• ১৩ বৈশাখ ,১৪৩১,26 Apr ,2024
  • ব্রেকিং নিউজ : বাংলাদেশের রিকশাচিত্র পেল ইউনেস্কোর অপরিমেয় সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের স্বীকৃতি

টানা দ্বিতীয় হারে সিরিজ জেতা হলো না টাইগারদের

| জানুয়ারী 23, 2016 | 0 Comments

image_1436_219820স্পোর্টস: নতুন এক উপাখ্যান লেখার মঞ্চ তৈরিই ছিল। কিন্তু অতি পরীক্ষা-নিরীক্ষার দাম চুকাতে গিয়ে সেটাকে জলাঞ্জলি দিতে হলো শেষ পর্যন্ত। টেস্ট খেলুড়ে কোনো দেশের বিপক্ষে একাধিক টি২০ ম্যাচের সিরিজ জয়ের অতীত নেই বাংলাদেশের। নিজ আঙিনায় জিম্বাবুয়ে সিরিজটা সেই অতীত বদলে দেয়ার উপলক্ষ হিসেবেই এসেছিল। প্রথম দুই ম্যাচে জিতে একেবারে নাগালে চলেও গিয়েছিল টাইগাররা। কিন্তু তৃতীয় ম্যাচের মতো শুক্রবার সিরিজের চতুর্থ ও শেষ ম্যাচে জিম্বাবুয়ের কাছে ১৮ রানে হেরে তা আর হাতের মুঠোয় নিতে পারেনি মাশরাফি বিন মর্তুজার দল। সিরিজটা শেষ পর্যন্ত শেষ হয়েছে ২-২ সমতায়।

ব্যাটসম্যানরাই ম্যাচটাকে শেষ করে দিয়েছেন। সেটা যেমন জিম্বাবুয়ের, তেমনি বাংলাদেশেরও। বাংলাদেশের বোলারদের তুলাধোনা করে স্বাগতিকদের সিরিজ জয়ের আশা অর্ধেকটা শেষ করে দিয়েছেন জিম্বাবুয়ের ব্যাটসম্যানরা। দলকে দিয়েছেন ১৮০ রানের বড় পুঁজি। সেই রান তাড়া করতে নেমে শুরুতেই রণে ভঙ্গ দিয়েছে বাকিটা শেষ করেছেন টাইগার ব্যাটসম্যানরা। লেজের সারির ব্যাটসম্যানরা চেষ্টা করেছেন, তাদের চেষ্টায়ই শেষতক ১৬২ রান পর্যন্ত যেতে পেরেছে বাংলাদেশের ইনিংস। তখনো অবশ্য ১টি ওভার বাকিই ছিল। কিন্তু বাংলাদেশের ভা-ারে আর কোনো ব্যাটসম্যানই যে ছিল না।

১৮১ রানের জয়ের লক্ষ্য, সেই পথে ছুটতে গিয়ে ১৭ রানেই সাজঘরে টপঅর্ডারের ৪ ব্যাটসম্যান। ম্যাচ এবং সিরিজের ভাগ্যে কী লেখা আছে, ততক্ষণে পরিষ্কার। এরপর এই ম্যাচে বাংলাদেশ ফিরে আসবে, অতি আশাবাদীও সম্ভবত এতটা ভাবতে পারেননি। পরের ব্যাটসম্যানদের সামর্থ্য নিয়ে প্রশ্ন ছিল না। কিন্তু বাকি পথটা তখন এতটাই বন্ধুর যে, জয় নামের দূরের বাতিঘরটা তখন আরো দূরে। এরপর শুধু দেখার ছিল, পরাজয়ের ব্যবধানটা ঠিক কতটা কমাতে পারে বাংলাদেশ।

বড় রান তাড়া করতে গেলে আগ্রাসী ব্যাটিং করতে হবে_ ইনিংসের সূচনায় সৌম্য সরকারকে এভাবেই দেখা গেছে। প্রথম ওভারে তেন্দাই চিসুরোকে বাউন্ডারি হাঁকান। পরের ওভারের প্রথম বলেই নেভিল মাতজিভাকে যেভাবে লংঅন দিয়ে সীমানার ওপারে আছড়ে ফেললেন, তাতে সিরিজ জয়ের আশার আলোটা জ্বলে উঠেছিল রঙিন হয়ে। কিন্তু সেটা পরের বলেই ফ্যাকাশে হয়ে গেল, অফস্টাম্পের বাইরের বল সৌম্যর ব্যাটে চুমু খেয়ে মুতাম্বামির গ্লাভসে।

সৌম্য ফিরলেন ব্যক্তিগত ১১ রানে। দলীয় রান তখন ১২। তখনো অবশ্য কেউ অাঁচ করতে পারেনি, পরের দুটি ওভারে কী বিভীষিকা অপেক্ষা করছে। মাতজিভার ওই ওভারের শেষ বলেই বোল্ড অপর ওপেনার তামিম ইকবাল (১)। পরের ধাক্কাটা পরবর্তী ওভারের প্রথম বলে দিয়েছেন চিসুরো, এই স্পিনারকে উড়িয়ে মারতে গিয়ে সিরিজজুড়ে ধারাবাহিকতার প্রতিমূর্তি হয়ে ওঠা সাবি্বর রহমান থামলেন ১টি রান করেই। উইকেটে এসেই বাউন্ডারি হাঁকিয়ে আশা জাগানো সাকিব আল হাসানও তিন বলের ব্যবধানে ফিরেছেন সাজঘরে।

বিনা উইকেটে ১২ থেকে ৪ উইকেটে ১৭ বাংলাদেশ। ৮ বল এবং ৫ রানের ব্যবধানে পড়ল উইকেটগুলো। আশার প্রদীপটা তখনই নিভে গেছে দুপ করে। এরপর কিছুটা প্রতিরোধ-প্রতিঘাতের গল্প। সামনে থেকে সেই গল্পে নেতৃত্ব দিয়েছেন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। ইমরুল কায়েসকে (১৮) নিয়ে ৩৬ রানের জুটিতে গড়লেন প্রতিরোধ, এরপর নূরুল হাসান সোহানকে নিয়ে ৫৭ রানের জুটিতে প্রতিঘাত। বলের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে রান তোলা সোহান ইনিংসটাকে ১৫ রানের বেশি টানতে পারেননি। তবে তার যোগ্য সাহচর্যেই ম্যাচটাকে শেষের আগে শেষ হতে দেননি মাহমুদউল্লাহ।

সোহান ফেরার পর মাশরাফি এমনভাবে শুরু করলেন, ম্যাচটা মুহূর্তেই যেন নাগালে চলে এসেছিল বাংলাদেশের। কিন্তু ১২ বলে ১টি চার এবং ২টি ছক্কায় মাশরাফির ২২ রানের ঝড় থামতেই শেষ আশাটাও শেষ হয়ে গেছে। এর আগেই ফিরেছেন স্বাগতিকদের ইনিংসকে অনেকটা পথ টেনে আনা মাহমুদউল্লাহ। ৪১ বলে ৫টি চার এবং ২টি ছক্কায় সাজানো তার ৫৪ রানের ইনিংসটি কেবল আক্ষেপই বাড়িয়েছে। বার বার মনে হয়েছে, শুরুতে ওভাবে হুড়মুড়িয়ে ভেঙে না পড়লে আর ওপরের সারির কেউ এমন আরেকটি ইনিংস খেলতে পারলেই তো হয়ে যেত।

টাইগারদের নখদন্তহীন বোলিংয়ের আরো একটি গল্প লেখা হলো শুক্রবার। এক হ্যামিল্টন মাসাকাদজাই ছিনিমিনি খেললেন মাশরাফি-আবু হায়দার-আরফাত-তাসকিনদের নিয়ে। জিম্বাবুয়ের পুরো ইনিংসটাই আবর্তিত হয়েছে ওই ডানহাতির ব্যাটে। তার অপরাজিত ৯৩ রানের ঝড়ের মুখে পড়ে পড়ে মার খেয়েছে স্বাগতিকরা। শুরুটা অবশ্য ভালো ছিল। প্রথম ওভারেই ভুসি সিবান্দাকে ফিরিয়ে দিয়েছিলেন মাশরাফি। কিন্তু আবু হায়দার রনির হাত ধরে যখন দ্বিতীয় উইকেটের দেখা মিলল, ততক্ষণে জিম্বাবুয়ের ঝুলিতে জমা হয়ে গেছে ৮৪ রান। শেষের ৫ ওভারে স্বাগতিক বোলাররা কিছুটা চেপে ধরলেও এরপর আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি অতিথিদের।

মাসাকাদজার সঙ্গে ৮০ রানের দ্বিতীয় উইকেট জুটিতে দারুণ ব্যাটিং করেছেন রিচমন্ড মুতাম্বামি। ম্যাচে আবু হায়দারের একমাত্র শিকারে পরিণত হওয়ার আগে ২৫ বলে খেলেছেন ৩২ রানের দারুণ কার্যকর এক ইনিংস। কিন্তু এই ব্যাটসম্যানের বিদায়ের পরও স্বস্তি ছিল না। মাসাকাদজা তো ছিলেনই, খুনে ব্যাটিংয়ে ম্যালকম ওয়ালারও যুক্ত হন ধ্বংসলীলায়। আগের ম্যাচে ২৩ বলে ৪৯ রানের ইনিংস খেলা এই ডানহাতি এদিনও যেন শুরুটা করলেন ঠিক সেখান থেকেই। ১৮ বলে ৩৬ রান, দলে ফেরা তাসকিন আহমেদ ওয়ালার ঝড় আরো বেগবান হওয়ার আগে থামিয়েছিলেন। কিন্তু জিম্বাবুয়ের রান ততক্ষণে ১৪৫। তখনো ইনিংসের বাকি ২৯ বল, টানা দ্বিতীয় ম্যাচে বড় রানের নিচে চাপা পড়ার বন্দোবস্ত হয়ে গেছে ততক্ষণে।

চার রানের ব্যবধানে সিকান্দার রাজাকে ফেরালেন সাকিব। কিন্তু আখেরে লাভ কিছুই হয়নি। আরেক প্রান্তে থেকে স্বাগতিক বোলারদের খুন করে গেছেন মাসাকাদজা। তার ব্যাটিংয়ের তোড়ে জিম্বাবুয়ের ঝুলিটা হয়েছে সমৃদ্ধ। ইনিংসের আদ্যোপান্ত ব্যাটিংয়ে সেঞ্চুরির আশাও জাগিয়েছিলেন। কিন্তু সেই আশা পূর্ণ হয়নি। তবে ৫৮ বলে ৮টি চার এবং ৫টি ছক্কায় তার ৯৩ রানের ইনিংসটাই চূড়ান্ত সর্বনাশ লিখে দিয়ে গেছে বাংলাদেশের। জিম্বাবুয়ে গড়েছে ১৮০ রানের পাহাড়সম পুঁজি। ৯ বলে ৫ রানের ইনিংসে দলে ফেরা নিয়মিত অধিনায়ক এল্টন চিগুম্বুরা তাল মিলাতে পারেননি। তা না হলে আরো বড়ই হতো জিম্বাবুয়ের সংগ্রহ।

Category: 1stpage, Scroll_Head_Line, স্পোর্টস

About the Author ()

Leave a Reply