বাংলাকে জাতিসংঘের দাপ্তরিক ভাষা করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে
দেশের খবর: শুরু হয়েছে বাঙালির প্রাণের উৎসব অমর একুশে গ্রন্থমেলার। লেখক-প্রকাশক আর পাঠকের এ মেলবন্ধনের শুভ সূচনা করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তার আনুষ্ঠানিক ঘোষণার মধ্য দিয়ে বাংলাভাষীদের দীর্ঘ ও সৃজনশীল উৎসব প্রাণের একুশে গ্রন্থমেলার পর্দা ওঠেছে। গ্রন্থমেলা শুদ্ধভাষা চর্চা, সাহিত্যের সংরক্ষণ এবং মনশীলতায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। উদ্বোধনী ভাষণে প্রধানমন্ত্রী এ বিষয়টির প্রতি গুরুত্বারোপ করেছেন। এজন্য আহ্বান জানিয়েছেন বাংলা সাহিত্যের বিভিন্ন শ্রেষ্ঠ রচনা সমগ্র অনুবাদ করে বিশ্বব্যাপি ছড়িয়ে দেয়ার। পাশাপাশি গুরুত্বারোপ করেছেন আরও বেশি মননশীল লেখা উপহার দেয়ার জন্য। বলেছেন, জাতিসংঘের দাপ্তরিক ভাষা হিসেবে বাংলার স্বীকৃতি আদায়ের প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। এ উদ্যোগ আমরা নিয়েছি। কিছু সমস্যা আছে। তারপরও আমাদের প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকবে। উল্লেখ্য বর্তমানে ইংরেজি, চীনা, আরবি, স্প্যানিশ, ফ্রেঞ্চ ও রুশ – এই ৬টি ভাষা জাতিসংঘের দাপ্তরিক ভাষা হিসেবে স্বীকৃত৷
প্রধানমন্ত্রী বলেন ২১শে ফেব্রুয়ারি এখন আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস৷ মাতৃভাষা বাংলার জন্য বাঙালির ত্যাগের স্বীকৃতি দিয়েছে সারা বিশ্ব৷ যে ভাষার জন্য এই ত্যাগ সেই ভাষা জাতিসংঘের দাপ্তরিক ভাষা হিসেবেও স্বীকৃতি পাবে৷ তিনি বাংলার শ্রেষ্ঠ সাহিত্যকর্মগুলো অন্য ভাষায় অনুবাদ করে সারা বিশ্বে ছড়িয়ে দেয়ার জন্য লেখক এবং সাহিত্যিকদের প্রতি আহ্বান জানান৷
সরকার জাতীয় গ্রন্থনীতি প্রণয়নের উদ্যোগ নিয়েছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, লেখক-প্রকাশকদের ব্যাপারে সরকার আন্তরিক। প্রকাশকদের সহজ শর্তে ঋণ দেয়ার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। বরাবর বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে গ্রন্থমেলা হলেও এবার তা পাশের সোহরাওয়ার্দী উদ্যানেও সমপ্রসারিত হয়েছে। এ নিয়ে মতদ্বিমত থাকতে পারে। তবে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের একটা ঐতিহাসিক মূল্য আছে। সে দিকটিকে বিবেচনায় রেখেই তা করা হয়েছে। এর ফলে অধিক সংখ্যক প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান যেমন মেলায় অংশগ্রহণ করতে পারবে তেমনি ১৯৭১’র ৭ই মার্চের বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ভাষণ প্রদানের স্থান এবং ৭১’র ১৬ই ডিসেম্বর হানাদার পাকিস্তানি বাহিনীর আত্মসমর্পণের মাধ্যমে বাংলার স্বাধীনতার বিজয়-স্থল সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বিস্তারের মধ্য দিয়ে একুশে গ্রন্থমেলায় সংযোগ ঘটেছে স্বাধীনতার চেতনা। তিনি বলেন, বাংলা একাডেমি থেকে সোহ্রাওয়ার্দী উদ্যান পর্যন্ত বিস্তৃত গ্রন্থমেলায় আগত লেখক-পাঠকদের যাতায়াত সহজতর করার লক্ষ্যে সরকার শিগগিরই এখানে একটি আন্ডারপাস বা ওভারপাস নির্মাণের উদ্যোগ গ্রহণ করবে এবং ক্রমান্বয়ে এ অঞ্চলজুড়ে একটি সাংস্কৃতিক বলয় গড়ে তোলা হবে।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে স্বাগত ভাষণ দেন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক শামসুজ্জামান খান। শুভেচ্ছা বক্তৃতা করেন সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. রণজিৎ কুমার বিশ্বাস। বক্তব্য রাখেন সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর এমপি। সভাপতিত্ব করেন বাংলা একাডেমির সভাপতি প্রফেসর এমেরিটাস ড. আনিসুজ্জামান। পরিচালনা করেন একুশে গ্রন্থমেলা পরিচালনা কমিটির সদস্য সচিব শাহিদা খাতুন। অনুষ্ঠানে সাহিত্যের বিভিন্ন শাখায় অবদানের জন্য নয়টি শাখায় ১১ জনকে বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার তুলে দেন প্রধানমন্ত্রী। পরে প্রধানমন্ত্রী মাওলা ব্রাদার্স, অন্য প্রকাশসহ মেলার কয়েকটি স্টল পরিদর্শন করেন। অন্য প্রকাশ থেকে এসময় তাকে ৭ খণ্ডের হুমায়ূন রচনাবলি উপহার দেয়া হয়। এরপরই মেলা সবার জন্য উন্মুক্ত করে দেয়া হয়।
মেলা এবার একাডেমি চত্বর ছাড়িয়ে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান পর্যন্ত বিস্তৃত করা হয়েছে। গতকাল শুরুর দিন সন্ধ্যায়ও অনেক স্টল খোলতে দেখা যায়নি। সাজানোর কাজ করতে দেখা গেছে অধিকাংশ স্টলে। কেউ কেউ স্টলে রং দিতেও দেখা গেছে। শুক্রবার মেলার আগের দিন স্টল তৈরির সময় বিভিন্ন স্টলে বিজ্ঞাপনী সংস্থার স্পন্সরের ব্যানার দেখা যায়। যা ছিল নীতিমালা পরিপন্থি। গণমাধ্যম কর্মীরা ওই দিনই এ বিষয়ে একাডেমির দৃষ্টি আকর্ষণ করলে তারা নড়েচড়ে বসে। গতকাল স্পন্সর করা কোন ব্যানার দেখা যায়নি। এদিকে প্রথম দিনে বেশ কিছু বই এসেছে মেলায়। প্রকাশকরা নতুন বই আনার কথা বললেও বাংলা একাডেমির তথ্য কেন্দ্র থেকে এনিয়ে কোন তথ্য দিতে পারেনি। শুরুর দিনে মেলায় ধূলাবালির নির্যাতন সহ্য করতে হয়েছে পাঠক-দর্শনার্থীদের। এজন্য তারা স্বাভাবিক চলাফেরা করতে পারেননি। বিরক্ত হয়ে বিরূপ মন্তব্য করেছেন কেউ কেউ। পানি না ছিটানোও ক্ষোভ প্রকাশ করেন তারা। শুরুর দিনে মেলায় প্রচুর দর্শনার্থী এসেছেন। তা দেখে মেলা নিয়ে আশাবাদী হয়ে উঠেছেন প্রকাশরা। অন্যপ্রকাশের প্রকাশক মাজহারুল ইসলাম বলেন, নতুন জায়গা, নতুন অভিজ্ঞতা। তবে আমরা আশাবাদী মেলা এবার অন্য সময়ের তুলনায় ভাল হবে। প্রথম দিনেই পাঠকের আগ্রহ দেখে আমরা আশান্বিত হয়ে উঠেছি। বোঝাই যাচ্ছিল, তারা পুরো এক বছর এর জন্য যে মুখিয়ে ছিলেন। প্রথম দিনে মেলাঘুরে দেখা গেছে অব্যবস্থাপনার ছাপ। ধূলো ওড়ার পাশাপাশি মেলার ভেতরে ভাসমান বাদাম বিক্রি করতে দেখা গেছে কয়েক হকারকে। প্রধানমন্ত্রী মেলা ত্যাগ করার পর হুমড়ি খেয়ে ঢুকেছেন দর্শনার্থীরা। ঢুকতে কোন নিরাপত্তা বেষ্টনী অতিক্রম করতে দেখা যায়নি। আর্চওয়ে থাকার কথা থাকলেও তা ছিল না। এমনকি প্রবেশ বা প্রস্তানের জন্য আলাদা কোন লাইন ছিল না।
Category: 1stpage, Scroll_Head_Line, দেশের খবর