প্রবাসের মেধা ও অভিজ্ঞতা কাজে লাগাতে সংসদে প্রবাসীদের জন্যে ২৫টি আসন সংরক্ষণের দাবি
বিশ্বজুড়ে বাংলা: প্রিয় মাতৃভূমি বাংলাদেশের সার্বিক কল্যাণে সারাবিশ্বের প্রবাসীদের মধ্যে নেটওয়ার্ক প্রতিষ্ঠার দৃপ্ত প্রত্যয় উচ্চারিত হলো নিউইয়র্কে কর্মরত বাংলাদেশী সাংবাদিকদের অভূতপূর্ব এক মিলনমেলায়।
উত্তর আমেরিকায় বাংলা ভাষার সর্বাধিক প্রচারিত সাপ্তাহিক ঠিকানার সম্পাদকমন্ডলী ও সাবেক এমপি এম এম শাহীনের আহবানে ৭ জুন রাতে (বাংলাদেশ সময় শনিবার সকাল) নিউইয়র্ক সিটির জ্যাকসন হাইটসে পালকি পার্টি সেন্টারে অনুষ্ঠিত এ সমাবেশ থেকে বাংলাদেশ জাতীয় সংসদে প্রবাসীদের জন্যে ২৫টি আসন সংরক্ষণের দাবিও উঠেছে। প্রবাসের মেধা ও অভিজ্ঞতা বাংলাদেশের উন্নয়নে আরো জোরালোভাবে সম্পৃক্ত করতে নারীদের মতো প্রবাসীদের জন্যেও আসন সংরক্ষণের ব্যবস্থা অপরিসীম ভূমিকা পালনে সক্ষম হবে বলে প্রবাসের সাংবাদিকরা মনে করেন। এ সময় এম এম শাহীন দৃঢ়কন্ঠে ঘোষণা করেন যে, দেশের মর্যাদাহানী ঘটে এমন কোন নেতিবাচক সংবাদ এখন থেকে আর প্রকাশ করবো না। অপর সংবাদপত্রের মালিক সম্পাদকগণ এ ঘোষণাকে স্বাগত জানিয়েছেন।
নানাবিধ কারণে দীর্ঘদিন থেকেই নিউইয়র্কে সাংবাদিকদের মধ্যে বিভক্তি বিরাজমান থাকলেও এ সমাবেশের মধ্য দিয়ে দেশের স্বার্থে ঐক্যের এক শুভ সূচনা ঘটলো বলে অনেকে মন্তব্য করেন। ঠিকানার সম্পাদক মুহম্মদ ফজলুর রহমানের সঞ্চালনে অর্ধ শতাধিক সাংবাদিকের এ সমাবেশে শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন এনআরবি ব্যাংকের পরিচালক ও টিভি টক শো হোস্ট মঞ্জুরুল ইসলাম এবং দৈনিক আমাদের অর্থনীতির সম্পাদক নাঈমুল ইসলাম খান।
এম এম শাহীন ১৯৯৩ সালে নিউইয়র্কের প্রবাস জীবন ছেড়ে সপরিবারে বাংলাদেশে ফিরে গিয়ে রাজনীতিতে সক্রিয় রয়েছেন। বছরে একবার তিনি নিউইয়র্কে আসেন। তার মালিকানাধীন সাপ্তাহিক ঠিকানা হচ্ছে তার প্রবাসের ঠিকানা। তবে এবারের এ আয়োজনে ভিন্ন মাত্রা পেয়েছে।
এম এম শাহীন বলেছেন, ‘নিউইয়র্কে বিমানের ফ্লাইট সম্প্রসারণ, সোনালী এক্সচেঞ্জ প্রতিষ্ঠা, বাংলাদেশে প্রবাসী ডেস্ক ও প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয় প্রতিষ্ঠার দাবি সর্বপ্রথম আমিই তুলেছিলাম। প্রবাসীদের ভোটাধিকারের দাবিতে আমি শেষ পর্যন্ত সোচ্চার ছিলাম।’ মঞ্জুরুল ইসলাম বলেন, ‘৩টি পায়ের ওপর দাঁড়িয়ে রয়েছে বাংলাদেশ। প্রথমটি হচ্ছে বাংলাদেশের কৃষি শ্রমিক, দ্বিতীয়টি প্রবাসী শ্রমিক এবং তৃতীয়টি হচ্ছে গার্মেন্ট শ্রমিক। অথচ বাংলাদেশের রাজনীতিকরা যখনই ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হন তখনই এ ৩টি পায়ের যথাযথ মর্যাদা ও স্বীকৃতি প্রদানে যারপর নাই কৃপণতা প্রকাশ করেন।
তিনি উল্লেখ করেন, নিজের ভবিষ্যত সুরক্ষার জন্যে মাতৃভূমি ছেড়ে প্রবাসে বসতি গড়া প্রতিটি প্রবাসীর হৃদয়েই ক্ষরণ ঘটে বাংলাদেশের চেহারা বদলে দেয়ার প্রত্যয়ে। প্রবাসীদের মনের গহিনে যে প্রেম তা হচ্ছে দেশপ্রেম।’ সাংবাদিক নাঈমুল ইসলাম খান বলেন, ‘নিউইয়র্ক, লন্ডন, কানাডাসহ বিভিন্ন দেশ থেকে বাংলা ভাষার বহু পত্রিকা প্রকাশিত হচ্ছে। এগুলোর মধ্যে সমন্বয় ঘটাতে পারলে দেশের স্বার্থে তাদের নিরলস প্রয়াস আরো সংগঠিত হবে। এজন্যে বাংলাদেশ ও প্রবাসে সমন্বয় করা দরকার।’ এম এম শাহীন তার সমাপনী বক্তব্যে আরো উল্লেখ করেন, ‘নিউইয়র্কে ৩ লক্ষাধিক বাংলাদেশী রয়েছেন। অথচ মূলধারায় এখনও কোন বাংলাদেশী নির্বাচিত হতে পারেননি। এ ব্যাপারে মিডিয়াগুলো ঐক্যবদ্ধ থাকলে পরিস্থিতির উন্নতি ঘটানো সহজ হবে।’ ‘বাংলাদেশের জিডিপিতে প্রবাসীদের অবদান হচ্ছে ২২%। এ অবস্থায় তাদের জন্যে জাতীয় সংসদে ২৫টি আসন সংরক্ষিত করা হলে প্রবাসের মেধা ও অভিজ্ঞতায় বাংলাদেশকে আরো দ্রুত এগিয়ে নেয়া সম্ভব হবে’-বলেন এম এম শাহীন।
এ অনুষ্ঠানে নিউইয়র্কে ৩টি প্রেসক্লাবের সকল সদস্য-কর্মকর্তা ছাড়াও সকল মিডিয়া (প্রিন্ট এবং ইলেক্ট্রনিক)’র মালিক-সম্পাদক, বাংলাদেশের দৈনিকগুলোর প্রতিনিধি, টেলিভিশন চ্যানেলের প্রতিনিধি, বার্তা সংস্থা ও ওয়েবসাইট পত্রিকার সম্পাদক ও প্রতিনিধিরা অংশ নেন। নিউইয়র্কে কর্মরত সকল সাংবাদিক ঐক্যবদ্ধ হচ্ছেন-এ সংবাদটি কম্যুনিটিতেও স্বস্তি এনেছে। উল্লেখ্য, নিউইয়র্ক হতে ১৪টি সাপ্তাহিক প্রকাশিত হচ্ছে। এছাড়া বাংলাদেশের প্রায় সবকটি বেসরকারী টিভি চ্যানেলই প্রতিনিধি অথবা অফিস রয়েছে নিউইয়র্কে।
Category: 1stpage, বিশ্বজুড়ে বাংলা