• ৭ অগ্রহায়ণ ,১৪৩১,21 Nov ,2024
  • ব্রেকিং নিউজ : বাংলাদেশের রিকশাচিত্র পেল ইউনেস্কোর অপরিমেয় সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের স্বীকৃতি

অমর একুশেতে শ্রদ্ধার ফুলে ভরে গেছে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার

| ফেব্রুয়ারী 21, 2016 | 0 Comments

ef0755bd46cbb3aa57ac4571697850e8-07দেশের খবর: আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি/আমি কি ভুলিতে পারি/ ছেলেহারা শত মায়ের অশ্রু গড়া এ ফেব্রুয়ারি/আমি কি ভুলিতে পারি…কণ্ঠে বিষাদময় এগান, হাতে থোকা থোকা ফুল। সারিবদ্ধ মানুষ একের পর এক বিনম্র শ্রদ্ধা জানাল কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের বেদিতে গিয়ে। একই সঙ্গে উচ্চারিত হয়েছে জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসমুক্ত বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয়। সর্বস্তরে দাবি উঠেছে বাংলা প্রচলনের।

মহান শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে রোববার রাজধানীর সব পথ মিলেছিল কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে। জাতি বিনম্র শ্রদ্ধায় স্মরণ করেছে সালাম, বরকত, রফিক, জব্বার, সফিউরসহ নাম না-জানা ভাষাশহীদদের। শ্রদ্ধা নিবেদনের পাশাপাশি নানা কর্মসূচিতে দিবসটি পালিত হয়েছে।

অমর একুশের প্রথম প্রহরে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে সরকার ও জাতির পক্ষ থেকে প্রথমে রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ এবং পরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শহীদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন। এরপর জাতীয় সংসদের স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী, আওয়ামী লীগসহ ১৪ দলের নেতারা, বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদ, জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান এইচএম এরশাদ, তিন বাহিনীর প্রধানরা পুষ্পস্তবক অর্পণের মধ্য দিয়ে একুশের ভাষাশহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান। এরপর পর্যায়ক্রমে কূটনীতিক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতি শহীদ মিনারে তাদের শ্রদ্ধার্ঘ্য অর্পণ করে। পরে বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া পুষ্পস্তবক অর্পণ করে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান।

f482374a02f5cb33d4349a57d44b5751-01রাত কাটিয়ে ভোরের আলো ফোটার সঙ্গে সঙ্গে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে নামে লাখো মানুষের ঢল। বেলা বাড়ার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়তে থাকে মানুষের লাইন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা পরিণত হয়ে জনসমুদ্রে।

বাবার ঘাড়ে চড়ে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে এসেছিল পাঁচ বছরের তোফা হাসান অধরা। জানায়, আগের বছরও এদিনে এখানে এসেছিল সে। তবে তখন ভাষা আন্দোলনের ইতিহাস তার জানা ছিল না। এবার তা জেনে এখানে আসাতে অনেক অনেক ভালো লেগেছে তার। প্রতি বছরই একুশে ফেব্রুয়ারি শহীদ মিনারে আসার প্রত্যয় জানায় অধরা।

তার বাবা তৌহিদুল হাসান বলেন, ‘জন্মের পর থেকে প্রতিবছর মেয়েকে নিয়ে শহীদ মিনারে আসছি, এখানে এসে নিশ্চয়ই সে ইতিহাস জানতে অনুপ্রাণিত হবে। বাংলা ভাষা ও বাংলাদেশের প্রতি তার ভালোবাসা জন্মাবে।’

শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা জানানো শেষে মেয়েকে বই মেলায় নিয়ে বেশকিছু গল্পের বই কিনে দেবেন। ভাষা আন্দোলন সম্পর্কিত ছোটদের কোনো বই পাওয়া গেলে মেয়ের জন্য তা-ও কেনার ইচ্ছে রয়েছে বলে জানান তৌহিদুল হাসান।

শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা জানানোর পর বেশির ভাগ লোকজন ঢুঁ মেরেছেন অমর একুশে বইমেলায়। ছুটির আমেজে অনেকে ঘুরে বেড়াচ্ছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি, হাকিম চত্বর, কার্জন হল, মল চত্বর, ভিসি চত্বর।

শহীদ মিনারে আসা নগরবাসীর পোশাকেও উৎকীর্ণ হয়েছে একুশের শোকসন্তপ্ত। বেশির ভাগ নর-নারীর শাড়ি ও পাঞ্জাবিতে সাদা আর কালো রঙের ব্যবহার দেখা গেছে। শাড়ি ও পাঞ্জাবিতে খচিত ছিল বর্ণমালা, কবিতার চরণ, গানের কলি। আবার লাল-সবুজের বাংলাদেশকে ধারণ করতে দেখা গেছে কারও কারও পোশাকে। শিশুর গালে, কপালে অাঁকা ছিল শহীদ মিনার। জাতীয় পতাকার ছবিও অাঁকিয়ে নিয়েছিল অনেকেই। বড়রাও অনেকে এসব নকশায় চিত্রিত করেছেন গাল-কপাল-কপোল-বাহু। সকাল থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা ইন্সটিটিউটের সামনে, সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে এবং জাতীয় জাদুঘরের সামনে হাতে তুলি আর রং নিয়ে দাঁড়িয়ে ছিলেন অাঁকিয়েরা।

এদিকে শুধু ঢাকায় নয় আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ও শহীদ দিবস উপলক্ষে চট্টগ্রাম, রাজশাহী, খুলনা, বরিশাল, রংপুর ও সিলেটসহ দেশের সব জেলায় শহীদ মিনারেও সর্বস্তরের জনতার ঢল নামার খবর পাওয়া গেছে। সেখানেও সব বয়সী মানুষ শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করছেন ভাষা শহীদদের।

গতকাল ছিল সরকারি ছুটি। ভাষাশহীদদের স্মরণে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত রাখা হয়। দিবসটি উপলক্ষে সরকারি-বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল ও রেডিওতে বিশেষ অনুষ্ঠান সম্পচারিত হয়েছে। জাতীয় দৈনিকগুলো বিশেষ ক্রোড়পত্র প্রকাশ করেছে।

কঠোর নিরাপত্তাব্যবস্থা: মহান শহীদ দিবস উপলক্ষে গত শনিবার সন্ধ্যা থেকে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার ঘিরে র‌্যাব ও পুলিশ কঠোর নিরাপত্তাব্যবস্থা নেয়। শহীদ মিনারের আশপাশে ক্লোজড সার্কিট ক্যামেরা (সিসি ক্যামেরা) স্থাপন করা হয়। ছিল র‌্যাবের ডগ স্কোয়াড। শহীদ মিনার অভিমুখী সড়কের বেশ কিছু স্থানে প্রতিবন্ধকতা বসানো হয়। নিরাপত্তাচৌকি বসিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য আসা মানুষকে তল্লাশি করা হয়।

চট্টগ্রামে শ্রদ্ধা নিবেদন
চট্টগ্রাম অফিস জানায়, নগরীর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে রোববার একুশে ফেব্রুয়ারির প্রথম প্রহরের আনুষ্ঠানিকতার পর শ্রদ্ধা জানানোর মধ্য দিয়ে মৌলবাদের মূলোৎপাটনের শপথ নেয়া হয়।

শুরুতেই শহীদদের শ্রদ্ধা জানান গৃহায়ণ ও গণপূর্তমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন।
এরপর শ্রদ্ধা জানান চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিন। চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগ শ্রদ্ধা জানায় সভাপতি এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীর নেতৃত্বে।

তারপর একে একে চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশ কমিশনার আবদুল জলিল ম-ল, চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি শফিকুল ইসলাম, পুলিশ সুপার কেএম হাফিজ আক্তার চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনারের পক্ষে এবং চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক মেজবাহ উদ্দিন ভাষা শহীদদের শ্রদ্ধা জানান।

চট্টগ্রাম পরিষদ প্রশাসক এমএ সালাম ফুল দেয়ার পর শহীদ মিনার সবার জন্য উন্মুক্ত করে দেয়া হয়। এ সময় বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিক ও পেশাজীবী সংগঠনের সদস্যদের পাশাপাশি সাধারণ মানুষ ভাষা শহীদদের শ্রদ্ধা জানাতে থাকে।

শহীদ মিনারে ভাষাশহীদদের শ্রদ্ধা জানায় জাসদ, চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপি, মহানগর যুবলীগ, ছাত্রলীগ গণমুক্তি ইউনিয়নসহ বিভিন্ন সংগঠন। চট্টগ্রাম প্রেসক্লাব, চট্টগ্রাম সাংবাদিক ইউনিয়ন ও চট্টগ্রাম ফটোজার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশনও এ সময় শহীদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে।

এছাড়া বিভিন্ন বয়সী লোকজন একক বা দল বেঁধে শহীদ মিনারে আসেন শ্রদ্ধা জানাতে।তাদের অনেকেই বলেন, মৌলবাদী ও জঙ্গিবাদী শক্তিকেই ঠেকানোই এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ।একুশ আমাদের চেতনা, এই দিনেই আমাদের মৌলবাদী ও জঙ্গিগোষ্ঠীকে ঠেকানোর শপথ নিতে হবে।মহান একুশে ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে এছাড়া রোববার সারা দিন নগরীতে বিভিন্ন কর্মসূচি আয়োজন করেছে বিভিন্ন সংগঠন।মুসলিম হল ও আশপাশের এলাকায় সিটি করপোরেশনের উদ্যোগে চলছে বইমেলা।
রোববার একুশমঞ্চে করপোরেশনের উদ্যোগ সাত বিশিষ্টজনকে দেয়া হবে একুশে পদক।নগরীর ডিসি হিলে একুশ মেলা উদযাপন পরিষদের উদ্যোগেও চলছে পৃথক বইমেলা, সেখানেও আলোচনা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে।রোববার চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান পৃথক কর্মসূচির আয়োজন করেছে অমর একুশে স্মরেণে।

Category: 1stpage, Scroll_Head_Line, দেশের খবর, শীর্ষ সংবাদ

About the Author ()

Leave a Reply