সিরিয়ার রাসায়নিক অস্ত্র ধংস: জেনেভা সম্মেলনের পথে
আন্তর্জাতিক: সিরিয়ায় মজুদ থাকা রাসায়নিক অস্ত্র ২০১৪ সালের মাঝামাঝি সময়ে ধংস করা হতে পারে। চলতি সপ্তাহে রাসায়নিক অস্ত্র নিরস্ত্রীকরণ কনভেনশন( ওপিডব্লিউ) সংস্থার পরিদর্শকরা সিরিয়ায় কাজ শুরু করেছে। বিশেষজ্ঞরা আপাতত রাসায়নিক অস্ত্র তৈরীর যন্ত্রপাতি ধংস করার কাজ করবেন। তবে মূল রাসায়নিক অস্ত্র ধংস করার প্রশ্নের সমাধান এখনো করা হয়নি।
৬০ সদস্যবিশিষ্ট আন্তর্জাতিক পরিদর্শকরা দুটি দলে ভাগ হয়ে কাজ করছেন। সিরিয়ার সরকার রাসায়নিক অস্ত্রের যে নথিপত্র সরবরাহ করেছে তার আলোকেই দলটি কাজ করছেন। এরই মধ্যে ৩টি অবকাঠামো পরিদর্শনের কাজ শেষ হয়েছে। রাসায়নিক অস্ত্রের যন্ত্রপাতি সিরিয়ার সেনারা কিভাবে ধংস করছে সেই কাজ তদারকি করেছেন পরিদর্শকরা। এখন পর্যন্ত ওপিডব্লিউ’র কাজে সন্তুষ্ট সংস্থাটির পরিচালক আহমেত উজুমেদজুইউ। রেডিও রাশিয়াক তিনি বলেন, আমাদের সংস্থার সাথে গঠনমূলক সহযোগিতা বজায় রাখতে সিরিয়ার সরকার যথেষ্ট্র আগ্রহ রয়েছে। সংস্থার সামনে যে দায়িত্বভার অর্পণ করা হয়েছে তা পুরোপুরি পালন করা সম্ভব হবে বলে আমি আশাবাদী।
ওপিডব্লিউ’র পরিকল্পনা অনুযায়ী নভেম্বরের মধ্যে রাসায়নিক অস্ত্র তৈরির যন্ত্রপাতি ধংস করা হবে এবং ২০১৪ সালের মাঝামাঝি সময়ে রাসায়নিক অস্ত্র পুরোপুরি ধংস করার কথা রয়েছে। সবকিছু ঠিকঠাক থাকলেই কেবল তা করা সম্ভব হবে। গৃহযুদ্ধ চলছে এমন পরিস্থিতির মধ্যে আন্তর্জাতিক পরিদর্শকদের কাজ করতে হয়নি। কিন্তু পুরো সিরিয়ায় তাদের ঘুড়ে বেড়াতে হয়েছে।
জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের ২১১৮ প্রস্তাবনা মতে রাসায়নিক অস্ত্র ধংস করার সময়ে এর দায়িত্বভার সংঘাতে জড়ানো উভয়পক্ষের ওপর বর্তায়। এমনটি বলছেন রাশিয়ায় নিযুক্ত সিরিয়ার রাষ্ট্রদূত রিয়াদ খালিদ। রেডিও রাশিয়ায়কে তিনি বলেন, এ ধরণের ঘটনার সম্ভাবনা আমি একেবারে এড়িয়ে যাচ্ছি না. সিরিয়ার বিরোধীদের কাছে রাসায়নিক অস্ত্র জারিন গ্যাস রয়েছে। বিদেশি রাষ্ট্রের হস্তক্ষেপ করার একটি প্ররোচনা হিসেবে তারা রাসায়নিক অস্ত্র ব্যবহার করতে পারে।
সিরিয়ার সংকট শুরু হওয়ার পর থেকেই পশ্চিমা মিত্রজোটরা বাশার আসাদের বিরোধীদের পক্ষে অবস্থান নেয়। নির্বাচিত প্রেসিডেন্টকে ক্ষমতাচ্যুত করার জন্য বিরোধীদের অস্ত্র সরবরাহ করে এবং সামরিক হামলা চালানোর হুমকি দেয়া হয়। এসব কিছুই সিরিয়ার নিরীহ জনগনকে একটি স্বাভাবিক পরিবেশি ফিরিয়ে নেওয়ার কাজ আরো কঠিন হয়ে পড়ে। এদিকে অস্ত্রধারী জঙ্গিরা সিরিয়ায় নিরীহ মানুষ হত্যা করার নথিপত্র সংবলিত এই প্রথম একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস। লাতাকিয়ায় জঙ্গিরা ১৯০ জনকে হত্যা করে এবং ২’শ জনকে অপহরণ করে। এর মধ্যে ৬৭ জনকে জঙ্গিরা মৃত্যুদন্ড দিয়ে হত্যা করে। আর এবার হয়তো ওয়াশিংটনকে আসাদের বিরুদ্ধে সহযোগিতা চালিয়ে যাওয়া সম্ভব হবে না। এমনটই বলছেন আরব দেশের ফ্রেন্ডশীপ ও বিজনেস কমিউনিটির পরিচালক ভিয়াচেসলাভ মাতুজোভ। রেডিও রাশিয়াকে তিনি বলেন, সিরিয়া পরিস্থিতি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র যে অবস্থানে ছিলো তা মার্কিন রাজনীতিতে একটি অচলাবস্থা সৃষ্টি করেছে। সিরিয়া সংকট নিয়ে রাশিয়ার দৃষ্টিভঙ্গির সাথে সংঘতি রেখে মার্কিন অবস্থান পরিবর্তন ঘটেছে। সিরিয়ার ওপর মার্কিন ও পশ্চিমাজোটের সামরিক হামলা করার পরিকল্পনা এখন পুরোটাই বাতিল হিসেবে গন্য করা যায়। কারণ মার্কিনীরা এখন রাজনৈতিক আলোচনার মাধ্যমে সিরিয়ার সংকটের পূর্ণ সমাধান করার চেষ্টা করছে অর্থাত জেনেভা-২ সম্মেলনের দিকে এগিয়ে যাবে।
সিরিয়া সংক্রান্ত জেনেভা-২ শান্তি সম্মেলনে আয়োজনে দেরি করা ঠিক হবেনা। রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী সেরগেই ল্যাভরোভ অতি দ্রুত এ সম্মেলন আয়োজনের চেষ্টা করছেন। আশাকরা হচ্ছে নভেম্বরের দ্বিতীয় সপ্তাহে হওয়ার কথা রয়েছে।
Category: 1stpage, আন্তর্জাতিক, শীর্ষ সংবাদ