ওবামা বনাম পুতিন স্নায়ুযুদ্ধ
আন্তর্জাতিক: নব্বইয়ের দশকের গোড়ার দিকে সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর বিশ্বের স্নায়ুযুদ্ধ একরকম শেষ হয়ে যায়। দুর্বল হয়ে পড়ে সোভিয়েত বেষ্টনী থেকে একলা হয়ে পড়া রাশিয়া। এই সুযোগে সাম্রাজ্য বিস্তারে ছড়ি ঘোরানোর ক্ষেত্রে অনেকটা অপ্রতিরোধ্য হয়ে ওঠে যুক্তরাষ্ট্র।
আরব বসন্তের ডামাডোল, ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনের টানাপোড়েনসহ বিভিন্ন ঘটনায় যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকা তা প্রমাণ করে। তবে ভ্লাদিমির পুতিন নতুন মেয়াদে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর তাঁরা যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে টক্কর দেওয়ার সেই চিরাচরিত ধারায় যেন ফিরে আসছেন। সিরিয়া-সংকট নিয়ে যে অচলাবস্থা চলছে, এতে রুশ-মার্কিন অবস্থান সেয়ানে-সেয়ানে টক্করের মতো। প্রেসিডেন্ট বাশারের বিরুদ্ধাচরণ করে পশ্চিম সমর্থনপুষ্ট ওয়াশিংটন যেমন বিদ্রোহীদের মদদ দিয়ে যাচ্ছে, তেমনি বাশারের সমর্থনে থাকা মস্কোও এ টক্করে একচুলও ছাড় দিচ্ছে না।
যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়া তথা মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা এবং রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সর্বশেষ মুখোমুখি অবস্থান এসে ঠেকেছে সম্প্রতি চাগিয়ে ওঠা ইউক্রেন-সংকটে। এর জের ধরে আবার যেন মূর্ত হয়ে উঠেছে সত্তর বা আশির দশকজুড়ে থাকা দুই দেশের সেই স্নায়ুযুদ্ধ।
ইউক্রেনের ক্রাইমিয়া অঞ্চলে সামরিক হস্তক্ষেপের পরিপ্রেক্ষিতে রাশিয়ার ওপর অবরোধ আরোপের হুমকি দিয়েছেন ওবামা। এই হুমকির মধ্য দিয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট বাস্তবিক অর্থেই পুতিনের সঙ্গে বিরোধে জড়ালেন। তাঁদের মধ্যকার এই দ্বন্দ্বের শিকড় দুই পরাশক্তির পুরোনো বিরোধের মধ্যে নিহত বলে কেউ কেউ মনে করছেন।
স্নায়ুযুদ্ধকালীন কায়দায় লড়াইয়ে ওবামার অনাগ্রহ স্পষ্ট। কিন্তু পুরোনো বিরোধের ধারাবাহিকতায় ক্রাইমিয়া নিয়ে রুশ-মার্কিন শত্রুতা নতুন করে জেগে না ওঠার আশঙ্কা উড়িয়ে দেওয়া যায় না।
ক্রাইমিয়া-সংকট সমাধানে প্রথম থেকে ওবামা নানা ধরনের কূটনৈতিক তত্পরতা চালাচ্ছেন। দুই দেশের দুই নেতা ফোনে দীর্ঘ সময় নিয়ে কথাও বলেছেন। কিন্তু সেই ফোনালাপ তেমন মধুর হয়নি বলে গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদনে জানানো হয়। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরিও কথা বলেছেন রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে। তবে নানা হুমকি সত্ত্বেও ক্রাইমিয়া থেকে রাশিয়ার সরে আসার কোনো লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না; বরং রাশিয়াও পাল্টা হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছে।
নিজ দেশে প্রতিপক্ষ রাজনীতিবিদেরা ওবামাকে অক্ষম রাষ্ট্রনায়ক হিসেবে চিহ্নিত করেন। ইউক্রেন-সংকটের প্রেক্ষাপটে সেই অপবাদ আবার সামনে উঠে এসেছে। ওবামার কার্যক্রম হালকা হুমকি ও কূটনৈতিক তত্পরতার মধ্যেই সীমাবদ্ধ আছে। রাশিয়ার সঙ্গে শত্রুতায় ওবামার অনাগ্রহ আছে। তিনি ক্ষমতায় এসেছিলেন পুরোনো ক্ষত সারিয়ে সম্পর্ক উন্নয়নে।
তা ছাড়া রাশিয়ার সঙ্গে শত্রুতায় খুব একটা লাভবান হবেন না ওবামা; বরং ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচিসহ বিভিন্ন স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয় যুক্তরাষ্ট্রের জন্য গলার কাঁটা হয়ে উঠতে পারে।
স্নায়ুযুদ্ধের সঙ্গে ওবামার সরাসরি সম্পৃক্ততা নেই। তিনি ভাবছেন, স্নায়ুযুদ্ধ শেষ। কিন্তু সাবেক কেজিবি সদস্য পুতিনের মধ্যে স্নায়ুযুদ্ধের স্মৃতি জাগ্রত। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্কে তাঁর বিভিন্ন সিদ্ধান্ত স্নায়ুযুদ্ধের চেতনা থেকেই আসে বলে মনে করেন বিশ্লেষকেরা।
Category: 1stpage, Scroll_Head_Line, আন্তর্জাতিক