• ৯ অগ্রহায়ণ ,১৪৩১,23 Nov ,2024
  • ব্রেকিং নিউজ : বাংলাদেশের রিকশাচিত্র পেল ইউনেস্কোর অপরিমেয় সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের স্বীকৃতি

তেজগাঁও ট্রাকস্ট্যান্ড সরানো নিয়ে তেজগাঁও ট্রাকস্ট্যান্ড সরানো নিয়ে

| নভেম্বর 30, 2015 | 0 Comments

image_1383_211097দেশের খবর:  রাজধানীর তেজগাঁওয়ে ট্রাক স্ট্যান্ড উচ্ছেদ অভিযানে গিয়ে রোববার শ্রমিকদের বাধার মুখে পড়ে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন কর্তৃপক্ষ। এ সময় পুলিশ ও শ্রমিকদের মধ্যে সংঘর্ষের কারণে উচ্ছেদ অভিযান বন্ধ হয়ে যায়।

বিক্ষোভ ও পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার সময় অভিযানের সঙ্গে থাকা মেয়র আনিসুল হক প্রায় সাড়ে তিন ঘণ্টা বাংলাদেশ ট্রাক ও কাভার্ডভ্যান ড্রাইভার্স ইউনিয়নের কার্যালয়ে অবরুদ্ধ হয়ে পড়েন। পরে কড়া পুলিশি নিরাপত্তায় বিকাল পৌনে ৫টার দিকে বের হন তিনি। সেখানে তিনি শ্রমিকদের উদ্দেশ্যে বক্তৃতায় একটি ভালোমানের টার্মিনাল নির্মাণের আশ্বাস দেন। তার বক্তৃতার পর পরিস্থিতি শান্ত হয়ে আসে। তবে পরে আর উচ্ছেদ অভিযান চালানো হয়নি।

ওই ট্রাক স্ট্যান্ড এলাকা থেকে অবৈধ স্থাপনা সরিয়ে নিতে প্রায় দুই মাস ধরে প্রচার চালায় সিটি করপোরেশন কর্তৃপক্ষ। এর পরিপ্রেক্ষিতে অনেক স্থাপনা শ্রমিকরাই সরিয়ে নেন। অবশিষ্ট কিছু স্থাপনা উচ্ছেদের জন্য গতকাল দুপুর ১টার দিকে সেখানে যান মেয়র আনিসুল হক ও সিটি করপোরেশনের কর্মীরা। সামান্য কিছু স্থাপনা উচ্ছেদের পর দুপুর পৌনে ২টার দিকে শ্রমিকেরা বাধা দিতে যান। একপর্যায়ে ট্রাক শ্রমিকরা অভিযানকারী দলকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল ছুড়তে থাকেন। তখন উচ্ছেদ অভিযানে থাকা পুলিশের সঙ্গে শ্রমিকদের পাল্টাপাল্টি ধাওয়া শুরু হয়।

শ্রমিকদের দাবি, পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার সময় পুলিশ ছররা গুলি ছোড়ে। এতে দুই শ্রমিক আহত হন। এ ঘটনা জানাজানি হলে শ্রমিকরা ক্ষোভে ফেটে পড়েন। তখন শ্রমিকরা সড়কে টায়ার জ্বালিয়ে বিক্ষোভ করতে থাকেন এবং অভিযানের বিরুদ্ধে সেস্নাগান দিতে থাকেন। বিক্ষোভের সময় ইটের আঘাতে একজন সাংবাদিকও আহত হন। তার ক্যামেরাও ভাংচুর করা হয়। একটি টেলিভিশন চ্যানেলের গাড়িও ভাংচুর করা হয়।

এসব ঘটনার সময় মেয়র আনিসুল হক ট্রাক ও কাভার্ডভ্যান ড্রাইভার্স ইউনিয়নের ওই কার্যালয়ে অবস্থান করে গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলছিলেন। তখন সেখানে পরিবহন মালিকরাও উপস্থিত হন। ছিলেন এলাকার কাউন্সিলররাও। এরই মধ্যে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে ঘটনাস্থলে বিপুলসংখ্যক পুলিশ ও র?্যাব মোতায়েন করা হয়।

পরে পুলিশের কড়া নিরাপত্তায় বিকাল পৌনে ৫টার দিকে সেখান থেকে বের হন আনিসুল হক। তিনি শ্রমিকদের উদ্দেশে বলেন, ‘এখানে চারজন মন্ত্রী কথা বলেছেন। যে জায়গা দখল করা হয়েছে তা রেলওয়ের জায়গা। এসব জায়গা ভালোভাবে ব্যবহার হচ্ছিল না। মালিকপক্ষ বলেছে, ভেতরে জায়গা করে দেন। আমরা জায়গা করে দিয়েছি। দুই মাস এ নিয়ে কাজ করেছি। এখন অনেক ক্লিয়ার হয়ে গেছে। যারা অবৈধ দখল করে আছেন আপনাদের সুবিধার জন্য এসব করা হচ্ছে। আপনাদের গাড়ি যাতে ভালোভাবে বের হতে পারে সে জন্য এ রাস্তা খালি করা হচ্ছে। আমার সুবিধার জন্য না।’

শ্রমিক আহত হওয়ার ব্যাপারে আনিসুল হক বলেন, ‘আমি আপনাদের নগরপিতা। যদি সে আহত থাকে তাহলে আমি তাকে দেখব। এখন ঠিক হলো যে, আপনারা রাস্তায় গাড়ি না রেখে তা ভেতরে রাখবেন। আসুন ঢাকা শহরকে পরিষ্কার করি।’

মেয়র বলেন, ‘আপনারা আমাকে ভোট দিয়ে মেয়র বানিয়েছেন। আমি আপনাদের ছেলে। আপনারা আমাদের সহযোগিতা করুন। আমরা আপনাদের জন্য ভালো টার্মিনাল তৈরি করব।’ তিনি বলেন, ‘আজ যে সমস্যাটা শুরু হয়েছে তা ছোট্ট একটা সমস্যা। এখানে রাস্তায় পার্কিং না করে আমরা ভেতরে টার্মিনাল বানাব। রাস্তার ওপর ট্রাকগুলো ভেতরে ঢুকবে।’

বক্তব্য শেষে পুলিশের কড়া নিরাপত্তায় ঘটনাস্থল ত্যাগ করেন মেয়র আনিসুল হক। পরে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন পুলিশের তেজগাঁও বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) বিপ্লব কুমার সরকার। তিনি বলেন, আলোচনার মাধ্যমে শান্তিপূর্ণ মীমাংসা হয়েছে। মেয়র মহোদয় বলেছেন যা কিছুই করা হবে শ্রমিক ও শ্রমিক নেতৃবৃন্দের সঙ্গে আলোচনা করে করা হবে। তিনি বলেছেন, এখানে যে উচ্ছেদ করা হচ্ছে তা শ্রমিকদের কল্যাণের জন্য, জনগণের কল্যাণের জন্য।

শ্রমিক আহত হওয়ার ব্যাপারে ডিসি বলেন, যিনি আহত হয়েছেন তাকে চিকিৎসা দেয়া হয়েছে। তিনি সম্পূর্ণ সুস্থ। শ্রমিকরা অত্যন্ত সহানুভূতিশীল। পুলিশও কোনো অ্যাকশনে যায়নি।

মাস্তানি চলবে না
এর আগে দুপুর ১টার দিকে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের লোকজন ট্রাক স্ট্যান্ড উচ্ছেদের অভিযান শুরু করেন। এ সময় সেখানে ছিলেন ঢাকা উত্তরের মেয়র আনিসুল হক। উচ্ছেদ অভিযান শুরুর কিছুক্ষণ পরই চালক ও স্থানীয় লোকজন উচ্ছেদকারীদের ওপর ইটপাটকেল ছুড়তে শুরু করেন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে ও মেয়রকে রক্ষা করতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী গুলি চালায়। দুই পক্ষের মধ্যে পাল্টাপাল্টি ধাওয়া চলে।

প্রত্যক্ষদর্শীদের দাবি, এ সময় এক ট্রাকচালক আহত হন। আহত ট্রাকচালকের নাম জসিমউদ্দিন। তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হয়। এ ছাড়া ভাংচুরের শিকার হয় চ্যানেল আইয়ের গাড়ি। ওই গাড়িচালক আজহার আহত হন। এ ছাড়া বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোরের ফটোসাংবাদিক তানভীর আহমেদের মাথায় ইটের আঘাত লাগে। তার ক্যামেরা ভাংচুর করা হয়।

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পুলিশ ক্যাম্পের সহকারী উপ-পরিদর্শক (এএসআই) সেন্টু চন্দ্র দাস বলেন, জসিমউদ্দিনের শরীরের বিভিন্ন অংশে ছররা গুলি লেগেছে।

ট্রাক স্ট্যান্ড উচ্ছেদ করাকে কেন্দ্র করে সৃষ্ট উত্তেজনাকর পরিস্থিতি নিয়ে কথা বলার জন্য মেয়র আনিসুল হক বাংলাদেশ ট্রাক ও কাভার্ডভ্যান ড্রাইভার্স ইউনিয়নের কার্যালয়ে যান। সেখানে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘যারা মাস্তানি করছেন তাদের বলছি এসব মাস্তানি চলবে না। ঢাকা শহরে এসব অবৈধ কাজ হবে না।’

মেয়র আনিসুল হক আরো বলেন, ‘আমাকে ঢাকা শহর গড়ার জন্য দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। আমার ওপর মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সমর্থন আছে। সমস্ত ঢাকাবাসী আমাদের ওপর আস্থা রেখেছেন। আমাদের সঙ্গে কাউন্সিলররা আছেন। কিন্তু মাঝখান থেকে একজন ইট মেরে দিল আর হইচই শুরু হলো। কিছু স্বার্থপরায়ণ লোকের কারণে এসব হচ্ছে। আমরা তাদের চিনি। আমরা এসব মেনে নেব না। একটাই চাওয়া মেয়রের- রাস্তায় গাড়ি পার্কিং করবেন না।’

শ্রমিকরা এখন সড়কে বিক্ষোভ করছেন সাংবাদিকরা এমন প্রসঙ্গ তুললে আনিসুল হক বলেন, ‘এসব সরকার সরাবে। আমাকে বললে আমি ওইখানে গিয়ে বক্তব্য দেব। চলেন, সবাই যাই। ঢিল মারলে আমার মাথা ফাটবে। আমি সব বুঝেই এসেছি।’

তেজগাঁও ট্রাক স্ট্যান্ড দখলমুক্ত করতে ৭ নভেম্বর পর্যন্ত সময় বেঁধে দিয়েছিলেন মেয়র আনিসুল হক। ওই সময়ের মধ্যে কেউ ট্রাক সরাননি দেখে তিনি ২৭ নভেম্বর পর্যন্ত ট্রাক-কাভার্ডভ্যান সরানোর জন্য মালিকদের সময় বেঁধে দেন।

এর আগে ১ নভেম্বর রেলপথমন্ত্রী মুজিবুল হক ও ট্রাক-কাভার্ডভ্যান মালিক সমিতির নেতাদের নিয়ে তেজগাঁও ট্রাক স্ট্যান্ড এলাকা পরিদর্শন করেছিলেন মেয়র। তখন তিনি বলেছিলেন, ৭ নভেম্বরের মধ্যে তেজগাঁওয়ে রেলওয়ের জায়গার অবৈধ স্থাপনা না সরালে ৮ নভেম্বর সেগুলো উচ্ছেদ করা হবে। ৮ তারিখ থেকে তেজগাঁওয়ের কোনোখানে কোনো ট্রাক দিনে-রাতে দাঁড়াবে না বলেও ঘোষণা দিয়েছিলেন তিনি।

রেলের জমিতে গড়ে ওঠা ট্রাক স্ট্যান্ড চলে গেছে অবৈধ দোকানপাট, পুরনো ও বিকল ট্রাকের দখলে। তাই সারি সারি ট্রাক-কাভার্ডভ্যান রাখা হচ্ছে সড়কের দুই পাশজুড়ে। ফলে সাতরাস্তা থেকে তেজগাঁও রেললাইন পর্যন্ত যানজট লেগেই থাকে। ট্রাক স্ট্যান্ডের ভেতরে পুরনো অনেক ট্রাক পড়ে আছে। ট্রাক স্ট্যান্ডের ভেতরে গড়ে উঠেছে অর্ধশতাধিক মেরামত কারখানা। এসব দোকানের যন্ত্রাংশ, অব্যবহৃত ও বাতিল জিনিসপত্র পুরো স্ট্যান্ডকে ময়লার ভাগাড়ে পরিণত করেছে।

Category: 1stpage, Scroll_Head_Line, দেশের খবর

About the Author ()

Leave a Reply