সম্পাদকীয়: স্বাধীনতা,স্বাধীনতার স্বাদ ও যুদ্ধাপরাধীদের বিচার
সম্পাদকীয়: আমি বা আমার প্রজন্ম অর্থাৎ আমরা যারা মুক্তিযুদ্ধের পরের প্রজন্ম তারা মুক্তিযুদ্ধ দেখিনি। কিন্তু যুদ্ধের ইতিহাস প্রতিটি ঘটনা আমার রক্তে মিশে আছে। তাইতো আমার অস্তিত্ব অনুভব করার সাথে সাথেই টের পাই আমার স্বাধীনতা, আমার স্বাধীনতা সংগ্রাম। এই স্বাধীনতা আনতে গিয়ে যত মায়ের বুক খালি হয়েছে, যত পিতার কাঁধে উঠেছে সন্তানের লাশ, তাদের আহাজারী আর দীর্ঘশ্বাস যখন আমি অনুভব করি তখন স্বাধীনতার স্বাদ নিতে বড় কষ্ট হয়।
আমার লাজুক বোনের নিস্তব্ধ মুখখানি যখন আমার মনে পড়ে স্বাধীনতা আমাকে কাঁদায়। এক নদী রক্ত যখন আমার চোখে ভেসে ওঠে স্বাধীন পদ্মা-মেঘনা-যমুনায় স্নান করতে আমি শিউরে উঠি।
তাই স্বাধীনতার মাসে হৃদয়ের সমস্ত ভালবাসা উজাড় করে শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করছি আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধের সকল বীর শহীদ, মুক্তিযোদ্ধা ও বীরাঙ্গনাদের। যারা আমার মাকে মুক্ত করেছে, আমাকে স্বাধীন সবুজ ধান ক্ষেতে দাড়িয়ে নিঃশ্বাস নেয়ার সুযোগ করে দিয়েছে, যারা আমাকে একটি মানচিত্র আর আমার প্রিয় লাল-সবুজ পতাকা এনে দিয়েছে, তাদের ঋণ কভু শেষ হবে না। শুধু মুক্তিযুদ্ধের পরের প্রজন্ম হিসাবে তাদের স্যালুট জানাই।
আজ স্বাধীনতার ৪২ বছর পর জাতি অতিক্রম করছে এক ক্রান্তিকাল। একদিকে মানবতাবিরোধী ও যুদ্ধাপরাধীদের বিচার, ন্যায় ও ন্যায্য বিচারের দাবিতে প্রজন্ম চত্বর এবং অন্যদিকে যুদ্ধাপরাধীদের বাঁচানোর পক্ষে আন্দোলন।
পৃথিবীর প্রতিটি সচেতন মানুষই অন্যায়ের বিচার আশা করবে এটাই স্বাভাবিক।কারণ, যে সমাজে অন্যায়ের বিচার নেই সেই সমাজে কখনো ন্যায়ের শাসন প্রতিষ্ঠিত হতে পারে না। যারা যুদ্ধাপরাধীদের পক্ষে আন্দোলনরত তারা যেন অন্ধবিশ্বাস আর দলীয় বিবেচনার উর্ধ্বে উঠে সত্য অনুসন্ধান করেন।
আর যারা সরকার বা ক্ষমতাসীন আছেন তাদের নিকট চাওয়া বিষয়টি যাতে কোন ভাবেই রাজনৈতিক ইস্যু না হয়। কোন পক্ষই যেন এর থেকে রাজনৈতিক ফায়দা লুটবার চেষ্টা না করেন।
দেশের প্রতিটি সচেতন মানুষই চায় আমার স্বাধীন সুন্দর দেশটি যেন কোন ভাবেই পাকিস্তান, আফগানিস্তান অথবা সিরিয়ার মতো অস্থিতিশীল হয়ে না যায়।আর যদি তাই হয় তবে ৩০ লক্ষ্য শহীদকে আমরা কী জবাব দেব?
তাই আসুন সকলে মিলে বর্তমান সংকটময় পরিস্থিতিটি সততা, বিবেক, দ্বায়বদ্ধতা এবং নিরপেক্ষতা দিয়ে মোকাবেলা করি।দেশকে সংকট থেকে বাঁচাই।
Category: সম্পাদকীয়