রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে লন্ডন মহানগর বিএনপির সম্মেলন পন্ড
মুনজের অাহমদ চৌধুরী, যুক্তরাজ্য :: দফায় দফায় রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ ও মারামারিতে পন্ড হয়ে গেছে যুক্তরাজ্যের লন্ডন মহানগর বিএনপির পূর্বঘোষিত সম্মেলন। হামলা অার পাল্টা হামলায় অন্তত ১০ জন অাহত হয়েছেন।
দীর্ঘ কয়েক বছর পর লন্ডন মহানগর বিএনপি গত রবিবার রাতে পূর্বলন্ডনের ওয়াটারলিলি হলে সম্মেলনের আহবান করে।
সভায় উপস্থিত যুক্তরাজ্য বিএনপির একাধিক নেতা সোমবার সন্ধ্যায় জানান- রাত ৮টার দিকে সন্মেলন শুরু হয়। সাড়ে ৯ টার দিকে পর্যায়ক্রমে কয়েকজন বক্তার পরে মঞ্চে যুক্তরাজ্য বিএনপির প্রভাবশালী সহ-সভাপতি আক্তার হোসেন বক্তব্য দিতে অাসেন। তিনি তাঁর বক্তব্যে, সম্মেলনের বিভিন্ন অনিয়ম, অসচ্ছ প্রক্রিয়া ও গঠনতান্ত্রিক নিয়মে সম্মেলন না হওয়ার বিষয়ে সভায় উপস্থিত যুক্তরাজ্য বিএনপির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে দায়ী করে বক্তব্য প্রদান করেন। সভায় উপস্থিত বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মী অাক্তার হোসেনের সাহসী বক্তব্যকে স্বাগত জানিয়ে ইয়েস ইয়েস বলে করতালির মাধ্যমে সমর্থন জানান।
এসময় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত যুক্তরাজ্য বিএনপির সভাপতি এম এ মালেক নেতাকর্মীদের করতালি দিতে বারণ করেন। মহানগর বিএনপি নেতা রশিদ আহমেদ এবং মুনিম এনাম জানান- ঐ সময় যুক্তরাজ্য স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি নাসির আহমদ শাহিন এম এ মালিকের এই বিধি নিষেধের জবাবে বলেন- কারো বক্তব্যকে সমর্থন করা তো সাংগঠনিক বা রাজনৈতিক এটিকেটে অন্যায় নয়। শাহিনের এ বক্তব্যের জের ধরে নেতাকর্মীদের একটি গ্রুপ মঞ্চে চলে আসার চেষ্টা করেন। যুবদলের সাবেক সভাপতি রহিম উদ্দিনসহ অারো কয়েকজন তাদের বাধা প্রদান করতে এগিয়ে আসলে সেচ্ছাসেবক দলের নেতা সোহাগ মিয়ার সাথে বাকবিতন্ডায় জড়িয়ে পড়েন। একপর্যায়ে দুই পক্ষের মধ্যে হাতাহাতি ও চেয়ার ছুড়াছুড়ির ঘটনা ঘটে।
ঘটনাস্থলে উপস্থিত দলের একাধিক নেতা জানান- মারামারির তীব্রতা দেখে রাত ১০ টায় তারা হল ত্যাগ করেন। ইতোমধ্যেই হল কতৃপক্ষ পুলিশকে খবর দিলে কয়েকমিনিটের মধ্যে প্রায় ১০ থেকে ১৫ টি পুলিশ ভ্যান ওয়াটারলিলি হলের সামনে অবস্থান নেয় । এ সময় ব্যাপক মারামারিতে যুক্তরাজ্য জাসাসের সভাপতি এম এ সালাম ও যুবদল নেতা রহিমসহ আরো কয়েকজন আহত হন। মাথায় মারাত্মক আঘাত প্রাপ্ত এম এ সালামসহ অাহতদের কয়েকজন নেতাকর্মী তাংক্ষনিক চিকিৎসার জন্য রয়েল লন্ডন হাসপাতালে নিয়ে যান।
এব্যাপারে স্বেচ্ছাসেবক দলের লন্ডন নগর কমিটির সিনিয়র সহ সভাপতি মইনুল ইসলাম সোহাগ বলেন- তর্কাতর্কির এক পর্যায়ে জুনিয়রদের মধ্যে হাতাহাতির ঘটনা ঘটে।
সোহাগ আরো অভিযোগ করেন- যুক্তরাজ্য বিএনপি নেতা কামাল উদ্দিনকে আমি শ্রদ্ধা করতাম এবং তাকে একজন ভদ্র রাজনীতিবিদ বলেই জানতাম। কিন্তু আমি স্টেইজের এক পাশে গিয়েছিলাম তার কাছে এই ঘটনাটি ব্যাখ্যা করতে। অথচ কামাল উদ্দিন যুক্তরাজ্য বিএনপির একজন সিনিয়র নেতা হয়ে চেয়ার হাতে নিয়ে আমাকে আঘাত করবেন এটা আমার বিশ্বাস করতে কষ্ট হচ্ছে।
সোহাগের এ অভিযোগের ব্যাপারে যুক্তরাজ্য বিএনপির যুগ্ম সাধারন সম্পাদক কামাল উদ্দীনের বক্তব্য জানতে তার সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
মহানগর বিএনপির আহবায়ক তাজুল ইসলাম সাংবাদিকদের জানান, তাদের সম্মেলন সফল হয়েছে ।
এদিকে সংঘর্ষের পরপর যুক্তরাজ্য বিএনপির সভাপতি এম এ মালেক ও সাধারন সম্পাদক কয়সর অাহমদ তাৎক্ষনিকভাবে বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সাথে লন্ডনের কিংসষ্টন লজে গিয়ে সাক্ষাত করে তাদের অবস্থান ব্যাখ্যা করেন বলে যুক্তরাজ্য বিএনপির একজন উপদেষ্টা সহ একাধিক নেতা নাম না প্রকাশের শর্তে এ প্রতিবেদককে জানান।
যুক্তরাজ্য বিএনপির একাধিক নেতা বলেন- অনুষ্টানস্থলের সিসিটিভির ফুটেজ পর্যবেক্ষন করলেই পুরো ঘটনা বেরিয়ে অাসবে।
এসব ব্যাপারে যুক্তরাজ্য বিএনপির সহ সভাপতি অাক্তার হোসেন বলেন, যা ঘটেছে সেটি দলীয় ফোরামে ঘটেছে, এবং এটি সংগঠনের অভ্যন্তরীন বিষয়। ঘটনাটি দুঃখজনক এবং দলীয় ফোরামেই তা সমাধান হবে। মিডিয়ার কাছে দলের অভ্যন্তরীন বিষয়ে মন্তব্য করতে বিনয়ের সাথে অপারগতা প্রকাশ করেন অাক্তার হোসেন।
পুরো বিষয়টি নিয়ে এ প্রতিবেদকের সাথে সোমবার রাতে অালাপকালে যুক্তরাজ্য বিএনপি সভাপতি এম এ মালেক বলেন- সন্মেলনের প্রথম অধিবেশন শান্তিপুর্নভাবে সম্পন্ন হয়। দ্বিতীয় পর্বের অর্থাৎ কাউন্সিলের অাগে গোলযোগ শুরু হয়। সহ সভাপতি অাক্তার হোসেনের বক্তব্য চলাকালীন সময় তালি দিতে নিষেধ করার বিষয়ে তিনি বলেন- অামি তালি দিতে নিষেধ করিনি, বলেছি শান্ত থাকতে। কারন চিৎকারের মধ্যে অাক্তার ভাইয়ের বক্তব্য শোনা না গেলে অামি অামার বক্তব্যে কিভাবে তার অভিযোগ খন্ডন করবো। পন্ড হওয়া সন্মেলন শেষেই তারেক রহমানের কাছে গিয়ে তাকেঁ ঘটনা ব্যাখ্যা করার ব্যাপারে এম এ মালেক বলেন, এটি সম্পুর্ন মিথ্যা, বানোয়াট। তিনি এদেশে মেহমান হিসেবে অাছেন। অামরা কেন সাংগঠনিক সমস্যা নিয়ে তাঁর কাছে যাবো। এ ঘটনায় জড়িতদের ব্যাপারে দলীয় মহাসচিবের সাথে ফোনে অালাপ করে যুক্তরাজ্য বিএনপির নেতাদের সাথে সর্বসন্মতভাবে সিদ্বান্ত নেয়া হবে। সব সিদ্বান্ত তো অামি একা নিতে পারি না।
সংঘর্ষ ও সেচ্ছাসেবক দলের সোহাগের উপর বিএনপির সিনিওর নেতা কামালের চড়াও হবার ব্যাপারে মালেক বলেন- কামাল কারো উপর হামলা করেনি। এটি মিথ্যা। কামাল মারামারি অাটকানোর চেষ্টা করছিল। অার কেউ মারতে অাসলে অাত্বরক্ষা করা তো অপরাধ নয়। সংঘর্ষের ঘটনাটি যুক্তরাজ্য বিএনপির ভাবমুর্তি নষ্ট করার চক্রান্ত এবং অত্যান্ত দুঃখজনক।
Category: Community news 1st page, Scroll_Head_Line, ইউরোবিডি কমিউনিটি সংবাদ