ওয়াশিংটনে বাংলার ঐতিহাসিক যাত্রাপালা ”মধুমালা ও মদন কুমার” এর শুভ মহরত অনুষ্ঠিত
বিশ্বজুড়ে বাংলা: বাংলা রূপকথার এক ঐতিহাসিক যাত্রাপালা ”মধুমালা ও মদন কুমার” এর শুভ মহরত গত ২০ নভেম্বর রবিবার ওয়াশিংটনের অদুরে ভার্জিনিয়ার আনানডেল শহরের ম্যাশন ডিষ্ট্রিক গর্ভমেন্ট সেন্টারে অনুষ্ঠিত হয়েছে। নুতন প্রজম্মের শিশুদেরকে নিয়ে কাজ করার দীপ্ত প্রত্যয় আর হারিয়ে যাওয়া বাংলার লোকজ শিল্প ও সাহিত্য প্রবাসের তরুন প্রজন্মের মাঝে ছড়িয়ে দেয়ার লক্ষ্যে ওয়াশিংটনের সাংস্কৃতিক সংগঠন সুরবিতান দীর্ঘদিন ধরে নিরলস পরিশ্রম করে যাচ্ছে। সুরবিতানের আয়োজনে পরিচালক সঙ্গীত শিল্পী বুলবুল ইসলামের সার্বিক পরিচালনায় ও নির্দেশনায় আগামী পরিচালনায় আগামী ২২ জুলাই শনিবার ওয়াশিংটনে অনুষ্ঠিত হবে যাত্রাপালা ”মধুমালা ও মদন কুমার” এর শুভ মঞ্চায়ন। এ উপলক্ষ্যে গত ২০ নভেম্বর শনিবার সন্ধ্যায় অনুষ্ঠিত হয় ”মধুমালা ও মদন কুমার” এর শুভ মহরত।
শুভ মহরত অনুষ্ঠানে বুলবুল ইসলাম বলেন, এক সময় বাংলাদেশ যাত্রাপালা অনেক জনপ্রিয় ছিল। রচিত হয়েছিল নানা রূপকল্প। রাতের পর রাত জেগে থেকে মানুষ বিভিন্ন যাত্রার পালা দেখেছে। আলীবাবা, রূপবান, বেদের মেয়ে জোসনা, সোহরাব-রুস্তম, সিঁদুর নিও না মুছে, গরীবের মেয়ে, নবাব সিরাজউদ্দৌলা এরকম বহু যাত্রাপালা দেখার জন্য যাত্রাপাগল মানুষ ছুটে যেতো, যাত্রা দেখতো।
তিনি বলেন, কিন্তু আজ যাত্রা অবস্থাটা কী? এক সময়ের যাত্রাপালা এখন যেন এই নিয়েই মানুষের মধ্যে আগের মত কৌতূহল তেমন একটা নেই। গ্রামে-গঞ্জে মফস্বলে যাত্রা প্রদর্শিত হওয়ার কথা আজকাল খুব একটা শোনাও যায় না। দিন যতই যাচ্ছে মনে হয় এ যাত্রাপালা লুপ্ত হতে চলেছে। এ প্রজন্মের ছেলে-মেয়েদের যাত্রা নিয়ে তেমন একটা কৌতূহলও দেখি না। যুগ পাল্টে যাওয়ার কারণেই হয়তো যাত্রার আজ করুণ পরিণতি।
বুলবুল ইসলাম বলেন, যাত্রার কথা খুব করে মনে পড়ে। সে অনেক বছর আগের কথা। চারদিক খোলা, বাঁশের বা কাঠের খুঁটিতে টাঙ্গানো মাথার উপরে সামিয়ানা। তার নিচে পাতা মঞ্চে যাত্রাশিল্পী অভিনয় করতেন। সাধারণ আঙ্গিনার চেয়ে অভিনয়স্থল মাটি দিয়ে হাতখানেক উঁচু করা হতো। কখনো বা চৌকি পেতে মঞ্চ বানানো হতো। মাইকের ব্যবস্থা না থাকায় যাত্রা শিল্পীরা তখন তো সাধ্যমত উঁচু সুরে গান গাইতো, কথা বলতো। খালি গলায় শত শত দর্শকের কানে তারা তাদের গান বা কথা পৌঁছে দেয়ার ক্ষমতা রাখতো। অভিনয়স্থলের চারদিকে মাটিতে সতরঞ্জি কিংবা শুকনো খড় বিছিয়ে দেয়া হতো সেখানে বসে দর্শক যাত্রা উপভোগ করতো। অভিজাত শ্রেণীর সাহেব গোছের লোকদের জন্য চেয়ার পেতে দেয়া হতো। যাত্রায় তিরিশ-চল্লিশ বছর আগে পুরুষদেরই নারী চরিত্রে অভিনয় করতে হতো। সখীদের নাচ জমে উঠলে এবং দর্শকদের মনঃপুত হলে হর্ষধ্বনিতে যাত্রার আসর মুখরিত হয়ে উঠতো।
সুরবিতানের পরিচালক বুলবুল ইসলাম বলেন, ওয়াশিংটনে সুরবিতান হারিয়ে বাংলার চীরন্তন রূপকল্পগুলো নতুন প্রজন্মের মাঝে ছড়িয়ে দেয়ার জন্য নিরলস কাজ করে যাচ্ছে। ওয়াশিংটনের মাটিতে বেড়ে ওঠা নুতন প্রজন্মের মেধাকে কাজে লাগিয়ে সুরবিতান ইতিমধ্যে রূপবান, বেহুলা সুন্দরী ও সাত ভাই চম্পার মঞ্চায়ণ করে ওয়াশিংটন প্রবাসী দর্শকদের প্রশংসা কুড়িয়েছে। এবারও নুতন প্রজন্মের শিল্পীদেরকে নিয়ে শুরু হল ”মধুমালা ও মদন কুমার” এর যাত্রা। আশা করি এবারও আমরা দর্শকদের মন জয় করতে পারব। বাংলার ইতিহাস ঐতিহ্য কৃষ্টি ও সংস্কৃতিক প্রবাসে বেড়ে ওঠা নুতন প্রজন্মের মাঝে ছড়িয়ে দিতে সুরবিতানের পাশে দাাঁড়ানোর জন্য সবার প্রতি আহ্বান জানান।
অনুষ্ঠানে সুরবিতানের প্রযোজক ফটো সাংবাদিক কামরুল ইসলাম ”মধুমালা ও মদন কুমার” যাত্রাপালার মুল দুই শিল্পী মরিয়ম ও অপুর্বকে সবার সাথে পরিচয় করিয়ে দেন। এরপর তিনি অন্যান্য শিল্পীদেরকেও একে একে সবার সাথে পরিচয় করিয়ে দেন। ”মধুমালা ও মদন কুমার” যাত্রাপালার শুভ উদ্বোধন করেন পারভিন পাটোয়ারী, রুখসানা পারভিন ও মোহাম্মদ আলমগীর। মহরত অনুষ্ঠানে শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন মাজহারুল হক, শামীম চৌধুরী সহ আরো অনেকে। এরপর অনুষ্ঠিত হয় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। অনুষ্ঠানে সঙ্গীত পরিবেশন করেন কবি ও শিল্পী ফাহমিদা হোসাইন শম্পা, আবু রুমি, নাসির আহমেদ, মজনু মিয়া, সুমি চৌধুরী, শিখা ও মৃদুল। যন্ত্র সহযোগীতায় ছিলেন ফজলুর রহমান, আশিষ বড়–য়া ও রোমান। এছাড়াও অনুষ্ঠানে ”মধুমালা ও মদন কুমার” এর স্পন্সর কলাকূশলী শুভানুধ্যায়ী সহ ওয়াশিংটন প্রবাসের বিশিস্ট ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন। সবশেষে অনুষ্ঠানে আত অতিথিদের মাঝে রাতের খাবার পরিবেশনার মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠানের সমাপ্তি ঘটে।
Category: Scroll_Head_Line, বিশ্বজুড়ে বাংলা