বিসিবি নির্বাচনে লড়বেন সাবের
দেশের খবর : বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) আসন্ন নির্বাচনে যে তিনি আসছেন, এমন গুঞ্জন অনেক দিন ধরেই শোনা যাচ্ছিল। অবশেষে সাবের হোসেন চৌধুরী এমপি নিজেই এই গুঞ্জনের সত্যতা জানিয়ে দিলেন। গতকাল নিজের বাসভবনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে বিসিবির সাবেক সভাপতি সাবের হোসেন চৌধুরী অভিযোগ করলেন, বিসিবি নির্বাচনে নানারকমের প্রভাব খাটানোর চেষ্টা হচ্ছে এবং বিভিন্ন ছক কাটা হচ্ছে। তারপরও ‘নৈতিকতার যুদ্ধে’ শরিক থাকার জন্য এবং নিজের দায়বদ্ধতার জন্য এই নির্বাচন-যুদ্ধে লড়তে চান তিনি।
তার নেতৃত্বেই ২০০০ সালে বিসিবির কক্সবাজার সভায় সিদ্ধান্ত হয়েছিল, বোর্ডের সভাপতি পদে নির্বাচন হওয়া উচিত। তারপর অনেক সময় গড়িয়ে যাওয়ার পর আইসিসির চাপে এই সিদ্ধান্ত অবশেষে গঠনতন্ত্রে সংযোজন করেছে বিসিবি। আর সভাপতি পদে নির্বাচন হবে এটা নিশ্চিত হওয়ার পরই সাবের হোসেন চৌধুরী বলেছিলেন, ‘লেভেল প্লেয়িং’ ফিল্ড হলে তিনি নির্বাচন করবেন।
কিন্তু সাবের হোসেন গতকাল পরিষ্কার করেই বললেন, নির্বাচনের মাঠ মোটেও সবার জন্য সমান নয়। তিনি মনে করছেন নির্বাচনে কিছু লোক জেতার জন্য ছক তৈরি করছে, প্রভাব খাটাচ্ছে, ‘এখানে একটি ছক কাটা হয়েছে। এখন আমার কাছে এটা প্রতিদিনই আরও পরিষ্কার হচ্ছে যে, তারা নির্বাচনে জেতার জন্য যা যা করা সম্ভব করছেন। সে জন্য অনেককে ভয়ভীতি দেখানো হচ্ছে বা ফোনে তাদের পছন্দের কাউন্সিলর পাঠানোর অনুরোধও করা হচ্ছে। নির্বাচনের জন্য মোটেও লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নেই।’
তার মতে, নাজমুল হাসান পাপন এমপির নেতৃত্বাধীন বিসিবির এডহক কমিটিই কাজটি করছে। এ ব্যাপারে সাবের চৌধুরীর বক্তব্য হলো : ‘এডহক কমিটির তিন মাসের মধ্যে নির্বাচন করার কথা ছিল; নয় মাস পার হয়ে যাচ্ছে। এই সময় তারা কী করেছে? এখন বোঝা যাচ্ছে একটার পর একটা উপায় করে, আইসিসিকে ভুল ব্যাখ্যা দিয়ে, আদালতে অসত্য তথ্য দিয়ে তারা নির্বাচনে জেতার পথ তৈরি করেছে। এর প্রমাণ আপনারা পাবেন। যখন দেখা যাবে, এই এডহক কমিটির অধিকাংশ সদস্য এক প্যানেল থেকে নির্বাচন করছেন, তাহলেই বোঝা যাবে, সবার জন্য সমান নির্বাচন আয়োজন করতে চাননি। চেয়েছেন নিজেদের জয়ের পথ তৈরি করতে।’
তারপরও কেন তিনি নির্বাচন করতে চান, সে ব্যাপারে তার নিজস্ব ব্যাখ্যা আছে, ‘এ ধরনের পরিস্থিতি চ্যালেঞ্জ ছাড়া আমি যেতে দিতে পারি না। আমার বিবেকের কাছে একটা দায়বদ্ধতা আছে। আমি ক্রিকেটের জন্যই লড়াই করতে চাই। জেতা-না জেতা পরের ব্যাপার। কিন্তু আমাকে এই যুদ্ধে লড়তেই হবে; এটা আমার দায়িত্ব।’
অবশ্য সাবের আশাবাদী যে, এইসব ছক আর ষড়যন্ত্রের মধ্যেও নির্বাচনে জিতে আসা সম্ভব তার। সে জন্য তিনি প্রত্যেক সংগঠকের, প্রশাসনের কর্মকর্তাদের এবং ক্রিকেট সংশ্লিষ্ট সকলের সাহসী ও সচেতন হওয়ার আহবান জানালেন, ‘যে ছক করে, সে অনেক কিছুই আশা করে। কিন্তু সিদ্ধান্ত তো আসবে সংগঠকদের ভেতর থেকে। আমি জানি অনেক সংগঠকই চাপে পড়ে, ভয়ে তাদের নানা প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন। এদের এখন ভয় থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। আমি এক পা এগিয়ে এসেছি, এখন কারো ভয় পাওয়ার কোনো কারণ তো নেই। প্রশাসনকে অনুরোধ করবো, কোনো পক্ষপাত করবেন না। আর কোথাও কোনো পক্ষপাত না হলে ইনশাল্লাহ, আমি এই সব ছকের পরও জিতে আসতে পারবো।’
একই দলের দুই সংসদ সদস্য যখন একই নির্বাচনে পরস্পরের প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে ওঠেন, সেটা দলের জন্য বিব্রতকর বলে মনে হতে পারে। ক্রিকেট মহলে গুঞ্জন আছে, শেষ পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রীই আসলে ঠিক করবেন, তার কোন সংসদ সদস্য এই পদে আসবেন। কিন্তু গতকালই প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর থেকে আসা সাবের বললেন, প্রধানমন্ত্রী এ ব্যাপারে পুরো নিরপেক্ষ থাকবেন, ‘প্রধানমন্ত্রী আমার দলের প্রধান, সংসদের প্রধান, দেশের নির্বাহী প্রধান; তার সঙ্গে আমি দেখা করতেই পারি। তবে আপনাদের নিশ্চিত করছি যে, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী সবক্ষেত্রে গণতন্ত্রের চর্চা দেখতে চান। এখানেও তিনি কাউকে সমর্থন দেবেন না বা বিরোধিতা করবেন না। তিনি চান একটি সুষ্ঠু নির্বাচন। অন্য কেউ নির্বাচন নষ্ট করতে না চাইলে এটা আদর্শ একটা নির্বাচন হবে। এটা গণতন্ত্রের জন্যই ভালো। ফলে আমাদের দলের মধ্যেও এ নিয়ে কোনো সমস্যা নেই।’
সব মিলিয়ে আশাবাদী সাবের চৌধুরী নির্বাচনে জিতে আসলে কী করবেন, তারও একটা খসড়া ভেবে ফেলেছেন। সময় পেলে পূর্ণাঙ্গ নির্বাচনী ইশতেহার প্রকাশ করতে চান। তার আগেই বলে দিলেন, ‘এই গঠনতন্ত্র দেশের ক্রিকেটকে আবার বিভাজিত করেছে; ক্লাব ও জেলা-বিভাগের মধ্যে পরিষ্কার বিভাজন তৈরি হয়েছে। এটা সমাধান করাই আমার প্রথম চ্যালেঞ্জ। এ ছাড়া বিপিএল নিয়ে সমস্যা, প্রিমিয়ার লিগ না হওয়া এবং দেশে ক্রিকেটের বিকেন্দ্রীকরণ করা হল আমার আরও কতোগুলো চ্যালেঞ্জ।’
Category: 1stpage, দেশের খবর, শীর্ষ সংবাদ