ফ্রান্সে “প্রবাসী বিপ্লব-২০১৯” এর ২য় প্রতিবাদ সভা ও নীতি নির্ধারণী আলোচনা অনুষ্ঠিত। (Video) 03.02.2019
ইউরোবিডি সংবাদ: গত ৩ ফেব্রুয়ারি রবিবার সন্ধ্যা ৬টা ৩০মিনিটে পূর্ব নির্ধারিত কর্মসূচি অনুযায়ী প্রবাসী বিপ্লব-২০১৯ এর ২য় প্রতিবাদ সভা ও নীতি নির্ধারনী আলেচনা সভা ফ্রান্সের গার দু নর্দের একটি হলে অনুষ্ঠিত হয়েছে।
ফ্রান্স বাংলা প্রেস ক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ফারুক নওয়াজ খাঁনের সভাপতিত্বে ও ফ্রান্স বাংলা প্রেস ক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা সাংগঠনিক সম্পাদক ইমরান মাহমুদের পরিচালনায় প্রতিবাদ সভায় প্রধান আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন প্যারিস বাংলা প্রেস ক্লাবের সভাপতি এনায়েত হোসেন সোহেল।
এনায়েত হোসেন সোহেল তার বক্তব্যে বলেন, বাংলাদেশে সরকারের পালা বদল হয়েছে একের পর এক, কিন্তু কোন সরকারই প্রবাসীদের দীর্ঘ দিনের চলমান যৌক্তিক দাবী গুলো বাস্তবায়নে আন্তরিক ছিলেন না। প্রতিটি সরকারই প্রবাসীদের শুধু দাবী বাস্তবায়নের আশাই দিয়েছেন।
তিনি আরও বলেন, প্রবাসীরা বাংলাদেশে যাওয়ার সময় বিমান বন্ধরে অযথা হয়রানির শিকার হচ্ছেন। এছাড়া প্রবাসীরা বাংলাদেশে ব্যবসা করতে গেলে অতিরিক্ত ট্যাক্স ও চাঁদাবাজীর শিকার হচ্ছেন। প্রবাসীরা দেশে গিয়ে সন্ত্রাসীদের ও বিভিন্ন গোষ্ঠীদের দ্বারা হামলা ও নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন। তিনি আরও বলেন, অর্থাৎ প্রবাসীরা বাংলাদেশে গিয়ে কোন ধরনের সঠিক সুযোগ সুবিধা বা ন্যায় পাচ্ছেননা। তিনি বলেন, এতো রেমিট্যান্স পাঠানোর পরও আমরা প্রবাসীরা নিগৃহীত, কেউ মারা গেলে প্রবাস থেকে লাশটা পাঠাতে হয় দ্বারে দ্বারে ভিক্ষা করে। দীর্ঘ দিন রাষ্ট্রীয় খরচে প্রবাসীদের লাশ দেশে প্রেরণের এই যৌক্তক দাবি সরকার মেনে নেবে আশা দিয়েও তা বাস্তবায়ন করেনি। এছাড়া প্রবাসীদের অন্যান্য সমস্যা গুলোর মধ্যে, প্রবাসীদের ভোটাধিকার প্রদান, দূতাবাস গুলোতে পাসপোর্ট নবায়নে দীর্ঘ সূত্রীতা, এবং প্রবাসীদের সকল যৌক্তিক দাবী নিয়ে “প্রবাসী বিপ্লব-২০১৯” এর এই আন্দোলনের সাথে এনায়েত হোসেন সোহেল একাত্মতা পোষণ করেন। সর্বশেষ তিনি দেশের সকলের প্রতি আহ্বান জানান, আপনারা আমাদেরকে প্রবাসী হিসেবে দেখবেন না, একজন বাংলাদেশী হিসেবে দেখবেন, একজন ভাই হিসেবে দেখবেন।
এর পর ফ্রান্স বাংলা প্রেস ক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ফারুক নওয়াজ খাঁন তার বক্তব্যে আবারও ফেনীর ছাগলনাইয়া থানার ওসি এমএম মোর্শেদের প্রবাসীদের নিয়ে ধৃষ্টতাপূর্ণ ও কুরুচিকর বক্তব্যের তীব্র নিন্দা জ্ঞাপন করেন এবং ওসি মোর্শেদের দৃষ্টান্ত মূলক শাস্তি দাবী করেন।
তিনি অত্যন্ত সাবলীল ভাষায় ব্যাখ্যা করেন, “প্রবাসী বিপ্লব-২০১৯” কেন? এর থেকে আমরা কি পেতে পারি?
তিনি বলেন, বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যার ১৮ শতাংশ প্রবাসী। এক কথায় তারা অনাবাসী বাংলাদেশী। তাদের সকলেই প্রাপ্ত বয়স্ক। অর্থা্ৎ তারা সকলেই ভোটার। যদিও বা তারা ভোট দেয়ার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন প্রক্রিয়াগত কারনে।
বাংলাদেশের অর্থনীতিতে অনাবাসী বাংলাদেশীরা সক্রিয় ভুমিকা রেখে আসছেন। দেশের রপ্তানী আয় মেটানোর জন্য যে পরিমান বৈদেশিক মুদ্রা দরকার তার পুরোটাই আসে এ খাত থেকে।
অনাবাসী বাংলাদেশীদের অধিকার কি সেভাবে রক্ষা হচ্ছে?
বাস্তবতা বিচার করলে দেখা যায় এক শতাংশও অধিকার রক্ষা হচ্ছে না অনাবাসী বাংলাদেশীদের। সারা বছর প্রবাসে অমানুষিক শ্রম দিয়ে দেশে ফেরার সময় বিমান বন্দর থেকে শুরু হয় দুর্গতি।
প্রবাসীদের প্রেরীত অর্থে এবং জাতীয় রাজস্ব দিয়ে যাদের বেতন দেয়া হয় সে সব বেতনভোগীরা বিলেতীদের মতো স্যুট টাই পড়ে একজন লুঙ্গি পড়া প্রবাসীকে তুচ্ছ তাচ্ছিল্যের চোখে দেখে। তাদের হয়রানি করে তারা মজা লুটে।
কারো কাছে এ বিষয়ে বিচার দিয়ে কোন লাভ হয় না। বরং আরো হয়রানি হবার আশঙ্কা থাকে।
এসব থেকে পরিত্রাণের একমাত্র উপায় প্রবাসী বিপ্লব।
আমরা কি পেতে পারি?
-প্রবাসীরা স্থানীয় সরকার নির্বাচনে কোন পদ আশা করে না। এবং এ বিষয়ে তাদের কোন আগ্রহ ও থাকতে পারে না। কারন স্থানীয় সরকারের কাজ রাস্তাঘাট নির্মান ও বিভিন্ন সামাজিক কাজ করা। প্রবাসীরা চাইবে তাদের অনুকুলে যেন আইন প্রণয়ন করা যায়। তাদের সুরক্ষা দেয়া যায়। এ কারনেই দেশের আইন সভার সংখ্যানুপাতে প্রবাসীদের জন্য সদস্যপদ সংরক্ষিত রাখা।
-জাতীয় সংসদের মোট সদস্য সংখ্যার ১৮ শতাংশ হয় ৫৪ জন। প্রবাসীদের জন্য ৫০ টি সংসদীয় আসন সংরক্ষিত রাখা যেতে পারে। তারা সরাসরি ভোটে নির্বাচিত হবে না। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে প্রবাসীদের সংখ্যা অনুযায়ী তাদের প্রতিনিধিত্ব নির্বাচন করা যেতে পারে।
-প্রবাসী সাংসদরা শুধূ আইন প্রনয়নের কাজ করবেন। তাদের উন্নয়ন বাজেটের গম বরাদ্দ দেয়ার দরকার নেই। সংসদে গিয়ে প্রবাসী বান্ধর আইন প্রনয়নে তারা ভুমিকা রাখবেন।
-প্রবাসী কল্যান মন্ত্রনালয় রয়েছে সে মন্ত্রনালয়ের মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী, উপদেষ্টা প্রবাসীদের মধ্য থেকে নিতে হবে।
-বাংলাদেশের দুতা্বাসগুলোতে প্রবাসী অনুবিভাগ করতে হবে। এখানে প্রবাসীদের নিয়োগ দিতে হবে।
-প্রবাসীদের মাধ্যমেই অধিক কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরী করা যায়। এ কারনেই প্রয়োজনে শ্রম রপ্তানী বাজার নিয়ন্ত্রনের জন্য যে সব দেশে অধিক জনশক্তি রপ্তানী করা সম্ভব সে সব দেশে রাষ্ট্রদুত প্রবাসীদের মধ্য থেকে দেয়া দরকার।
প্রবাসীদের আরো অনেক নায্য দাবী দাওয়া রয়েছে সে সব পুরনের জন্য ‘প্রবাসী বিপ্লব-২০১৯’ কাজ করবে।
মনে রাখবেন প্রবাসীদের কষ্ট প্রবাসীরাই বুঝবে। তাই দল মতের ঊর্ধ্বে উঠে এ বিপ্লব সফল করতে সকলে এগিয়ে আসুন।
এর পর ভিন্ন রকম প্রতিবাদ হিসেবে আরমান আলিফের ব্যাপক জনপ্রিয় “অপরাধী” গানের প্রবাসী ভার্শন উপস্থিত সকলের সামনে পরিবেশ করেন কন্ঠকারিগর রফিক শিকদার।
সভার শেষ পর্বে, সভাপতি ফারুক নওয়াজ খাঁন বিশ্বের বিভিন্ন দেশে প্রবাসী বিপ্লব-২০১৯ এর প্রতিনিধি নির্বাচনের কার্যক্রম উদ্বোধন করেন। তিনি সভা থেকে লাইভ ভিডিওতে কথা বলেন “প্রবাসী বিপ্লব-২০১৯” এর মালয়েশিয়া প্রতিনিধি জোটন দাসের সাথে। জোটন দাস তার লাইভ ভিডিও বার্তায় বলেন, প্রবাসীদের নিয়ে অনেক দলবাজি হয়েছে, সংগঠন বাজি হয়েছে দেশে দেশে, অনেকেই এসব করেছেন নিজেদের ফেইস ভ্যালু ও প্রচার বাড়ানোর জন্যে। তাই আমি মনে করি, এবার সাধারণ প্রবাসীদের কথা বলার একটি প্লাটফর্ম হলো “প্রবাসী বিপ্লব-২০১৯”। যার মালয়েশিয়া প্রতিনিধি হিসেবে আমি জোটন দাস সর্বাত্মক চেষ্টা করবো এখানকার প্রবাসীদের সমস্যাগুলো ও তাদের যৌক্তিক দাবীগুলো “প্রবাসী বিপ্লব-২০১৯” এই প্লাটফর্মের মাধ্যমে বিশ্ব প্রবাসীদের নিকট তুলে ধরতে।
ফারুক নওয়াজ খাঁন “প্রবাসী বিপ্লব-২০১৯” এর মালয়েশিয়া প্রতিনিধি জোটন দাসের সাথে কথা বলার পর তিনি লাইভ ভিডিওতে কথা বলেন “প্রবাসী বিপ্লব-২০১৯” এর ইংল্যান্ড প্রতিনিধি শামছুল ইসলামের সাথে।
শামছুল ইসলাম তার ভিডিও বক্তব্যে বলেন, “প্রবাসী বিপ্লব-২০১৯” ফ্রান্স থেকে শুরু হওয়ায় আমি আবেগ আপ্লুত। কারণ, অনেক ঐতিহাসিক বিপ্লবই ফ্রান্স থেকে শুরু হয়ে পরে সেটি আন্দোলন সংগ্রামের মধ্য দিয়ে সফল হয়েছিলো। তিনি আরও বলেন “প্রবাসী বিপ্লব-২০১৯” এর মাধ্যমে আমরা প্রবাসীদের দীর্ঘ দিনের ন্যায্য দাবী গুলো কর্তৃপক্ষের কাছে তুলে ধরে সে গুলোকে আদায় করতে সক্ষম হবো।
সভা থেকে সর্ব সম্মতিক্রমে প্রবাসী বিপ্লবের ৩য় প্রতিবাদ সভাটি আগামী রবিবার ১০ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত হবে বলে ঘোষণা করা হয়।
Category: Notice Board, Scroll_Head_Line, video-news