অ্যান্ডারসন ৩৬ বলে সেঞ্চুরি করে ভেঙে দিলেন আফ্রিদির ৩৭ বলে সেঞ্চুরির রেকর্ড
স্পোর্টস: নতুন বছর নিয়ে আসে নতুন সম্ভাবনা। চারপাশে শোনা যায় ব্যর্থতা আর গ্লানি পেছনে ফেলে প্রাপ্তিগুলোকে সঙ্গী করে এগিয়ে যাওয়ার প্রত্যয়। তবু কি কেউ ভাবতে পেরেছিল নতুন বছরের প্রথম দিনটি ক্রিকেট-বিশ্বের জন্য বয়ে আনবে এমন এক বিস্ময়!
প্রবল বৃষ্টিতে কুইন্সটাউনের ম্যাচটিই ভেসে যেতে বসেছিল। শেষ পর্যন্ত বিকেল চারটায় শুরু হলো খেলা, ম্যাচ নেমে এল ২১ ওভারে। আকাশের বর্ষণ থামলেও তখন শুরু হলো চার-ছয়ের বৃষ্টি! পাথুরে পাহাড় আর পর্বতঘেরা ছবির মতো সুন্দর কুইন্সটাউন ইভেন্টস সেন্টারে তাণ্ডব চালালেন কোরি অ্যান্ডারসন আর জেসি রাইডার। ঝড় বয়ে গেল রেকর্ড বইয়েও। মুছে গেল শহীদ আফ্রিদির নাম, ওয়ানডের দ্রুততম সেঞ্চুরিয়ান এখন কোরি অ্যান্ডারসন! ৩৬ বলে সেঞ্চুরি করে বাঁহাতি অলরাউন্ডার ভেঙে দিলেন ৩৭ বলে করা আফ্রিদির ১৭ বছর পুরোনো রেকর্ড।
অথচ শিরোনাম হতে পারতেন জেসি রাইডারও। মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করে ক্রিকেট মাঠে ফিরে তিনিও তো কাল কম যাননি! তবে কাল ছিল এমনই এক দিন, যেদিন ৪৬ বলে সেঞ্চুরি করেও থাকতে হয় আড়ালে! অ্যান্ডারসনের রেকর্ডের দিনে রাইডার করেছেন ওয়ানডের ষষ্ঠ দ্রুততম সেঞ্চুরি। চতুর্থ উইকেটে দুজনের ১৯১ রানের জুটি মাত্র ৭৫ বলে। দুটি ছক্কার জন্য রোহিত শর্মার ১৬ ছক্কার রেকর্ড ছুঁতে পারেননি অ্যান্ডারসন। তবে দলীয় ইনিংসে সবচেয়ে বেশি ছক্কার রেকর্ড নিউজিল্যান্ড ছাড়িয়ে যায় ১৮ ওভারেই। ২১ ওভারে কিউইরা তোলে ২৮৩। ওভারপ্রতি ১৩.৪৭ রান, এই গতিতে ৫০ ওভার খেললে নিউজিল্যান্ডের রান হতো ৬৭৪!
ম্যাচ কার্যত শেষ প্রথম ইনিংস শেষেই। কৌতূহল যেটুকু বাকি ছিল, সেটাও শেষ ওয়েস্ট ইন্ডিজ প্রথম চার ওভারেই ৩ উইকেট হারানোর পর। আবহাওয়ার বাগড়া এড়াতে পেস ছেড়ে স্পিন করলেন রাইডার, ছোট্ট রানআপে বোলিং করলেন নিশাম। তার পরও মাত্র ১২৪ রান তুলে ক্যারিবিয়ানরা হেরেছে ১৫৯ রানে।
অ্যান্ডারসন উইকেটে গিয়েছিলেন অষ্টম ওভারে। তখনই উড়ছে কিউইরা, রাইডারের রান ছিল ১৯ বলে ৪০, অধিনায়ক ম্যাককালাম ফিরে গেছেন ১১ বলে ৩৩ করে। প্রথম বলে সিঙ্গেল নিয়ে শুরু করেছিলেন অ্যান্ডারসন, সপ্তম বলে প্রথম ছয় মেরেছেন সুনীল নারাইনকে। পরে নারাইনের এক ওভারে মেরেছেন চার ছক্কা, একই স্বাদ দিয়েছেন রবি রামপলকে। প্রথম ফিফটি ছুঁয়েছেন ২০ বলে। ৩৩ বলে ৯৩ হওয়ার পর পরপর দুটি সিঙ্গেল নেওয়ায় রেকর্ড ভাঙতে ৩৬তম বলে প্রয়োজন ছিল ছক্কা। অ্যান্ডারসন ঠিকই বাঁহাতি স্পিনার নিকিতা মিলারের শর্ট বল পাঠালেন গ্যালারিতে, ধারাভাষ্যকক্ষে ইয়ান স্মিথ বললেন, ‘গুডবাই শহীদ আফ্রিদি!’
আফ্রিদি থেমেছিলেন সেঞ্চুরির পরই, অ্যান্ডারসন শেষ পর্যন্ত অপরাজিত ৪৭ বলে ১৩১ করে। ২৩ বছর বয়সী অলরাউন্ডার এতটাই বিস্ফোরক ছিলেন যে ২০০ স্ট্রাইক রেটের রাইডারকেও মনে হচ্ছিল ঘুমিয়ে পড়েছেন! প্রথম ফিফটিতে রাইডারের লেগেছে ২৩ বল, পরেরটিতেও ঠিক সমান। ক্যারিবিয়ান বোলাররা বল ফেলারই জায়গা পাচ্ছিলেন না। রামপলের ৩ ওভারে এসেছে ৬৪, নারাইনের ৪ ওভারে ৫০। সবচেয়ে কম খরুচে মিলার ওভারপ্রতি দিয়েছেন ১১ করে!
মাঠ অবশ্য ছোট ছিল। অ্যান্ডারসনের বেশ কটি ছক্কা হয়তো অনায়াস ক্যাচ হয়ে যেত বিশ্বের অনেক মাঠেই। কিন্তু রেকর্ড বইয়ে তো আর মাঠের মাপ লেখা থাকবে না! কৃতিত্বকে খাটো করার জো নেই তাই একটুও। দিনটিই আসলে ছিল পাগলাটে। ব্রেন্ডন ম্যাককালাম যেমন বলেছেন, ‘এমন দিনের দেখা হয়তো জীবনে একবারই পাওয়া যায়!’ নিও প্রাইম।
স্কোরকার্ড
টস: ওয়েস্ট ইন্ডিজ
নিউজিল্যান্ড
রান বল ৪ ৬
গাপটিল ক রামদিন ব হোল্ডার ১ ৭ ০ ০
রাইডার ক মিলার ব হোল্ডার ১০৪ ৫১ ১২ ৫
ব্রেন্ডন ক সিমন্স ব নারাইন ৩৩ ১১ ৩ ৩
টেলর ক পাওয়েল ব মিলার ৯ ৮ ১ ০
অ্যান্ডারসন অপরাজিত ১৩১ ৪৭ ৬ ১৪
রনকি অপরাজিত ৩ ২ ০ ০
অতিরিক্ত (ও ২) ২
মোট (২১ ওভারে, ৪ উইকেটে) ২৮৩
উইকেট পতন: ১-৫, ২-৫৬, ৩-৮৪, ৪-২৭৫।
বোলিং: নারাইন ৪-০-৫০-১ (ও ১), হোল্ডার ৪-০-৪৮-২, রামপল ৩-০-৬৪-০, মিলার ৪-০-৪৪-১, ব্রাভো ৪-০-৪৮-০ (ও ১), সিমন্স ২-০-২৯-০।
ওয়েস্ট ইন্ডিজ
চার্লস ক নিশাম ব মিলস ০ ৩ ০ ০
সিমন্স ক মিলনে ব ম্যাকলেনাহান ১৩ ১১ ১ ১
ওয়াল্টন ক মিলনে ব রাইডার ১৭ ২৩ ১ ০
পাওয়েল ক নিশাম ব ম্যাকলেনাহান ১ ৩ ০ ০
ব্রাভো অপরাজিত ৫৬ ৫৪ ৩ ৩
দেওনারায়ণ ক মিলনে ব নিশাম ২৯ ৩০ ৪ ০
রামদিন অপরাজিত ১ ২ ০ ০
অতিরিক্ত (লেবা ৫, ও ২) ৭
মোট (২১ ওভারে, ৫ উইকেটে) ১২৪
উইকেট পতন: ১-০, ২-১৭, ৩-১৯, ৪-৫৬, ৫-১১২।
বোলিং: মিলস ২-০-১১-১, ম্যাকলেনাহান ২-০-৭-২, নাথান ৫-০-২৭-০, রাইডার ৪-০-১৩-১, নিশাম ৪-০-২১-১ (ও ১), গাপটিল ২-০-১৩-০ (ও ১), মিলনে ২-০-২৭-০।
ফল: নিউজিল্যান্ড ১৫৯ রানে জয়ী।
সিরিজ: ৫-ম্যাচ সিরিজে ১-১ সমতা।
ম্যান অব দ্য ম্যাচ: কোরি জে অ্যান্ডারসন।
Category: 1stpage, ব্রেকিং নিউজ, স্পোর্টস