মালয়েশিয়া এয়ারলাইনসের উড়োজাহাজ নিখোঁজ,রহস্যের কিনারা হয়নি
আন্তর্জাতিক: নিখোঁজ হওয়ার পর তিন দিন পেরিয়ে গেল গতকাল সোমবার মধ্যরাতে। কিন্তু কোনো হদিসই মিলল না মালয়েশিয়া এয়ারলাইনসের নিখোঁজ উড়োজাহাজটির। নয়টি দেশের ৪০টি জাহাজ এবং ৩৪টি বিমান তন্নতন্ন করে খুঁজেও গতকাল পর্যন্ত বের করতে পারেনি উড়োজাহাজটির সামান্যতম আলামত।
এদিকে তল্লাশি অভিযানে নেমেছে মার্কিন সপ্তম নৌবহরও। এটির কমান্ডার উইলিয়াম মার্কস বলেছেন, শান্ত সাগরে একটি ফুটবলও যদি ভাসে, তাহলে তাঁদের রাডারে সেটি শনাক্ত করা সম্ভব। কিন্তু এ ক্ষেত্রে তাঁরাও এখন পর্যন্ত কিছুই করতে পারেননি। আর এর সঙ্গে নাশকতা বা সন্ত্রাসবাদ জড়িত কি না, তারও হদিস করতে পারেনি যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ গোয়েন্দা সংস্থা এফবিআই।
২২৭ জন যাত্রী ও ১২ জন ক্রু নিয়ে গত শুক্রবার স্থানীয় সময় রাত ১২টা ৪১ মিনিটে আকাশে উড়েছিল উড়োজাহাজটি। মালয়েশিয়ার রাজধানী কুয়ালালামপুর থেকে উড্ডয়নের পর গন্তব্য ছিল চীনের বেইজিং। ঘণ্টা খানেকের মধ্যেই এর সঙ্গে বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষের সব ধরনের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়।
বিমানটি মধ্য আকাশে ধ্বংস কিংবা সাগরে বিধ্বস্ত—এই দুই আশঙ্কার যা-ই ঘটুক, সেটি দুর্ঘটনা ছিল, না এর পেছনে কোনো সন্ত্রাসবাদ জড়িত—এসব কোনো প্রশ্নেরই মীমাংসা হয়নি। ভিয়েতনামের একটি অনুসন্ধান দল রোববার রাতে দাবি করেছিল, তাদের জলসীমায় থো চু দ্বীপের কাছে উড়োজাহাজটির ধ্বংসাবশেষের মতো কিছু আলামত চিহ্নিত করতে পেরেছে। তবে গতকাল দেশটির বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ জানায়, আগের দিন রাতে যা দেখা গিয়েছিল, তা আসলে উড়োজাহাজের ধ্বংসাবশেষ নয়।
মালয়েশিয়ার বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের প্রধান আজাহারউদ্দিন আবদুল রহমান বলেছেন, ভিয়েতনাম উপকূলে তল্লাশি অভিযান আরও জোরদার করা হচ্ছে। আরও জাহাজ পাঠানো হচ্ছে। ভিয়েতনাম কর্তৃপক্ষের সঙ্গেও যোগাযোগ করা হয়েছে। একই সঙ্গে ভিয়েতনাম উপকূল ও দক্ষিণ চীন সাগরসহ সমুদ্রের আরও বেশি এলাকাজুড়ে তল্লাশি অভিযান চালানো হচ্ছে। মালাক্কা প্রণালির জলসীমায়ও তল্লাশি চালানো হচ্ছে।
আগের দিন জানা গিয়েছিল, ভিয়েতনামের থো চু দ্বীপের কাছে সমুদ্রে পানির ওপরে দুটি ভাসমান তেলের রেখা পাওয়া গেছে। তবে ওই তেল পরীক্ষা করে গতকাল জানা গেছে, তা বিমানের তেল নয়।
মালয়েশিয়ার বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ রোববার জানিয়েছিল, তাদের রাডারব্যবস্থায় এমন একটি সংকেত পাওয়া গেছে, যা থেকে মনে হচ্ছে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়ার আগে বিমানটি আবার কুয়ালালামপুরের দিকে ফিরতে চেয়েছিল। রাডার সংকেতটি পরীক্ষা করা হচ্ছে। কিন্তু গতকাল পর্যন্ত এ বিষয়ে আর কিছুই জানা যায়নি।
বিমানটির ক্যাপ্টেন ছিলেন একজন অভিজ্ঞ পাইলট। যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়ার আগে তিনিও কোনো বিপদের বার্তা নিয়ন্ত্রণকক্ষে পাঠাননি। তা ছাড়া বিমানটি উড্ডয়নের সময় ওই অঞ্চলের আবহাওয়াও কোনো রকম অস্বাভাবিক ছিল না।
বিমানে দুজন সন্দেহভাজন যাত্রী ছিলেন বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ। ইতালি ও অস্ট্রিয়ার ওই দুই নাগরিক ভুয়া চুরি করা পাসপোর্ট নিয়ে ওই বিমানে আরোহী হয়েছিলেন। বিমানবন্দরের ক্লোজড সার্কিট ক্যামেরায় ধারণ করা ভিডিও ফুটেজ দেখে তাঁদের চিহ্নিত করা হয়েছে। ইউরোপীয় চেহারা ও অবয়ব নিয়েও এশীয় পাসপোর্ট দিয়ে তাঁরা কীভাবে বিমানবন্দরের কর্মকর্তাদের নজর এড়িয়ে বিমানে চড়লেন, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন মালয়েশিয়ার পুলিশপ্রধান খালিদ আবু বকর।
এ ছাড়া আরও দুজন সন্দেহভাজন ব্যক্তি বিমানের ওই ফ্লাইটের টিকিট কিনেছিলেন। কিন্তু তাঁরা শেষ পর্যন্ত বিমানে চড়েননি। টিকিট কিনেও কেন তাঁরা গেলেন না, সেটাও বেশ রহস্যজনক। মালয়েশিয়ার বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের প্রধান আজাহারউদ্দিন জানান, বিমানটি ছিনতাইয়ের চেষ্টার আশঙ্কাও নাকচ করছেন না তাঁরা।
এদিকে তল্লাশি অভিযান আরও জোরদার করতে গতকাল মালয়েশিয়ার প্রতি আহ্বান জানিয়েছে চীন। একই সঙ্গে চীনের গণমাধ্যমে ক্ষোভ প্রকাশ করা হয়েছে তল্লাশি কার্যক্রম নিয়ে মালয়েশিয়া কর্তৃপক্ষের ‘ঢিলেমির’ কারণে। আরোহীদের মধ্যে দুই-তৃতীয়াংশই চীনের নাগরিক। মালয়েশিয়া এয়ারলাইনস দেশটির রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান। বিশ্বজুড়ে প্রায় ৮০টি গন্তব্যে চলাচল করে তাদের বিমান।
Category: 1stpage, Scroll_Head_Line, আন্তর্জাতিক, ব্রেকিং নিউজ