২রা অক্টোবর ওয়াশিংটনে আসছে চট্টগ্রামের ঐতিহ্যবাহী “মেজবান”
বিশ্বজুড়ে বাংলা: প্রথমবারের মত আগামী ২রা অক্টোবর, ২০১৬ ওয়াশিংটন মেট্রো এলাকার বাঙ্গালীদের জন্য আসছে চট্টগ্রামের ঐতিহ্যবাহী “মেজবান”। স্বদেশের প্রতি গভীর ভালবাসা আর অনুরাগে যখন আবিষ্ট হয় আমাদের অনুভূতি, সেখানে ঝরে পড়ে সকালের শিশির, টিনের চালে বেজে উঠে টুপ টাপ বৃষ্টির ছন্দ, ডাক দিয়ে যায় সবুজ বনানীর হাতছানি, কানে বেজে উঠে বাঁশ ঝাড়ে বসে থাকা পাখীর ডাক, নস্টালজিক ভাবনায় আমাদের বহুদূর পেছনে টেনে নিয়ে যায় নদীর বুকে পাল তুলে বয়ে যাওয়া নৌকা, স্মৃতির ক্যানভাসে ভেসে উঠে গোধুলীর রঙ্গে রাঙ্গানো গ্রাম বাংলার চিরপ্রিয় মেঠোপথ। শুধু তাই নয়, আমাদের ভাল লাগার অনুভবে নাড়া দিয়ে যায় বহু যুগ ধরে পরম যত্নে লালিত ঐতিহ্যের ছোঁয়া। হাজার মাইল দূরে বিশ্বের সবচেয়ে উন্নত দেশের আয়েশী জীবনধারার মাঝেও বার বার ফিরে আসে আমাদের ফেলে আসা দিনগুলো, আবিষ্ট করে আমাদের আঞ্চলিক-জাতীয় প্রিয় ঐতিহ্যের প্রানরসে সিক্ত নির্মল আনন্দের রেশ.. । আমরা স্মৃতির বালুকা বেলায় এলিয়ে দিই আমাদের ভাবনার আঁচল- যেখানে আমাদের অস্তিত্বে্র শেখড়, আমাদের বেড়ে ওঠা ছেলেবেলা, আমাদের স্মৃতিময় অতীত। তাই যখন কোন স্বদেশী ঐতিহ্যের আয়োজনের কথা এসে যায়… তখন আমরা ফিরে যাই আমাদের প্রানের স্বদেশভূমিতে, আমাদের ভাল লাগার ভূবনে। এমনি এক ভাল লাগার ঐতিহ্যবাহী আনন্দ আয়োজন নিয়ে আসছে ওয়াশিংটনের চট্টগ্রামবাসীরা- তাদের অঞ্চলের হাজার বছরের প্রাচীন ঐতিহ্য “মেজবান” নিয়ে।
বাংলাদেশের দক্ষিণে উপকূল অঞ্চল সংলগ্ন বঙ্গোপসাগরের কোল ঘেঁষে সৌন্দর্যের কলসী কাঁখে দাঁড়িয়ে আছে যে পাহাড়ী কন্যা, তার নাম চট্টগ্রাম। উঁচু-নিচু ঢেউ খেলে যাওয়া পাহাড়, সবুজের সমারোহ আর কর্ণফুলীর আচলঘেরা চট্রগ্রাম শুধু বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর বা নদীবন্দরই নয়, এখানে লুকিয়ে আছে তাদের অসংখ্য ঐতিহ্যের অহংকার। এমনি এক প্রাচীন ঐতিহ্য “মেজবান”- যার মূল ধারনা হচ্ছে এলাকাবসীদের নিয়ে বিশেষ উপলক্ষ্যে বিশাল আয়োজনে ভোজন-আপ্যায়নের আনন্দ আয়োজন। “মেজবান” শব্দটি এসেছে পার্সিয়ান শব্দ ভান্ডার থেকে, যার আভিধানিক অর্থ হচ্ছে “হোষ্ট” বা “আপ্যায়নকারী”। হাজার বছর আগে সমাজের বিত্তশালীরা তাদের যে কোন উৎসব আয়োজনে এলাকার সবাইকে নিমন্ত্রন করে বিরাট ভোজ-বিলাসের আয়োজন করতেন তাদের প্রভাশালী বিত্ত-বৈভব প্রকাশ করতে। সেটা কালের পরিক্রমায় পরিবর্তন হয়েছে অনেক, কিন্তু মৌলিকতা হারায়নি। এখনও এমনি আয়োজনে প্রচুর লোকসমাগম হয় এবং জনে জনে নয়, কিন্তু ঢালাওভাবে প্রচারণার মাধ্যমে সবাইকে নিমন্ত্রন জানান হয়। ধনী-দরিদ্র, ছোট-বড় নির্বিশেষে সবাই অতিথি- সবার সাথে সমানভাবে এমনি সহভাগিতা করার প্রচলন সত্যিই প্রসংশনীয়। এমন ঐতিহ্য শুধুই চট্টগ্রামের মাটিতে হয়ে থাকে এবং তাদের গর্বিত অহংকারের প্রতীক। আর নিমন্ত্রত অতিথিদের আপ্যায়ন করা হয় সাদা ভাত, বিশেষ পদ্ধতিতে রান্নাকৃত মেজবান গরুর মাংস, চনার ডাল এবং মুরগী বা খাসীর তরকারীও হয়ে থাকে। কিন্তু প্রধান হচ্ছে সাদা ভাত, মেজবান গরুর মাংসের তরকারি এবং চনার ডাল।
সবাইকে নিয়ে চট্টগ্রামের এই ‘মেজবান’ অভিজ্ঞতায় নিজেকে সমৃদ্ধ করতে, সবার সাথে একটি আনন্দমুখর দিন অতিবাহিত করতে… আর সুস্বাদু ‘মেজবানী’ খাবারতো থাকবেই!
Category: Scroll_Head_Line, বিশ্বজুড়ে বাংলা