• ২২ বৈশাখ ,১৪৩১,05 May ,2024
  • ব্রেকিং নিউজ : বাংলাদেশের রিকশাচিত্র পেল ইউনেস্কোর অপরিমেয় সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের স্বীকৃতি

রামপালে কয়লাভিত্তিক তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র একটি আত্মঘাতি সিদ্ধান্ত

| মে 22, 2013 | 0 Comments

 মোঃ রেজাউল কবির: 

বাংলাদেশকে দেয়া সব প্রতিশ্রুতি বাস্তবায় নের আশ্বাস দিয়েছেন ভারতের রাস্ট্রপতি প্রণব মুর্খাজি। অনেক গুরুত্ব ইস্যুর সাথে রয়েছে তিস্তা পানি বন্টন চুক্তি,স্থল সীমানা চুক্তি,বিদ্যুৎ-জ্বালানি সহযোগিতা। বেশ ভালো কথা। প্রতিবেশি দেশের পারস্পরিক সহযোগিতা সবারই কাম্য। কিন্তু সেই সহযোগিতার নমুনা যদি এমন হয়-বাগেরহাটের রামপালে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র বিষয়ে আলোচনার শুরুতেই হিসেবটা কষে নিলে বুঝতে সহজ হবে। এই প্রকল্পে ৭০ ভাগ অর্থ বিদেশী ঋন থেকে আসবে।  ভারত ১৫ ভাগ দেবে  আর বাংলাদেশ দেবে ১৫ ভাগ। বিদেশ থেকে প্রাপ্ত ৭০ ভাগ ঋনের সুদ এবং ঋন পরিশোধের দায়িত্বও বাংলাদেশের। মাত্র ১৫ ভাগ বিনিয়োগ করে ভারতের মালিকানা থাকবে ৫০ ভাগ। এটি হচ্ছে বাংলাদেশ-ভারতের সম-অংশীদারিত্ব চুক্তির নমুনা। বিদ্যুৎকেন্দ্রের সকল ক্ষয়-ক্ষতির দায় বহন করবে বাংলাদেশ। পরিবেশ বিপর্যয়ের কথা ভেবে ভারত নিজেই উদ্যোগ নিয়েও তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপন প্রক্রিয়া থেকে সরে এসেছে। চুক্তিতে পরিস্কার নয় ভারত উৎপাদিত বিদ্যুতের ভাগ পাবে নাকি টাকা ? তাই অর্থনীতিবিদ এবং পরিবেশবিদদের ভাষায়, এ ধরনের অস্বচ্ছ এবং জাতীয় স্বার্থবিরোধী কর্মকান্ড সরকারের পরিহার করা উচিত।    আমরাজানি জ্বালানি সংকট আমাদের প্রধান সমস্যা। সরকার জ্বালানির সংকট নিরসনে বহুমুখী উদ্যোগ নিয়েছে। আগে গ্যাস দিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন হতো। বর্তমানে জ্বালানি তেল দিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হচ্ছে। এখন কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ কাজ শুরু হল। বিদ্যুৎ আমাদের অনেক দরকার। বিদ্যুতের জন্য সরকার, জনগণ উভয়েই বিপদে আছে। তাই বলে আত্মঘাতি সিদ্ধান্ত-ক্ষুধা লাগলে বিষ তো খেতে পারিনা। বাগেরহাটের রামপালে সুন্দরবনের কাছে ১ হাজার ৩২০ মেগাওয়াট উৎপাদন মতার কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ করতে যাচ্ছে সরকার। নিশ্চয়ই ভালো খবর। কিন্তু সেটা সুন্দরবনের কাছে কেন ? কৃষি ও মাছ চাষের স্বর্গভূমি রামপাল, উপকূলের রা কবচ একক বৃহত্তর ম্যানগ্রোভ সুন্দরবনের ভয়াবহ পরিবেশগত সংকটাপন্নতা, সর্বোপরি আড়াই হাজার পরিবারের ভিটামাটি থেকে উচ্ছেদ হওয়া – কোন কিছুই বিবেচনায় নিতে রাজী নয় সরকার। কয়লাভিত্তিক বিুদ্যৎ কেন্দ্র নির্মাণে সরকারের অনড় অবস্থান রাষ্ট্র-জনগনের সকল স্বার্থের বিপরীতে দাঁড়িয়ে গেছে। কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র এলাকার পরিবেশ বিপর্যয়ের কারণ হবে বলে পরিবেশবিদরা মতামত দিয়েছেন। মনে রাখতে হবে যে, বাংলাদেশের ভৌগোলিক এবং জনসংখ্যা ঘনত্বের কারণে পরমাণু বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের জন্য মোটেই উপযোগী নয়। বাংলাদেশের মতো একটি দরিদ্র দেশে পরমাণু বিদ্যুৎ কেন্দ্রের কোন দুর্ঘটনায় যে ভয়াবহ বিপর্যয় ঘটতে পারে তা সামাল দেয়া এ দেশটির পক্ষে কোনোক্রমেই সম্ভব নয়। যেখানে জার্মানি, ফ্রান্স, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ আর্থিক এবং প্রযুক্তির দিক থেকে এগিয়ে থাকা দেশগুলো পরমাণু বিদ্যুৎ কেন্দ্র বন্ধ করে দিচ্ছে এবং নতুন কোন স্থাপনার দিকে যাচ্ছে না, সেখানে বাংলাদেশ কেন এক ভয়াবহ ঝুঁকির দিকে যাচ্ছে।    পরিবেশবাদী সংগঠনগুলো বলছে, সরকার পরিবেশ আইন লঙ্ঘন করে সুন্দরবনের মাত্র ৯ কিলোমিটার এলাকার মধ্যে এই বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের উদ্যোগ নেওয়ায় দীর্ঘমেয়াদি  বিরূপ প্রভাব পড়বে বনের গাছগাছালি, পশুপাখি, মাছসহ সব ধরনের জীব-বৈচিত্র্যের ওপর। বিদ্যুৎকেন্দ্রের গরম পানি, কয়লা পোড়ানো ছাই ও কালো ধোঁয়া সুন্দরবনের সব জীব-বৈচিত্র্য ধ্বংস করে ফেলবে। বাপার প্রতিবেদনে জ্বালানি বিশেষজ্ঞদের উদ্ধৃতি দিয়ে বলা হয়েছে, ৫০০ মেগাওয়াট কয়লাভিত্তিক তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের ফলে অন্তত ৩৭ লাখ টন কার্বন ডাই-অক্সাইড, ১০ হাজার টন সালফার ডাই-অক্সাইড, ১০ হাজার ২০০ টন নাইট্রোজেন অক্সাইড, ২২০ টন হাইড্রো কার্বন, ৭২০ টন কার্বন মনো-অক্সাইড, ১৭০ পাউন্ড পারদ, ২২৫ পাউন্ড আর্সেনিক, ১১৪ পাউন্ড সিসাসহ অন্যান্য বিপুল পরিমাণ বর্জ্য উৎপন্ন হয়। এ ছাড়া বিদ্যুৎকেন্দ্রের বিপুল পরিমাণ ছাই ও অন্যান্য রাসায়নিক পদার্থ বাতাস, ভূপৃষ্ঠ ও ভূ-গর্ভস্থ পানি দূষণ করে। এসব দিক বিবেচনায় রেখে বাগেরহাট তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্রে উপযুক্ত শোধনাগার না থাকলে তা বৃহত্তর সুন্দরবনের জন্য কাল হয়ে দাঁড়াবে। অন্যদিকে সরকার বলছে, সব ধরনের পরিবেশগত দিক রক্ষা করেই বাগেরহাটে ওই তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন করা হবে। এতে সুন্দরবনের জীব-বৈচিত্র্য ক্ষতি হওয়ার কোনো কারণ নেই। অথচ ২০১২ সালে ভারতের মধ্য প্রদেশের নরসিংহপুর জেলার ঝিকলি ও তুমরা গ্রামে এনটিপিসি ৬৬০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন দুটি কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ প্ল্যান্ট নির্মানের প্রস্তাব দেয়। ভারতীয় পরিবেশ মন্ত্রনালয়ের এক্সপার্ট এ্যাপ্রাইজাল কমিটি পরীক্ষা-নিরীক্ষার পরে ঐ এলাকায় প্রস্তাবিত এই প্রকল্প বাতিল করে দেয়। কমিটির যুক্তি ছিলো প্রস্তাবিত এই প্রকল্পের জন্য অধিগ্রহনকৃত ১ হাজার একর জমি কৃষি প্রধান এবং দো-ফসলী। তারা মনে করেন, এই প্রস্তাব সম্পূর্ন অগ্রহণযোগ্য। কমিটি আরো মনে করে যে, এধরনের প্রকল্প নদী-বনভূমি এবং মনুষ্য বসবাস এলাকায় মোটেই উপযোগী নয়।  সুন্দরবনের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ও জীব-বৈচিত্র্য বাংলাদেশের একটি গর্ব। বাংলাপিডিয়ার তথ্য অনুসারে সুন্দরবনের আদি বিস্তৃতি ছিল ১৬ হাজার ৭০০ বর্গকিলোমিটার- যা’ বর্তমানে তিন-ভাগের একভাগ অবশিষ্ট আছে। বাংলাদেশে সুন্দরবনের বর্তমান বিস্তৃতি (৪০% এলাকা ভারতে) প্রায় ৪ হাজার ১১০ বর্গকিলোমিটার, যার মধ্যে ১ হাজার ৭০০ বর্গকিলোমিটার জলমহাল। ইউনেস্কো ১৯৯৭ সালের ৭ ডিসেম্বর জীববৈচিত্র্যের জন্য সুন্দরবনকে ‘ওয়ার্লড হেরিটেজ সাইট’ ঘোষণা করে। বাংলাদেশ সরকারের পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয় ৩০ আগস্ট ১৯৯৯ অপরিকল্পিত কার্যকলাপের কারণে সুন্দরবন রিজার্ভ ফরেস্টের চতুর্দিকে ১০ কিলোমিটার এলাকা ‘প্রতিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকা’ বলে ঘোষণা করে। ওই ঘোষণার ফলে যেসব কাজ নিষিদ্ধ করা হয়েছে, তাহলো, ১) প্রাকৃতিক বন ও গাছপালা কাটা ও আহরণ, ২) সবধরনের শিকার ও বন্যপ্রাণী হত্যা, ৩) বন্যপ্রাণী ধরা ও সংগ্রহ, ৪) প্রাণী ও উদ্ভিদের আবাসস্থল ধ্বংস বা সৃষ্টিকারী সব প্রকার কার্যকলাপ, ৫) ভূমি ও পানির প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্য নষ্ট ও পরিবর্তন করতে পারে এমন সব কাজ, ৬) মাটি, পানি, বায়ু এবং শব্দ দূষণকারী শিল্প বা প্রতিষ্ঠান স্থাপন, মাছ এবং অন্যান্য জলজ প্রাণীর তিকারক যে কোনো প্রকার কার্যাবলী।’ উল্লেখ্য, প্রকল্প এলাকা থেকে মূল সুন্দরবনের দুরত্ব একদম কাছে। অথচ ভারতীয় পরিবেশ আইনে কোন সংরতি বনের ১৫ কিলোমিটারের মধ্যে কোন ধরনের তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন বা নির্মান করা যাবে না। ভারতীয় বিদ্যুৎ সচিব এবং বাংলাদেশের জ্বালানী উপদেষ্টা এসব বাস্তবতার ধার ধারছেন না। একই ধরনের প্রকল্প যা ভারত সরকার বাতিল করে দিয়েছে, সে রকম একটি প্রকল্প বাস্তবায়ন বাংলাদেশের ভেতরে করার ব্যাপারে তাদের অতি আগ্রহ সকলের মধ্যে অনেক প্রশ্ন এবং রহস্যের জন্ম দিয়েছে। কোনরকম পরিবেশ-প্রতিবেশগত বিবেচনা ছাড়াই সুন্দরবনের কোলের ভেতর গড়ে তোলা হচ্ছে এই বিদ্যুৎকেন্দ্র।  কিন্তু বাগেরহাটের রামপাল উপজেলার সাপমারী ও কাটাখালী মৌজায় প্রায় ৪ হাজার একর জমির ওপর যে বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের পরিকল্পনা করা হয়েছে, তা’ সুন্দরবনের চাঁদপাই রেঞ্জের সীমানার মাত্র তিন কিলোমিটার দূরে পড়ে, তাই ওই আদেশ অনুযায়ী এই প্রকল্প অনুমোদন পাওয়ার প্রশ্নই ওঠে না। কিন্তু সরকার সুন্দরবনের পরিবেশগত দিক বিবেচনা না করে সেখানে কয়লাভিত্তিক তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করলে এর দীর্ঘমেয়াদি নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বনের ওপর। এই বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপিত হলে সুন্দরবনের গাছপালাসহ সব ধরনের জীব-বৈচিত্র্য ভয়াবহ বিপর্যয়ের মুখে পড়বে।    ভারত সরকারের বিদ্যুৎ সচিব উমা শংকর যতই আশ্বস্ত করুন কিংবা বাংলাদেশ সরকারের জ্বালানী উপদেষ্টা ড. তৌফিক-ই-এলাহী চৌধুরী যতই বলুন স্বপ্ন বাস্তবায়নের কথা- বাস্তবতা হচ্ছে, রামপালে কয়লাভিত্তিক তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মিত হলে দনি-পশ্চিমাঞ্চলের ভয়াবহ বিপর্যয় এড়ানো যাবে না। এই সাথে সুন্দরবনের অনিবার্য ধ্বংসের আশংকাও উড়িয়ে দিতে পারছেন না পরিবেশ বিজ্ঞানীরা। আর পারছেন না জমি হারানো দিশেহারা আড়াই হাজার পরিবার, যাদের ভবিষ্যত এখনই অনিশ্চিত গন্তব্যে। রামপালে মেগা সাইজের কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ প্রকল্প স্থাপনের সূচনায় ভারতীয় বিদ্যুৎ সচিবের এই আশ্বস্তকরণে প্রশ্ন জেগেছে, তার দেশে বিপর্যয়ের আশংকায় কেন এরকম প্রকল্প বাতিল করা হয়েছে ? অন্যদিকে, জ্বালানি উপদেষ্টা কোন্ ‘স্বপ্ন’ বাস্তবায়নের কথা বলছেন, সেটিই এখন এ অঞ্চলের জনগণের মুখ্য প্রশ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে।  বিশেষ করে বাগেরহাটের রামপালে সুন্দরবন সংলগ্ন সাপমারী-কাটাখালি এলাকায় কয়লাভিত্তিক তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন করা হলে সুন্দরবন ও সংলগ্ন লোকালয়ের ওপর পরিবেশগত তিকর প্রভাব পড়বে। এতে এলাকার মাটি, পানি ও বাতাসের দূষণসহ লবনাক্ততা ও তাপমাত্রা বাড়বে বলে অধ্যাপক ড. আব্দুল্লাহ হারুন চৌধুরী তথ্য দেন।‘রামপালের প্রস্তাবিত কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্রের কারণে অত্র এলাকা এবং সুন্দরবনের ওপর পরিবেশগত প্রভাব’ শীর্ষক গবেষণা প্রতিবেদনে আশঙ্কা করা হয়েছে, সুন্দরবন সংলগ্ন বাগেরহাটের রামপালে এ ধরণের বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন করা হলে পরবর্তি কুড়ি বছরের মধ্যে এলাকার পানি, বাতাস ও মাটি তিগ্রস্ত হবে। গবেষক বলেছেন, এলাকার পানি শতভাগ, বাতাস শতকরা নববই ভাগ এবং মাটি শতকরা পয়ষট্টি ভাগ দূষিত হয়ে পড়বে। মাটির লবনাক্ততা এবং বাতাসে তাপমাত্রা বৃদ্ধি পাবে। বিদ্যমান স্বাভাবিক অবস্থায় পানি ও মাটির ক্ষেত্রে কুড়ি বছর পরে এই দুষণ হতে পারে শতকরা কুড়ি ভাগ করে এবং বাতাসের ক্ষেত্রে শতকরা পনের ভাগ মাত্র। তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রের বর্জ্য, কয়লা ধোয়া পানি, কয়লার ভেতরে থাকা সালফার, লোহাসহ বিভিন্ন খনিজ উপাদান এবং কেন্দ্র থেকে নির্গত কার্বন ডাই অক্সাইড ও কার্বন মনোক্সাইড গ্যাসের মতো বিভিন্ন তিকর গ্যাস থেকে এ সব দূষণ সৃষ্টি হবে। ফলে বিশ্ব ঐতিহ্য সুন্দরবনের জীব বৈচিত্রসহ এলাকার মানুষের কৃষি ও স্বাস্থ্য ঝুঁকি বাড়বে। সবুজ বেষ্টনী তিগ্রস্থ হবে। অন্যদিকে পরিবেশ ঝুঁকি কমাতে অর্থ ব্যয় করা হলে উৎপাদিত বিদ্যুতের দাম মানুষের ক্রয় মতার বাইরে চলে যাবে। ড. হারুন বলেছেন, রামপালের প্রস্তাবিত প্রকল্পে দূষণ প্রতিরোধের জন্য ভারতের ন্যাশনাল থারমাল পাওয়ার কোম্পানি যে ‘আল্ট্রা সুপার ক্রিটিক্যাল মেথড’ ব্যবহারের কথা বলছে তা সঠিক নয়। কারণ ভারতে এখনও এই পদ্ধতি ব্যবহার হয়নি। সেখানে ২০১৭ সালে এই পদ্ধতি প্রয়োগ করে তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্র চালুর প্রস্তাব করা হয়েছে মাত্র। উন্নত বিশ্বেও এ পদ্ধতি এখনও পরীক্ষামূলক পর্যায়ে রয়েছে। তাই এ ধরণের একটি অনিশ্চিত ও পরীক্ষামূলক পদ্ধতি আমাদের জন্য আরও বড় পরিবেশ ঝুঁকির কারণ হতে পারে।    সরকার এই প্রকল্পের পরিবেশগত প্রভাব (এনভায়রনমেন্টাল ইমপ্যাক্ট এ্যানালাইসিস) সম্পর্কে জানগণকে জানতে না দিয়ে গোপণে প্রকল্পটি বাস্তবায়নের চেষ্টা করছে। এ ধরণের একটি বিশাল প্রকল্পের ক্ষেত্রে শুধুমাত্র অর্থনৈতিক (ইকোনমিক্যাল) পরিবেশ যাচাই করাই সব না। ভৌত (ফিজিক্যাল), জৈব (বায়োলজিক্যাল) ও সামাজিক (স্যোশাল) পরিবেশ যাচাই করাও প্রয়োজন। কিন্তু সরকার এ সব বিষয় কৌশলে এড়িয়ে ভারতের সাথে তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনে চুক্তি স্বার করেছে। এই উদ্যোগের বিপরীতে উচ্চ আদালতে দায়ের করা তিনটি রিট পিটিশনও সরকার অগ্রাহ্য করছে।  সরকারি এক সমীক্ষা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ভারতের সঙ্গে স্বারিত চুক্তি অনুযায়ী, রামপালের কয়লাভিত্তিক তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রে প্রথম পর্যায়ে ৫০০-৬৬০ মেগাওয়াট করে দুই ইউনিটে ১,৩০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হবে। এ জন্য অধিগ্রহণ করা হবে প্রায় ১৮০০ একর জমি। দ্বিতীয় পর্যায়ে বিদ্যুৎ কেন্দ্রর কাজ সম্প্রসারণ করে উৎপাদন করা হবে আরো ১৩০০ মেগাওয়াট তাপবিদ্যুৎ। বিদ্যুৎ কেন্দ্রর জ্বালানি হিসেবে ব্যবহৃত হবে বড় পুকুরিয়ার কয়লা। এ কয়লা মংলা সমুদ্রবন্দর দিয়ে মালবাহী জাহাজে আনা-নেওয়া করা হবে। বাগেরহাটের পশুর নদের তীরে তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপিত হলে এর বিষাক্ত কালো ধোঁয়া আচ্ছন্ন করে ফেলবে সুন্দরবন এলাকার নির্মল আকাশ। চিমনি দিয়ে উগরানো ছাই বিস্তীর্ণ এলাকার বাতাসে ভেসে ঘটাবে মারাত্মক দূষণ। কারখানাটির কার্বন, পারদ, সিসা, আর্সেনিকসহ নানা বর্জ্য সরাসরি দূষিত করবে  নদীনালার পানিকে। ভয়াবহ পরিবেশ বিপর্যয়ের কারণে ধীরে ধীরে ম্লান হয়ে যাবে বিশ্ব ঐতিহ্যের অংশ সুন্দরবনের সব সৌন্দর্য। একে একে সব গাছপালা মারা পড়বে। শেষ হয়ে যাবে বিশ্ববিখ্যাত রয়েল বেঙ্গল টাইগারসহ বনের সব পশুপাখি, জলজ প্রাণী।  পরিবেশবিদ  মু. ইনামুল হক বলেছেন, কয়লাচালিত বিদ্যুৎকেন্দ্র পরিবেশ দূষণের ক্ষেত্রে একটি লাল ক্যাটাগরির স্থাপনা, যা’ নির্মাণ করার আগে বাংলাদেশ পরিবেশ আইন ১৯৯৫-এর ধারা ১২ এবং পরিবেশ আইন বিধিমালা ১৯৯৭-র ধারা ৭-এর ৪ ও ৬ (ঘ) উপধারা অনুযায়ী যেসব ছাড়পত্র প্রয়োজন তা’হলো, ১) সম্ভাব্যতা সমীক্ষা রিপোর্ট, ২) প্রাথমিক পরিবেশ পরীক্ষা বা পরিবেশ অভিঘাত যাচাই রিপোর্ট, ৩) শিল্পের লেআউটের  প্ল্যানের ওপর বর্জ্য শোধন স্থাপনা, ৪) প্রসেস ফো ডায়াগ্রাম, ৫) পরিবেশ ব্যবস্থাপনা প্ল্যান, ৬) স্থানীয় প্রতিষ্ঠানসমূহ থেকে অনাপত্তিপত্র, ৭) প্রতিকূল পরিবেশ এবং পরিবেশ দূষণের েেত্র জরুরি ব্যবস্থা ও স্থানান্তর ব্যবস্থা, ৮) তিগ্রস্থদের পুনর্বাসন ব্যবস্থা ইত্যাদি। যদিও বাংলাদেশ সরকার জলাভূমি রায় রামসার কনভেনশন ১৯৭১ এবং জীববৈচিত্র্য রায় রিও কনভেশন ১৯৯২ ইত্যাদি আন্তর্জাতিক আইনগুলো স্বার করেছে এবং সে কারণে বাংলাদেশ সরকার পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য রায় প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। ইউনিয়ন অব কনসার্নড সায়েনটিস্টসের হিসাবে কয়লাচালিত ৫০০ মেগাওয়াটের একটি বিদ্যুৎকেন্দ্র পরিবেশের যেসব হুমকি সৃষ্টি করে, তাহলো, ১) এই কেন্দ্র থেকে বছরে ৩.৭ মিলিয়ন বা ৩৭ লাখ টন কার্বন-ডাই অক্সাইড নির্গত হয়, যা বৈশ্বিক উষ্ণতা বাড়ায়, ২) ১০ হাজার টন সালফার-ডাই অক্সাইড নির্গত করে, যা এসিড বৃষ্টি সৃষ্টি করে, ৩) ১০ হাজার ২০০ টন নাইট্রোজেন অক্সাইড নির্গত করে, যা’ বাতাসে ধোঁয়াশা তৈরি করে, ৪) ৭২০ টন কার্বন মনোক্সাইড নির্গত করে যা’ মাথাব্যথা এবং হৃদরোগ সৃষ্টি করে, এবং ৫) ৫০০ টন ুদ্রকণা, পারদ, সিসা ইত্যাদি নির্গত হয় যা’ ফুসফুসের তি করে ও ক্যান্সার হয়।  এতদসত্ত্বেও জ্বালানি নিরাপত্তার নামে সারাদেশে এভাবে কয়লাচালিত বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এই পরিকল্পনা পরিবেশ ও মানুষের তি তো করবেই, জাতিসংঘ ঘোষিত ‘মিলেনিয়াম ডেভেলপমেন্ট গোল’-এর জীববৈচিত্র্য ও পরিবেশের ভারসাম্য রা করে ’টেকসই উন্নয়ন’-এর ল্য অর্জনও সম্ভব হবে না। বাগেরহাটের রামপালের সংলগ্ন বিশ্ব ঐতিহ্যের তালিকাভুক্ত সুন্দরবন। সুন্দরবনের কাছে এ ধরনের তাপ বিদ্যুৎ পরিবেশ বিপর্যয়ের কারণ হবে বলে মতামত দিলেও পিডিবির চেয়ারম্যান বলেছেন, এ কেন্দ্র পরিবেশের জন্য তিকর কোনো কিছুই হবে না। তিনি আরো বলেন, এ কেন্দ্র থেকে কয়লা পোড়ানোর ফলে যে অ্যাশ বেরুবে তা ক্যাপচার করার জন্য উচ্চ মতার সরঞ্জাম ব্যবহার করা হবে। রামপালের কয়লাভিত্তিক এ কেন্দ্রটি খুলনা শহর থেকে ২৩ কিলোমিটার ও মংলা থেকে ১৪ কিলোমিটার দূরে। এমনকি সুন্দরবন থেকেও ১৪ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। কেন্দ্রটি নির্মাণের জন্য ১ হাজার ৮৩৪ একর জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে। সম্ভাব্য ব্যয় ধরা হয়েছে ১৮০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। উভয় দেশের সমান মালিকানায় এ কেন্দ্রটির ২০১৫ সালে নির্মাণ কাজ শেষ হবে। আন্তর্জাতিক বাজারে আমদানি করা কয়লার মূল্য টন প্রতি ১০৫ মার্কিন ডলার হলে ইউনিট প্রতি দাম পড়বে ৫ টাকা ৯০ পয়সা। আর কয়লার দাম যদি ১৪৫ মার্কিন ডলার হয় তা হলে ইউনিট প্রতি বিদ্যুতের দাম পড়বে ৮ টাকা ৮৫ পয়সা।  এই প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে গিয়ে বাংলাদেশ সরকার ইতিমধ্যেই জলাশয় ভরাট, কার্বন নির্গমন, বন তিগ্রস্তকরণ, বিশ্ব ঐতিহ্য বনাঞ্চল তিগ্রস্ত করাসহ মোট ৫টি দেশীয় ও আন্তর্জাতিক আইন বা কনভেনশন লংঘন করেছেন বলে বিশষজ্ঞরা মনে করছেন। সরকার জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে সর্বাধিক তিগ্রস্ত দেশ হিসেবে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছ থেকে আর্থিক সহায়তা নিচ্ছে। কার্বন নির্গমনের একটি দায় হিসেবে এ অর্থ দিলেও এই প্রকল্পের মধ্য দিয়ে সরকার নিজেই বিপুল পরিমাণ কার্বন নির্গমনের পথে এগোচ্ছে। যা আগামীতে বাংলাদেশের জন্য নির্ধারিত জলবায়ু তহবিলের উপরে আঘাত হিসেবে দেখা দেবে।  এতসব কিছুর পরে সরকার তার অবস্থানে অনড় রয়েছে। সরকারের শীর্ষ ব্যক্তিসহ দায়িত্বশীলরা রামপালকেই কয়লাবিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের জন্য উপযুক্ত স্থান হিসেবে দাবি করছেন। মূলতঃ সরকার পক্ষ সুন্দরবনের পাশে তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণে ৩টি যুক্তি দাড় করিয়েছে। প্রথমত: পরিবেশগত ক্ষতি হবে না, পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র। এ প্রসঙ্গে পরিবশে বিজ্ঞানী ড. আব্দুস সাত্তার বলেছেন, সুন্দরবনের কাছে যদি এ ধরনের প্রকল্প স্থাপিত হয় তাহলে এই ম্যানগ্রোভ ধ্বংস হতে সময় লাগবে না। পরিবেশ দূষণকারী কার্বন ও মিথেন উৎপাদনের জন্য উন্নত বিশ্বকে দায়ী করে সরকার নিজেদের বিশ্ব ঐতিহ্য ম্যানগ্রোভ ধ্বংস করার প্রকল্প হাতে নিয়েছে। সরকারের অন্য যুক্তিটি হচ্ছে- এটি সংরতি বনাঞ্চলের ১৪ কিলোমিটার দূরে। কিন্তু বাপা সভাপতি ড. এমএ মতিন বলেছেন, আমরা নিজেরা গিয়ে দেখেছি এটি সুন্দরবন থেকে মাত্র সাড়ে নয় কিলোমিটার দূরে। যা কিনা সংরতি বন এলাকার মধ্যেই পড়েছে এবং এটি বনেরই অংশ। ড. জিয়াউর রহমানের মতে, আইন অনুযায়ী এখানে কোন শিল্প করার নিয়ম নাই। অথচ এখানেই গড়ে উঠছে সবচেয়ে বিপদজনক লাল ক্যাটাগরির শিল্প।  জিপিএস সিস্টেম ব্যবহার করে পরিবেশ বিজ্ঞাণীরা জানিয়েছেন প্রকল্পটি স্ন্দুরবনের প্রতিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকার মধ্যে পড়ে। জিপিএস কো-অর্ডিনেট এক্সঃ ৮৯.৬৯১৬০ এবং ওয়াই : ২২.৪২৭৭৫ নেয়া হয়েছে পশুর নদীর প্রান্ত থেকে, যেখানে লাল ক্যাটাগরির এ প্রকল্পের সীমানা শুরু হয়েছে। এই পয়েন্ট থেকে সুন্দরবনের দূরত্ব মাত্র ২.০৯ কিলোমিটার। বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ভেতর থেকে নেয়া আরেক হিসেবে বনের দূরত্ব সেখান থেকে মাত্র ৩ কিলোমিটার। সুপারক্রিটিকাল প্রযুক্তি ব্যবহার প্রসঙ্গে বিদ্যুৎ কেন্দ্রের প্রভাব যাচাই (ইআইইএ) কমিটির সদস্য ড. ইজাজ হোসেনের মতে, কি প্রযুক্তি ব্যবহার হবে এবং কি ধরনের কয়লা ব্যবহার হবে তার উপর নির্ভর করছে অনেক কিছুই। এ বিষয়ে কি সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে বা কি প্রযুক্তি ব্যবহার হবে তা নিশ্চিত করে বলার সময় আসেনি। তাঁর মতামত থেকে বোঝা যাচ্ছে, এখনো অনেক বিষয় অমীমাংসিত। যে প্রযুক্তিই আসুক তা কি পারবে সুন্দরবনকে রক্ষা করতে ? এমন প্রশ্নের উত্তরে প্রকৌশলী বিডি রহমতুল্লাহ সরকারের আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার প্রসঙ্গে বলেন, ভারতের কাছে তো আধুনিক প্রযুক্তিই নেই। গত কোপেনেহেহেগন সম্মেলনে কয়লা ভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের জন্য বিশ্ব নেতৃত্ব তাদের সতর্ক করে দিয়েছিল।  ভারত তার নিজের প্রযুক্তি ব্যবহার করেই এখানে বিদ্যুৎ কেন্দ্র তৈরি করবে। পরিবেশের ক্ষতি হবে না এমনভাবে করা হবে, যাতে পরিবেশের ক্ষতি হবে না- এসব অর্থহীন বা অর্বাচীন কথা মানুষকে শুনতে হচ্ছে। উপদেষ্টা, মন্ত্রী, আমলা, বিদেশী কনসালটেন্ট এবং চিহ্নিত কিছু বিশেষজ্ঞের কাছ থেকে। যার সঙ্গে বাস্তবতার কোন সম্পর্ক নেই। পরিবেশের ক্ষতি হবে বলেই ভারতে এমন প্রকল্প বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু কত অদ্ভুত বিষয় হচ্ছে, ভারতে করলে ক্ষতি হবে- বাংলাদেশে করলে হবে না!  কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রে প্রচুর মিষ্টি পানির প্রয়োজন হয়। জানা গেছে, নির্মাণাধীন এই কেন্দ্রের পানি আসবে সংলগ্ন পশুর নদী থেকে। সেখানকার পানি লবনাক্ত, ফলে প্রয়োজন পড়বে লবনাক্ত মুক্তকরণ প্লান্ট বসানোর । পানি বিশেষজ্ঞদের মতে, পশুর নদী এমনিতেই হারাচ্ছে গভীরতা । ফলে বিপুল পরিমান পানি সংগ্রহ নদীর উপর নির্ভরশীল জনগোষ্ঠীর সেচ কাজ, মৎস্য আহরন, নৌ পরিবহন বিঘ্নিত করবে। অন্যদিকে, নদীটি শুকিয়ে গেলে এর উপর নির্ভরশীল জীবনপ্রবাহ মারাত্মক তিগ্রস্ত হবে। পরিনামে দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম আন্তর্জাতিক সমুদ্র বন্দর মংলার আনুষ্ঠানিক মৃত্যু ঘটবে। যা হবে দেশের অর্থনীতির ওপর মারাত্মক আঘাত।  উল্লেখ্য, বিদ্যুৎ সমস্যার জরুরি সমাধানে সরকার এর মধ্যে কয়েকটি কুইক রেন্টাল বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের অনুমোদন দিয়েছে বেসরকারি খাতে। এ নিয়ে জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধিসহ নানা অভিযোগও শোনা গেছে। রাশিয়ার সঙ্গে আগামীতে পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপন করতে যাচ্ছে সরকার। এও সত্য, দেশ-বিদেশে বিপুল বিতর্ক সত্ত্বেও কয়লাভিত্তিক তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে প্রাপ্ত বিদ্যুতের দাম তুলনামূলকভাবে কম। অবশ্য ভারতের সঙ্গে সম্পাদিত চুক্তি অনুযায়ী রামপালের বিদ্যুতের দাম আদৌ কম পড়বে কি না, তা নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে। কেননা স্থানীয় বড়পুকুরিয়ায় প্রাপ্ত কয়লা যেখানে প্রতি টন মাত্র ৮৪-৮৫ ডলারে বিক্রি হয়, সেখানে রামপালের কেন্দ্রটির জন্য ভারত থেকে কয়লা আমদানি করতে হবে প্রতি টন ১৭৩ ডলারে। তারপরও এ প্রকল্পে ভারত সরকার যে অর্থ ব্যয় করবে, বাংলাদেশকে সে জন্য ১৪ শতাংশ হারে সুদ দিতে হবে। হিসাব মতে, প্রতি মেগাওয়াট বিদ্যুতের উৎপাদন খরচ পড়বে ১৫ কোটি টাকা। এতে যৌথভাবে বিনিয়োগ করেও বাংলাদেশের লাভের চেয়ে তির আশঙ্কাই বিশেষজ্ঞদের। তার মানে এ বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে প্রাপ্ত বিদ্যুতের দামও পড়বে অনেক বেশি। অনেকটা ভাড়াভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোর মতোই। এত সব ক্ষতির মুখে তাহলে কি তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্র সম্ভবনা না সংকট এই প্রশ্ন সবার। এই অবস্থায় কার স্বার্থে আত্মঘাতি এই সিদ্ধান্ত ? তাহলে কি আমরা সুন্দরবন ধ্বংসের আরো একটি উদ্যোগ বাস্তবায়ন করতে যাচ্ছি।   একটি কাল্পনিক ছবির কথা ভাবি। ধরা যাক দিনাজপুরের ফুলবাড়িতে উম্মুক্ত পদ্ধতিতে কয়লা খনি এবং তা থেকে ১০০০-১৫০০ মেগাওয়াটের বিদ্যুৎকেন্দ্র হল, ঈশ্বরদীর রূপপুরে ২০০০ মেগাওয়াটের পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র হল, বাঘেরহাটের রামপালে সুন্দরবনের ৯ কিলোমিটারের মধ্যে ১৩২০ মেগাওয়াটের দুটি ইউনিটে ২৬৪০ মেগাওয়াটের বিদ্যুতকেন্দ্র হল। তাহলে মোট উৎপাদন ক্ষমতা দাঁড়ায় ৬১৪০ মেগাওয়াট। উদ্দেশ্য বিদ্যুতে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করা, উৎপাদন ক্ষমতা বাড়ানো, রপ্তানি বাড়ানো, জনগনের ক্রয় ক্ষমতা বাড়ানো এবং দেশের সামগ্রিক অবস্থার উন্নয়ন। কিন্তু বাস্তবে এর কিছুই হবেনা। এই বিদ্যুৎ উৎপাদনের সামগ্রিক প্রভাবে লক্ষ কোটি মানুষ গৃহহীন হবে, দেশের বেশিরভাগ অঞ্চল কৃষি উৎপাদনের সক্ষমতা হারাবে, খাদ্য নিরাপত্তা বলতে কিছু থাকবেনা, পরিবেশ বিপর্যয়ের কারনে ঝড়, বন্যা, অতিবৃষ্টি, অনাবৃষ্টি, মরুকরন সহ মহামারী আকারে ক্যান্সার ও অন্যান্য প্রাণঘাতী রোগের বিস্তার হবে। উৎপাদিত বিদ্যুতের ব্যবহারকারী শ্রেণী হবে মূলত ব্যবসায়ী গোষ্ঠী। বাকি জনগনের ব্যপক বিশাল অংশ নিজের জমি থেকে উচ্ছেদ হয়ে, কৃষি উৎপাদন হারিয়ে, বিভিন্ন রকম রোগে অক্রান্ত হয়ে শুধুমাত্র একটি চাকুরির জন্য তাদের কৃতদাসে পরিণত হবে। অনেকেই বলেন বিদ্যুতের উৎপাদন বাড়লে দেশে শিল্প কল-কারখানা বাড়বে, উৎপাদন বাড়বে, কর্মসংস্থান বাড়বে, বেকারত্ব থাকবেনা। কিন্তু যে মানুষ ফুলবাড়ি কয়লা খনির কারনে জমি হারাবে, বাসস্থান হারাবে, ফসলের উৎপাদন ধ্বংস হয়ে যাবে, তার এই সম্পত্তি হারিয়ে শিল্প কারখানায় চাকুরি পাবার তেমন কোন উপকারিতা আছে বলে মনে হয়না। অথবা যে মানুষ কৃষি কাজের সাথে সম্পৃক্ত তার এবং সম্পর্কিত ভাবে আরও অনেকের খাদ্য নিরাপত্তা নষ্ট করে তাকে একটি চাকুরি প্রদান করলে কিংবা কিছু ক্ষতিপূরণ দিলে অবস্থাটা কি হবে সেটাও একটু চিন্তা করা যাক। বাংলাদেশের মালিক শ্রেণীর শ্রমিকের প্রাপ্য মুজুরি শোষণ করাটা নতুন কিছু নয়, একটা ব্যপক রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক, সামজিক পরিবর্তন ছাড়া এটা ঠিক হয়ে যাবে এটা মনে করার কোন কারন নেই। কোন একটি অবস্থায় যদি শ্রমিককে তার প্রাপ্য মুজুরি দেয়াও হয় তাহলেও তাকে খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা, চিকিৎসা সহ বেঁচে থাকার সমস্ত উপাদান ক্রয় করতে হবে। ফলে উৎপাদনের সাথে সরাসরি সম্পৃক্ত থেকে স্বাধীনভাবে বেঁচে থাকা একটি বিশাল জনগোষ্ঠী মালিক শ্রেণীর ক্রীতদাসে পরিণত হবে। অবশ্য এখনই এরকম অবস্থা চলছে। আর একটি ব্যপার থেকে যায়। ধরা যাক বিদ্যুতের সক্ষমতার কারনে দেশের মোট উৎপাদন বেড়েছে, বেকারত্ব কমেছে, মানুষের ক্রয় ক্ষমতা বেড়েছে। কিন্তু কয়লা এবং পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের অত্যন্ত নিশ্চিত বিষক্রিয়া ছড়িয়ে পড়ার সম্ভাবনা এবং সম্পর্কিত পরিবেশগত বিপর্যয়ের কারনে যে সমস্ত রোগ মহামারী আকারে ছড়িয়ে পড়বে তার ফলে শারীরিক ও মানসিকভাবে বিকলাঙ্গ একটি জাতীর অর্থনৈতিক ভাবে সক্ষম হওয়া কিংবা বেকারত্ব না থাকার কি উপকারিতা আছে তা পাঠক বিবেচনা করবেন। এটি কোন দৃষ্টিকোণ থেকেই সামগ্রিক উন্নয়ন হতে পারেনা। ফসিল ফুয়েল এবং পারমাণবিক বিদ্যুৎ ব্যবহারের একটি যুক্তি দেখানো হয় এই বলে যে যেহেতু আমাদের তেল, গ্যাস, কয়লার সঙ্কট আছে তাই বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য যত বেশী বৈচিত্র্যময় উৎসের ব্যবহার করা যায় ততই ভাল। অর্থাৎ শুধুমাত্র গ্যাস অথবা কয়লার প্রতি নির্ভরশীল না হয়ে পারমাণবিক বিদ্যুতের দিকে গেলে আমাদের ফসিল ফুয়েল নির্ভরশীলতা কমবে। বিদ্যুৎ উৎপাদনের উৎস শক্তির নিরাপত্তা বাড়বে। ব্যপারটা অনেকটা শুধু ডান হাত দিয়ে বিষ না ঘেঁটে দুই হাত দিয়ে বিষ ঘাঁটার মত। তাহলে দীর্ঘদিন ধরে বিষ ঘাঁটা যাবে এবং তুলনা মুলকভাবে দুই হাতের ক্ষতি কমে আসবে। সরাসরি সৌরবিদ্যুৎ প্রযুক্তির সাথে সম্পৃক্ত কিছু প্রযুক্তিবিদের মুখে একথা বলতে শোনা যায় যে বাংলাদেশ সৌরবিদ্যুৎ ও অন্যান্য নবায়নযোগ্য শক্তি ব্যবহারের জন্য উপযুক্ত নয়। সচেতন ভাবে তারা এধরনের মিথ্যাচার কেন করেন তার দুটি কারন হতে পারে। প্রথমত ফসিল ফুয়েল এবং পারমানবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র করার জন্য যারা উৎসাহী, দেশীয় ও আন্তর্জাতিক বিনিয়োগকারী, কমিশনখোর, মুনাফার ভাগীদার তাদের চাপ, তাদের কাছ থেকে সুবিধা গ্রহন। দ্বিতীয়ত নবায়নযোগ্য বিভিন্ন পদ্ধতিতে মানুষের এবং পরিবেশের ক্ষতি না করে যে কার্যকর ভাবে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা যায় তা জনগনের কাছে গোপন করে প্রযুক্তিটিকে কুক্ষিগত করে রাখা এবং এগুলো নিয়ে বহুদিন একচেটিয়া ব্যবসা করে যাওয়ার আকাংখা। এই সব প্রযুক্তিবিদেরা বিদেশ থেকে নবায়নযোগ্য শক্তি বিষয়ে বড় বড় ডিগ্রী নিয়ে এসেও বিভিন্ন সভা, সেমিনার, আড্ডায় এমনভাবে বিষয়গুলো এমন বিভ্রান্তিকর ভাবে বর্ণনা করেন যেন এটা পূর্ণিমার আগের বারোদিন বয়সী চাঁদ নিয়ে দুই বন্ধুর একটি গল্প, যেখানে দুই বন্ধু রিক্সায় করে রাতের বেলা যাচ্ছিল। সামনে খোলা আকাশে বারো দিনের চাঁদ দেখে দুই বন্ধুরই ভাল লাগছে। কিন্তু এদের মধ্যে চতুর বন্ধুটি তার ভাল লাগাটা অন্যজনকে বুঝতে দিতে চায়না। বলল দেখ চাঁদের কি অবস্থা। অন্যজন ভাবল কি মজা তার অনুভূতির সাথে বন্ধুর অনুভূতি মিলে গেছে। খুশী মনে জিজ্ঞাসা করল, কেন কি হয়েছে? উত্তরে প্রথমজন বলল- মনে হয় চাঁদটাকে উপর থেকে কেউ হাতুড়ি দিয়ে পিটিয়ে থেঁতলে দিয়েছে।  সমুদ্রের ঢেউ, জোয়ার, বায়ু, জৈব বর্জ্য এবং নগরের আবর্জনা এবং সৌর শক্তি সবকিছুর সম্ভাবনাই ব্যপক। কিন্তু সম্ভাবনা গুলোকে প্রয়োগের মাধ্যমে এর ফল জনগনের দূয়ারে নিয়ে আসার দায়িত্ব রাষ্ট্রের। বাংলাদেশ রাষ্ট্রের জন্ম যে মহান চেতনায়, মুক্তিযুদ্ধের সেই চেতনাকে পুঁজি করে কিছু মানুষ জনগনেকে বঞ্চিত করে ক্রমাগত সম্পদের পাহাড় গড়ে তুলেছে। অল্প কিছুসংখ্যক লোক পর্যায়ক্রমে ক্ষমতায় এসেছে। ক্ষমতায় থাকা অবস্থায় জনগণের উপর ব্যয়ের বাড়তি বোঝা চাপানো, অত্যাচার, নিপীড়ন, শোষণ লুণ্ঠন চালিয়ে নিজেদের সম্পদ বাড়ানো আর ক্ষমতায় না থাকলে ক্ষমতায় যাবার জন্য পাগলা কুকুর হয়ে থাকা সহ ক্ষমতার আসেপাশে লুটপাটকারী একটি শ্রেণী তৈরি করা, সাম্রাজ্যবাদী দেশ গুলোর কাছে নিজেদের মুনাফা লাভের জন্য জাতীয় সম্পদ তুলে দেয়া, দেশীয় শিল্প কল কারখানা বন্ধ করে আমদানি নির্ভর অর্থনীতি তৈরি করা, জনগনের জীবনযাত্রার ব্যয় বৃদ্ধি পাওয়া, বেকার সমস্যা বেড়ে চলা এসবই চলছে গত ৪২ বছর ধরে। কিন্তু এই সময়ের মধ্যে একটি সরকারও পাওয়া যাবেনা যারা প্রকৃত অর্থে দেশপ্রেমিক এবং জনগনের প্রতিনিধিত্ব করে। ফলে অনেক অনেক সম্ভাবনার দেশ হয়েও এখনো এদেশের গড় আয় ৭৫০ থেকে ৮০০ ডলার। এই রাষ্ট্রে ক্ষমতার চর্চা করা দলগুলো ক্ষমতায় যেতে চায় একটি সুন্দর সমৃদ্ধ রাষ্ট্র গঠনের জন্য নয়। সাম্রাজ্যবাদী প্রভুদের সহায়তায় দেশের সম্পদ লুটপাট করে তাদের জীবনের সুখ সমৃদ্ধি বাড়ানোর জন্য। ফলে তাদের পরিকল্পনায় থাকে কিভাবে মাটির নিচের গ্যাস, কয়লা দ্রুত তুলে ফেলে বিদ্যুৎ কেন্দ্র করার নামে অর্থ লোপাট করা যাবে, কিভাবে বিদেশীদের হাতে স্থল ভাগের এবং সমুদ্রের গ্যাস ব্লক ইজারা দিয়ে কমিশন পাওয়া যাবে কিংবা পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের নামে নতুন চমক দিবে। এখানে শেয়ার মার্কেট থেকে একটি পুরো বাজেটের সমান টাকা লোপাট হয়ে যাবে কিংবা ডেসটিনি, হলমার্কের মত জোচ্চোররা এক বাজেটের ৬ শতাংশের সমান টাকা চুরি করে নিয়ে যাবে। অথচ বিশ্ব বাজারে তেলের দাম কম থাকা এবং ভারত পুরো বাংলাদেশকে কাটাতার দিয়ে ঘেরাও করে রাখা সত্ত্বেও – বিশ্ব বাজারে তেলের দাম বেড়েছে, সীমান্ত দিয়ে তেল পাচার হয় এইসব অজুহাত দেখিয়ে জ্বালানির দাম বাড়াবে, তাদের ঘনিষ্ঠ কুইক রেন্টাল কম্পানিকে সমৃদ্ধ থেকে সমৃদ্ধতর করে তুলবে। এখানে সমুদ্র বিজয়ের মিথ্যা সংবাদকে আনন্দের খবর বলে লক্ষ কোটি মানুষকে নিয়ে বিজয় মিছিল করা হবে অথবা দুর্নীতিবাজদের দেশপ্রেমিক আখ্যা দিয়ে পুরস্কৃত করা হবে। কিন্তু উত্তরবঙ্গ ধ্বংসকারী ফুলবাড়ির কয়লা উত্তোলন, ব্যপক বিশাল মানবিক ও পরিবেশগত বিপর্যয় ঘটার সম্ভাবনা নিয়ে পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপন, সুন্দরবন তথা পুরো বাংলাদেশ ধ্বংসকারী রামপাল বিদ্দুতকেন্দ্র স্থাপন করার জন্য বিদেশি প্রভুদের সাথে ষড়যন্ত্র করার সময় এরা মাটির কথা, দেশের জনগনের কথা, ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কথা ভাবেনা। সাম্রাজ্যবাদী প্রভুদের পা চেটে দেশের ক্ষতি করার সময় এদের ন্যূনতম আত্মসম্মান বোধ থাকেনা কিংবা মুক্তিযুদ্ধের বিশাল ত্যাগ, চেতনা প্রাপ্তি কিছুই এদের স্পর্শ করেনা। সেজন্য অনেক অনেক সম্ভাবনা থাকলেও এরা দেখেও না দেখার ভান করে। কারন জনগনের সুখ, সমৃদ্ধি নিশ্চিত করতে গেলে এদের আখের গোছানো হবেনা। ফলে মাটি, মানুষ, পরিবেশ বাঁচানো একই সাথে প্রযুক্তির সুবিধা গ্রহন করে দেশকে উন্নয়নের দিকে ধাবিত করাটা একটি রাজনৈতিক আকাংখায় পরিণত হয়, বঞ্চিত জনগনের মুক্তির সংগ্রামে পরিণত হয়। কারন ক্ষমতা দখল করে রাখা জোট, মহাজোট, দুই দলের রাজনীতি প্রকৃত অর্থে মাটি, মানুষ পরিবেশের রাজনীতি নয়। জনগনের নিজস্ব রাজনৈতিক শক্তি গড়ে উঠার মাধ্যমে এদেশ থেকে দুর্নীতি সমূলে উৎপাটিত হবে, জনগন তার নিজের স্বার্থে অর্থনীতিকে ঢেলে সাজাবে, শিল্প কলকারখানা তৈরি হবে, বেকারত্বের অবসান হবে, জাতীয় সম্পদের সুবিবেচিত ব্যবহার নিশ্চিত হবে এবং ফসিল ফুয়েল সহ শক্তির পুরো উৎপাদন পরিকল্পনা এমন ভাবে হবে যাতে এই দেশ, মানুষ ও পরিবেশ বাঁচে।  চূড়ান্ত বিবেচনায় আমাদের প্রধান দায়িত্ব হয়ে দাঁড়ায় সেই ধরনের রাজনীতি শক্তিশালী করা যা এই মাটির, মানুষের ও পরিবেশের কথা ভাববে, ফসিল ফুয়েল এবং পারমাণবিক শক্তি বাদ দিয়ে নবায়নযোগ্য জ্বালানির ব্যবহারের মাধ্যমে খুব সহজেই শক্তি ব্যবহারের সঙ্কট কাটিয়ে উঠতে চিন্তা করবে, পরিকল্পনা করবে একইসাথে বর্তমান এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা করবে। আমরা সকলে যদি সচেতন থাকি এবং চেষ্টা করি তাহলে খুব সহজেই আমাদের নিজেদের জন্যতো বটেই ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য একটি নিরাপদ পৃথিবী নির্মাণ করতে পারি। আসুন  আমাদের ভবিষ্যত প্রজন্মের স্বার্থে আমরাই আমাদের পরিবেশকে রক্ষা করি।

Category: 1stpage, দেশের খবর

About the Author ()

Leave a Reply