• ৮ অগ্রহায়ণ ,১৪৩১,23 Nov ,2024
  • ব্রেকিং নিউজ : বাংলাদেশের রিকশাচিত্র পেল ইউনেস্কোর অপরিমেয় সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের স্বীকৃতি

মসজিদ পরিদর্শনে গিয়ে মুসলমানদের ভরসা দিলেন ওবামা

| ফেব্রুয়ারী 6, 2016 | 0 Comments

image_1449_221860আন্তর্জাতিক: মুসলিম নাগরিকদের ‘আমেরিকার গর্ব’ উল্লেখ করে প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা বলেছেন, তাদের নিয়ে রাজনীতি করার যে কোনো ‘ঘৃণ্য তৎপরতা’ শক্ত হাতে মোকাবেলা করা হবে। বুধবার দেশটির মেরিল্যান্ড অঙ্গরাজ্যের বাল্টিমোরের ‘আল-রহমান মসজিদ’ পরিদর্শনে গিয়ে ওবামা এসব কথা বলেন। বাল্টিমোরের যে মসজিদে ওবামা ভাষণ দেন, সেটি আমেরিকার পূর্বাঞ্চলের সবচেয়ে বড় মসজিদ। উল্লেখ্য, ৭ বছর আমেরিকার প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব পালনকালে ওবামা বিশ্বের বিভিন্ন দেশের ধর্মীয় স্থান পরিদর্শন করলেও নিজ দেশে এই প্রথম তিনি কোনো মসজিদে গেলেন। আমেরিকার প্রেসিডেন্টরা সাধারণত কোনো ধর্মীয় স্থান পরিদর্শন করেন না।

সাম্প্রতিক সময় একাধিক সন্ত্রাসী ঘটনা ও রিপাবলিকান প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থীদের ইসলামবিরোধী মনোভাবের ফলে আমেরিকায় মুসলিমবিদ্বেষ নাটকীয়ভাবে বেড়ে গেছে। তাই এর মধ্যে ওবামার মসজিদে যাওয়ার ঘটনাটি বিশেষ গুরুত্ব বহন করছে। বার্তা সংস্থাগুলো বলছে, ওই মসজিদ পরিদর্শনে গিয়ে সেখানে প্রায় ২০০ আমেরিকান মুসলিম প্রতিনিধিদের সমানে ওবামা বলেন, ‘‘সারা আমেরিকায় আপনারা ‘অহেতুক বিদ্বেষের’ শিকার হচ্ছেন। আপনাদের নিষিদ্ধ করার মতো ভয়ঙ্কর বক্তব্য দেয়া হচ্ছে। এই মসজিদেও গত বছর দুই দফা আক্রমণ হয়েছে। মুসলিম শিশুদের হুমকি দেয়া হচ্ছে। হিজাব পরা নারীরা হামলার শিকার হচ্ছেন। দেখতে মুসলিমদের মতো হওয়ায় অনেকে শিখ ধর্মাবলম্বীও হামলার শিকার হচ্ছেন। এটি আমেরিকার মূল্যবোধের সঙ্গে একদমই যায় না।’’ মুসলিমদের ‘সন্ত্রাসী’ হিসেবে চিহ্নিত করার ‘অপচেষ্টা’ চলছে জানিয়ে ওবামা বলেন, আমেরিকার সংবিধান সব মানুষের ধর্মীয় স্বাধীনতা নিশ্চিত করেছে। এ সময় বিশ্বব্যাপী কিছু মুসলিমের সন্ত্রাসবাদী অপকর্মের জন্য গোটা সম্প্রদায়কে কাঠগড়ায় দাঁড় করানোর চেষ্টা চলছে। সব আমেরিকানকে ‘এক পরিবারের সদস্য’ উল্লেখ করে ওবামা বলেন, ‘যদি তাদের কেউ নিজেকে দ্বিতীয় শ্রেণির নাগরিক কিংবা অন্য সদস্য দ্বারা আক্রান্ত বলে মনে করেন, তাহলে আমেরিকার চেতনা ও মূল্যবোধ ছিন্নভিন্ন হয়ে যায়।’ আমেরিকার ইতিহাস বলছে, একদম শুরু থেকেই মুসলিমরা এই দেশ গড়ায় অংশ নিয়েছেন। দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্যি, কোনো সন্ত্রাসী হামলার পরই আমেরিকার মানুষ মুসলিমদের নাম শুনতে পায়। এই অবস্থার পরিবর্তন হওয়া দরকার। ওবামা ৪৮ মিনিটের বক্তব্যে আমেরিকার উন্নয়নে মুসলিমদের অবদানের প্রশংসা করে বলেন, ‘‘প্রথমেই আমি মুসলিম-আমেরিকানদের দুটি শব্দ বলতে চাই, যা সাধারণত তারা শোনেন না, তা হলো ‘থ্যাংক ইউ’। আপনাদের কমিউনিটির জন্য আপনারা যা করেছেন, তার জন্য ধন্যবাদ। আমাদের প্রতিবেশী হিসেবে গ্রহণ করার জন্য এবং একটি একতাবদ্ধ ও শক্তিশালী আমেরিকান পরিবার গঠনের জন্য আপনাদের ধন্যবাদ। আমরা এ জন্য কৃতজ্ঞ।’’ আমেরিকার প্রেসিডেন্ট বিভিন্ন সেক্টরে মুসলিম আমেরিকানদের অসাধারণ কাজের প্রশংসা করে আরো বলেন, ‘বিশ্বের ১৬০ কোটি মুসলিমের মধ্যে বৈচিত্র্য আছে। যেমনটা আছে গোটা মানবজাতিতেই। তাদের মধ্যে আরব আছেন, আফ্রিকান আছেন। ছড়িয়ে আছেন দক্ষিণ আমেরিকা থেকে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায়; আছেন ব্রাজিলে, নাইজেরিয়ায়, বাংলাদেশে ও ইন্দোনেশিয়ায়। তাদের অনেকেই সাদা, অনেকেই কালো, বাদামি। তাদের অধিকাংশই শান্তির অনুগামী।’ ওবামা বলেন, আমেরিকার টিভি অনুষ্ঠানে ইতিবাচক মুসলিম চরিত্র দেখানো উচিত। তিনি মনে করিয়ে দেন, একটা সময় ছিল, যখন এই দেশের টিভিতে কালো মানুষদেরও দেখা যেত না। প্রেসিডেন্ট ওবামা বিশ্বব্যাপী সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে মুসলিমদের নিজ অবস্থান থেকে প্রতিবাদ অব্যাহত রাখার আহ্বান জানিয়ে বলেন, ‘আল-কায়েদা, আইএসের মতো সন্ত্রাসী সংগঠনগুলো ধর্মকে ব্যবহার করে রাজনৈতিক ফায়দা নিতে চায়। এই সুযোগ দেয়া যাবে না। মুসলিমদের জোর দিয়ে বলতে হবে, এরা (জঙ্গিগোষ্ঠী) তাদের প্রতিনিধিত্ব করে না।’ ওবামা এ সময় নাগরিকদের মধ্যে ‘আন্তঃধর্মীয় সম্প্রীতি আরো জোরদারের’ আহ্বান জানান। এর আগে ওই মসজিদে পৌঁছলে বাল্টিমোর ইসলামিক সোসাইটির নেতা আল-রহমান ইসলামিক স্কুলের শিক্ষার্থীরা ওবামাকে স্বাগত জানায়। ওবামা মসজিদ ও আশপাশের স্থাপনা ঘুরে দেখেন এবং ইসলামিক সোসাইটির নেতাদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন। এদিকে ওবামার এই মসজিদ নিয়ে এরই মধ্যে ব্যাপক বিতর্কও শুরু হয়েছে। কোনো কোনো রক্ষণশীল ভাষ্যকার ওবামার মসজিদে যাওয়ার বিষয়টি নিয়ে কড়া সমালোচনা করেছেন। ওবামার ভাষণের সময় মসজিদের বাইরে কয়েকজনকে ইসলামবিরোধী স্লোগান দিতেও দেখা গেছে। ওবামার মসজিদ পরিদর্শন নিয়ে মন্তব্য করেছেন আগামী প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে রিপাবলিকান মনোনয়নপ্রত্যাশী ডোনাল্ড ট্রাম্প। ফক্স টিভিতে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘এই পরিদর্শন নিয়ে আমার কিছু বলার নেই। আমরা তো অনেক জায়গাতেই যাই। তবে আমার মনে হয়, তিনি হয়তো মসজিদেই স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন।’ ওবামা খ্রিস্টান নন, অনেকদিন ধরেই এই দাবি করে আসা ট্রাম্প বলেন, মসজিদে ওবামার ভাষণ আদতে দেশকে দুইভাগে বিভক্ত করারই এক উদাহরণ। উল্লেখ্য, ওবামার ধর্ম নিয়ে এমন মন্তব্য ট্রাম্পের এটাই প্রথম নয়। এর আগে তিনি বলেছিলেন, ওবামা আসলে শুধু আমেরিকায় জন্ম নিয়েছেন, আর কিছু নয়। আবার ওবামার মসজিদে যাওয়া নিয়ে প্রশংসাও রয়েছে। এক ই-মেইল বার্তায় ওবামার অন্যতম সহকারী বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত রুমানা আহমেদ বলেছেন, নাইন-ইলেভেনের হামলার পর অনেক মুসলিমের মতো তাকেও বিদ্বেষ ও বৈষম্যের সম্মুখীন হতে হয়। কিন্তু তিনি নিজের মাথা আবৃত করে হোয়াইট হাউসে কাজ করেন এবং একজন মুসলিম-আমেরিকান হিসেবে সে দেশের সেবা করেন। মুসলিম ছাত্রীর হৃদয়গ্রাহী বক্তব্য আমেরিকার প্রেসিডেন্ট যখন ‘আল-রহমান মসজিদ’ পরিদর্শনে যান, তখন হিজাব পরিহিত এক স্কুল শিক্ষার্র্থী সেখানে এক আবেগঘন বক্তব্য রাখে। ওই বক্তব্যটি পশ্চিমা গণমাধ্যমগুলোর শিরোনামে বেশ সাড়া ফেলেছে। আফ্রিকান বংশোদ্ভূত সাবাহ মুখতার নামের এই মেয়েটি বারাক ওবামাকে সাদর সম্ভাষণ জানিয়ে বলে, ‘এক অসহিষ্ণু অনিশ্চিত সময় যখন আমরা সব মুসলিম ভাবছি, এই সমাজে আমাদের জায়গাটা কোথায়, ঠিক এমন সময় প্রেসিডেন্ট ওবামার এই সফর আমাদের জন্য নিঃসন্দেহে অনেক বড় সম্মানের। আমরাও অন্য আমেরিকানদের মতোই। বিশেষ করে আমেরিকায় বসবাসরত মুসলিম শিশুদের জন্য; যারা ইসলামবিদ্বেষী মানুষদের রোষানলে পড়ছে, তাদের জন্য এটা অনেক বড় নিশ্চয়তা।’ সাবাহ মুখতার আরো বলেন, ‘আমি বিশ্বাস করি, এই মসজিদে উপস্থিত আরো অনেক মুসলিম রয়েছেন, তারাও আমার বক্তব্যের সঙ্গে একমত হবেন। ব্যক্তিগতভাবে আমি একজন গর্বিত আফ্রিকান আমেরিকান মুসলিম হিসেবে বলতে পারি, আমারও তাই করার অধিকার আছে, যা অন্য ধর্ম-বর্ণ, গোত্রের আমেরিকানদের রয়েছে।’

Category: 1stpage, Scroll_Head_Line, আন্তর্জাতিক, শীর্ষ সংবাদ

About the Author ()

Leave a Reply