• ১০ অগ্রহায়ণ ,১৪৩১,24 Nov ,2024
  • ব্রেকিং নিউজ : বাংলাদেশের রিকশাচিত্র পেল ইউনেস্কোর অপরিমেয় সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের স্বীকৃতি

সাংবাদিক শওকত মাহমুদকে হেনস্তা নয়, দাবি সব পক্ষের

| আগস্ট 20, 2015 | 0 Comments

33ab0a094394f59a8e33b993d8e55c7f_XLদেশের খবর: জাতীয় প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি ও মেধাবী সাংবাদিক এটাই শওকত মাহমুদের বড় পরিচয়। একাধিক সংবাদপত্রে তিনি সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেছেন। সাংবাদিকতাই তার পেশা। সাংবাদিক নেতা হিসেবেও তিনি জনপ্রিয়। আর এর বাইরে বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা তিনি। এমন একজন সাংবাদিককে যেনতেনভাবে গ্রেপ্তার করা যায় না।

শওকত মাহমুদের গ্রেপ্তারের পর প্রতিক্রিয়ায় এমনটাই বললেন সাংবাদিক ও নাগরিক সমাজের সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা।

 তাদের ভাষ্য, শওকত মাহমুদ বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা এ কথা ঠিক; কিন্তু সেই পরিচয় তার সাংবাদিকতার পরিচয়কে কখনোই ছাপিয়ে যায় না। একজন দক্ষ ও প্রথিতযশা সাংবাদিকের যেমন আচরণ প্রাপ্য, শওকত মাহমুদের সঙ্গেও তেমন আচরণ করাই বাঞ্ছনীয়।

একটি ‘গাড়ি পোড়ানো মামলায়’ শওকত মাহমুদকে গ্রেপ্তার করে ও রিমান্ডে নেয়ার পর এ বিষয়ে প্রতিক্রিয়া দেন তারা। অনেকেই প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে।

আওয়ামী লীগ তথা মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষ শক্তির সাংবাদিকরাও শওকত মাহমুদের এই গ্রেপ্তার ও হয়রানির নিন্দা জানিয়েছেন। শওকত মাহমুদের রাজনৈতিক পরিচয়ের চেয়ে সাংবাদিক পরিচয়কেই মুখ্য করে দেখছেন সাংবাদিকসমাজ ও মুক্তচিন্তার গণতন্ত্রকামী মানুষ।

ভিন্ন মতাদর্শে বিশ্বাসীরাও বলছেন, বিশেষ একটি রাজনৈতিক দলের চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা না হলে সাংবাদিক শওকত মাহমুদকে গাড়ি পোড়ানো মামলায় গ্রেপ্তার হতে হতো না। আগুন দিয়ে গাড়ি পোড়ানোর মতো লোক তিনি নন। তাকে হুকুমের আসামি বলে ধরে নেয়া ও গ্রেপ্তার করা স্রেফ হয়রানিরই নামান্তর।

মঙ্গলবার নির্বাচনের কারচুপি নিয়ে ‘আদর্শ ঢাকা আন্দোলন’র সংবাদ সম্মেলনে কথা বলতে গিয়েছিলেন শওকত মাহমুদ। সেখান থেকে তাকে আটক করে ‘গাড়ি পোড়ানো মামলায়’ গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে।

প্রতিক্রিয়ায় অনেকেই বলেন, এ মামলায় গ্রেপ্তার করার প্রয়োজন হলে অনেক আগেই তাকে গ্রেপ্তার করা যেত। কারণ তিনি প্রকাশ্যেই ঘুরে বেড়াচ্ছিলেন। সরকারের সমালোচনা করতে গিয়ে এই হয়রানিতে পড়লেন শওকত মাহমুদ। এটা অনভিপ্রেত।

কেউ কেউ আবার বলছেন, সংবাদ সম্মেলনের ঠিক আগমুহূর্তে সাংবাদিক শওকত মাহমুদকে গ্রেপ্তার করে তার কথা বলার অধিকার হরণ করা হযেছে। একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে এই চর্চা কোনো পক্ষের জন্যই শুভ হবে না।

শওকত মাহমুদ যে রাজনৈতিক আদর্শে বিশ্বাস করেন, সেই রাজনৈতিক আদর্শের ঘোর বিরোধীরাও বলছেন, একজন সাংবাদিককে গ্রেপ্তারের জন্য সংবাদ সম্মেলনকে বেছে নেয়া উচিত হয়নি। এতে করে সংবাদপত্র ও সাংবাদিকদের প্রতি সরকারের অসহিষ্ণু মনোভাব বা অবস্থানই প্রকট হয়ে ওঠে কেবল।

শওকত মাহমুদের গ্রেপ্তার ও রিমান্ড নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও সমালোচনা হচ্ছে। ফেসবুক ও টুইটারে তিযর্ক লেখালেখির মাধ্যমে প্রতিবাদ জানাচ্ছেন অনেকে। পাশাপাশি তারা এ প্রশ্নও তুলছেন_ কাদের ইঙ্গিত, পরামর্শ বা ইন্ধনে সাংবাদিক শওকত মাহমুদকে গ্রেপ্তার করে নিজেদের সমালোচনার পথ সুগম করছে সরকার? এটা খতিয়ে দেখা প্রয়োজন।

যুক্তরাষ্ট্রের ইলিনয় স্টেট ইউনিভার্সিটির রাজনীতি ও সরকার বিভাগের অধ্যাপক আলি রীয়াজ লিখেছেন, ‘শওকত মাহমুদ একটি রাজনৈতিক দলের সমর্থক ও ওই দলের চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা। কিন্তু তিনি একজন সাংবাদিকও। ‘আদর্শ ঢাকা আন্দোলন’র সদস্য সচিব হিসেবে ওই সংগঠনের সংবাদ সম্মেলনে যোগ দিতে গিয়ে তিনি আটক হয়েছেন। সংগঠনটিকে সংবাদ সম্মেলনও করতে দেয়া হয়নি।’

তিনি আরো লিখেছেন, ‘আমার সহপাঠী, এক সময়ের সহকর্মী শওকত মাহমুদের রাজনৈতিক অবস্থানের সঙ্গে আমার মতভিন্নতা সুস্পষ্ট। তার অধিংকাংশ বক্তব্যের সঙ্গে আমার একমত হওয়ার অবকাশ কম। কিন্তু তার কথা বলার অধিকার অন্য যে কোনো নাগরিকের চেয়ে কম নয়। দায়ের করা যে মামলায় তাকে আটক করা হয়েছে, সেটির বিশ্বাসযোগ্যতা প্রশ্নসাপেক্ষ বলেই মনে হল। শুধু তাই নয়, তার গ্রেপ্তারের ক্ষণ হিসেবে সংবাদ সম্মেলনকেই বেছে নেয়া হলো কেন? তিনি কি তার কথা বলার অধিকার রাখেন না?

কথাসাহিত্যিক মঈনুল আহসান সাবের লিখেছেন, ‘আমার যে রাজনৈতিক বিশ্বাস, তার সঙ্গে শওকত মাহমুদের রাজনৈতিক বিশ্বাসের কোনো সম্পর্ক নেই। একবার এক বন্ধুর বাসায় আড্ডায় তুমুল অর্থহীন তর্কের পর আমি শওকত মাহমুদের সঙ্গে রাজনৈতিক আলাপ বন্ধ করে দেই। কিন্তু আমাদের বন্ধুত্ব বন্ধ হয়নি। শওকত গ্রেপ্তার হওয়ায় আমি চিন্তিত ও দুঃখিত।’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষক ফাহমিদুল হক লিখেছেন, ‘মতপ্রকাশের স্বাধীনতার কথা বলতে গেলে প্রবীর সিকদারের পাশাপাশি সাংবাদিক শওকত মাহমুদের কথাও বলতে হবে। যদি আমরা তা বলতে না পারি, তাহলে ধরে নেব, আমরা সবার স্বাধীনতায় বিশ্বাসী নই। তবে ভুলে যাচ্ছি না যে, তিনি নিছক সাংবাদিক নন, তিনি বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা, যে বিএনপি গণতন্ত্র চেয়ে, অগণতান্ত্রিক আন্দোলন করেছে।’

‘সাপ্তাহিক’ সম্পাদক গোলাম মোর্তুজা লিখেছেন, ‘শওকত মাহমুদ সাংবাদিক, সাংবাদিকদের একাংশের নেতা। বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা। তাকে আসামি করে কী অর্জন করতে চায় সরকার? আগুন দিয়ে গাড়ি পুড়িয়েছেন শওকত মাহমুদ? এই হাস্যকর মামলার আসামি শওকত মাহমুদ!’

কেবল সাংবাদিক, লেখক, সংস্কৃতিমনা ও প্রগতিশীলরাই নন, রাজনীতির মাঠে শওকত মাহমুদের প্রতিদ্বন্দ্বীরাও মনে করেন একজন সাংবাদিক হিসেবে রাষ্ট্রের কাছ থেকে নূ্যনতম ভালো আচরণটুকু যেন পান শওকত মাহমুদ। কেবল রাজনৈতিক বিবেচনায় তার সঙ্গে যেন বিদ্বেষপূর্ণ আচরণ না করা হয়।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের (বিএফইউজে) একাংশের সভাপতি মনজুরুল আহসান বুলবুল বলেন, ‘সাংবাদিকতার বাইরেও শওকত মাহমুদের আরো দুটি পরিচয় আছে। তিনি বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা এবং কুমিল্লার বুড়িচং উপজেলা বিএনপির সভাপতি। আর সে কারণে তার মামলাটা রাজনৈতিক। সুতরাং এই মামলা নিয়ে আমার কোনো বক্তব্য নেই। তবে সাংবাদিক সমাজের একজন প্রতিনিধি হিসেবে আমার একটাই চাওয়া_ শওকত মাহমুদের সঙ্গে যেন মানবিক আচরণটা করা হয়। তিনি অসুস্থ, ডায়াবেটিসে ভুগছেন।’

তার চিকিৎসার সুব্যবস্থা যেন করা হয়, সে প্রত্যাশাও ব্যক্ত করেন মনজুরুল আহসান বুলবুল।

Category: 1stpage, Scroll_Head_Line, দেশের খবর, রাজনীতি

About the Author ()

Leave a Reply