• ৭ অগ্রহায়ণ ,১৪৩১,21 Nov ,2024
  • ব্রেকিং নিউজ : বাংলাদেশের রিকশাচিত্র পেল ইউনেস্কোর অপরিমেয় সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের স্বীকৃতি

সম্পাদকীয়: হতে চাই রাজনীতিবিদ নাকি সাংবাদিক?

| জুলাই 30, 2013 | 0 Comments

হতে চাই রাজনীতিবিদ নাকি সাংবাদিক

অন্যায়, অসংহতি, দুর্নীতি, অনিয়ম, পেশী শক্তির অপব্যবহার, স্বাধীনতা হরণ সহ সমাজের নেতিবাচক কর্মকাণ্ড গুলো সাধারণ মানুষের সামনে তুলে ধরা যেমন একজন সাংবাদিকের পেশাগত দায়িত্ব, তেমনি আমাদের দেশের রাজনীতিবিদরা উপরে উল্লেখিত নেতিবাচক বিষয়গুলো চর্চার মাধ্যমে উপভোগ করেন রাজনৈতিক ক্ষমতা অপব্যবহারের মজা।

সাংবাদিকতা পেশা বেছে নেয়ার কারণে একজন সাংবাদিকের জীবনের যেমন কোন নিরাপত্তা নেই উপরন্তু যেকোনো সময় প্রভাবশালী দুর্নীতিবাজ রাজনৈতিক নেতার (টিআইবির জরিপ অনুযায়ী ৯৭% সংসদ সদস্য দুর্নীতিবাজ) টার্গেটে পরিণত হয়ে চলে যেতে পারে সাংবাদিকের জীবন।

তেমনি একজন রাজনীতিবিদ হওয়ার কারণে উনার জীবনের নিরাপত্তা বেড়ে গেল বহুগুণ। একদিকে নিজস্ব নিরাপত্তা বাহিনীর নামে সন্ত্রাসী বাহিনী, অপরদিকে, প্রশাসন হাতের মুঠোয়। বাহ! এ যেন রামরাজত্ব!

একজন রাজনীতিবিদ  একটা অন্যায় অনিয়ম করতে পারবেন আর একজন সাংবাদিক হয়ে তার তথ্য সংগ্রহ করতে গেলে খেতে হবে মার। একজন রাজনীতিবিদ হয়ে রাষ্ট্রীয় সম্পদ লুটপাট করা জায়েজ আর একজন সাংবাদিক হয়ে তা জনগণের কাছে তুলে ধরা নাজায়েজ।

একজন রাজনীতিবিদ দুর্নীতি আর টেন্ডারবাজীর মাধ্যমে অবৈধ টাকার পাহাড় গড়লেও কোন সমস্যা নেই আর একজন সাংবাদিক হয়ে রাজনীতিবিদের দুর্নীতি নিয়ে বিবেকের দায়ে দুইকলম লিখলেই হয়ে গেল মহাভারত অশুদ্ধ।

অনেকেই বলে সাংবাদিক চাইলেই যে কাউকে উপরেও তুলতে পারে আবার নামাতেও পারে। আমি ব্যক্তিগতভাবে এটা বিশ্বাস করিনা। বরং, কথাটা হবে এরকম, আপনার গুণই আপনাকে উপরে তুলবে এবং আপনার দোষই আপনাকে নামাবে। একজন সাংবাদিক যেটা করতে পারে তা হল, আপনার দোষ বা গুণ মানুষের সামনে তুলে ধরতে পারে মাত্র।

কোনদিন একজন সাংবাদিক কাউকে উপরে তুলে যেমন নোবেল প্রাইজ এনে দিতে পারে না তেমনি কাউকে নিচে নামিয়ে জেলেও পাঠাতে পারেনা। সবই মানুষের কর্মের ফল।

এমন একটি উদাহরণও কি আছে যে, একজন নিরাপরাধ ও নির্দোষ ব্যাক্তিকে কোন সাংবাদিক দোষী প্রমাণ করেছে?   সাংবাদিক তার পেশাগত কারণেই নানা তথ্য, উপাত্ত ও ঘটনার মটিভ নিয়ে কাজ করে। এটা কোন অপরাধ নয়। সত্য বের করে আনার জন্য এর বিকল্প নেই।

একজন রাজনীতিবিদ যদি কোন ঘটনায় নিজেকে নির্দোষ মনে করেন, তাহলে ওনার উচিৎ সৎসাহস নিয়ে ঘটনার সত্যতা যাচাইয়ে সাংবাদিকদের সহায়তা করা। তাহলে, সত্যও বেরিয়ে আসবে এবং সাংবাদিকদের পেশাগত দায়িত্ব পালন করাও সহজ হবে।

এমন কোথাও শোনা যায়নি , একজন সাংবাদিক আঙুল ফুলে কলাগাছ হয়েছেন কিন্তু এমন অসংখ্য উদাহরণ আছে, রাজনীতিবিদ রাতারাতি হাজার কোটি টাকার মালিক হয়েছেন।

এমন একটি উদাহরণও পাওয়া যাবেনা যে একজন সাংবাদিক কোন রাজনীতিবিদকে অথবা কোন সাধারণ মানুষকে হত্যা করেছেন। কিন্তু, এমন অসংখ্য উদাহরণ রয়েছে যেখানে দিনে দুপুরে রাজনীতিবিদরা সাংবাদিক হত্যা করেছেন।

একজন সাংবাদিকের শক্তি কি?  কলম, ক্যামেরা ও বিবেক। এই তিনটি দিয়ে আর যাই করা যাক, কাউকে খুন করা সম্ভব নয়। বড়জোর সত্যমিথ্যা উদঘাটন করা যেতে পারে। ঘটনার প্রকৃত তথ্য বা চিত্র সাধারণ মানুষের সামনে তুলে ধরা যেতে পারে। আর এটাই একজন সাংবাদিকের পেশাগত দায়িত্ব।

এই পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে গিয়েই জাতির বিবেক খ্যাত সাংবাদিকবৃন্দ কখনও চরম জুলুম নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন, আর কখনও পেশীশক্তি ও রাষ্ট্রীয় শক্তির প্রভাবে জান-মালের নিরাপত্তা হারাচ্ছেন।

জাতির প্রতিটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনায় সাংবাদিকদের অবদান অনস্বীকার্য। তাই প্রতিটি সাংবাদিকের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা রাষ্ট্রীয় দায়িত্ব। সাংবাদিক যখন কোন রাজনীতিবিদের নির্বাচনে জয়ের সংবাদ প্রকাশ করবেন তখন সেটা ঠিক আছে। আর যখনই ওনার দুর্নীতি নিয়ে প্রতিবেদন করবেন তখন আর ঠিক নেই। তখনই বন্দুক তাক করবেন গুলি করতে, পা উঁচু করবেন লাথি মারতে, রড নিবেন কোমর ভাঙতে আর হাত উঠাবেন ঘুষি মারতে।

মাননীয় রাজনীতিবিদ, আপনি জানেন কি? যে সাংবাদিককে তার পেশাগত দায়িত্ব পালনের কারণে আপনি জুলুম নির্যাতন করছেন, উনি যদি কলম হাতে না নিয়ে হাতে নিতেন বন্দুক, তাহলে হয়ত আপনার চেয়েও বড় কোন শিকারি হতে পারতেন। যদি হাতে নিতেন রড তাহলে হয়ত আপনার চেয়ে আরও তীব্র ও বেধড়ক পেটাতে সক্ষম হতেন। আর আপনার মতই যদি জীবনের লক্ষ্য স্থির করতেন রাজনীতিবিদ হবার তাহলে হয়তোবা তিনি আপনার চেয়েও দক্ষ দুর্নীতিবাজ, টেন্ডারবাজ ও ধোঁকাবাজ হতে পারতেন। কারণ, ওনার বিবেক এবং বুদ্ধি দুটোই আপনার চেয়ে অনেক বেশি স্পষ্ট এবং শক্তিশালী। আর তাই তিনি সাংবাদিক হয়েছেন।

যারা মনে করেন, সাংবাদিক নির্যাতন করে সত্য রোধ করা যাবে, তাদের জন্য বলছি, ইতিহাস দেখুন। সাংবাদিক নির্যাতন বা হত্যা করে কেউ সত্যের হাত থেকে বাঁচতে পারেনি। হয়ত, একটু আগে বা পরে, সত্য উদঘাটন হবেই।

 তবে, দুঃখজনক হচ্ছে, রাজনীতিবিদরা কথায় কথায় “ইতিহাস” শব্দটি উচ্চারণ করলেও ওনারা তা থেকে কোন শিক্ষাই নেন না।

সমাজে সব সাংবাদিক নির্যাতন বা হত্যা যে সরাসরি রাজনীতিবিদরা করছেন, তা নয়। তবে, প্রতিটি সাংবাদিক হত্যা বা নির্যাতন যে রাজনীতিবিদদের প্রত্যক্ষ অথবা পরোক্ষ মদদে হচ্ছে এতে কোন সন্দেহ নেই।

টিআইবি এর জরিপ অনুযায়ী, আমাদের দেশের ৯৭% সংসদ সদস্যই কোন না কোনভাবে দুর্নীতির সাথে জড়িত। আধুনিক বিশ্বে এই তথ্য কোন ভাবেই আমাদের জন্য সম্মানজনক নয়। নিজে দুর্নীতিমুক্ত না হয়ে কখনোই দুর্নীতিমুক্ত সমাজ বা রাষ্ট্র গঠন করা সম্ভব নয়।  তাই, আশা করবো আমাদের দেশের আইন প্রণেতারা নিজেরা দুর্নীতিমুক্ত হবেন এবং একটি দুর্নীতিমুক্ত দেশ গড়বেন। তাহলে, কথা দিচ্ছি, কোন সাংবাদিক দুর্নীতির দায়ে আপনার কোন ইন্টারভিউ করার জন্য কষ্ট করে ক্যামেরা, কলম আর বিবেক নিয়ে আপনার পিছু নেবে না।

 পরিশেষে, সকল সাংবাদিক হত্যা-নির্যাতনের সঠিক বিচার দাবী করছি এবং সাংবাদিক নির্যাতন বন্ধ করে, দেশের সকল মানুষ নিজ নিজ পেশায় সততা ও দায়িত্বের সাথে কাজ করে একটি সুন্দর ও স্বপ্নের বাংলাদেশ গড়ে তুলবে, এটাই প্রত্যাশা।

 

Category: সম্পাদকীয়

About the Author ()

Leave a Reply