বিশ্বজুড়ে বাংলা: বাংলাদেশ ফোরাম অব অস্ট্রেলিয়া একটি স্বেচ্ছাসেবী, অরাজনৈতিক ও অলাভজনক সমাজ-সেবা মূলক সংগঠন। সংগঠনটির পথচলা শুরু ২০১৫ সালের জুন মাস থেকে। শুরুর সদস্য সংখ্যা মাত্র ১২ জন। সংখ্যাটা ছোট হলেও সদস্যদের স্বপ্নটা অনেক বড়। স্বপ্নটা ঐক্যের। বন্ধন দৃঢ় করবার। জাতি হিসেবে মাথা উঁচু করে চলবার। তবে প্রেক্ষাপটটা ভিন্ন। অস্ট্রেলিয়ার সিডনি। তাই সমস্যার ধরনও ভিন্ন। তারপরও নিজ দেশের প্রতি দায়বদ্ধতা থেকেই সে সব সমস্যার সমাধানের পথ খুঁজতে ঐক্যবধ্য হয় সংগঠনের একনিষ্ঠ কর্মীরা। সমস্যাগুলো আরও প্রকট আকার ধারণ করে যখন মানুষ, সংস্কৃতি, পরিবেশ ইত্যাদি একেবারেই নতুন হয়। বাংলাদেশ থেকে যখন কোন নতুন ছাত্র-ছাত্রী কিংবা অভিবাসী আসেন, তখন অনেককেই পড়তে হয় গোলক ধাঁধায়। বাসস্থান, যোগাযোগ সর্বোপরি পুরো নতুন একটি দেশ ও সংস্কৃতিতে খাপ খাইয়ে নেয়াটাই হয় বড় একটি পরীক্ষা। যে মানুষগুলো এই সংগঠনটি শুরু করে তারাও কোন না কোনভাবে এসব সমস্যার সম্মুখীন হয়েছে বহুবার। তাই এমন একটি ব্যবস্থা যদি করা যায় যে, যখন নতুন কোন বাঙ্গালী অস্ট্রেলিয়াতে এসে পা রাখবে, সে এসেই নিজ দেশের মানুষের সান্নিধ্যটি পাবে, তবে মানসিকভাবে বড় একটি পাওয়া হবে তার জন্য। কিংবা যে সব বাঙ্গালীরা ইতিমধ্যেই অস্ট্রেলিয়াতে আছে তাদের শিক্ষা, চাকুরী, দক্ষতা বৃদ্ধি ইত্যাদি নানা বিষয়ে সাংগঠনিক-ভাবে যদি সহযোগিতা করা যায় তাহলে কতই না উপকৃত হবে তারা, পাশাপাশি আমরাও। কেননা শেষ বেলায় তো উপকৃত হবে অস্ট্রেলিয়ান বাঙ্গালীরাই! সংগঠনটির যাত্রার প্রেরণা মূলত এ বিষয়গুলোই।
এসবের পাশাপাশি পরিকল্পনা শুরু হয় কিভাবে বাংলাদেশ ফোরাম অব অস্ট্রেলিয়াকে সিডনির বাঙ্গালীদের সেবায় নিয়োজিত করা যায়। শুরু হয় সমস্যা চিহ্নিতকরণ। একে একে সিদ্ধান্ত নেয়া হয় স্পোকেন ইংলিশ, আইইএলটিএস, জেনারেল ইনফরমেশন ইত্যাদি বিষয়ের উপর ফ্রি ক্লাস করানোর। পাশাপাশি চালু করা হয়, এয়ারপোর্ট থেকে নবাগত অভিবাসীদের নিয়ে আসা, তাদের প্রাথমিক বাসস্থান ও চাকুরী প্রদানের কাজ। সংগঠনটির কাছ থেকে বাস্তবিক ও প্রায়োগিক সেবা পাবার ফলে, মানুষের কাছে এর জনপ্রিয়তা বাড়তে থাকে জ্যামিতিক হারে। খুব অল্প সময়ের মধ্যে সিডনিতে বসবাসরত ব্যবসায়ী, ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, আইনজীবী, রাজনীতিবিদ, শিক্ষকসহ সব শ্রেণীর বাঙ্গালীরা এগিয়ে আসেন সংগঠনটির সহযোগিতায়। একটি অরাজনৈতিক ও অলাভজনক সংগঠন হওয়ায়, এর প্রতি মানুষের আস্থা বেড়ে যায়।
চলার পথে শুভাকাঙ্ক্ষীদের পরামর্শে বাংলাদেশ ফোরাম অব অস্ট্রেলিয়া পরিকল্পনা গ্রহণ করে একটি ত্রৈমাসিক ম্যাগাজিন প্রকাশের। এর মুল লক্ষ্য হলো ইতিবাচক কিছু তথ্য কমিউনিটির সামনে তুলে ধরা। সেটি হতে পারে শিল্পকলা, ব্যবসা-বাণিজ্য, চাকুরী, বিনোদন, পরিবেশ, বিজ্ঞান, খেলাধুলা, প্রযুক্তি বা অন্য কিছু। এরই ধারাবাহিকতায় গত ১৩ ডিসেম্বর রবিবার বাংলাদেশ ফোরাম অব অস্ট্রেলিয়ার ত্রৈমাসিক ম্যাগাজিন “বিএফএ ভয়েস” প্রথম সংখ্যার প্রকাশিত হয়েছে। এই উপলক্ষে সিডনীর রকডেলের কস্তূরী রেস্টুরেন্ট এন্ড ফাংশন সেন্টারে ইএসআাই গ্লোবাল সার্ভিসের সৌজন্যে এক জমকালো অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
বাংলাদেশ ও অস্ট্রেলিয়ার জাতীয় সংগীত পরিবেশন মাধ্যমে অনুষ্ঠান শুরু করা হয়। বাংলাদেশ ফোরাম অব অস্ট্রেলিয়ার সাধারণ সম্পাদক কামাল উদ্দিন রনির সঞ্চালনায় শুরুতে স্বাগত বক্তব্য নিয়ে আসেন সংগঠনটির যুগ্ম সম্পাদক জনাব আশিক আহমেদ সৌরভ, সহ সভাপতি মোঃ জুনাইদুর রহমান অনন্ত, ও আব্দুল আউয়াল । এরপর শুরু হয় আমন্ত্রিত অতিথিদের শুভেচ্ছা বক্তব্য পর্ব। একে একে শুভেচ্ছা বক্তব্য নিয়ে আসেন সুপ্রভাত সিডনীর চিফ রিপোর্টার ফজলে রাব্বী, বিদেশ বাংলা টেলিভিশনের পরিচালক রহমতউল্লাহ, সিকদার রিয়েল স্টেটের নির্বাহী পরিচালক আনিস রহমান (রিতু), বিশিষ্ট আইনজীবী ডঃ জহিরুল হক মোল্লা, চার্লস স্টুয়ার্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক শিবলী আবদুল্লাহ শিবলী, বিশিষ্ট সাংবাদিক এসবিএস রেড়িওর বাংলা বিভাগের প্রধান জনাব আবু রেজা আরেফিন, বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ একাডেমিক স্কলার এ এস এম এনামউল্লাহ, প্রবীণ রাজনীতিবিদ, সমাজসেবক ও বিশিষ্ট আইনজীবী জনাব সিরাজুল হক, বাংলাদেশের সিডনির অনারারি কনসাল জেনারেল এন্থনী কুরী। এরপর সমাপনী বক্তব্য প্রদান করেন বাংলাদেশ ফোরাম অব অস্ট্রেলিয়ার সভাপতি ও বিএফএ ভয়েস এর সম্পাদক হোসেন মোহাম্মাদ মহসিন। এরপর আমন্ত্রিত অতিথিদের নিয়ে উপস্থিত দর্শক সামনে “বিএফএ ভয়েস” এর প্রথম সংখ্যার মোড়ক উন্মোচন করা হয়। এই সময় দর্শকরা বিপুল করতালি দিয়ে বাংলাদেশ ফোরাম অব অস্ট্রেলিয়ার এই উদ্যোগকে স্বাগত জানান।
শুভেচ্ছা বক্তব্যে অনারারি কনসাল জেনারেল এন্থনী কুরী বলেন “বিএফএ ভয়েস” প্রকাশের জন্য সংশ্লিষ্ট সকলকে ধন্যবাদ জানান। তিনি আশা প্রকাশ করেন অরাজনৈতিক পত্রিকা হিসেবে “বিএফএ ভয়েস” তার অবস্থান অক্ষুণ্ণ রাখবেন। তিনি আরো বলেন, তার বিশ্বাস অস্ট্রেলিয়ায় বাংলাদেশী কমিউনিটির অগ্রযাত্রায় বিএফএ ভয়েস অগ্রণী ভূমিকা রাখবে। অস্ট্রেলিয়ায় বাংলা ভাষার প্রসারে প্রবাসী বাংলাদেশীদের সন্তানদের বাংলা শেখার উপর গুরুত্ব আরোপ করেন। এই ব্যাপারে সকল মা বাবাকে আন্তরিক হওয়ার পরামর্শ দেন।
বিএফএ ভয়েস এর সম্পাদক হোসেন মোহাম্মাদ মহসিন ম্যাগাজিন প্রকাশে সহযোগিতা করার জন্য পৃষ্ঠপোষক সহ সংশ্লিষ্ট সকলকে ধন্যবাদ জানান। এই সময় এসআই গ্লোবাল সার্ভিসের প্রধান নির্বাহী কাজী আব্দুল কাদের আরমানকে আয়োজকদের পক্ষ থেকে সম্মাননা প্রদান করা হয়। অনুষ্ঠানে অস্ট্রেলিয়া প্রবাসী জনপ্রিয় কণ্ঠশিল্পী রুহল আমিন রাহুল দর্শকদের মাঝে মনোজ্ঞ সঙ্গীতানুষ্ঠান পরিবেশন করেন। অনুষ্ঠান শেষে আমন্ত্রিত অতিথিদের সম্মানে নৈশভোজের আয়োজন করা হয়। |
|
|