জি-২০ সম্মেলনে পুতিন- আইএসকে অর্থ যোগাচ্ছে ৪০ দেশ
আন্তর্জাতিক: একটি বা দুটি নয়, ইরাক ও সিরিয়ায় স্বঘোষিত খিলাফত রাজ্যের সীমানা ছাড়িয়ে সারা বিশ্বে ত্রাস সৃষ্টিকারী সুনি্ন জঙ্গি সংগঠন ইসলামিক স্টেটের (আইএস) অর্থের জোগান আসছে বিশ্বের ৪০টি দেশ থেকে। তুরস্কে অনুষ্ঠিত জি-২০ সম্মেলনের শেষ দিন গত সোমবার দেয়া ভাষণে এমন চাঞ্চল্যকর তথ্য দিয়েছেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভস্নাদিমির পুতিন। আইএসের অর্থদাতা দেশগুলোর মধ্যে রয়েছে জি-২০ জোটভুক্ত কয়েকটি দেশও। এছাড়া আইএস দমনে সিরিয়ার ক্ষমতাসীন আসাদ সরকারের পাশাপাশি দেশটির বিদ্রোহীদেরও বিমান হামলার মাধ্যমে সহায়তার ঘোষণা দিয়েছেন তিনি। এদিকে, প্যারিসে প্রাণঘাতী হামলার পরও আইএসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে ইরাক ও সিরিয়ায় স্থলসেনা পাঠানোর সম্ভাবনা নাকচ করে দিয়েছেন আমেরিকার প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা। তুরস্কে জি-২০ সম্মেলনে ভাষণ দেয়ার পর সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে ওবামা বলেন, আমেরিকার স্থলসেনা না পাঠিয়ে তাদের নেতৃত্বাধীন জোটবাহিনীর বিমান হামলা আরো জোরদার করার পরিকল্পনা রয়েছে তার এবং আমেরিকার সামরিক-বেসামরিক উপদেষ্টাদের।
বার্তা সংস্থাগুলো জানায়, তুরস্কের আনাতোলিয়ায় জি-২০ সম্মেলনের শেষ দিনে দেয়া ভাষণে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভস্নাদিমির পুতিন বলেন, ‘রুশ গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর হাতে আসা কিছু তথ্যই আমি তুলে ধরছি। আইএসের বিভিন্ন শাখা বিভিন্ন ব্যক্তির কাছ থেকে পাওয়া অর্থ দিয়ে চলে। আমাদের হিসাব অনুযায়ী, অন্তত ৪০টি দেশ থেকে আইএসের কোষাগারে অর্থ জমা হয়। তবে এর মানে এই নয়, এসব দেশ থেকে সরকারিভাবে কোনো মদদ পাচ্ছে আইএস। বরং আইএসকে বিপুল পরিমাণ অর্থ জুগিয়ে চলেছে এসব দেশের কিছু নাগরিক বা বেসরকারি এজেন্সি। এসব দেশের মধ্যে জি-২০ জোটের কিছু দেশও রয়েছে।’
তবে শুধু যে ওই অর্থসাহায্যের ভরসায়ই রয়েছে আইএস, তা নয়। রুশ প্রেসিডেন্ট জানিয়েছেন, অর্থের জন্য বেআইনিভাবে তেলকূপ খনন এবং চড়া দামে সেই তেল বিক্রি করে চলেছে আইএস জঙ্গিরা। মহাকাশযান এবং বিমান থেকে রুশ গোয়েন্দা সংস্থার তোলা প্রামাণ্য কিছু ছবিও দেখান পুতিন, যাতে আইএসের দখলে থাকা তেলকূপগুলো থেকে তেল কিনতে আসা কয়েক কিলোমিটার দীর্ঘ গাড়ির সারি দেখা গেছে।
আইএস প্রসঙ্গ নিয়ে কথা বলতেই সিরিয়া ইস্যু টানেন পুতিন। বক্তৃতায় তিনি বলেন, ‘আসাদবিরোধী সংগঠনগুলোর কয়েকটি মনে করে, আইএসবিরোধী অভিযানে রাশিয়ার সঙ্গে সমন্বয় করে কাজ করতে পারবে তারা। আমরা এই সহায়তা দিতে প্রস্তুত আছি। যদি এ ধরনের একটি সমন্বয় সম্ভব হয়, তাহলে সেটা পরবর্তীকালে সিরিয়ার গৃহযুদ্ধের রাজনৈতিক সমাধান খুঁজে পেতে সহায়তা করবে।’
সম্মেলনে পুতিন আরো বলেন, ‘আইএস দ্বারা কোন দেশ বেশি আর কোন দেশ কম আক্রান্ত, তা দেখার সময় এখন নয়। বরং সন্ত্রাস মোকাবেলায় আন্তর্জাতিক একটি সমন্বিত প্রচেষ্টা প্রয়োজন।’
তবে এসব অভিযানে পরিষ্কারভাবে আমেরিকা, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, সৌদি আরব, তুরস্ক ও ইরানের সহযোগিতা প্রয়োজন বলে জানিয়েছেন পুতিন।
বিশ্বে সন্ত্রাসী হামলা ৮০ ভাগ বেড়েছে
বিশ্বে বিভিন্ন সন্ত্রাসী হামলার সংখ্যা রেকর্ড পরিমাণ, অর্থাৎ শতকরা ৮০ ভাগ বেড়ে গেছে। এসব হামলায় নিহত হয়েছে ৩২ হাজারের বেশি মানুষ। মঙ্গলবার ‘ইন্সটিটিউট ফর ইকোনমিকস অ্যান্ড পিস’ কর্তৃক প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা গেছে। এছাড়া সন্ত্রাসবাদের কারণে এবং তা মোকাবেলায় ব্যয় হওয়া অর্থ গত দেড় দশকে বেড়ে ১০ গুণ হয়েছে বলেও জানানো হয়েছে।
বিশ্ব সন্ত্রাসবাদ সূচকে দেখা গেছে, ২০১৪ সালে বিভিন্ন সন্ত্রাসী হামলায় প্রাণ হারিয়েছে ৩২ হাজার ৬৫৮ জন। এর আগের বছর, অর্থাৎ ২০১৩ সালে এই সংখ্যা ছিল ১৮ হাজার ১১ জন। ওই পরিসংখ্যান মতে, গত বছর বিশ্বের ১৬২টি দেশে সন্ত্রাসী হামলায় এসব প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে। তবে হামলায় সবচেয়ে বেশি মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে সিরিয়া, ইরাক, নাইজেরিয়া, আফগানিস্তান ও পাকিস্তানে। শতকরা ৭৮ ভাগ হত্যার ঘটনাই ঘটেছে এসব দেশে। এসব হামলার অর্ধেকেরও বেশি চালিয়েছিল ইরাক ও সিরিয়ায় প্রভাব বিস্তারকারী জঙ্গি গোষ্ঠী আইএস এবং নাইজেরিয়াভিত্তিক সন্ত্রাসী গোষ্ঠী বোকো হারাম। গত বছর সন্ত্রাসী হামলায় সবচেয়ে বেশি হতাহতের ঘটনা ঘটেছে ইরাকে। দেশটিতে ওইসব হামলায় নিহত হয়েছে ৯ হাজার ৯২৯ জন। গত কয়েক বছরের মধ্যে সেখানে এটাই সর্বোচ্চ নিহতের ঘটনা। এর পরেই রয়েছে নাইজেরিয়া। গত বছর দেশটিতে সন্ত্রাসীদের হাতে রেকর্ড পরিমাণ, অর্থাৎ ৭ হাজার ৫১২ জন নিহত হয়েছে। সেখানে সন্ত্রাসী হামলায় মৃতের সংখ্যা শতকরা ৩০০ ভাগের বেশি বেড়েছে বলে ওই প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। ‘ইন্সটিটিউট ফর ইকোনমিকস অ্যান্ড পিস’-এর চেয়ারম্যান স্টেভ কিলেলিয়া বলেছেন, বিশ্বে সন্ত্রাসবাদ আগের যে কোনো সময়ের তুলনায় দ্রুতগতিতে বিস্তার লাভ করছে।//সংবাদসূত্র : এশিয়া টাইমস, গার্ডিয়ান, স্কাই নিউজ, ডয়েচে ভেলে, নিউজউইক
Category: 1stpage, Scroll_Head_Line, আন্তর্জাতিক, শীর্ষ সংবাদ