• ৭ অগ্রহায়ণ ,১৪৩১,21 Nov ,2024
  • ব্রেকিং নিউজ : বাংলাদেশের রিকশাচিত্র পেল ইউনেস্কোর অপরিমেয় সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের স্বীকৃতি

২৩৪ পৌরসভায় ভোটের হাওয়া

| নভেম্বর 25, 2015 | 0 Comments

téléchargementদেশের খবর: সারা দেশের ২৩৪টি পৌরসভায় আগামী ৩০ ডিসেম্বর ভোট গ্রহণের দিন নির্ধারণ করে তফসিল ঘোষণা করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী সম্ভাব্য প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ তারিখ ৩ ডিসেম্বর। মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাই ৫ ও ৬ ডিসেম্বর। প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ দিন ১৩ ডিসেম্বর ধার্য করা হয়েছে। মঙ্গলবার ইসি সচিবালয়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী রকিবউদ্দীন আহমদ পৌরসভা নির্বাচনের এ তফসিল ঘোষণা করেন। তিনি বলেন, এ নির্বাচনে সবার জন্য সমান সুযোগ সৃষ্টি করা হবে। নির্বাচনে সব দল অংশ নেবে বলেও আশা প্রকাশ করেন তিনি।

 এদিকে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার মধ্য দিয়ে সংশ্লিষ্ট পৌরসভাগুলোতে নির্বাচনের আনুষ্ঠানিকতা শুরু হল। ইতিমধ্যে তৃণমূল পর্যায়ে নির্বাচনী আমেজ বইতে শুরু করেছে। প্রথমবারের মতো পৌরসভার মেয়র পদে দলীয়ভাবে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। কোনো রাজনৈতিক দল এবার একাধিক ব্যক্তিকে মনোনয়ন দিলে ওই দলের সব প্রার্থীর মনোনয়ন বাতিল হবে। আওয়ামী লীগ, বিএনপিসহ রাজনৈতিক দলগুলোর নেতাকর্মী এবং স্থানীয় সম্ভাব্য প্রার্থীদের তৎপরতা বেড়ে গেছে। দলীয় সমর্থন পেতে মন্ত্রী, এমপিসহ কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় নেতাদের কাছে দৌড়ঝাঁপ করছেন সম্ভাব্য প্রার্থীরা। তবে এবার পৌর নির্বাচনে কোনো মন্ত্রী ও এমপিসহ সরকারি সুবিধাভোগী কেউ প্রচারণায় অংশ নিতে পারবে না। পৌরসভা নির্বাচনে এবারই প্রথম মেয়র পদে দলীয় ভিত্তিতে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এতে আওয়ামী লীগ ও বিএনপিসহ নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধিত ৪০টি রাজনৈতিক দল অংশ নিতে পারবে। এছাড়া স্বতন্ত্র প্রার্থীরাও লড়তে পারবেন। এজন্য ১০০ জন ভোটারের সমর্থনসূচক স্বাক্ষর জমা দিতে হবে। উচ্চ আদালতের রায়ে জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন স্থগিত থাকায় এ দলটির ব্যানারে কেউ মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারবেন না। পৌরসভাগুলোর সাধারণ কাউন্সিলর ও সংরিক্ষত কাউন্সিলর পদে নির্দলীয়ভাবে নির্বাচন হবে। ইতিমধ্যে স্থানীয় সরকার (পৌরসভা) আইন-২০০৯ ও স্থানীয় সরকার (পৌরসভা) নির্বাচন বিধিমালা-২০১০ সংশোধন করা হয়েছে। এছাড়া পৌরসভা (নির্বাচন আচরণ) বিধিমালা ২০১৫ প্রণয়ন করেছে ইসি।
 মেয়র পদে দলীয় ভিত্তিতে নির্বাচন হওয়ায় পৌরসভায় সব রাজনৈতিক দল অংশ নেবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন সিইসি। একই সঙ্গে নির্বাচনে কমিশন বরাবরের মতো নিরপেক্ষ ভূমিকা পালন করবে বলেও জানান তিনি। এসব বিষয়ে সিইসি বলেন, নির্বাচনে সবার জন্যই লেভেল প্লেইং ফিল্ড (সমান সুযোগ) তৈরি করব। আশা করি সব দলই অংশ নেবে। বিএনপি আগেও যখন অভিযোগ দিয়েছে সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নিয়েছি। এছাড়া সংবাদমাধ্যমে খবর এলে অথবা ফোনেও খোঁজ নিয়ে আমরা ব্যবস্থা নিয়ে থাকি। রাজনৈতিক দলগুলোর উদ্দেশে তিনি বলেন, সব রাজনৈতিক দলের জন্য বলব, আমরা সম্পূর্ণ নিরপেক্ষ। আশা করি তারা সবাই প্রার্থী মনোনয়ন দেবে। প্রচার-প্রচারণাও করবে। তবে আইন, বিধি মেনেই প্রচার-প্রচারণা করতে হবে এটাই আমাদের অনুরোধ।
 এর আগে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ইস্যুতে জাতীয় সংসদ নির্বাচন বয়কট করেছিল বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোট। তবে নির্দলীয়ভাবে অনুষ্ঠিত ঢাকার দুটি ও চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে অংশ নিয়েছিল এ জোট। এবার পৌরসভা নির্বাচনে বিএনপি অংশ নিচ্ছে বলে দলীয়ভাবে ইঙ্গিত দিয়েছে।
 রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা না করেই কেন দলীয় প্রতীকে মেয়র নির্বাচন- সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে সিইসি বলেন, ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচনের আইনি বাধ্যবাধকতা রয়েছে। নির্বাচনের স্লটটা (সময়) খুব কম। তাই খুব তাড়াতাড়ি কাজ করতে হয়েছে। ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন করতে না পারলে, জুনে নির্বাচন করতে হতো। কেননা এর মধ্যে এসএসসি (মাধ্যমিক) ও এইচএসসি (উচ্চ মাধ্যমিক) পরীক্ষা আছে। আবার জুনে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন হবে। তাই ডিসেম্বর ছাড়া নির্বাচন করার কোনো উপায় নেই। এজন্য তাড়াহুড়ো করেই সব প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। সব দলের সঙ্গে আলোচনা করার জন্য আমাদের হাতে পর্যাপ্ত সময় ছিল না। অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সংসদ আইন করেছে বিচার-বিবেচনা করেই। আমরা নির্বাচন করেই অভ্যস্ত। তাই মেয়র পদে দলীয়ভাবে এবং কাউন্সিলর পদে নির্দলীয়ভাবে নির্বাচন করতে অসুবিধা হবে না। তবুও এটি বড় নির্বাচন। পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেব। বিভিন্ন বাহিনীর সঙ্গে সভা করেই সে বিষয়টি ঠিক করা হবে। সিইসি বলেন, সবার জন্য নির্দেশ হচ্ছে আইনসম্মতভাবেই কাজ করতে হবে। পৌর নির্বাচনে আগের চেয়ে আরও দ্রুত অ্যাকশন নেব। ব্যালট চুরি, ছিনতাইয়ের কোনো রকম তথ্য পেলে সঙ্গে সঙ্গে অ্যাকশন নেব।
 আগাম প্রচারণা বন্ধের নির্দেশ দিয়ে সিইসি বলেন, আশা করি প্রার্থীরা স্বপ্রণোদিতভাবেই পোস্টার, ব্যানার নামিয়ে ফেলবেন। যদি তারা এগুলো অপসারণ না করেন তাহলে আইন অনুসারে ব্যবস্থা নেয়া হবে। আইনে তফসিল ঘোষণার ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে সব ধরনের প্রচার-প্রচারণা চালানোর ওপর নিষেধাজ্ঞা রয়েছে।
 একনজরে নির্বাচনের তথ্য : দেশের ২৩৪টি পৌরসভায় ২৩৪টি মেয়র, ৭৩৮টি সংরক্ষিত কাউন্সিলর ও ২ হাজার ৯৫২টি সাধারণ কাউন্সিলর পদে নির্বাচন হবে। এতে পুরুষ ভোটার ৩৫ লাখ ৮৬ হাজার ৩৫৬ জন এবং নারী ভোটার ৩৫ লাখ ৭৬ হাজার ৪০ জন। ভোট গ্রহণ করবেন মোট ৬১ হাজার ১৪৩ জন কর্মকর্তা। নির্বাচনী এলাকার মোট ৩ হাজার ৫৮২টি কেন্দ্রে ভোট নেয়া হবে। সর্বশেষ ২০১০ সালের ডিসেম্বরে ২৬৯টি পৌরসভার তফসিল ঘোষণা করেছিল কমিশন। ২০১১ সালের জানুয়ারিতে চার ধাপে পৌরসভাগুলোতে ভোট গ্রহণ হয়েছিল। পৌরসভা নির্বাচন পরিচালনার জন্য জেলা সদরের পৌরসভার জন্য সংশ্লিষ্ট অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) এবং উপজেলা পর্যায়ের পৌরসভার জন্য সংশ্লিষ্ট জেলার জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা বা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে রিটার্নিং অফিসার হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসকদের আপিল কর্তৃপক্ষ হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। সারা দেশে মোট ৩২৩টি পৌরসভা রয়েছে। এর মধ্যে আগামী ফেব্র“য়ারি পর্যন্ত যেসব পৌরসভার মেয়াদ উত্তীর্ণ হবে সেগুলোর মধ্যে ২৩৪টি পৌরসভার তফসিল ঘোষণা করা হল।
 দলীয় মনোনয়ন দেবেন যারা : ইসি জানিয়েছে, পৌরসভার মেয়র পদে মনোনয়ন দেয়ার ক্ষমতা দলের সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক, সমপর্যায়ের পদাধিকারী অথবা তাদের ক্ষমতাপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের দেয়া হয়েছে। প্রার্থীকে এসব পদধারীরা এমন একটি প্রত্যয়নপত্র দেবেন যে, ওই প্রার্থী দল থেকে মনোনয়ন দেয়া হয়েছে। কোনো রাজনৈতিক দল কোনো পৌরসভায় একাধিক ব্যক্তিকে মেয়র পদে মনোনয়ন দিতে পারবে না। একাধিক ব্যক্তিকে মনোনয়ন দিলে সংশ্লিষ্ট পৌরসভার ওই দলের সব প্রার্থীর মনোনয়নপত্র বাতিল বলে গণ্য হবে।

ক্ষমতাপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের বিষয়ে শর্ত হচ্ছে- মেয়র পদে প্রার্থী মনোনয়ন দেয়ার ক্ষমতাপ্রাপ্ত ব্যক্তির নাম, পদবি, নমুনা স্বাক্ষরসহ একটি চিঠি তফসিল ঘোষণার পাঁচ দিনের মধ্যেই রিটার্নিং অফিসারের কাছে পাঠাতে হবে। ওই চিঠির অনুলিপি নির্বাচন কমিশনেও দিতে হবে। স্বতন্ত্র প্রার্থী হতে সংশ্লিষ্ট পৌরসভার ১০০ জন ভোটারের স্বাক্ষরযুক্ত তালিকা মনোনয়নপত্রের সঙ্গে দাখিল করতে হবে। এর মধ্যে পাঁচজনের তথ্য সফটওয়্যারের মাধ্যমে দৈবচয়নের ভিত্তিতে যাচাই করবেন রিটার্নিং কর্মকর্তা। তবে কেউ পৌরসভার মেয়র পদে এর আগে নির্বাচিত হলে স্বতন্ত্র প্রার্থী হতে তাকে ভোটার স্বাক্ষরযুক্ত তালিকা দেয়ার প্রয়োজন নেই।

 মন্ত্রী-এমপিদের প্রচারণা নয় : পৌরসভা নির্বাচনে আচরণবিধি অনুযায়ী সরকারি সুবিধাভোগী গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি ও সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা নির্বাচনী প্রচারণা ও নির্বাচনী কার্যক্রমে অংশ নিতে পারবেন না। সরকারি সুবিধাভোগী গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা হচ্ছেন- প্রধানমন্ত্রী, স্পিকার, মন্ত্রী, চিফ হুইপ, ডেপুটি স্পিকার, বিরোধীদলীয় নেতা, সংসদ উপনেতা, বিরোধীদলীয় উপনেতা, প্রতিমন্ত্রী, হুইপ, উপমন্ত্রী বা তাদের সমমর্যাদার কোনো ব্যক্তি, সংসদ সদস্য এবং সিটি কর্পোরেশনের মেয়র।
 নির্বাচনী ব্যয় : প্রার্থীর জন্য প্রতি পৌরসভায় রাজনৈতিক দল সর্বোচ্চ ১ লাখ টাকা ব্যয় করতে পারবেন। মেয়র পদে ব্যক্তিগত খরচ অনধিক ২৫ হাজার ভোটার সংবলিত পৌরসভার ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ দশ হাজার টাকা, ২৫ হাজার এক থেকে পঞ্চাশ হাজার ভোটার সংবলিত পৌরসভার ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ বিশ হাজার টাকা, পঞ্চাশ হাজার এক থেকে এক লাখ ভোটার সংবলিত পৌরসভার ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ত্রিশ হাজার টাকা এবং এক লাখ এক ও তদূর্ধ্ব ভোটার সংবলিত পৌরসভার ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ পঞ্চাশ হাজার টাকা ব্যয় করত পারবেন। এছাড়া নির্বাচনী ব্যয় বাবদ উল্লেখিত নিয়মানুযায়ী ২ লাখ, ৩ লাখ, ৪ লাখ ও ৫ লাখ টাকা ব্যয় করতে পারবেন। এছাড়া কাউন্সিলর পদে ব্যক্তিগত খরচ ৫ থেকে সর্বোচ্চ ১৫ হাজার টাকা এবং নির্বাচনী ব্যয় বাবদ ৫০ হাজার থেকে সর্বোচ্চ ২ লাখ টাকা খরচ করতে পারবেন।
 মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করার ক্ষেত্রে মেয়র পদে প্রতিটি মনোনয়নপত্রের সঙ্গে অনধিক ২৫ হাজার ভোটার সংবলিত নির্বাচনী এলাকার জন্য ১৫ হাজার টাকা, ২৫ হাজার এক থেকে ৫০ হাজার ভোটার সংবলিত নির্বাচনী এলাকার জন্য ২০ হাজার টাকা, ৫০ হাজার এক থেকে এক লাখ ভোটার সংবলিত নির্বাচনী এলাকার জন্য ২৫ হাজার টাকা এবং ১ লাখ ও তদূর্ধ্ব ভোটার সংবলিত নির্বাচনী এলাকার জন্য ৩০ হাজার টাকা ট্রেজারি চালান বা কোনো তফসিলি ব্যাংকের পে-অর্ডার বা পোস্টাল অর্ডার করে জমা দিতে হবে। এছাড়া কাউন্সিলর প্রার্থীদের ক্ষেত্রে প্রতি মনোনয়নপত্রের সঙ্গে ৫ হাজার টাকা জমা দিতে হবে।
 ভোট কেন্দ্রে সাংবাদিকদের প্রবেশে বাধা নেই : সিইসি কাজী রকিবউদ্দীন আহমদ বলেছেন, পৌরসভা নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করতে সাংবাদিকদের ভোট কেন্দ্রে প্রবেশে বাধা দেয়া হবে না। সুনির্দিষ্ট পরিচয়পত্র দেখিয়ে সাংবাদিকরা ভোট কেন্দ্র পর্যবেক্ষণ করতে পারবেন। গত সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে যেসব ঘটনা ঘটেছিল তা অনাকাক্সিক্ষত বলেও উল্লেখ করেন তিনি। এদিকে ইসির এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ইসিতে নিবন্ধিত যেসব পর্যবেক্ষণ সংস্থা পৌরসভা নির্বাচনে পর্যবেক্ষণ করতে ইচ্ছুক সেসব সংস্থাকে তফসিল ঘোষণার তিন দিনের মধ্যে আবেদন করতে হবে।

Category: Scroll_Head_Line, দেশের খবর

About the Author ()

Leave a Reply