• ৬ জ্যৈষ্ঠ ,১৪৩১,20 May ,2024
  • ব্রেকিং নিউজ : বাংলাদেশের রিকশাচিত্র পেল ইউনেস্কোর অপরিমেয় সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের স্বীকৃতি

রানের পাহাড় গড়েও ‘আফ্রিদি ঝড়ে’ বাংলাদেশ লণ্ডভণ্ড, ফাইনালে পাকিস্তান

| মার্চ 4, 2014 | 0 Comments

স্পোর্টস: পাকিস্তানের বিপক্ষে রানের পাহাড় গড়েও জিততে পারল না বাংলাদেশ। আফ্রিদি ঝড়ে তিন উইকেটে হারের ফলে এবারের এশিয়া কাপে টানা তৃতীয় পরাজয় বরণ করতে হলো টাইগারদের। অন্যদিকে, স্বাগতিকদের হারিয়ে টানা দ্বিতীয়বারের মত এশিয়াকাপের শিরোপা নির্ধারনী ম্যাচের টিকেট পেল পাকিস্তান। মাত্র ২৫ বলে আফ্রিদির ৬৯ রানে ভর দিয়ে এক বল ও তিন উইকেট হাতে রেখে ৩২৯ রান করে জয় নিশ্চিত করে দলটি।

 

আজ (মঙ্গলবার) রাজধানীর মিরপুর স্টেডিয়ামে টস জিতে প্রথমে ব্যাট করে রানোৎসবে মেতে উঠেছিল টাইগাররা। শীর্ষ ৫ ব্যাটসম্যানের অসাধারণ বীরোচিত ব্যাটিংয়ে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ৩ উইকেটে ৩২৬ রানের বিশাল সংগ্রহ গড়ে বাংলাদেশ। ওয়ানডে ক্রিকেটে এটাই কোন দলের বিপক্ষে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ সংগ্রহের রেকর্ড।

 

ব্যাটসম্যানদের এই রানোৎসবের সূচনা করেন বাংলাদেশের নতুন উদ্বোধনী জুটি আনামুল হক বিজয় এবং ইমরুল কায়েস। শুরু থেকেই অসম সাহসিকতায় পাক বোলারদের বিপর্যস্ত করে তারা দলকে উড়ন্ত সূচনা এনে দেন। ইনিংসের ১২তম ওভারে দলীয় অর্ধশতক ও ১৮তম ওভারে দলীয় শতক পাইয়ে দেন তারা দলকে। শেষ পর্যন্ত ২৮.৪ ওভারে ১৫০ রান তোলার পর বিচ্ছিন্ন হয় এই জুটি। ইমরুল কায়েস ৭৫ বলে ৫ চার ও ২ ছক্কায় ৫৯ রান তুলে মোহাম্মদ তালহার বলে কট বিহাইন্ড হন।

 

এর পর আনামুলের সঙ্গে জুটি বাঁধেন মুমিনুল হক। এ জুটিতে ৫৪ রান যোগ হয়। আনামুল শুরু থেকে অসাধারণ দায়িত্বশীলতার পরিচয় দিয়ে ওয়ানডে ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় শতক পূর্ণ করেন। এরপরই তার ১৩২ বলে ৬ চার ও ৪ ছক্কায় ১০০ রানের ইনিংসটি শেষ হয় সাঈদ আজমলের বলে আহমেদ শেহজাদের তালুবন্দী হয়ে। এবার জুটিবদ্ধ হন মুমিনুল হক এবং অধিনায়ক মুশফিকুর রহিম।

 

চমকপ্রদ ব্যাটিং করে অর্ধশতক পূর্ণ করে পাক তারকা অফ স্পিনার সাঈদ আজমলের শিকারে পরিণত হলেন মুমিনুল হক। ইনিংসের ৪৪.২ ওভারে ৪৭ বলে ৬ বাউন্ডারিতে ৫১ রানের অনবদ্য ইনিংস খেলা মুমিনুল বিগ শট হাঁকাতে গিয়ে মোহাম্মদ হাফিজের তালুবন্দী হন। বাংলাদেশের দলীয় সংগ্রহ তখন ছিল ৩ উইকেটে ২৪৯ রান।

 

এরপরই শেষ চমক উপহার দেন নিষেধাজ্ঞা কাটিয়ে দলে ফেরা বিশ্বের অন্যতম সেরা অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসান। ৪র্থ উইকেটে অধিনায়ককে নিয়ে পাক বোলারদের বিধ্বস্ত করে মাত্র ৫.৪ ওভারে ৭৭ রান সংগ্রহ করেন তিনি। ফলে বাংলাদেশ শেষ পর্যন্ত তাদের ওয়ানডে ক্রিকেটের সর্বোচ্চ সংগ্রহটি অর্জন করে স্বাধীনতার মাসে পাকিস্তানের বিপক্ষেই। অধিনায়ক মুশফিক মাত্র ৩৩ বলে ৮ বাউন্ডারির ঝড়ে ৫১ রান তুলে অপরাজিত থাকেন। অন্যদিকে টানা ৩ ম্যাচ না খেলার বঞ্চনার শোধ নেন সাকিব আল হাসান। পাক বোলারদের তুলোধুনো করে তিনি মাত্র ১৬ বলে ৬ বাউন্ডারি এবং ২ ছক্কায় ৪৪ রানের টর্নেডো ইনিংস খেলে অপরাজিত থাকেন।

 

পাকিস্তান ৮ বোলার ব্যবহার করেও সাফল্য পায়নি। কেবল মোহাম্মদ হাফিজ ১০ ওভার বল করে ২৭ রান দেন। অন্য সবাই বেধড়ক পিটুনি খেয়েছেন। আর আবদুর রেহমান কোনো বল না করেই ৮ রান দেয়ার লজ্জায় মুখ লুকিয়েছেন। ১১তম ওভারে বল করতে এসে দুটির বেশি বিমার দেয়ায় তাকে বল করার ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেন আম্পায়ার। তবে যে তিনটি বল করেছেন, সবগুলোই হয়েছে নো বা বিমার। আর তা থেকে বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানেরা ৮ রান নেয়।

 

৩২৭ রানের লক্ষ্য ছুড়ে দেয়ার পর বোলিংয়েও পাকিস্তানকে ভালোভাবে চেপে ধরেছিল বাংলাদেশ। ২০ ওভারে ৪টি মেডেন পাওয়ার পরও কাঙ্ক্ষিত উইকেটের দেখা মিলছিল না। ২০.৪ ওভারে পাকিস্তানের প্রথম উইকেটের পতন। বাংলাদেশের পক্ষে প্রথম ব্রেক থ্রুটি এনে দিলেন মুমিনুল হক। মুমিনুলের বলে ইমরুল কায়েসের হাতে ক্যাচ দেয়ার আগে মোহাম্মদ হাফিজ করেছেন ৫২। এরপর মিসবাহ-উল-হকও বেশিক্ষণ দাঁড়াতে পারেননি উইকেটে। ৪ করা পাকিস্তান অধিনায়ককে বোল্ড করেছেন সাকিব আল হাসান। এরপর শোহেব মাকসুদকেও ফিরিয়েছেন মুমিনুল। ২০.৪ থেকে ২২.৫—এই ১৪ বলে পাকিস্তানের ৩ উইকেটের পতন।

 

এরপর অবশ্য আহমেদ শেহজাদ ও ফাওয়াদ আলম বিপর্যয় সামাল দেয়ার চেষ্টা করেন। দু’জনের চতুর্থ উইকেট জুটিতে আসে ১০৫ রান। শেহজাদ ছুঁলেন পঞ্চম ওয়ানডে সেঞ্চুরি। ১০৩ করে এ ডানহাতি বোল্ড হয়েছেন আবদুর রাজ্জাকের বলে। এরপর মাহমুদউল্লাহর বলে ফিরেছিলেন আবদুর রেহমানও।

 

এরপরই শুরু হয় শহীদ আফ্রিদির তাণ্ডব। মাত্র ১৮ বলে করলেন ফিফটি। সাকিবের হাতে রানআউট হওয়ার আগে ৭টি ছয় ও ২টি চারের সাহায্যে করেন ৫৯ রান।

 

আফ্রিদির বিদায়ের পর দলের দায়িত্ব নিজের কাঁধে নেন দলে ফেরা ফাওয়াদ আলম। রাজ্জাকের ওভারে দুই ছক্কা হাঁকিয়ে ম্যাচ ছিনিয়ে নেন তিনি স্বাগতিকদের কাছ থেকে। শেষ পর্যায়ে তিনিও রান আউট হয়ে ফিরে যান। কিন্তু তাতে কোন সমস্যাই হয়নি উমর আকমলদের। ১ বল বাকী থাকতেই লক্ষ্যে পৌঁছে যায় তারা।

বাংলাদেশের পক্ষে মমিনুল ২টি, মাহমুদুল্লাহ ১টি, আব্দুর রাজ্জাক ১টি ও সাকিব আল হাসান ১টি করে উইকেট নেন।

 

বাংলাদেশের বিপক্ষে শ্বাসরুদ্ধকর ম্যাচে তিন উইকেটের জয়ে এশিয়া কাপের ফাইনালে উঠেছে বর্তমান চ্যাম্পিয়ন পাকিস্তান। ফাইনালে পাকিস্তানের মুখোমুখি হবে শ্রীলঙ্কা। আফগানিস্তানকে হারিয়ে আগেই ফাইনালের টিকিট কেটে রাখে লঙ্কানরা। আগে শ্রীলঙ্কা টানা তিন ম্যাচ জিতে বোনাস পয়েন্টসহ ১৩ পয়েন্ট পেয়ে ফাইনালে ওঠে সবার আগে। শ্রীলঙ্কার কাছে হারের পর এই নিয়ে টানা তিন জয়ে পাকিস্তানও বোনাস পয়েন্টসহ ১৩ পয়েন্ট নিয়ে আবারও ফাইনাল নিশ্চিত করে।

Category: 1stpage, Scroll_Head_Line, স্পোর্টস

About the Author ()

Leave a Reply