• ৯ অগ্রহায়ণ ,১৪৩১,23 Nov ,2024
  • ব্রেকিং নিউজ : বাংলাদেশের রিকশাচিত্র পেল ইউনেস্কোর অপরিমেয় সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের স্বীকৃতি

জার্মানিতে বহু মানুষের স্বাস্থ্য বিমা নেই

| ডিসেম্বর 29, 2013 | 0 Comments

ইউরো সংবাদ: জার্মানিতে এক লক্ষেরও বেশি মানুষ স্বাস্থ্য বিমার আওতাভুক্ত নন৷ প্রিমিয়াম দিতে না পারায় ঋণের বোঝাও বেড়েছে তাদের৷ এই বছরের শেষ নাগাদ ঋণ মওকুব করা হবে ভুক্তভোগীদের৷

ক্রিশ্টোফের এমন কোনো দিন যায় না, যে দিনটিতে তাঁর ব্যথা থাকে না৷ ভার বহন করার ফলে তাঁর এই অবস্থা৷ শয্যাশায়ী মায়ের সেবা শুশ্রূষা করেন তিনি৷ বিছানা করা, ধোয়ামোছা, খাওয়ানো সবকিছুই করতে হয়৷

নিজের চিকিৎসা করাতে পারেন না

৮৬ বছর বয়সি মাকে দেখতে নিয়মিত ডাক্তার আসেন৷ তবে ক্রিশ্টোফ নিজে ব্যথাবেদনা সত্ত্বেও চিকিৎসা করাতে পারছেন না৷ বহু বছর ধরে তাঁর কোনো স্বাস্থ্য বিমা নেই৷ বিশেষ করে দাঁতের ডাক্তারের কাছে যাওয়াটা জরুরি হয়ে পড়েছে৷ অনেক দাঁতও পড়ে গেছে বলে জানান এই ভুক্তভোগী৷ সামাজিক ভাতা বাদ হয়ে যাবার পর প্রিমিয়াম দিতে না পারায় স্বাস্থ্য বিমাও বাতিল হয়ে গেছে তাঁর৷ তার ওপর বিমা সংস্থার কাছে জমে গিয়েছে অনেক ঋণ৷

অবসাদ থেকে সব হারানো

আগে ক্রিশ্টোফের একটা ভাল চাকরি ছিল কিছু দুর্ভাগ্যজনক ঘটনা তাঁকে যেন আঁধারে নিক্ষেপ করে৷ বান্ধবী ছেড়ে চলে যায়৷ এক ঘনিষ্ঠ বন্ধু মারা যায়৷ গভীর অবসাদের কবলে পড়েন তিনি৷ সামাজিক দপ্তর থেকে আসা চিঠিগুলিও খুলে দেখার ইচ্ছা হতো না তাঁর৷ ফলে কিছুদিনের মধ্যে ভাতাও বন্ধ যায়৷

ইতোমধ্যে মায়ের ডিমেনশিয়া দেখা দেয়৷ মায়ের বাসায় এসে ওঠেন ক্রিশ্টোফ৷ ডিপ্রেশন কিছুটা হালকা হলে সামাজিক ভাতার জন্য আবার আবেদন করেন৷ তবে তা প্রত্যাখ্যান করা হয়৷ কারণ দেখিয়ে বলা হয়, ‘‘আপনি তো মায়ের সেবা শুশ্রূষা করছেন৷ তাহলে কোনো কাজ নেওয়া আপনার পক্ষে সম্ভব হবে না৷”

উল্লেখ্য, সামাজিক ভাতা পেতে হলে সবসময় চাকরির করার জন্য প্রস্তুত থাকতে হয়৷ কাজ না পাওয়া পর্যন্ত অনবরত বিভিন্ন জায়গায় আবেদন করে যেতে হয়৷

জার্মানিতে বিষয়টি অস্বাভাবিক মনে হয়

স্বাস্থ্য বিমা না থাকার কথা শোনা যায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ক্ষেত্রে৷ জার্মানিতে বিষয়টি আস্বাভাবিক মনে হয়৷ কিন্তু এই দেশেই এক লক্ষেরও বেশি মানুষের স্বাস্থ্য বিমা নেই৷ যদিও ২০০৭ সাল থেকে বিমা করাটা বাধ্যতামূলক৷ সামাজিক ভাতা বাতিল হলে স্বাস্থ্য বিমার প্রিমিয়াম দেওয়া সম্ভব হয় না অনেকের পক্ষে৷ পরিণতিতে বিমাও বাতিল হয়ে যায়৷ প্রায়ই নারীরা এই অবস্থার শিকার হন৷ বিবাহ বিচ্ছেদ হলে স্বাস্থ্য বিমার আওতা থেকে বের হতে হয় অনেককে৷

বিমা না থাকাটা দণ্ডনীয় নয়৷ তবে বিমার প্রিমিয়াম দিতে না পারলে অনেক ঋণ হয়ে যায়৷ সেই সাথে যুক্ত হয় অতিরিক্ত মাশুল৷ ক্রিশ্টোফের দশ হাজার ইউরো ঋণ হয়ে গেছে৷ মাকে দেখাশোনা করার জন্য সেবা বাবদ মাত্র ৭০০ ইউরো পান তিনি৷ বিমা সংস্থার ঋণ পরিশোধ করার সামর্থ্য তাঁর নেই৷

কিছুটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলতে পারবেন

নতুন এক আইনের ফলে এই ঋণভারে জর্জরিত মানুষরা কিছুটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলতে পারবেন৷ এতে বলা হয়েছে, ‘‘স্বাস্থ্য বিমার আওতাভুক্ত নন এমন ব্যক্তিরা চলতি বছরের মধ্যে যদি আবার বিমা করাতে চান তাহলে তাদের বাকি পড়া প্রিমিয়াম ও মাশুল মওকুব করা হবে৷”

তবে এখন পর্যন্ত খুব কম আবেদনই পড়েছে এক্ষেত্রে৷ কারণ ভুক্তভোগীদের অনেকেই এই আইন সম্পর্কে জানেন না৷ বিশেষ করা অভিবাসীরা এব্যাপার পিছিয়ে আছেন

তবে ঋণমুক্ত হলেই যে সমস্যার সমাধান হবে এমনটি বলা যায় না৷ কেননা বিমার আওতাভুক্ত হওয়ার পর আবার তাদের প্রিমিয়াম দিয়ে যেতে হবে৷ বিমা সংস্থাগুলি ন্যূনতম প্রিমিয়াম মাসে ১৫০ ইউরো ধার্য করেছে৷ এই পরিমাণ অর্থ দেয়া অনেকের পক্ষেই সম্ভব হবে না৷

ক্রিশ্টোফ কষ্টেসৃষ্টে এই অর্থটা দিতে পারবেন৷ তাঁকে আবার গ্রহণ করার জন্য পুরানো বিমা সংস্থায় আবেদন করেছেন তিনি৷ ‘‘আমার অনেক কিছু কাটছাঁট করতে হবে৷ তবে আবার বিমার আওতায় আসতে পারবো বলে অবিশ্বাস্য রকমের হালকা বোধ করছি এখন,” হেসে বলেন ক্রিশ্টোফ৷

Category: 1stpage, Scroll_Head_Line, ইউরো সংবাদ, ইউরো সংবাদ, ইউরো-সংবাদ - German, শীর্ষ সংবাদ

About the Author ()

Leave a Reply