বিদেশিদের ছাড়া সুইজারল্যান্ডের ভাতে টান পড়বে
ইউরো সংবাদ : সুইজারল্যান্ডের গণভোটে অভিবাসনের বিরুদ্ধে রায়ের ফলে বিশেষ করে ইউরোপ জুড়ে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে৷ কিন্তু খোদ সুইজারল্যান্ডের শিল্প-বাণিজ্য জগতও এর নেতিবাচক প্রভাব নিয়ে আশঙ্কায় ভুগছে৷
বহুকাল ধরেই ছুটি কাটানোর গন্তব্য হিসেবে সুইজারল্যান্ড গোটা বিশ্বের পর্যটকদের তালিকার প্রথম সারিতে রয়েছে৷ মনোরম নিসর্গ, পাহাড়-পর্বত, স্কি করার উপযোগী এলাকা – সব মিলিয়ে ছোট্ট এই দেশটিতে বেশ আরামে বেড়ানোর ব্যবস্থা রয়েছে৷ সুইজারল্যান্ডে পর্যটকদের জন্য উচ্চ মানের অবকাঠামো গড়ে উঠেছে অনেক কাল আগেই৷ তবে সেই অবকাঠামো চালু রাখার পেছনেও রয়েছে বিদেশি কর্মীদের অবদান৷ হোটেল, রেস্তোরাঁ, পর্যটন কেন্দ্রে কাজ করেন তাঁরা৷ গণভোটের রায়কার্যকর করা হলে এই সব বিদেশি কর্মীদের ভবিষ্যৎ কী হবে, তাও স্পষ্ট নয়৷
ফলে শুধু কর্মীরা নয়, মাথায় হাত পড়ছে মালিকদেরও৷ সুইজারল্যান্ডে চাহিদা পূরণ করতে না পারার কারণেই তো বিদেশ থেকে কর্মী আনতে হয়েছে৷ তাঁরা চলে গেলে কাজগুলি করবে কে! সুইজারল্যান্ডের পর্যটন শিল্পের ভবিষ্যৎ কি তাহলে অন্ধকার?
আল্পস পর্বতে বিখ্যাত ‘শোয়াইৎসারহোফ’ হোটেলের ম্যানেজার আন্দ্রেয়াস স্যুলিশ বলেন, সুইজারল্যান্ড খুবই ছোট দেশ৷ হোটেলের প্রায় ৪০ শতাংশ কর্মীই বিদেশি – মূলত ইউরোপীয় ইউনিয়নের কোনো দেশ থেকে তাঁরা এসেছেন৷ শুধু পর্যটন নয়, স্বাস্থ্য পরিষেবা সহ অনেক ক্ষেত্রেই দেশের মধ্যে যথেষ্ট সংখ্যক প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত কর্মীর অভাব রয়েছে৷
শুধু হোটেল-মালিক স্যুলিশ নন, এমন উৎকণ্ঠার সুর শোনা যাচ্ছে রসায়ন, ওষুধ, বায়ো প্রযুক্তির মতো ক্ষেত্রের অনেক সংস্থার কর্ণধারদের কণ্ঠে৷ অনেক কোম্পানিতে প্রায় অর্ধেক কর্মীই ইইউ নাগরিক৷ অনেকে বলছেন, নিয়ম অনুযায়ী তিন বছরের মধ্যে গণভোটের রায় কার্যকর করা হলে তাদের সুইজারল্যান্ড থেকে পাততাড়ি গুটিয়ে বিদেশে দপ্তর ও কারখানা খুলতে হবে৷ সুইজারল্যান্ডের বিখ্যাত নেসলে ও সোয়াচ কোম্পানিও প্রমাদ গুনছে৷ তাদের শীর্ষ পদে বিদেশিদের রমরমা৷
সুইজারল্যান্ডের গণভোটের রায়ের ফলে ইউরোপীয় ইউনিয়নও পাল্টা পদক্ষেপ হিসেবে শুল্ক চাপাতে পারে বলে অনেক সুইস শিল্পপতি আশঙ্কা করছেন৷ তখন তাঁদের পক্ষে ইউরোপে রপ্তানি করা কঠিন হয়ে উঠবে৷
শিল্প জগতের একাংশ অবশ্য নতুন পরিস্থিতির মধ্যে নতুন সম্ভাবনার আলোও দেখতে পাচ্ছেন৷ তাঁদের মতে, এতকাল বড় বেশি ইউরোপের প্রতি মনোযোগ দেওয়া হচ্ছিল৷ আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতার বাজারে টিকতে হলে এশিয়ার প্রতি আরও বেশি মনোযোগ দেওয়া উচিত বলে তাঁরা মনে করেন৷
বিদেশিদের উপর এত নির্ভরতা সত্ত্বেও সুইজারল্যান্ডের মানুষ গণভোটে এমন রায় দিলেন কেন? এর আংশিক উত্তর হয়ত লুকিয়ে রয়েছে পরিসংখ্যানের মধ্যে৷ দেশের জনসংখ্যা ৮০ লক্ষের সামান্য বেশি৷ তার মধ্যে প্রায় ২৪ শতাংশ – অর্থাৎ প্রায় এক-চতুর্থাংশই বিদেশি৷ গত বছরে এই সংখ্যা প্রায় ৩.৪ শতাংশ বেড়েছে৷ সে তুলনায় জার্মানির জনসংখ্যা প্রায় ৮ কোটি ২০ লক্ষ, যার মধ্যে ৯ শতাংশ বিদেশি৷ সুইজারল্যান্ডের বিদেশিদের মধ্যে প্রায় দুই-তৃতীয়াংশই ইইউ এবং নরওয়ে, আইসল্যান্ড ও লিশটেনস্টাইনের নাগরিক, যাদের সুইজারল্যান্ডে বসবাস ও কাজ করার অধিকার রয়েছে৷ অন্তত এখনো পর্যন্ত তাই ছিল৷ গণভোটের রায় কার্যকর হলে তাঁরা সেই অধিকার হারাবেন৷
Category: 1stpage, ইউরো সংবাদ, ইউরো সংবাদ