• ৪ জ্যৈষ্ঠ ,১৪৩১,18 May ,2024
  • ব্রেকিং নিউজ : বাংলাদেশের রিকশাচিত্র পেল ইউনেস্কোর অপরিমেয় সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের স্বীকৃতি

নিউইয়র্কে প্রধানমন্ত্রী-জাতির স্বার্থে যে কোনো ত্যাগ স্বীকারে প্রস্তুত

| সেপ্টেম্বর 29, 2013 | 0 Comments

দেশের খবর: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সংবিধান মেনেই অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে বলে আবারো দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন। গত শনিবার নিউইয়র্কে জাতিসংঘ বাংলাদেশ মিশনের বঙ্গবন্ধু মিলনায়তনে আয়োজিত এক সাংবাদিক সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘দেশ, জাতি ও জনগণের স্বার্থে আমি যে কোন ত্যাগস্বীকার করতে প্রস্তুত।’ তিনি বিরোধী দলীয় নেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, ‘যুদ্ধাপরাধীদের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করুন। সংসদে আসুন। স্পষ্ট করে বলুন, কী চান।’

সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, গণতন্ত্রে বিশ্বাস করলে, নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে ক্ষমতায় আসতে চাইলে, বিএনপি নির্বাচনে অংশ নেবে। বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতিকে একটি গোষ্ঠী সংকট হিসেবে দেখছে বলে উল্লেখ করে তিনি বলেন, বিএনপি যুদ্ধাপরাধীদের সঙ্গ ত্যাগ করলে কোনো সংকটই থাকবে না।

জাতিসংঘ অধিবেশনের ফাঁকে শনিবার ভারতের প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং ও জাতিসংঘ মহাসচিব বান কি মুনের সঙ্গে বৈঠকের পর প্রধানমন্ত্রী এ সাংবাদিক সম্মেলনের আয়োজন করেন।

সাংবাদিক সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ভারতের প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংয়ের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বিষয় নিয়ে ফলপ্রসূ আলোচনা হয়েছে। এছাড়া জাতিসংঘের মহাসচিব বান কি মুনের সঙ্গে একান্ত সাক্ষাত্কারেও ফলপ্রসূ আলোচনা হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, জাতিসংঘ শান্তি মিশনে বাংলাদেশ থেকে আরও একটি নতুন ব্যাটালিয়ন যোগ দেয়ার প্রস্তাব পাওয়া গেছে। অচিরেই আরো একটি ব্যাটালিয়ন যোগ দেয়ার প্রক্রিয়া চলছে। আসন্ন দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বাংলাদেশে পর্যাপ্ত পর্যবেক্ষক পাঠানোর জন্য জাতিসংঘের মহাসচিবের প্রতি আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সংবিধান মেনেই আগামী নির্বাচন সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হবে।

সাংবাদিক সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী দেশের কিছু গণমাধ্যমের সমালোচনা করে বলেন, আমাদের উন্নয়ন-অগ্রগতির সংবাদ তেমন আসে না। অথচ একটু খারাপ কিছু দেখলেই সবগুলো মিডিয়া সেটি ফলাও করে প্রচার করে। সদ্য সমাপ্ত ৫ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থীদের বিপর্যয় ঘটার অনেক কারণের একটি মিডিয়াগুলোর নেতিবাচক প্রচারণা বলেও দাবি করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের মিডিয়াগুলো নেগেটিভ সংবাদকে বেশি গুরুত্ব দেয়ার কালচার তৈরি করেছে।

জামায়াত-শিবির নিষিদ্ধ করতে সরকার কালক্ষেপণ করছে কিনা সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এ বিষয়টি কোর্টে রয়েছে। কোর্টই সিদ্ধান্ত দেবে।’ এ সময় সাংবাদিকদের আরেক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘আমি নিজেও একজন রাজনীতিক। তাই একটি রাজনৈতিক দলকে নিষিদ্ধ করার কথা বলবো কীভাবে?’

শেখ হাসিনা বলেন, বান কি মুন সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যের (এমডিজি) বাংলাদেশের অর্জিত সাফল্যের প্রশংসা করেছেন। জাতিসংঘ মহাসচিবের উদ্ধৃতি দিয়ে তিনি বলেন, এমডিজি অর্জনে যে গুটিকয়েক দেশ দক্ষতার প্রমাণ দিয়েছে বাংলাদেশ তার অন্যতম। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা এমন একটি ব্যবস্থা করতে চাই যেখানে অবাধ, মুক্ত ও নিরপেক্ষ পরিবেশে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে এবং ক্ষমতা হস্তান্তর হবে শান্তিপূর্ণ প্রক্রিয়ায়। আমাদের একটি নির্দিষ্ট অবস্থান থেকে গণতন্ত্র সমুন্নতের প্রক্রিয়া শুরু করতে হবে।’ যুদ্ধাপরাধীদের বিরুদ্ধে রায়ের দ্রুত কার্যকারিতা সম্পর্কে শেখ হাসিনা বলেন, সরকার আদালতের কর্মকাণ্ডে হস্তক্ষেপ করে না।

সাংবাদিক সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রীর পাশে ছিলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডা. দীপু মনি এবং জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি ও রাষ্ট্রদূত ড. এ কে আব্দুল মোমেন। সাংবাদিক সম্মেলনের সঞ্চালক ছিলেন স্থায়ী মিশনের ফার্স্ট সেক্রেটারি (প্রেস) মামুন অর রশীদ।

আওয়ামী লীগের সংবর্ধনায় শেখ হাসিনা

একই দিন নিউইয়র্ক আওয়ামী লীগের এক সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে আগামী জাতীয় নির্বাচনে মহাজোটকে বিজয়ী করতে প্রবাসী বাংলাদেশীদের প্রতি আহ্বান জানান শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, বিএনপি-জামায়াত ও হেফাজত চক্রের অপপ্রচারে বিভ্রান্ত না হতে স্বদেশে আত্মীয়-স্বজনদের উদ্বুদ্ধ করার দায়িত্ব প্রবাসীদেরকেও নিতে হবে। যে কোনো মূল্যে গণতান্ত্রিক ধারা অব্যাহত রাখাই তাঁর একমাত্র লক্ষ্য ও অঙ্গীকার।

হোটেল হিলটনে নিউইয়র্ক আওয়ামী লীগ শেখ হাসিনার সম্মানে এ সংবর্ধনার আয়োজন করে। সংবর্ধনায় শেখ হাসিনা বলেন, আওয়ামী লীগের কর্মীদের জনগণকে এ কথা অবশ্যই বোঝাতে হবে যে আওয়ামী লীগ যখন ক্ষমতায় থাকে তখন দেশের উন্নতি হয় ও মানুষ কিছু পায়। অন্যদিকে বিএনপি ক্ষমতায় এলে এসব ধূসর হয়ে যায়, জনগণ নানামুখী সমস্যায় পড়ে। শেখ হাসিনা বলেন, আগামী বছরের মার্চ বা এপ্রিলে বোয়িং কোম্পানি থেকে সরবরাহকৃত দুটি এয়ারক্রাফট পাওয়া গেলে ঢাকা-নিউইয়র্ক বিমানের ফ্লাইট আবার শুরু হবে।

বিএনপি-জামায়াত ধর্মের নামে জনগণকে বিভ্রান্ত করে পাঁচ সিটি কর্পোরেশনে ভোট নিয়েছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, জনগণ এখন বুঝতে পারছে যে তারা বিএনপি ও জামায়াতের অপপ্রচারে বিভ্রান্ত হয়েছে। বিএনপি-জামায়াত যে অপপ্রচারে চ্যাম্পিয়ন সেটি জনগণের কাছে এখন স্পষ্ট।

তিনি বলেন, বিএনপি চলতি বছরের ৫ মে ঢাকার শাপলা চত্বরে হেফাজতের হাজার হাজার কর্মী নিহত হয়েছে বলে মিথ্যা তথ্য প্রচার করেছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ১৯৯৬ সালের জাতীয় নির্বাচনের আগেও বিএনপি-জামায়াত একই কায়দায় অপপ্রচার চালিয়েছিল। সে সময় তারা বলেছিল যে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে সব মসজিদে আজানের বদলে উলুধ্বনি শোনা যাবে।

যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের সভাপতি ড. সিদ্দিকুর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য আমির হোসেন আমু এমপি, তোফায়েল আহমেদ এমপি, ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন এমপি, জাতীয় পার্টির (এ) প্রেসিডিয়াম সদস্য আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাজ্জাদুর রহমান সাজ্জাদ, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক নিজাম চৌধুরী, সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুর রহিম বাদশাহ, চন্দন দত্ত প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।

Category: 1stpage, দেশের খবর, শীর্ষ সংবাদ

About the Author ()

Leave a Reply