বাংলাদেশে সাংবাদিকতায় সবচেয়ে বেশি মৃত্যুর ঝুঁকি !-সৈয়দ সাহিল
একযুগে সাংবাদিক নিহত
বাংলাদেশে সাংবাদিকতায় সবচেয়ে বেশি মৃত্যুর ঝুঁকি !
সৈয়দ সাহিল ঃ সাংবাদিকরা প্রতিটি জাতির বিবেক । যেখানে অন্যায়, অত্যাচার,নির্যাতন, নিপীড়ন,দূর্নীতি, সন্ত্রাসী কার্যক্রম সেখানেই সাংবাদিকের কলম বিজলীর গতিতে ঘটনাটি জন সম্মুখে উঠে আসে। কিন্তু যে সাংবাদিকরা জাতি গঠনে বিশেষ ভূমিকা রেখে চলছে। আজও তাদের জীবনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সম্ভব হয়নি। প্রতিটি দিনই সারা দেশে কোন না কোন ভাবে সাংবাদিক নির্যাতিত হচ্ছে। আর বাংলাদেশে সাংবাদিকতার মৃত্যুর ঝুঁকি সবচেয়ে বেশি। একটু প্রতিবাদী হাতে কলম চালালে ব্যক্তি জীবনে নেমে আসে মৃত্যুর পরোয়ানা। আর গত এক যুগে যারা প্রতিবাদী হয়ে শাসক শ্রেণীর মূখোশ খোলে দিতে কলম হাতে নিয়েছেন। তাদের মধ্যে অনেকেই নিহত হয়েছেন সস্ত্রাসীদের হাতে। এক যুগে অনেকেই সন্ত্রাসীর হাতে নিজ নিজ কর্মস্থলে প্রাণ বিসর্জন দিয়েছেন।
১। মীর ইলিয়াস হোসেন-সম্পাদক, দৈনিক বীর দর্পন। ১৫ জানুয়ারী, ২০০০ ঝিনাইদহের দণি-পশ্চিমানছলের সন্ত্রাসীরা গুলি করে তাকে হত্যা করে।
২। নহর আলী-খুলনার স্থানীয় দৈনিক অনির্বাণের ডুমুরিয়া প্রতিনিধি। ২০০০ সালের ১৭ এপ্রিল মধ্যরাতে অপহৃত হন তার গ্রামের বাড়ি সামন থেকে। তাকে প্রচন্ড মারধর করে হাত-পা ভেঙে ছুরিকাহত করে হত্যা করা হয় ।
৩। আহসান আলী-দৈনিক যুগান্তর পত্রিকার নারায়ণগঞ্জের প্রদায়ক। ২০ জুলাই ২০০১ নিখোঁজ হন। ২২ জুলাই খাল থেকে তাকে এসিডদগ্ধ এবং ছুরিকাহত অবস্থায় পাওয়া যায়। তার হাত-পা এবং বুক এসিডে ঝলসে দেয়া হয়।
৪। হারুনুর রশিদ খোকন-রিপোর্টার, দৈনিক পূর্বাঞ্চল, খুলনা। ২ মার্চ ২০০২ অজ্ঞাতনামা তিন যুবক হাসপাতালে এনে বলে, তিনি গাড়ি দুর্ঘটনায় আহত হয়েছেন। কর্তব্যরত চিকিৎসকরা জানান, হানুরুর রশিদ বুকে বুলেট বিদ্দ হয়ে নিহত হয়েছেন।
৫। শামছুর রহমান-বিশেষ প্রতিনিধি, দৈনিক জনকন্ঠ। ১৬ জুলাই ২০০০ রাত ৮টা ২০ জনকন্ঠ ব্যুরো অফিসে পেশাগত দায়িত্ব পালনকালে দুই বন্দুকধারী সন্ত্রাসীর গুলিতে নিহত হন।
৬। কামাল হোসেন-মানিকছড়ি প্রতিনিধি, িৈদনক আজকের কাগজ এবং ইউএনবি। ২২ আগষ্ট ২০০৪ রাতে সহ্রাস সন্ত্রাসীরা কামালের ২ বছরের শিশুপুত্রকে জিম্মি করে অস্ত্রের মুখে কামাল হোসেনকে বাড়ি থেকে নিয়ে হত্যা করে।
৭। মানিক সাহা -বিবিসি এবং দৈনিক নিউ এইজ খুলনা প্রতিনিধি ও সাধারণ সম্পাদক, খুলনা প্রেস কাব । দুপুরে রিক্্রাযোগে প্রেস থেকে বাড়ি যাওয়ার পথে চরমপন্থী সন্ত্রাসীদের অতর্কিত বোমা হামরায় তার মৃত্যু ঘটে।
৮। সৈয়দ ফারুক আহমেদ-সম্পাদক, দৈনিক পূবালী বার্তা,সহকারী সম্পাদক-দৈনিক খোলা চিঠি, শ্রীমঙ্গল,মৌলভীবাজার। তার লাশ পুলিশ উদ্ধার করে ৩ আগষ্ট ২০০২ ইং এর দুই মাস আগে তিনি নিখোঁজ হন।
০৯। শুকুর হোসেন-দৈনিক অনির্বাণ, খুলনা। সাত সশস্ত্র সন্ত্রাসী ৫ জুলাই ২০০২ তাকে অপহরণ করে হত্যা করে।
১০। হুমায়ুন কবির বালু-সম্পাদক, দৈনিক জন্মভূমি, খুলনা। ২৭ জুন ২০০৪ইং বোমা হামলায় খুলনায় বাড়ীর সামনে নিহত হন।
১১। শেখ বেলাল উদ্দিন-খুলনা ব্যুরো চিফ, দৈনিক সংগ্রাম। ৫ ফেব্র“য়ারী ২০০৫ বোমা হামলায় নিহত হন।
১২। দীপঙ্কর চক্র বর্তী-নির্বাহী সম্পাদক, দুর্জয় বাংলা, বগুড়া। দুর্জয় বাংলা কার্যালয়ে গভীর রাতে ছুরি মেরে তাকে হত্যা করে সন্ত্রাসীরা। তিনি বিএফইউজের সহসভাপতি ছিলেন।
১৩। গৌতম দাস-ফরিপুর প্রতিনিধি দৈনিক সমকাল। ১৭ নভেম্বর ২০০৫ সালে তাকে হত্যা করা হয় অফিস ক।ে
১৪। সাংবাদিক দম্পতি সাগর রুনি ১০ ফেব্রুয়ারী ২০১২ ইং। সাগর সরওয়ার বার্তা সম্পাদক মাছরাঙ্গা টেলিভিশন ও মেহেরুন রুনি সিনিয়র রিপোর্টার এটিএন বাংলা। তাদেরকে ঘরের বিতর সন্ত্রাসীরা কুপিয়ে হত্যা করে। ২০১২ ইং।
১৫। জামাল উদ্দিন-উপজেলার কাশিপুর প্রতিনিধি, দৈনিক গ্রামের কাগজ। তাকে দুবৃত্তরা নির্মমভাবে খুন করে। ২০১২ ইং।
১৬। জুনেদ আহমদ জুনেদ- ষ্টাফ রিপোর্টার দৈনিক বিবিয়ানা। ১০ জুলাই হবিগঞ্জের নবীগঞ্জ সংবাদ প্রকাশের জের ধরে তাকে নৃশংস ভাবে হত্যার পর লাশ টুকরো টুকরো করে শায়েসতাগঞ্জ রেল ষ্টেশনে ফেলে রাখে সন্ত্রাসীরা। ২০১২ ইং।
১৭। তালহাদ আহমেদ কাবিদ-ষ্টাফ রিপোর্টার দৈনিক নরসিংদীর বানী। ২৩ অক্টোবর ২০১২ সালে সন্ত্রাসীদের হাতে খুন হন।
১৮। ফরহাদ খান-সহসম্পাদক, দৈনিক জনতা । ২৮ জানুয়ারী ২০১১ সালে বাসায় খুন হন। তার সাথে স্ত্রী রহিমা খানকে হত্যা করা হয়।
১৯। আলতাফ হোসেন-সাংবাদিক সাপ্তাহিক বজ্রকন্ঠ। ৭ এপ্রিল ২০১১ সালে বাসায় খুন করা হয়।
২০। মাহবুব টুটুল-সাংবাদিক আজকের সূর্যোদয় ও দৈনিক আজকের প্রত্যাশা । ৭ এপ্রিল ২০১১ সালে চট্রগ্রামের পোর্ট কলোনি এলাকায় তাকে হত্যা করা হয়।
২১। ফরিদুল ইসলাম-গোবিন্দগঞ্জ জেলা প্রতিনিধি, দৈনিক ভোরে ডাক। ৭ ডিসেম্বর ২০১১ সালে খুন করা হয়।
২২। শফিকুল ইসলাম টুটুল-ফটোসাংবাদিক এটিএন বাংলা। ৯জুন ২০১০ সালে গুপ্ত হত্যার শিকার হন।
২৩। ফতেহ ওসমানি-সিলেট প্রতিনিধি সাপ্তাহিক ২০০০। ২৮ এপ্রিল ২০১০ সালে খুন হন।
২৪। মনির হোসেন-সভাপতি, বরিশাল প্রেসকাব। ২৩ ডিসেম্বর ২০১০ সালে তাকে প্রকাশ্যে দিবালোকে সন্ত্রাসীরা খুন করে।
২৫। আতিকুল ইসলাম আতিফ-ভিডিও এডিটর এন.টি.ভি। ফেব্র“য়ারী ২০০৯ সালে খুন হন।
২৬। নুরুল ইসলাম রানা-ষ্টাফ রিপোর্টার পাকি মুত্তমন। জুলাই মাসের ২০০৯ সালে হত্যা করা হয়।
২৭। এমএম আহসান হাবিব বারী-নির্বাহী সম্পাদক, সাপ্তাহিক সাপ্রতিক সময়। আগষ্ট মাসের ২০০৯ তারিখে তাকে হত্যা করা হয়।
২৮। আবুল হাসান আসিফ-প্রতিনিধি রুপগন্জ,দৈনিক ইনকিলাব। তাকে খুন করা হয়।
বাংলাদেশ ফেডারেল ইউনিয়নের সভাপতি রুহুল আমিন গাজী বলেন—সাংবাদিক নির্যাতন সাধারণ ঘটনা হয়ে দাড়িয়েছে। কিন্তু হত্যাকারীরা বা নির্যাতনকারীদের বিচারের আওতায় আনা হচ্ছে না। এখন ভয়ে সাংবাদিকরা নিউজ লিখতে পারছেন না। তাই এ সব হত্যার বিচার করা একান্ত প্রয়োজন ।