• ৯ অগ্রহায়ণ ,১৪৩১,23 Nov ,2024
  • ব্রেকিং নিউজ : বাংলাদেশের রিকশাচিত্র পেল ইউনেস্কোর অপরিমেয় সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের স্বীকৃতি

চার পুলিশ প্রত্যাহার, চা দোকানিকে পুড়িয়ে হত্যা

| ফেব্রুয়ারী 6, 2016 | 0 Comments

image_1449_221859দেশের খবর: রাজধানীর মিরপুরে আগুনে পুড়িয়ে চা বিক্রেতা বাবুল মাতাব্বারকে (৪৫) হত্যার ঘটনায় ৪ পুলিশ সদস্যকে প্রত্যাহার করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি)। এরা হলেন_ মিরপুর শাহআলী থানার এসআই নেয়াজ উদ্দিন মোল্লা, মমিনুর রহমান, এএসআই জগেন্দ্র ও কনস্টেবল জসিম উদ্দিন। বৃহস্পতিবার বিকাল সোয়া ৫টার দিকে এ খবর নিশ্চিত করেছেন ডিএমপির গণমাধ্যম শাখার উপপুলিশ কমিশনার (ডিসি) মারুফ হোসেন সরদার। তিনি জানান, দায়িত্বে অবহেলার দায়ে ওই চার পুলিশ সদস্যকে দায়িত্ব থেকে প্রত্যাহার করে নেয়া হয়েছে। পাশাপাশি ঘটনা তদন্তে পুলিশের তরফ থেকে পৃথকভাবে দুটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। ডিএমপির ডিসি (ডিসিপ্লিন) টুটুল চক্রবর্তীকে নিয়ে কেন্দ্রীয়ভাবে এক সদস্যবিশিষ্ট একটি এবং মিরপুর বিভাগ থেকে দুই কর্মকর্তাকে নিয়ে অপর কমিটি গঠিত হয়েছে। এ কমিটির সদস্যরা হলেন_ মিরপুর জোনের অতিরিক্ত উপ পুলিশ কমিনার (এডিসি, ক্রাইম) মাসুদ আহমেদ ও সহকারী কমিশনার (এসি) মাহবুব হোসেন।

এদিকে বাবুল মাতাব্বারকে পুড়িয়ে হত্যার ঘটনায় তার মেয়ে রোকসানা আক্তার বাদী হয়ে বুধবার রাতেই একটি মামলা করেছেন। মামলায় পুলিশের সোর্সসহ ৭ জনকে আসামি করা হয়েছে।
পুলিশের দেয়া আগুনে দগ্ধ চা-বিক্রেতা বাবুল মাতাব্বার (৪৫) বৃহস্পতিবার দুপুর দেড়টার দিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে মারা যান। তার শরীরের ৯৫ শতাংশই দগ্ধ হয়েছিল।
গত বুধবার দেলোয়ার নামে এক পুলিশ সদস্য চাঁদা না পেয়ে ক্ষিপ্ত হয়ে জ্বলন্ত চুলায় লাঠি দিয়ে আঘাত করলে তেল ছিটকে দগ্ধ হন বাবুল। স্থানীয়রা জানান, বুধবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে রাজধানীর শাহআলী থানাধীন মিরপুর-১ বেড়িবাঁধ কিংশুক সমিতির গেটের সামনে এ ঘটনা ঘটে। পরে বাবুলের ছেলে তাকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে ভর্তি করেন।
বাবুলের পুত্রবধূ মনি বেগম বলেন, মিরপুর ১ নম্বরের গুদারাঘাটে তার শ্বশুরের চায়ের দোকান। পাশেই এক বাসায় তারা দীর্ঘদিন ধরে বসবাস করছেন।
বাবুলের দোকানের কাছেই দুই নারী গাঁজা বিক্রি করেন অভিযোগ করে তিনি বলেন, ‘শ্বশুর এ নিয়ে অভিযোগ করতে গেলে পুলিশই উল্টো আমাদের পরিবারকে বিভিন্নভাবে হয়রানি করত।’
বুধবার দুপুরেও কয়েকজন পুলিশ সদস্য এসে তার শ্বশুরকে শাহআলী থানায় নিয়ে যেতে চেয়েছিলেন বলে তিনি অভিযোগ করেন। তিনি বলেন, ‘তারা রাতে এসেছিল চাঁদা চাইতে। কিন্তু উনি তাতে রাজি না হলে পুলিশের পোশাক পরা কয়েকজন তার স্টোভের চুলায় লাঠি দিয়ে বাড়ি দেয়।’
এ সময় সেখান থেকে তেল ছিটকে বাবুলের জ্যাকেটে লেগে আগুন ধরে যায় জানিয়ে মনি বলেন, ‘আমি তখন ওইখানে ছিলাম। সব ঘটনা নিজের চোখে দেখছি।’
বাবুলের দুই ছেলে তিন মেয়ে। বৃহস্পতিবার ঢামেকে মরদেহের পাশে বড় ছেলে রাজু চিৎকার করে বলতে থাকে, ‘আমার বাবাকে মেরে ফেলেছেন শাহ আলীর পুলিশ ও পুলিশ সোর্সরা। আমার বাবার কি অপরাধ? ফুটপাতে চা বিক্রি করেন, পুলিশকে চাঁদা দিতে পারেননি?’
কান্নাজড়িত কণ্ঠে রাজু বলেন, ‘মাদক ব্যবসায়ী পারুল ওরফে পারুলী। আমরা পাশাপাশি থাকি। পারুলীর অনেক কাস্টমার আমাদের বাসায় এসে গাঁজা কিনতে চান। জিজ্ঞেস করেন, গাঁজা দেন, পারুলী কই? এতে আমরা ক্ষিপ্ত হয়ে পারুলীর ব্যাপারে থানায় মৌখিকভাবে অভিযোগ করি। এ অভিযোগের সূত্র ধরে ও ক্ষিপ্ত হয়ে শাহ আলী থানার এসআই শ্রীধাম চন্দ্র হাওলাদার আরো দুই পুলিশ কনস্টেবল ও পুলিশ সোর্স দেলোয়ারকে নিয়ে গতরাত সাড়ে ৯টার দিকে আমার বাবার দোকানে যান।’
রাজু বলেন, ”এগুলো আমাদের কথা নয়, আমার বাবা মৃত্যুর আগে আমাদের বলে গেছেন। তখন এসআই শ্রীধাম আমার বাবাকে লাঠি দিয়ে আঘাত করেন। বলেন, ফুটপাতে দোকান করিস, চাঁদা দে। পুলিশ সোর্স দেলোয়ার এ সময় আমার বাবার হাত ধরে টানছিলেন। অপর এক পুলিশ কনস্টেবল জলন্ত স্টোভের চুলায় লাঠি দিয়ে বাড়ি দেন। তখন স্টোভের চুলা ফেটে আমার বাবার গায়ে আগুন ধরে যায়। আগুন ধরা অবস্থায় আমার বাবা এক পুলিশ কনস্টেবলের কলার ধরে বলেন, ‘তুই আমার গায়ে আগুন দিলি’। তখন কনস্টেবল বলেন, আমি আগুন দেইনি, এটা একটা দুর্ঘটনা। এ বলে সবাই সেখান থেকে দ্রুত সটকে পড়েন।”

তড়িঘড়ির মামলা
এদিকে ঘটনা ঘটার চার ঘণ্টার মধ্যে বুধবার মধ্যরাতে অনেকটা তড়িঘড়ি করেই একটি মামলা নেয় থানা, যেখানে পুলিশের কোনো সদস্যকে আসামি করা হয়নি।
বুধবার রাত দেড়টার দিকে দগ্ধ বাবুলের মেয়ে রোকসানা আকতারের করা মামলায় আসামি করা হয়েছে স্থানীয় কয়েকজন ‘মাদক ব্যবসায়ীকে’।
আসামিদের মধ্যে রয়েছেন_ পারুল, দেলোয়ার, রবিন, শংকর, দুলাল হাওলাদার এবং পারভীন। এদের মধ্যে পুলিশ পারুলকে গ্রেপ্তার করেছে।
বাবুলের পরিবারের সদস্যরা বলছেন, ঘটনার সঙ্গে নিজেদের সংশ্লিষ্টতা আড়াল করতেই পুলিশ বাবুলের পরিবারকে দিয়ে মামলা করিয়েছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বাবুলের পরিবারের একজন সদস্য বলেন, চিকিৎসা নিয়ে যখন পরিবারের সদস্যরা ব্যস্ত ছিল, তখন পুলিশ ব্যস্ত হয়ে ওঠে মামলা করা নিয়ে। রাত ৯টায় ঘটনার পর প্রায় ৪ ঘণ্টার মধ্যে পুলিশ মামলাটি নথিভুক্ত করে বলে জানান তিনি; যেখানে অনেক সময় হত্যার ঘটনায়ও মামলা নথিভুক্ত করতে পুলিশকে অনেক দেরি করতে দেখা যায়। শাহআলী থানার এসআই মোরশেদ আলম জানান, রাত দেড়টার দিকে মামলাটি নথিভুক্ত করা হয়।
বাবুলের মেয়ে লাবণী আক্তার বলেন, ‘ঘটনার পর আমরা থানায় গিয়েছিলাম পুলিশের বিরুদ্ধে মামলা করতে, কিন্তু মামলা নেয়নি। পুলিশের নাম বাদ দিয়ে তড়িঘড়ি করে মামলা রেকর্ড করে।’
ঘটনার পর পুলিশ অগি্নদগ্ধ বাবুলকে হাসপাতালের বদলে থানায় নিয়েছিল বলে জানান তার এই মেয়ে। তিনি বলেন, ‘পুলিশ আমার বাবাকে হাসপাতালে নেয়ার ব্যাপারে কোনো সহযোগিতা করেনি। আমরাই পরে হাসপাতালে নিয়ে যাই।’
তারা পুলিশের বিরুদ্ধে আরেকটি মামলা করবেন বলে জানান লাবণী।
তবে ওসি শাহীন সব অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ‘যথানিয়মেই মামলা হয়েছে। কাউকে কোনো চাপ দিয়ে মামলা হয়নি। আর মামলা না করলে আসামি ধরব কেমন করে?
তদন্তে পুলিশের কোনো সদস্যের বিরুদ্ধে অভিযোগের প্রমাণ পাওয়া গেলে তাকেও আইনের আওতায় আনা হবে।
তিনি বলেন, ‘বাবুলের বিরুদ্ধেও মাদক ব্যবসার অভিযোগ রয়েছে। তাদের মধ্যে একটা অভ্যন্তরীণ বিরোধ ছিল দীর্ঘদিন ধরে। এই বিরোধকে কেন্দ্র করেই পারভীনের ইন্ধনে দেলোয়ার এবং তার সহযোগীরা এই ঘটনা ঘটিয়েছে।’

এ ব্যাপারে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেছেন, আগুনে পুড়ে চা বিক্রেতা বাবুলের মৃত্যু একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা। এর তদন্ত করা হবে। এ ঘটনায় পুলিশের ভাবমূর্তিতে কোনো বিরূপ প্রভাব পড়বে না।
বৃহস্পতিবার দুপুরে রাজধানীর তেজগাঁও আদর্শ স্কুল অ্যান্ড কলেজে এক অনুষ্ঠান শেষ সাংবাদিকদের তিনি এসব কথা বলেন।
মন্ত্রী বলেন, মিরপুরের ঘটনাটি দুঃখজনক। পুলিশের হামলায় তিনি দগ্ধ হয়েছেন বলে যেটি প্রচার হয়েছে তা ঠিক না। ওই ঘটনার সঙ্গে পুলিশের সোর্স জড়িত। তাদের মধ্যে মাদকের বেচাবিক্রি নিয়ে এ ঘটনা ঘটেছে।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ঘটনার পর পুলিশের ঊর্ধ্বতন মহলের সঙ্গে তার কথা হয়েছে। পুলিশ জড়িত নয় উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, মামলার মাধ্যমেই তা প্রতীয়মান হয়েছে। মামলায় কারা আসামি তা উল্লেখ করা হয়েছে। তারপরও মামলা হয়েছে। তদন্ত হবে। তদন্তে যদি কোনো পুলিশ সদস্যের জড়িত থাকার বিষয়টি পাওয়া যায় তাহলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেয়া হবে। অনুষ্ঠানে পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারাও উপস্থিত ছিলেন।

Category: 1stpage, Scroll_Head_Line, দেশের খবর, শীর্ষ সংবাদ

About the Author ()

Leave a Reply