জার্মানি ‘জাতির জননী’ আঙ্গেলা ম্যার্কেল
ইউরো সংবাদ: সংসদীয় নির্বাচনে ম্যার্কেলের আকাশছোঁয়া জয়ের পর কথাটা এখন প্রকাশ্যেই শোনা যায়৷ তাদের প্রথম মহিলা চ্যান্সেলরের তাঁবে জার্মানরা প্রায় ‘শিশু মাতৃক্রোড়ের’ মতোই নিশ্চিন্ত বোধ করেন৷
সাবেক পূর্ব জার্মানির মেয়ে, খ্রিষ্টান যাজকের কন্যা; ডক্টরেট উপাধিপ্রাপ্ত পদার্থবিদ; রাজনীতি শিখেছেন খোদ ‘জার্মান ঐক্যের চ্যান্সেলর’ হেলমুট কোল-এর কাছ থেকে – লোকে তাঁকে এককালে ‘কোলস মেডশেন’, মানে ‘কোল’এর খুকি’ বলত৷
মহিলা হলেও, বিশেষ আবেগ-অনুভূতি দেখান না আঙ্গেলা ম্যার্কেল৷ বক্তৃতা দেন ভালোই, কিন্তু রক্ত গরম করার মতো বক্তৃতা দেন না৷ তাহলে জার্মানদের আঙ্গেলা ম্যার্কেল প্রীতির কারণটা কী? ‘‘আঙ্গেলা ম্যার্কেল বুদ্ধিমান ও পরিশ্রমী,” বলেন তাঁর জীবনী লেখক জাকলিন বয়জেন৷ এছাড়া তিনি সব রকমের দুর্নীতির ঊর্ধ্বে, যেটা তাঁর জনপ্রিয়তার আরো একটি কারণ৷
সবচেয়ে বড় কথা: এই আর্থিক এবং ইউরো সংকটের দিনে ম্যার্কেল হলেন অবিচ্ছিন্নতা, দিকনির্ণয় এবং স্থিরতার প্রতীক – অধিকাংশ জার্মানের কাছে৷ ম্যার্কেল হলেন জার্মানে যাকে বলে ‘ফেল্স ইন ডেয়ার ব্রান্ডুং’, অর্থাৎ সাগরের তরঙ্গাভিঘাতে শিলার মতো অচল, অনড়৷
ম্যার্কেলের কাছে বিষয়টাই গুরুত্বপূর্ণ, আত্মশ্লাঘাটা নয়, বলে জার্মানদের বিশ্বাস৷ শুধু জার্মানদেরই নয়, জীবনীকার বয়জেন-এরও বিশ্বাস তাই: ‘‘লোকে বিশ্বাস করে যে, উনি শুধু ক্ষমতায় থাকার জন্য ক্ষমতা আঁকড়ে বসে থাকবেন না৷” ম্যার্কেল যখন আরো একটি কর্মকাল শুরু হবার আগে বলেন, তিনি দেশের সেবা করতে চান – লোকে সেটা বিশ্বাস করে৷
জার্মানদের প্রতিচ্ছবি?
এবারকার সংসদীয় নির্বাচনে ম্যার্কেলের সিডিইউ-সিএসইউ দল গতবারের চেয়ে প্রায় আট শতাংশ ভোট বেশি পেয়েছে৷ তার কারণ কি এই যে, জার্মানরা ম্যার্কেলের মধ্যে তাদের নিজেদেরই প্রতিচ্ছবি দেখেন? বিদেশে মানুষজন ঠিক তাই ভাবেন, বলেন বয়জেন৷ বিদেশিদের চোখে ম্যার্কেল সময়ানুবর্তিতা এবং বাস্তববুদ্ধির মতো জার্মান গুণগত উৎকর্ষগুলির মূর্তিমান প্রতিভূ৷ এছাড়া তিনি আস্থাভাজন বলেও মনে করা হয়৷
তবে দেশে বা বিদেশে ম্যার্কেলের বিরুদ্ধে একটি সমালোচনা হল: তিনি সরাসরি সমস্যার মোকাবিলা না করে – অথবা নিজের অবস্থানটা পরিষ্কার করে না দিয়ে – সাধারণত অপেক্ষা করে দেখেন – অথবা নিজের মন্ত্রিসভার কোনো মন্ত্রীকে বিবৃতি দিতে পাঠান৷ আরেকটি সমালোচনা: ম্যার্কেল ভাববিলাসী বা স্বপ্নবিলাসী নন, কঠিন বাস্তব নিয়ে তাঁর কারবার৷ অপরদিকে তিনি কোনোদিনও দেশের নাগরিকদের বুঝিয়ে বলেন না, তাঁর গৃহিত সিদ্ধান্তগুলির ফলশ্রুতি কী হবে৷
বয়জেন কিন্তু সেটাকে ম্যার্কেলের গুণের তালিকাতেই ফেলেন: ‘‘উনি আদর্শবাদের ধার ধারেন না; দলগত কর্মসূচির পুরনো ঐতিহ্যে বাঁধা পড়ে থাকেন না৷” এবং দলের আধুনিকীকরণের জন্য ম্যার্কেল ঠিক এই স্বাধীনতারই সুযোগ নিয়েছেন: শিশুর বাবা-মায়েদের জন্য মাসিক ভাতার প্রচলন করেছেন; বাধ্যতামূলক সামরিক সেবা তুলে দিয়েছেন; পরমাণু শক্তি বর্জনের ব্যবস্থা করেছেন৷
‘জাতির জননী’
ম্যার্কেলের মধ্যে মাতৃসুলভ একটা কিছু আছে বলে অনেক পর্যবেক্ষকের ধারণা৷ তিনি যেন গোটা জার্মানিকে বরাভয় দিচ্ছেন৷ আঙ্গেলা ম্যার্কেলের নিজস্ব কোনো পুত্র-কন্যা না থাকা সত্ত্বেও নিজের দলের লোকজনরাই তাঁর নাম দিয়েছে ‘‘মুটি”, মানে ‘মা’৷ মজার কথা, গোড়ায় নামটার পিছনে অনেকটা শ্লেষ লুকনো ছিল: ছিল পূর্ব জার্মানিতে অতিবাহিত অতীতের প্রতি ইঙ্গিত৷
কিন্তু তাঁর বিগত দুই কর্মকালে ম্যার্কেল প্রমাণ করে দিয়েছেন, তিন সত্যিই ‘জাতির জননী’ হবার উপযুক্ত৷
Category: 1stpage, ইউরো সংবাদ, ইউরো সংবাদ, ইউরো-সংবাদ - German, শীর্ষ সংবাদ