• ৯ অগ্রহায়ণ ,১৪৩১,24 Nov ,2024
  • ব্রেকিং নিউজ : বাংলাদেশের রিকশাচিত্র পেল ইউনেস্কোর অপরিমেয় সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের স্বীকৃতি

জাতিসংঘ সাধারণ সম্মেলনে “বিশ্ব শৌচাগার দিবস”

| আগস্ট 6, 2013 | 0 Comments

আন্তর্জাতিক:  সম্প্রতি জাতিসংঘ সাধারণ সম্মেলনে বেশ মজার কিন্তু খুব গুরুত্বপূর্ণ একটি দিবস গৃহীত হয়েছে। আর এ দিবসটি হচ্ছে-“বিশ্ব শৌচাগার দিবস”। জাতিসংঘ এক বিবৃতিতে প্রতি বছর ১৯ নেভেম্বরকে ‘বিশ্ব শৌচাগার দিবস’ হিসেবে ঘোষণা করেছে। সাধারণত আমরা জানি যে, জাতিসংঘ সাধারণ সম্মেলনে সবসময় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের বিশেষ ও বড় বড় ঘটনা বা আঞ্চলিক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে আলোচনা করা হয় এবং এ সংশ্লিষ্ট কার্যকর সিদ্ধান্ত বা পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়ে থাকে। কিন্তু এবারের সম্মেলনে শৌচাগার বিষয়কে বিশেষ গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে। এ ধারণাটি জাতিসংঘের সদস্যরাষ্ট্র সিংগাপুরের উদ্যোগে উপস্থাপন করা হয়, যার লক্ষ্য “বিশ্বের প্রত্যেক মানুষের মৌলিক স্বাস্থ্য সুরক্ষা করা”। তাই এ ধারণা জাতিসংঘের সদস্য দেশের ব্যাপক সমর্থন লাভ করে।

শৌচাগার দিবসের কথা উল্লেখ করলে একটি খুব মজার বিষয় আমার মাথায় ফুটে উঠে।

বিশ্বের নানা প্রান্তের অনেক আকর্ষণীয় শৌচাগার দিয়েই দেশটি তৈরি করেছে চমৎকার একটি শৌচাগার পার্ক। বলা হচ্ছে, শৌচাগার নিয়ে তৈরি এটিই পৃথিবীর প্রথম থিমপার্ক। যেখানে রয়েছে শৌচাগার আকৃতির আকর্ষণীয় একটি বাড়ি। দক্ষিণ কোরিয়ার রাজধানী সিউলের বাইরে সুওয়ান শহরে রয়েছে এই পার্কটি। শৌচাগার আকৃতির ওই বাড়িকে কেন্দ্র করেই পার্কটি তৈরি হয়েছে। বাড়িটি ছিল ওয়ার্ল্ড টয়লেট অ্যাসোসিয়েশনের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি সিম জেই-ডাকের। তাঁর মৃত্যুর পর বাড়িটি জাদুঘর হিসেবে অধিগ্রহণ করা হয়। জাদুঘরের বাইরে তৈরি করা হয় বিভিন্ন মডেলের শৌচাগার ও ব্যক্তির ভাস্কর্য।

মি: সিম শুরুতে লৌহসামগ্রীর ব্যবসা করে ভাগ্যের পরিবর্তন করেছিলেন। কিন্তু তাঁর জন্ম ও বেড়ে ওঠা ছিল একটি অনগ্রসর পরিবারে। শৈশবের নোংরা আর অস্বাস্থ্যকর শৌচাগার তাঁর মনে গভীর রেখাপাত করেছিল। আর সে চিন্তা থেকেই তিনি শুরু করেন স্বাস্থ্যকর শৌচাগার নির্মাণের পক্ষে সামাজিক আন্দোলন।

তবে সিমের এই সামাজিক আন্দোলন বিশ্বব্যাপী স্বীকৃতি পায় ২০০২-এর বিশ্বকাপ ফুটবল আসরে। ওই বিশ্বকাপের আয়োজক ছিল দক্ষিণ কোরিয়া। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের ফুটবলারদের জন্য উপযোগী শৌচাগার নির্মাণ করেই তিনি তাঁর এ ধারণার স্বীকৃতি লাভ করে। ২০০৯ সালে ৭০ বছর বয়সে মারা যান সিম।

নিজের অস্বাস্থ্যকর খারাপ জীপনযাপনের অভিজ্ঞতা থেকে তিনি বিশ্বের কোটি কোটি মানুষের জন্য কল্যাণ বয়ে এনেছেন। নিঃসন্দেহে এটি একটি মঙ্গলকর সেবামূলক কাজ। এখন বোঝা গেল কেন জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদ সম্মেলনে শৌচাগার দিবস বিষয়টি গৃহীত হল। নিশ্চ্য়ই এটা গুরুত্বপূর্ণ, তাই না? আর কেনইবা এ প্রস্তাবটি অনেক দেশের সমর্থনও লাভ করেছে। কারণ এ সমস্যাটি বিভিন্ন দেশের একটি সাধারণ সমস্যা। চলতি বছরের এপ্রিল মাস থেকে জাতিসংঘের ১৯৩টি সদস্য দেশের মধ্যে ১২০টিরও বেশি দেশ এ প্রস্তাবে স্বাক্ষর করেছে। কারণ তারা মনে করে, গণস্বাস্থ্য হল মানব জাতির মৌলিক অধিকার।

আমরা আরও কিছু পরিসংখ্যান এবং তথ্য থেকে শৌচাগার সমস্যার গুরুত্ব বুঝতে পারবো সহজে। জাতিসংঘের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, বিশ্বের ৭ বিলিয়ন মানুষের মধ্যে ৬ বিলিয়ন মানুষের মোবাইফোন আছে। কিন্তু ২.৫ বিলিয়ন লোক শৌচাগার ব্যবহার করতে পারে না। ১.১ বিলিয়ন মানুষ বাধ্য হয়ে প্রকাশ্য স্থানে মল বা মূত্রত্যাগ করে। তা গণস্বাস্থ্যের জন্য খুব ভয়াবহ একটি হুমকি। বিশ্বে প্রতি বছর ৭.৬ লাখ ৫ বছরের কম বয়সের শিশু ডায়ারিয়ার কারণে প্রাণ হারায়। যদি বিশুদ্ধ পানি ও মৌলিক স্বাস্থ্যের অবকাঠামোগত সুযোগ সুবিধা পায়, তাহলে এ প্রাণহানি নিশ্চয়ই এড়ানো সম্ভব।

আমরা এখন এ প্রস্তাবের ইতিহাস সম্বন্ধে একটু জানতে পারি। ১৯৯৬ সালে সিংগাপুরের প্রধানমন্ত্রী গো চোক টং একটি প্রস্তাব দেন, যাতে গণশৌচাগারের পরিস্কার পরিচ্ছন্নতাকে মানদন্ড হিসেবে বিবেচনা করে দেশের গণজীবনের অগ্রগতি নির্ধারণ করার কথা বলা হয়। এরপর সিংগাপুরের একজন শিল্পপতি ২০০১ সালের ১৯ নভেম্বরে “বিশ্ব শৌচাগার সংস্থা” নামে এই বেসরকারি সংস্থার প্রতিষ্ঠা করেন এবং ১৯ নভেম্বরকে বিশ্ব শৌচাগার দিবস হিসেবে নির্ধারণ করেন। ১২ বছরের অক্লান্ত পরিশ্রমের পর এ সংস্থায় এখন বিশ্বের ৮৬টি দেশের ৫৩৪টি সংস্থা সদস্য হিসেবে অন্তর্ভূক্ত হয়েছে। এ সকল শাখা সংস্থার নিরলস প্রচেষ্টায় বর্তমানে বিশ্বের ৩.৩ বিলিয়ন মানুষের গণস্বাস্থ্য বিষয়ক সচেতনার উন্নয়ন করা সম্ভব হয়েছে। জাতিসংঘের এ বিষয়ক প্রস্তাব গৃহীত হওয়া থেকে সহজেই বোঝা যায় যে, গণস্বাস্থ্য সংস্থা কত গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়।

বিশ্ব শৌচাগার দিবস নামে আনুষ্ঠানিকভাবে জাতিসংঘের একটি স্মরণীয় দিন হিসেবে নির্ধারণ করা হয়েছে। এ থেকে একটি শিক্ষা নেওয়া যায় যে, দেশ ছোট হলেও বড় বড় ভূমিকা পালন করতে পারে। প্রস্তাবে জাতিসংঘের সব সদস্য দেশকে গণস্বাস্থ্য অবকাঠামোগত অভাব ও সমস্যার ওপর গুরুত্ব আরোপ করা, মৌলিক স্বাস্থ্য ব্যবস্থার নির্মাণ এবং উন্নয়নের প্রক্রিয়া দ্রুততর করা, সংশ্লিষ্ট নীতি জোরদার করা এবং বিভিন্ন পদ্ধতির মাধ্যমে এ সমস্যা সমাধান করার তাগিদ দেয়া হয়েছে। প্রস্তাবে বিশেষ করে দূষিত পানি ও পরিত্যক্ত পানির সমস্যা সমাধানের কথাও উল্লেখ করা হয়েছে।

তা শুধু লোকজনের জীবনযাপনের অবস্থা উন্নয়ন করতে পারে, তা নয়, বরং তা জীবন বাঁচাতেও পারে। এর আগে আমরা উল্লেখ করেছি যে বিশ্বে প্রতি বছর ৭.৬ লাখ শিশু খারাপ স্বাস্থ্য পরিবেশের কারণে মারা যায়, এটি আতঙ্কিত হওয়ার মতোই একটি পরিসংখ্যান, আমরা সবসময় বলি, আজকের শিশু আগামীর ভবিষ্যত, শিশু হল দেশের আশা-ভরসা। তাই আমাদের শিশুর জন্য, দেশের ভবিষ্যতের জন্য বিভিন্ন দেশের সরকারের উচিত কিছু করা। যেমন, সিংগাপুর ১৯৮০ সাল থেকে দেশের সব শৌচাগারকে পয়োনালীর সঙ্গে যোগ করেছে। কারণ এ দেশটিই প্রথম খুব গভীরভাবে গণস্বাস্থ্য অবকাঠামো নির্মাণের গুরুত্ব উপলব্ধি করেছে।

আমরা দেখেছি, বিশ্ব শৌচাগার সংস্থা যদিও একটি বেসরকারি সংস্থা, তবে সংস্থাটি বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ব্যাপক প্রভাব সৃষ্টি করেছে। এটা খুব ভালো একটি বিষয়। তবে সরকারের সমর্থন ছাড়া সংস্থার চিন্তাধারা জাতিসংঘের সাধারণ সম্মেলনে আসতে পারতো না। তাই এখানে সিংগাপুর সরকারের প্রশংসা করতেও হয়। খোলা মনের জনহিতৈষী একটি সরকার সত্যি জনগণের জন্য কল্যাণ সৃষ্টি করতে পারে, সিংগাপুর তাঁর যথার্থ উদাহরণ।

সরকার ও বেসরকারি সংস্থার সহযোগিতা, এটা খুব ভালো একটি দৃষ্টান্ত এবং খুব ভালো একটি পদ্ধতি। সরকার কিছু কাজ করতে চাইলে জনগণ এবং বিভিন্ন পক্ষের সহযোগিতাও দরকার। তাই আমরা এখানেও আশা করি বিভিন্ন দেশের সরকার জনগণের কল্যাণের জন্য ঘনিষ্টভাবে বেসরকারি সংস্থার সঙ্গে সহযোগিতা করতে পারে এবং ধৈর্য্য সহকারে জনগণের মনের কথা বুঝতে পারে।

Category: 1stpage, আন্তর্জাতিক, শীর্ষ সংবাদ

About the Author ()

Leave a Reply