কূটনীতির বিজয়: সিরিয়ার রাসায়নিক অস্ত্র বিষয়ে জাতিসংঘ প্রস্তাব পাশ
আন্তর্জাতিক: গত দুই বছরের মধ্যে প্রথমবার সিরিয়া সংক্রান্ত জাতিসংঘের কোন প্রস্তাব পাশ হয়েছে। এবার কেউই ভেটো প্রদান করে নি বা কেউ অধিবেশন ছেড়ে যায় নি। নিরাপত্তা পরিষদের ১৫টি সদস্য রাষ্ট্রের সবাই প্রস্তবের পক্ষে সমর্থন জানিয়েছে।
টানা দুই সপ্তাহ ধরে রুশ ও মার্কিন কূটনীতিকরা ওই নথিপত্রের খুটিনাটি যাচাই-বাচাই করেছেন। বিরোধপূর্ণ প্রশ্নাবলীর সমাধান করতে রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী সেরগেই ল্যাভরোভ ও মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরির মধ্যে একাধিকবার সাক্ষাত হয়েছে। অবশেষে একটা সমাধানে পৌছানো গেছে যা সবার ইচ্ছা অনুযায়ী তৈরী করা সম্ভব হয়েছে। যদিও জাতিসংঘের গঠনতন্ত্রের ৭ম অধ্যায়ের আলোকে নিষেধাজ্ঞা বা সামরিক শক্তি প্রয়োগ করে প্রস্তাবটি থাকলেও গৃহিত সিদ্ধান্তের সাথে এর কোন যোগসূত্র নেই বলে জানিয়েছেন রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী সেরেগই ল্যাভরোভ। রেডিও রাশিয়াকে তিনি বলেন, “সমঝোতা অনুযায়ী তৈরি খসড়া প্রস্তাব মানার জন্য আইনি বাধ্যবাধকতার বিষয়টি রাখা হয়েছে কিন্তু এর অন্যথা হলে নিষেধাজ্ঞা বা সামরিক শক্তি প্রয়োগের কোনো স্বয়ংক্রিয় ব্যবস্থা রাখা হয়নি। জেনেভায় এ সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত আগেই রুশ-মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠকে নেওয়া হয়েছে। এতে বলা হয়েছে সিরিয়া সংক্রান্ত জাতিসংঘের প্রস্তাবকে ভঙ্গ করা তা রাসায়নিক অস্ত্র ব্যবহারেরই সমতূল্য বলে গন্য হবে। আর সেক্ষেত্রে জাতিসংঘের ওই ৭ম অধ্যায়ের আলোকে নিরাপত্তা পরিষদ চুড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবে।“
সিরিয়া সংক্রান্ত জাতিসংঘের এই প্রস্তাব রক্ষার দায়িত্ব শুধুমাত্র সিরিয়ার সরকারের একার নয়। নিরাপত্তা পরিষদের শর্তাবলী পূরণের জন্য আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞদের সিরিয়ার বিরোধী জোটের সাথেই সহযোগিতা বজায় রাখতে হবে।
তাছাড়া প্রস্তাবিত সিদ্ধান্ত তা ওইসব দেশগুলোর জন্যই অধিক প্রযোজ্য যারা সিরিয়ার বিদ্রোহীদের সহায্য করছে। এমনটি বলেছেন জাতিসংঘে নিযুক্ত সিরিয়ার স্থায়ী প্রতিনিধি বাশার জাফ্ফারি। রেডিও রাশিয়াকে তিনি বলেন,
“নিরাপত্তা পরিষদের প্রস্তব তা পুনরায় সিরিয়াকে একটি স্বাধীন সার্বভৌমত্ব রাষ্ট্রের মার্যাদা দিয়েছে। এই প্রস্তাব সেই সব দেশ ও সংস্থার জন্য প্রযোজ্য যারা কিনা সিরিয়ায় রাসায়নিক অস্ত্র সরবরাহ করছে কিংবা করার চেষ্টা করছে।“
এসব সত্বেও পশ্চিমা মিত্রজোটরা এখনও সিরিয়ায় রাসায়নিক অস্ত্র প্রয়োগের জন্য বাশার আসাদের সরকারকে দায়ি করছে। আর এ কারণেই নথিপত্রে এ সংক্রান্ত ব্যাখ্যা উল্লেখ করা হয়েছে। প্রস্তাবনার মূল কাঠামো মেনে চলার জন্য মূল দায়িত্ব সিরিয়ার সরকারকে দেওয়া হয়েছে। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরি বলেন, “আজকে সিরিয়ার সরকারকে জাতিসংঘের প্রস্তাবকে মেনে চলার আহবান জানানো হয়েছে। আর এ প্রস্তাবে সিরিয়ার রাসায়নিক অস্ত্রের নিয়ন্ত্রণ জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের কাছে সরবরাহ করার কথা উল্লেখ রয়েছে। নিরাপত্তা পরিষদ পুরো বিশ্বকে জানিয়ে দিচ্ছে যে, কূটনীতি অনেক ক্ষমতা সম্পন্ন একটি কাঠামো ব্যবস্থা।
প্রস্তাব ছাড়াও নিরাপত্তা পরিষদ সিরিয়ার রাসায়নিক অস্ত্র ধংস করা নিয়ে একসারি প্রক্রিয়া কার্যক্রমের সিদ্ধান্ত গ্রহন করেছে। শুক্রবার হেগে সিরিয়ার রাসায়নিক অস্ত্র ধংসের প্রকল্প নিয়ে আলোচনা করেন জাতিসংঘ সমর্থিত ‘অর্গানাইজেশন ফর দ্য প্রোহিবিশন অফ কেমিক্যাল উইপনস ( ওপিসিডব্লিউ)- এর কর্মকর্তারা। আগামী ১ অক্টোবর সিরিয়ার রাসায়নিক অস্ত্রের মজুদ সরেজমিনে পর্যবেক্ষন শুরু করবেন সংস্থার বিশেষজ্ঞরা। আগামী বছরের মাঝামাঝি সময়ে সিরিয়ার রাসায়নিক অস্ত্র পুরোপুরি ধংস করার লক্ষমাত্রা স্থির করা হয়েছে।
জাতিসংঘের গৃহিত এই নথিপত্র সিরিয়া বিষয়ক জেনেভা শান্তি সম্মেলন আয়োজনের পথ অনেকটাই সহজ করে দিয়েছে। জাতিসংঘের মহাসচিব বান কি মুন বলেছেন, আগামী নভেম্বর মাসের মাঝামাঝি সময়ে ওই সম্মেলন অনুষ্ঠিত হতে পারে। ধারণা করা হচ্ছে, জেনেভা সম্মেলনে সিরিয়ার সরকার ছাড়াও দেশটির বিভিন্ন বিরোধী দলের প্রতিনিধিরা উপস্থিত থাকবেন।
তবে আপাতত কূটনীতিকরা সিরিয়ার রাজনীতির চিত্রপট নিয়ে কাজ করছেন। মানবিক প্রশ্নবলীর সমাধান করা এখন খুব জরুরি হয়ে পড়েছে। দুই বছরেরও অধিক সময়ে ধরে চলা সিরিয়ায় দুই ধরণের শংকায় জড়িত আছে। গৃহযুদ্ধ ও আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা। প্রতিদিন বেসামরিক মানুষজন নিহত হওয়ার খবর পাওয়া যাচ্ছে। সিরিয়ায় ২০ বছরেরও বেশি সময় ধরে বসবাসকারি আনেস-মারিয়েম রেডিও রাশিয়াকে দেওয়া সাক্ষাতকারে বলেন, “সিরিয়ার শিশুরা বর্তমানে অত্যন্ত মানবেতর জীবন-যাপন করছে। ক্ষুধা ও অসুখে কয়েক হাজার শিশু মারা যাচ্ছে। তাই আমাদের উচিত শান্তি প্রতিষ্ঠা করা এবং সামরিক সহিংসতা বন্ধ করা। শুধুমাত্র দামাস্কাসে ২ হাজার শিশু খেতে না পাওয়া মৃত্যুর সাথে লড়াই করছে। তাই আমরা বিশ্বের দায়িত্বশীল ব্যক্তিদের প্রতি আহবান জানাচ্ছি যেন সিরিয়ায় খুব দ্রুত মানবিক সাহায্য পাঠানো হয়।“
ওদিকে সিরিয়ার মানবিক সাহায্য পাটানোর জন্য জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের নতুন প্রস্তাব প্রয়োজন বলে জানিয়েছেন যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্রমন্ত্রী উইলিয়াম হেগ। যেহেতু রাসায়নিক অস্ত্র সংক্রান্ত কঠিন প্রশ্ন নিয়ে ঐক্যমতে পৌছানো সম্ভব হয়েছে তাই মানবিক ক্ষেত্রে কোন সমস্যা সৃষ্টি হওয়ার কথা নয়।
Category: 1stpage, আন্তর্জাতিক, শীর্ষ সংবাদ