলাদেশকে। আগের ম্যাচের জয়ের নায়ক সৌম্য শুরুতেই রুদ্ররূপে। মুখোমুখি হওয়া প্রথম বলেই রবিচন্দ্রন অশ্বিনকে বাউন্ডারি হাঁকালেন, এরপর আরো দুবার বল সীমানাছড়া করেছেন তিনি। কিন্তু খেই হারালেন আশিষ নেহেরার বলে। ৯ বলে ১৪ রান করে থামলেন হারদিক পান্ডিয়াকে ক্যাচ দিয়ে।

সৌম্য ফিরতেই ছন্দ হারালেন তামিমও। ভারতের বিপক্ষে নিজের সমৃদ্ধ অতীতটাকে এদিন টেনে আনতে পারেননি এই ওপেনার। জাসপ্রিত বোমরাহকে মারতে গিয়ে লাইন মিস করলেন, বল প্যাডে আঘাত হানতেই সমস্বরে আবেদন ভারতীয়দের। আম্পায়ারও আঙুল তুলে দিলেন, অপমৃত্যু হলো ১৭ বলে খেলা তামিমের ১৩ রানের ইনিংসটিরও। ৩ রানের ব্যবধানে দুই ওপেনাকে হারিয়ে দিকহারা বাংলাদেশও। অবশ্য সেটা স্থায়ী হয়নি, আসরজুড়ে দুরন্ত ছন্দে থাকা সাবি্বর রহমান আর সাকিব আল হাসানের ব্যাটে ওই ধাক্কাটা বেশ ভালোভাবেই সামলে নিয়েছে স্বাগতিকরা।

দেশের সেরা তারকা সাকিবকে ঠিক সেভাবে খুঁজে পাওয়া যায়নি এবারের এশিয়া কাপে। ফাইনালে এসে সেটা কিছুটা মিটিয়ে দেয়ার আভাস ছিল তার ব্যাটে। সাবি্বরের সঙ্গে ৩৪ রানের জুটিতে ২১ রানের জোগান দিয়েছেন তিনি। অশ্বিনের শিকার হওয়ার আগে খেলেছেন ১৬ বল। যেভাবে আউট হয়েছেন, দৃষ্টিকটু ঠেকেছে অনেকের কাছেই। কিন্তু ১৫ ওভারে নেমে আসা ম্যাচে ওমন ঝুঁকি না নিয়েও যে উপায় ছিল না। কুতুব মিনারসম ভারতীয় ব্যাটিং লাইনআপকে চ্যালেঞ্জ জানাতে স্কোরবোর্ডে পর্যাপ্ত রানও তো চাই।

কিন্তু মিরপুরের বৃষ্টিস্নাত উইকেট চাইলেও ঠিক নিজেদের মতো করে শট নিতে পারছিলেন না ব্যাটসম্যানরা। বোমরাহর দারুণ নিয়ন্ত্রিত বোলিংয়ের পর অশ্বিনের অফস্পিন খেলতেও রীতিমতো কালঘাম ছুটে গেছে স্বাগতিক ব্যাটসম্যানদের। নিজের কোটার ৩ ওভারে মাত্র ১৪টি রান গুনেছেন ওই ভারতীয় স্পিনার। তার ওমন বোলিংয়ে রানের চাকা অনেকটাই সস্নথ করে দিয়েছিল টাইগারদের। ১০ ওভার শেষে স্বাগতিকদের ঝুলিতে তাই ৬৮ রান। ভারতের ঘারে বড় রানের বোঝা চাপিয়ে দেয়ার সম্ভাবনা শেষ হয়ে গেছে ওখানেই।

বাংলাদেশের ক্রিকেটে ভয়-ডরহীন ব্যাটিংয়ের বিজ্ঞাপন হয়ে উঠা সাবি্বরও ঠিকভাবে খেলতে পারছিলেন না। সময়ের দাবি মেটাতে রীতিমতো হিমশিম খেতে হয়েছে এই ডানহাতিকে। মাঝে দুই রান নিতে গিয়ে মুশফিকুর রহিম (৪) কাটা পড়লেন রান আউটের খড়গে। পরের বলেই মিডউইকেটে কোহলির তালুবন্দি দলপতি মাশরাফি। সাবি্বর তবুও দমে যাননি। মাহমুদউল্লাহকে সঙ্গী করে দলের পুঁজিটাকে যথাসম্ভব সমৃদ্ধ করার প্রাণান্ত চেষ্টা করে গেছেন। শেষ পর্যন্ত অপরাজিত থেকে তিনি ২টি বাউন্ডরিতে ২৯ বলে খেলেছেন ৩২ রানের গুরুত্বপূর্ণ এক ইনিংস।

২০ বলে ৪৫ রানের ষষ্ঠ উইকেট জুটিতে খুনে মেজাজে ছিলেন মাহমুদউল্লাহ। আগের ওভারে নেহেরাকে বাউন্ডারি ছাড়া করা এই ব্যাটসম্যান ইনিংসের ১৪তম ওভারে পান্ডিয়াকে রীতিমতো কচুকাটা করেছেন, একটি চার আর দুটো ছক্কায় মাহমুদউল্লাহ ৫ বলে নিয়েছেন ১৯ রান, শেষ বলে সাবি্বরের ১ রানের সঙ্গে একটি ওয়াইড; ওই ওভার থেকে বাংলাদেশ তুলেছে ২১ রান। মিতব্যয়ী বোমরাহর শেষ ওভারে অবশ্য রান উৎসবের সেই ধারাটা ধরে রাখা যায়নি। তারপরও দুটো করে চার এবং ছক্কায় ১৩ বলে মাহমুদউল্লাহর হার না মানা ৩৩ রান টাইগার বোলারদের দিয়েছে লড়াকু পুঁজি।

সেই পুজিতে লড়াই করেছেনও বোলাররা। কিন্তু শেষরক্ষা হয়নি। দুয়ার থেকে আরো একবার প্রতিপক্ষের এশিয়া কাপ নিয়ে যাওয়া বিষন্ন বদনে চেয়ে চেয়ে দেখতে হয়েছে টাইগারদের।

Category: 1stpage, Scroll_Head_Line, শীর্ষ সংবাদ, স্পোর্টস

About the Author ()

Leave a Reply