জার্মানির নির্বাচনি পোস্টার:২২শে সেপ্টেম্বর জার্মান সংসদের নির্বাচন
ইউরো সংবাদ:
পোস্টারে প্রতিদ্বন্দ্বীদের লড়াই
জার্মানির সংসদীয় নির্বাচনের প্রচারাভিযান চালাতে রাস্তায় সারিবদ্ধভাবে বড় বড় পোস্টার লাগানো হয়েছে৷ পোস্টারের কথা এবং মোটিভ পেশাদারি বিজ্ঞাপনী সংস্থাগুলো খুবই সঠিকভাবে তুলে ধরেছে৷ সত্যিকার অর্থেই যাকে শিল্প বলা যায়৷ তবে জার্মানির নির্বাচনি পোস্টার কিন্তু সবসময় এরকম ছিলোনা৷
পোস্টার শিল্পের পুনরুজ্জীবন
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জার্মানি ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়৷ ১৯৪০-এর দশকের শেষে ভালো কাগজ এবং ছাপার রং পাওয়া যেতোনা৷ সে সময় সীমিত সংখ্যক পোস্টার ছাপা হয়েছিলো, যা দেখতে প্রায় একই রকম ছিলো৷ ১৯৪৯ সালে সিডিইউ-এর নির্বাচনি পোস্টারে লেখা ছিলো, ‘‘বিভাজন নয়৷’’ স্লোগানটি ছিলো জার্মানির সমসাময়িক রাজনৈতিক অঙ্গনের প্রতিফলন৷
রাজনৈতিক দলগুলোর ভাবমূর্তি
১৯৪৯ সালে জার্মানির সংসদীয় নির্বাচনে পোস্টার তৈরির ক্ষেত্রেও রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে আবার প্রতিযোগিতা লক্ষ্য করা যায়৷ যুদ্ধের পর নিজেদের ভাবমূর্তি নতুন করে তুলে ধরাই ছিল মূল বিষয়৷ দেশের পুনর্গঠনের বিষয়টিই তখন স্থান পেয়েছিল নির্বাচনি পোস্টারে৷
পোস্টারে রাজনীতিকদের ছবি
১৯৬০-এর দশকের পর নির্বাচনি কর্মীরা লে-আউটের ওপর বেশ গুরুত্ব আরোপ করে৷ আর সেজন্যই রাজনীতিকদের ছবি পোস্টারে জায়গা করে নেয়, যা আজও পোস্টারের ডিজাইনে দেখা যায়৷ সে যুগে ছবি তোলা ব্যয়সাপেক্ষ থাকায় পোস্টারের ছবিগুলো হাতে আঁকা হতো৷ ছবিটিতে ১৯৬৫ সালে জার্মানির চ্যান্সেলর লুডভিশ এয়ারহার্ডকে দেখা যাচ্ছে৷
পোস্টারের কারুকার্য
কিছুদিন পরই পোস্টারকে আরো আকর্ষণীয় করতে নানা কৌশল বেরিয়ে পড়ে৷ একটি বড় পোস্টারে ছোট কাগজ কেটে বা অন্য কিছু লাগিয়ে প্রার্থীদের বার্তাসহ ভোটারদের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়৷ এসপিডি-র একটি পোস্টারে ভিলি ব্রান্ট-কে ভোট দেওয়ার জন্য লেখা হয়েছে ‘‘সকলের জন্য সমৃদ্ধি৷’’ আর সিডিইউ-এর পোস্টারে ছিলো, ‘‘এয়ারহার্ড-এর অর্থনৈতিক নীতির দৌলতে৷’’
পোস্টার সময়ের দলিল
ছবির নির্বাচনি পোস্টারটি বারবার তখনকার সুন্দর সময়ের কথাই মনে করিয়ে দেয় আর সে জন্যই তা সংগ্রহেও রাখা হয়৷ ১৯৬৫ সালে এসপিডি-র আর্কাইভ করা একটি পোস্টার ব্যবহার করে তার প্রতিদ্বন্দ্বীকে কটাক্ষ করে৷ ‘‘এসপিডির ভুলে জার্মানির সর্বনাশ হতে পারতো, চাই লুডভিশ এয়ারহার্ড এবং সিডিইউ৷’’ এয়ারহার্ড ১৯৬৩ থেকে ১৯৬৬ পর্যন্ত জার্মানির দ্বিতীয় চ্যান্সেলর ছিলেন৷
নির্বাচনি প্রচারণায় নারীমুখ
৭০-এর দশকে জার্মানির নির্বাচনি প্রচারণার পোস্টারে প্রথমবার নারী মুখের ছবি দেখা যায়৷ ১৯৭৬ সালের নির্বাচনে সিডিইউ নিজেদের নারীদের স্বার্থরক্ষার দূত হিসেবে তুলে ধরে৷ অথচ মহিলাদের সমানাধিকার বিষয়ক সংস্কার সাধন করেছিল এসপিডি ও এফডিপি দলের জোট সরকার৷
সবুজ ডিজাইন
১৯৮৩ সালের নির্বাচনি প্রচারণায় সবুজ দল পুরোনো অনেক কিছুই বাদ দিয়ে নতুন করে করেছে৷ পোস্টারে ডিজাইনেও তাদের সৃষ্টিশীল কারুকার্যের ধারণা প্রকাশ পেয়েছে৷ ছবিতে সবুজ দলের পোস্টারে সূর্যমুখী ফুল দেখা যাচ্ছে, যা আজও সবুজ দলের প্রতীক৷
বিদ্রূপাত্মক বার্তা
সবুজ দল এখনো পোস্টারে এমন কিছু নকশা বা ডিজাইন করে যা সবসময় দেখা যায়না৷ ২০১৩ সালের নির্বাচনি প্রচারণায়ও সবুজ দলের পোস্টারে ব্যঙ্গ করে লেখা হয়েছে, যার নকশাটি করছে একটি নতুন ডিজাইন এজেন্সি৷ সাদা কালো বড় অক্ষরে লেখা মোটিভগুলো গাঢ় সবুজ রং দিয়ে খানিকটা ঢেকে ফেলা হয়েছে বর্তমান জোট সরকার সদস্যদের নেতিবাচক পোজের ছবি দিয়ে৷
পুরোপুরি বিপরীত
আইডিয়াটা নতুন নয়, ২০০২ সালের নির্বাচনী পোস্টারেই সাদা কালো উজ্জ্বল রং-এর নীতি৷ পোস্টারের ছবিতে দেখা যাচ্ছে, বিশ্বযুদ্ধের পর যুদ্ধে ক্ষতিগ্রস্ত শহরগুলোর ধ্বংসস্তূপ সরাতে সাহায্য করে মহিলারা৷ পোস্টারে নীল আর হলুদ রং-এর বার্তা ছিলো ‘‘ আমরা আগে এর চেয়েও কঠিন সংকটের সমাধান করেছি’’৷
নিয়ম ভঙ্গ
২০১৩ সালের জার্মান সংসদীয় নির্বাচনি পোস্টারেও বিশাল প্রতিদ্বন্দ্বিতার প্রকাশ ঘটেছে৷ কোন নিয়ম থাকবে আর কোনটাই বা ভাঙা হবে, এ নিয়েও গ্রাফিক ডিজাইন এজেন্সিগুলোর অনেক মাথা ঘামাতে হয়েছে৷ যেমন বাম দল পোস্টারে কোনো ছবি ছাড়াই ভোটারদের দৃষ্টি আকর্ষণ করার চেষ্টা করেছে৷ যা পুরনো দিনের কথা মনে করিয়ে দেয়, যখন পোস্টারে ছবি থাকতোনা৷
বেশি পরীক্ষা-নিরীক্ষা নয়
গত কয়েক দশক নির্বাচনি পোস্টারে পেশাদারি ছাপ এসেছে৷ যে কোনো দলের লোগো এবং কর্পোরেট ডিজাইনগুলোর জন্য খুবই স্পষ্ট নির্দেশিকা রয়েছে৷ বেশিরভাগ দলই এ ক্ষেত্রে তাদের নিজস্ব মোটিভটাই রাখতে চায়৷ যেমন: রাজনীতিকরা হাসি মুখে জনসাধারণ, ছাত্রছাত্রী, বয়স্ক মানুষ বা মেশিনের সামনে কারখানার শ্রমিকের সাথে কথা বলছেন৷
Category: 1stpage, ইউরো সংবাদ, ইউরো সংবাদ, ইউরো-সংবাদ - German