বার্লুস্কোনির যুগ কি শেষ হতে চলেছে?
ইউরো সংবাদ: বুধবার ইটালির প্রধানমন্ত্রী এনরিকো লেটা আস্থাভোটে জিতলেন শুধুমাত্র সিলভিও বার্লুস্কোনির পিডিএল দলের মধ্যে অন্তর্দ্বন্দ্বের কারণে৷ ইটালি এবং জগৎ হয়ত দেখল ইউরোপীয় রাজনীতির এক চমকপ্রদ ব্যক্তিত্বের অস্তাচলে গমনের সূচনা৷
৭৭ বছর বয়সি বার্লুস্কোনির মাথার উপর ঝুলছে একাধিক মামলা ও সাজা, যার ফলে তাঁর রাজনৈতিক জীবনের অবসান ঘটতে পারে৷ গত আগস্ট মাসে ইটালির সর্বোচ্চ আদালত একটি কর ফাঁকি দেওয়ার মামলায় বার্লুস্কোনির এক বছর কারাবাসের সাজা বজায় রাখে – বার্লুস্কোনি তা গৃহান্তরীণ অবস্থায় কাটাতে পারবেন কিনা, অথবা তাঁকে শাস্তিমূলক সমাজসেবা করতে হবে কিনা, তার রায় হবে এ মাসে৷
যেমন এ মাসের শেষে বার্লুস্কোনিকে সেনেট থেকে বহিষ্কারও করা হতে পারে এবং তাঁর পরবর্তী নির্বাচনে অংশগ্রহণ নিষিদ্ধ করা হতে পারে৷ তারও পরে থাকছে রায়ের বিরুদ্ধে তাঁর আপিলের শুনানি: বার্লুস্কোনি সাত বছরের কারাদণ্ডে দণ্ডিত হয়েছেন এক অপ্রাপ্তবয়স্কা দেহব্যবসায়িনীর সঙ্গে যৌন সম্পর্কের দরুণ৷
এ সব মিলিয়ে বার্লুস্কোনির কণ্টকিত অবস্থা, যে কারণেই হয়ত তিনি লেটা সরকারের পতন ঘটানোর পরিকল্পনা নিয়েছিলেন৷ কিন্তু আস্থাভোটের আগেই তাঁর নিজের দল পিডিএল বা ‘‘স্বাধীনতার জনগণ” দলে ভাঙন দেখা দেয়: আস্থাভেটের আগেই সেনেটে একটি চিঠি ঘুরছিল, যা-তে ২৩ জন পিডিএল সেনেটরের স্বাক্ষর ছিল৷ এই সেনেটররা তাদের নেতা বার্লুস্কোনিকে অমান্য করতে প্রস্তুত৷
পিডিএল কোন পথে?
সংসদের নিম্নকক্ষেও নাকি ঐ ধরনের একটি চিঠি ঘুরছিল, যা-তে ২৬ জন পিডিএল বিধায়কের স্বাক্ষর ছিল৷ এখন প্রশ্ন হলো, দলের মধ্যে বার্লুস্কোনির নীতির বিরুদ্ধে এই বিদ্রোহ গড়ে উঠল কি করে? বিদ্রোহী পিডিএল সেনেটর রবের্তো ফর্মিগোনি এএফপি সংবাদ সংস্থাকে বলেছেন: ‘‘আমরা বিশ্বাসঘাতক নই, আমরা পথিকৃৎ! পিডিএল যে পথে শেষমেষ গেল, আমরাই সেটা দেখিয়ে দিয়েছি৷ এবং আমরা সে বিষয়ে গর্বিত কেননা এই সরকার টিঁকে থাকার প্রয়োজন ছিল৷” ফর্মিগোনি এ-ও জানান যে, তিনি ও তাঁর কিছু সতীর্থ সংসদে থাকাকালীনই বার্লুস্কোনির দল পরিত্যাগ করবেন৷
তবে বার্লুস্কোনিকে যেটা প্রায় প্রকাশ্যে কাঁদিয়ে ছেড়েছে, সেটা হলো তাঁর শিষ্য আঞ্জেলিনো আলফানোর বিশ্বাসঘাতকতা, কেননা ৪২ বছর বয়সি আলফানোই হলেন পিডিএল-এর অভ্যন্তরে বার্লুস্কোনি-বিরোধীদের নেতা৷ এ যেন ইতিহাসের জুলিয়াস সিজারের প্রতি ব্রুটাসের বিশ্বাসঘাতকতা, বলেছেন বার্লুস্কোনি সমর্থকরা৷ পিডিএল-এর অভ্যন্তরীণ কোঁদলের সেরা বর্ণনা দিয়েছে লা স্তাম্পা দৈনিক: ‘‘এটা ছিল অশ্রু, অনুতাপ, বিশ্বাসঘাতকতার অভিযোগ, এ সবের দিন, যা সব কিছু ঘটে যখন একটি পরিবারে ভাঙন দেখা দেয়৷”
৪৭ বছর বয়সি মধ্যবামপন্থি লেটা আস্থাভোটে জিতেছেন ২৩৫ বনাম ৭০ ভোটে৷ ভোটে জয়ের পর তিনি সাংসদদের বলেছেন: ‘‘সংকট এখনও চলেছে৷ ইটালির চাই এই ব্ল্যাকমেইলের অন্ত৷ আমাদের দেখাতে হবে, সরকারের পতন ঘটবে না৷ আমাদের এই ধরনের মারামারি বন্ধ করতে হবে৷” কিন্তু মোদ্দা কথা হলো, বিগত কয়েক সপ্তাহের রাজনৈতিক টানাপোড়েনে ইটালির অর্থনৈতিক নিরাময় প্রক্রিয়া নিয়েই সন্দেহ দেখা দিয়েছে৷ কাজেই লেটাকে যথাশীঘ্র সম্ভব পিডিএল-এর তাঁর প্রতি সদয় অংশের সমর্থন নিশ্চিত করতে হবে৷ অপরদিকে আলফানো সম্ভবত মধ্য-বাম রাজনীতিতে বার্লুস্কোনির উত্তরাধিকারী হবার প্রস্তুতি নেবেন৷
Category: 1stpage, ইউরো সংবাদ, ইউরো সংবাদ, ইউরো-সংবাদ - Italy, শীর্ষ সংবাদ